বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[শিল্প]
“একশো বছর হয়ে গেল লেনিন এসেছিলেন।”
১৯৭০ সালে সুভাষদার লেখাটা শুরু হয় এই কথাগুলো দিয়ে। ষাট-সত্তর দশকে আমাদের তখনকার আন্দোলনের কার্যত ‘মুক্তাঞ্চল’ বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের ন’তলায়। ক্যান্টিনে। উপলক্ষ্য, লেনিন জন্মশতবার্ষিকী। একটা টেবিল-চেয়ারে বসে লেখা শুরু হয়েছিল। এই লেখা সুভাষ গাঙ্গুলিদের তদানিন্তন রাজনৈতিক সংগঠন ‘জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ (এনএলডিএফ)-এর মুখপত্রে ছাপানোর জন্য নয়। লেখা হচ্ছিল দীপক পিপলাই-দের রাজনৈতিক সংগঠন ‘কমিউনিস্ট বিপ্লবী সংস্থা’ (সিআরও)-র মুখপত্র ‘ভিত্তি’ পত্রিকার জন্য। তখন চারু মজুমদার-সরোজ দত্তদের আত্মঘাতী লাইনের পরিণামে, বিপ্লবী শিবিরে শুরু হয়ে গেছে খুনোখুনির ‘রাজনীতি’! সিপিআই(এম-এল) এখানে-ওখানে খুন করছে বিভিন্ন ‘সূক্ষ্ম সংশোধনবাদী’, ‘মধ্যপন্থী’, ‘জোতদার শ্রেণীর তাত্ত্বিক প্রতিনিধি’ ইত্যাদি বলে দেগে দেওয়া বিপ্লবীদের।
এনএলডিএফ এবং সিআরও (‘ভিত্তি’) তখন যৌথভাবে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক – অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে শহরে (ছাত্র ও শ্রমিকদের মধ্যে) এবং গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে। সিপিআই(এম-এল) দলের ‘বাম’-বিচ্যুতিপূর্ণ লাইনের বিরোধী এবং সমান্তরাল লাইন হিসাবে। এনএলডিএফ-এর কর্মীরা বারবার গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক লেখা লিখছেন ‘ভিত্তি’ পত্রিকার জন্য। ‘জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ পত্রিকাটি মাঝেমাঝে প্রকাশিত হতো। সম্ভবত গোটা দশেক সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। আর যৌথভাবে আদিবাসী (স্থানীয় ভাষায় ‘বুনো’) অধ্যুষিত গ্রামাঞ্চলে সর্বক্ষণের কর্মী হিসাবে, বিপ্লবী কর্মকান্ডের উদ্দেশ্যে তাদের সংগঠিত করার উদ্যোগ একত্রে চালিয়ে যাচ্ছিলো এই দুটি সংগঠন। অর্থাৎ, পরিমল ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ এবং সুধীর (বুধু) চ্যাটার্জীর নেতৃত্বে পরিচালিত ‘ভিত্তি’। ফলে বারবার সিপিআই(এম-এল) এবং এমসিসি (মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার) দলের ‘শ্রেণীশত্রু খতম’ অভিযানের টার্গেট হয়েছেন তাঁরা! জোতদার-জমিদারদের পরমপ্রিয় কংগ্রেসী দলটির কথা আলাদাভাবে বলতে যাওয়া বোধহয় বাহুল্য।
‘বুর্জোয়া সংস্কৃতি’-র উপর আঘাত হানার লাইন কার্যকর করতে গিয়ে, সায়েন্স কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত শম্ভু ভট্টাচার্যের ‘রানার’ নৃত্য এবং স্বপন গুপ্তর রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে অনুষ্ঠিতব্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও হামলা চালাবার পরিকল্পনা ফেঁদেছিলেন তাঁরা, সিপিআই(এম-এল) দলের ‘বিপ্লবী’-র নেতৃত্বে! আগের দিন ‘রেইকি’ করতে এসে, ধাতব কৌটোয় তার দিয়ে বাঁধা উচ্চ বিস্ফোরণ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা তাঁরা রেখে যান বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। আমরা দেখে ফেলি। এবং সেই বোমা একটা কাঠের ট্রেতে রেখে, ক্যান্টিনে প্রদর্শন করি সকলের জন্য। অনুষ্ঠানের দায়িত্বশীল সংগঠক হিংসাবে, পিজিএসএফ-এর তরফ থেকে আমরাও যথাযথ প্রস্তুতি নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। জড়ো হওয়া দর্শকদের জীবনরক্ষার স্বার্থে।
সুভাষদাই তখন ছিলেন আমাদের পিজিএসএফ-এর নেতা। সুনীল বিশ্বাস, সনৎ ভট্টাচার্যের পর সুভাষচন্দ্র গাঙ্গুলি। এটাই ছিল বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে বিপ্লবী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বের পরম্পরা।
‘জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ পত্রিকার অন্যