বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[শিল্প]
ঘড়ি সাতটা কুড়ির দিকে এগোচ্ছে দেখে বিরক্ত লাগল রুচিরার। তার মানে বারুণী আজও এলো না মনে হচ্ছে। সপ্তাহের মাঝখানে না বলে ছুটি নিলে কী যে বিপদ হয়। এখন কী করে রান্নার ব্যবস্থা হবে, কখন নিজে তৈরি হবে, সাড়ে আটটার মধ্যে না বেরোলে অফিসের বাস পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকে না। তার মানে পাবলিক বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা, প্রচন্ড ভিড় আর তারপরও দেরি হয়ে যাওয়া। প্রসূন এখনো ওঠেনি কিন্তু এক্ষুনি উঠে চা চাইবে। তাড়াহুড়োয় খালিপায়েই রান্নাঘরে ঢুকে গ্যাসটা আগে ধরাবে নাকি হট প্লেটে চা বসিয়ে প্রেসার কুকারটা স্টোভে বসাবে, ভাবতে ভাবতেই চায়ের জল ফুটে উঠেছে। এইতো গত সপ্তাহেই ছুটি নিল বাড়িতে কার অসুখ বলে। অসুখ শুনলে কিছু বলে না রুচিরা। এটাও সত্যি বারুণী ছুটি নেয় কম। অন্তত না বলে নেয় না। কাজও করে যত্ন করে গুছিয়ে, কিন্তু রুচিরাই বা কী করবে। বাড়ির সব কাজ পড়ে আছে, কিছুটা অন্তত না সামলে বেরোবে কী করে। অথচ পাঁচ মিনিট দেরি হলে মনে মনে সেই সাংঘাতিক উৎকন্ঠা পাঞ্চ করা যাবে কি না। দিনের পর দিন এই প্রচন্ড টেনশন টানা মাঝে মাঝে অসম্ভব মনে হয়। এমনকি দু চারদিন যখন ঠিকমতো চলে সবকিছু, সংসারে আর অফিসেও, তখনও মাথার মধ্যে কী একটা অনিশ্চয়তা লেগে থাকে। সব সময়েই মনে হয় এই যেন দেরি হয়ে গেল। এক্ষুণি ভুল হয়ে যাবে কিছু একটা। যেন কাচের উপর দিয়ে চলছে- যে কোন মুহূর্তে যে কোনও জায়গা ফেটে যেতে পারে। এই যে জামাকাপড়, বিছানাপত্র পড়ে থাকবে এরকম অগোছাল, ফিরে এসে এগুলো তুলতে হবে তাকেই। যতোই বিশ্রাম চাক শরীর। প্রসূনের পক্ষেও সম্ভব নয় একটুও সময় বার করা, তা ছাড়া ওর এসব কিছু চোখেও লাগে না, দিব্যি না তোলা বিছানায় ঘুমিয়ে পড়বে সাতদিন। নাইট ডিউটি থাকলে তবু খানিকক্ষণ একা বাড়িতে থাকে, তখন রুচিরার সঙ্গে দেখা হয় না বললেই চলে। সে ফেরে সন্ধ্যে প্রায় সাতটায় আর প্রসূনকে বেরুতে হয় নটায়। ভোরের ডিউটিতেও তাই- প্রসূন যখন বেরোয় রুচিরার চোখে ঘুম। এইসব বিবেচনায় সন্তান নেওয়ার কথা আর ভাবে না তারা। অথচ, দুজনের চাকরি না করলেও নয়। জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া ছাড়াও রুচিরার মা আছেন, জ্যেঠিমাও আছেন। দুজনেরই বয়স সত্তরের ওপাশে। থাকেন দুর্গাপুরে। হেলথ ইন্সিওরেন্স করা থাকলেও আরও দায়িত্ব রয়ে যায়। প্রসূনের ছোটভাই মানসিক হাসপাতালে থাকে, বাড়িতে মা। দুটো সংসারকে এক জায়গায় নিয়ে আসাও সম্ভব না, কাজেই খরচ আর যাতায়াত – দুটোই চলতে থাকে। প্রসূনের ভাই রণেন ঠিক পাগল নয়, মাঝে মাঝে কিছু অদ্ভুত এটাক হয় ওর- যে কোন উঁচু জায়গা থেকে লাফিয়ে পড়ার চেষ্টা করে তখন। সারাক্ষণ কাগজ ছিঁড়তে থাকে। অন্যসময় শান্ত। ওকে যেখানে রাখতে হয়েছে সেখানকার খরচ যথেষ্ট বেশি কিন্তু তবু এটুকু জানা আছে যে ঠিকমত যত্ন হয়। একটা ধারাবাহিক চিকিৎসাও চলে। রণেন দাদা বৌদিকে ভালোবাসে। ঠিক থাকলে নিজের অসুস্থতা নিয়ে সংকুচিত হয়। তাকে দেখতে যেতে হয় মাসে অন্তত দু বার। এটা ওই হোমের নিয়মের শর্ত। তবু তো তারা আছে তাদের বয়সী অনেকের থেকে সুবিধাজনক অবস্থায়- এই কথার সান্ত্বনায় দিনের পর দিন সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগাকে মেনে নেয় নিজেরা। একঘেয়ে চকচকে বেঁচে থাকা। আর সবসময় ভয়, ক্লান্তিতে যদি কিছু ভুল হয়, পাছে এই রুটিন ভেঙে যায়। খবর না দিয়ে, না বলে বারুণীর না-আসাও কোথাও একটা ধাক্কার মত সেখানে।
কী করব বৌদি আমার শাশুড়ি অনেক দিন ধরে ভুগছে। বাড়িতে আর তো কেউ নেই যে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে আর এইসব মেয়েছেলের অসুখ ছেলেরা তো যেতেও পারবেনা। যাবেই বা কে বলো আমার বর তো একদিন যদি কাজে না যায় তাহলে ওকে হয়ত ক’দিন আর নেবেই না। অন্য কেউ ঢুকে পড়বে। তাই আমাকেই শাশুড়িকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবার একদিন। কাল যন্ত্রণায় এমন আছাড়িপিছাড়ি করছিল যে আমি আর আসতে পারলাম না। আমার ছেলেমেয়েগুলোও ভয় পাচ্ছিল আর মানুষটাকে ওরকম রেখে কি করেই বা আসি। একটু জলও তো মুখের কাছে তুলে দিতে হয়- কোনরকমে কথা বলতে বলতে হাতে হাতে কাজ শেষ করছিল বারুণী। খুব তাড়াও থাকে দু’ জনেরই। কোনও রকমে আটটার মধ্যে রান্না, বাকি কাজ শেষ না হলে রুচিরার চলে না। বারুণীরও দাঁড়াবার সময় থাকে না, তাড়াহুড়ো করে এক কাপ চা-ও খাবার সময় হয় না। ছুটে বেরিয়ে যায়। ছ’টা বাড়িতে রান্নার কাজ করে ও।
রবিবার যদিও সেই একই কথা ওঠে আবার-
বৌদি, বড় হাসপাতালে তোমাদের চেনা কোনও কেউ নেই গো? শাশুড়িকে নিয়ে যে যাব, কোথায় যাব, কাকে শুধাব আমরা মুখ্যু মানুষ চোখ থাকতে কানা। বেশি যদি ঘোরায়, তবে কী করে মানুষটাকে নিয়ে যাব বলো? রুচিরা বলে সে খোঁজ করে দেখবে। প্রসূন খুব কিছু বলতে পারে না। তাদের কোম্পানির নিজেদের হাসপাতাল বলে ওদের বাইরের সাধারণ চিকিৎসার খবর জানা নেই সে ভাবে। টিভিতে ফুটবল খেলা চলছে, রবিবার বাজারটা করে দিয়ে সে আর কোনওদিকে তাকাতেই চায় না। রুচিরা চা জলখাবার নিয়ে এসে কাছে বসলে খুশি হয়, এই অবধি। পাড়ার মধ্যে অকারণ কতগুলো ঝামেলা হচ্ছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাড়ার মোড় অবধি গেলে রিক্সাস্ট্যান্ড। তার সামনেই বাসস্ট্যান্ড। বাস মিনিবাস অটো সবই দাঁড়ায়। গোটাকতক পুরোন বড় সিসুগাছ ছিল, হঠাৎ দেখা যাচ্ছে কারা সেগুলোকে কাটতে শুরু করেছে। রোদের দিনে ওখানে গাড়ির অপেক্ষায় যারা দাঁড়িয়ে থাকে তাদের সংখ্যা কম নয়। এক দু’ জন করে তারা অনেকেই আপত্তি করেছে ওই গাছকাটা নিয়ে কিন্তু কারা যে কাটছে, সেটা স্পষ্ট নয়। একদিন সন্ধ্যেয় ফেরার পথে রুচিরা খেয়াল করে মোড়টা অস্বাভাবিক খালি। খেয়াল করার মত খালি আর চুপচাপ। তার ফ্ল্যাটের পাশের দরজার সামনে দু তিনজনের একটা ছোট জটলা থেকে মুখচেনা এক মহিলা এগিয়ে এসে বলেন,
এত দেরি হল তোমার? কিছু ঝামেলায় পড়ো নি তো?
না! কী হয়েছে? রুচিরা কিছুটা চকিত হয়। প্রথমেই তার মনে পড়ে প্রসূনের বি শিফট। রাত সাড়ে দশটা হবে ফিরতে।
না না…ভয় পাবার কিছু নয়। এখন রুচিরা দেখে মহিলার স্বামী সুবলবাবুও দাঁড়িয়েছিলেন ওখানে। তিনি বলেন সন্ধ্যের গোড়ায় হঠাৎ করে রিক্সাওয়ালাদের সঙ্গে পাড়ার কিছু ছেলের কথা কাটাকাটি হয়। আর, কয়েকটা হাতবোমা পড়ে আচমকা। সেই চিৎকার চেঁচামিচির মধ্যে গাছ কাটলে কার কার গায়ে লাগছে, বুড়ো হয়ে যাওয়া শুকনো গাছ লোকের মাথায় ভেঙে পড়বে বলে কেটে নিচ্ছে, তাতে কার… এইসব কথা শোনা গেছে। এদের মুদি দোকান আছে বাজারে। রাত নটা সাড়ে ন’টায় ছেলে দোকান বন্ধ করে মোটর বাইক নিয়ে ফেরে- তাই উৎকন্ঠিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সুবলবাবু বলেন,
না না, ভাবনার কিছু নেই। আপনি ঘরে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে বিশ্রাম করুন। আপনার কর্তাটি ডিউটিতে নাকি?
হ্যাঁ, বি-শিফট। কিছুটা কাঁচুমাচু মুখে বলে রুচিরা। মহিলা এবার কিছুটা অভয় দেবার মত করেই বলেন,
চিন্তা করবেন না। ডিউটির সব তো দল বেঁধে ফেরে। আর, আমরা তো রইলাম। এই তো সাড়ে সাতটা বাজল, দেখতে দেখতেই এসে পড়বে।
বসতে পেলে বাসে চল্লিশ মিনিট অফিস যাওয়ার রাস্তাটা বেশ ভালো লাগত আগে। উঁচুনিচু সবুজ মাঠ দুপাশে, দূরে দু’ চারটে গাছ। গত পাঁচবছর ধরে সেই ল্যান্ডস্কেপ কেমন পালটে যাচ্ছে। একটাদিকে ক্রমশ পাহাড়ের মত মাটি উঁচু হয়ে উঠছে। না-জানা লোক ভাববে পাহাড় কিন্তু আসলে ওটা খোলা খনি তৈরি হচ্ছে। বাসে এসব কথা হয় এক একদিন। একটু ফিচেল কেউ বলে, এটা তো খনি এলাকা, আমাদের এই সব রাস্তার নিচে সব পুরোন আমলের খনির সুড়ঙ্গ আছে, কোনদিন ধসে যাবে সবসুদ্ধ। আবার অনেকে বলে,
আরে দূর! এগুলো তো পুরোন আমলের কয়লাখাদান, সুড়ঙ্গ কাটা। সরকারি। ওই পাহাড় হয়ে থাকা মাটি হল পাথরের খনি হে, যার যার নিজের। ওগুলো সব সরকারি নয়, প্রচুর প্রাইভেট। ও এখানে বরাবর আছে, আগে এইদিকে ছিলো না তাই চোখে পড়ে নি। কিন্তু দেখতে ভালো লাগে না রুচিরার। ওগুলোও যেন কিসের একটা ইঙ্গিত। তা হলে কী এইসব মাঠ গাছপালা এসবও লোপ হয়ে যাবে ওই বিরাট সব গর্তের ভেতর? তাদের চাকরিবাকরির মতো, কোনও কিছুরই স্থিরতা থাকবে না আর? অফিসে একটা যোগাযোগ পাওয়া যায়। তার পাশের টেবিলের শর্মিষ্ঠার বরের পরিচিত কেউ সদর হাসপাতালের ডাক্তার। গাইনি সেকশানে সে বলে দিতে পারে। কিন্তু কী হয়েছে? ঠিক কী হয়েছে তা অবশ্য জানে না রুচিরা। সে একটা কাগজে ডাক্তারের নাম লিখে বারুণীকে দেয়। সঙ্গে একথাও বলে দেয় যে এই শনিবার তাদের কলকাতা যেতে হবে দেওরকে দেখতে, কাজেই এ সপ্তাহে বারুণী শাশুড়িকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে পারবে না। ডাক্তার দেখানো বারুণীরও দরকার। তার পায়ের শিরাগুলো বিচ্ছিরি রকম নীল হয়ে ফুলে আছে। দাঁড়াতে পারছে না বেশিক্ষণ। একটা মোড়া দিয়েছে রুচিরা, বসে কাজ করার জন্য কিন্তু তাতে বিশেষ সুরাহা হয় না। মাঝে মাঝেই হতাশ ভাবে বলে,
কতদিন আর এরকম পারব বৌদি, শেষে পা-টাই যদি চলে যায়! বাড়িতে বসে আমাকে কে খাওয়াবে বলো?
তোমার বর তো যা হোক কাজ করে। কিছুদিন বাড়িতে থেকে একটু বিশ্রাম নিলে পারতে। করুণভাবে হাসে বারুণী,
আমার বাবা মরে যেতে মা লোকের বাড়ি বাসন মেজে আমাদের তিন ভাইবোনকে বড়ো করেছে। ইস্কুলে যাবার কথা কেউ ভাবেও নি। আমি আর দিদি কতো ছোট থে’ মায়ের বাবুঘরে যেতাম। মায়ের সঙ্গে কাজ করতাম। আমি কাজ করি বলে আমার ছেলেমেয়েগুলোকে পড়তে পাঠাই বৌদি। ওদের জীবন যেন আমার মত না হয়। আমি বসে পড়লে ওদের কী হবে বল? সেই কথা মনে করে ই হাড়ভাঙা খাটনি খাটি। গ্রীষ্ম বর্ষা মানি নে। রবিবার বলে এককাপ চা একটা রুটি খেতে খেতে কথা বলছিল বারুণী। খানিক পালং শাক ছাড়িয়েও দিয়েছে।
তোমার বাবা কী কাজ করত?
তেমন কাজ কিছু ছিল না, লোকের জমিতে খাটত। তখনও আমাদের ওই শীতলপুরে লোকের জমিজমা ছিল গো। গাছপালা ছিল, ছাগল মুরগি। তারপর বাবা মরতে কাকার ঘরে ছিলাম। তা কতদিন রহা যায় বল? সে ঘরও গেল। সব জমি পাথর খাদান হয়ে গেল। আমাদেরও পাকা ঘর। কিন্তু হাতে তো কিছু নাই।
ফাল্গুন মাসের রোদ ধীরে ধীরে চড়ছে। বাসস্ট্যান্ডের গাছগুলো অদৃশ্য হয়ে গেছে। রিক্সাস্ট্যান্ডের একটু পাশে সরে তিনটে অটো দাঁড়ায় আজকাল। হাসপাতালের ডাক্তার ভালো করে দেখেছেন বারুণীর শাশুড়িকে। মেয়েছেলে ডাক্তার- বলল বারুণী। কিন্তু অপারেশান করাতেই হবে। খুব নাকি বকাবকি করেছে এতো দেরি করে নিয়ে যাবার জন্য। নাকি ক্যান্সার হয়ে যেতে পারত। কিন্তু হয়েছে কী? এবারে বারুণী ভেঙে বলে,
জন্ম দিবার ঘরট’ ঝুলে একেবারে শরীলের বাইরে চলে আসেছে। সে জন্যই যন্তন্না। কী করে বলবে বল ত? রুচিরা শিউরে ওঠে,
সে কী! কী করে হয়েছিল? আগে কোনদিন ডাক্তার দেখাও নি? এ জিনিসের জন্য কেউ ডাক্তার দেখায় না, এমনি ওষুধপালা করে। বেঁধে রাখে। তাকে বলে বারুণী। অমন অনেক মেয়ের আছে। আগে এইদিকে গ্রামের কাছে পাথরখাদানের ক্রাশার মেশিন ছিল। আশপাশের গ্রামের লোকেরা সেখানে কাজ করত। ট্রাকে করে বড় বড়, এক মন দেড় মনের পাথর এনে ঢালা হতো, মেয়ে কামিনদের কাজ ছিল সে পাথর ঝুড়িতে তুলে ক্রাশারে ঢেলে দেওয়া। সকাল থেকে বেলা তিনটে অবধি। ছেলেরা মুখে কাপড় বেঁধে ক্রাশার চালাত। পাথরের গুঁড়ায় সবদিক কালো হয়ে থাকত। তারপর অনেক গোলমাল হয়েছিল সব জায়গায়, তখন গ্রামের সামনাসামনি থেকে ক্রাশার সব তুলে নিল। যে মেয়েরা ঝুড়ি করে সারাদিনে বিশ পঁচিশ মন পাথর তুলত, তাদের প্রায় সকল জনারই ওই অসুখ হতো। কেউ কাছাকাছি ডাক্তার কবিরাজ দেখাত। বাকিরা কোনওমতে চালাইছে। এখন তবু যে মেয়েরা বাবুদের বাড়ি আসে, তাদের একটু চোখ ফুটেছে। এই যেমন বারুণীর। রুচিরার কল্পনাও কেমন হাবাবোবা হয়ে যায়।
তবে আসল কথাটা চাপা থাকে না। বারুণীকেই তো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, সঙ্গে থাকতে হবে। কতো বড়ো অস্তর করা, ঘরের বাইরে গিয়ে মরে যাবে কিনা, এইসব ভেবে তার শাশুড়ি সারাদিন কাঁদছে। ননদরা দেখতে এসেছে কিন্তু তারা কেউ দায়িত্ব নিতে পারবে না। কী করে নেবে? তারা বাইরে কখন যায় নি, তার ওপরে তারাও তো অন্য ঘরের বৌ। বারুণীর ছোট জা আটমাসের পোয়াতি। কাজেই বারুণীকে তো অন্তত দশ-বারো দিনের ছুটি নিতে হবে। বৌদি কি করবে তাহলে? অন্য বাড়ি কটার বৌদিরা কাজ করে না। তারা কোনরকমে চালিয়ে নেবে। একজন নিজের দোকান চালায়, তার শাশুড়ি আছে। কিন্তু বৌদি কী করবে? সে কি অন্যলোক দেখবে? ফুটে বলে না বারুণী, কিন্তু একথাই ভাবে। বৌদির সুবিধার সঙ্গে তো তারও একটু সুবিধা জড়ানো। রুচিরা ভাবে- এই সমস্যার কোথায় সমাধান? আজকে কাল তার পরের দিন… শুধু কি জন্মেরই ধারা বহে আনা? শ্রমের ধারা, চেষ্টার ধারা, যন্ত্রণার…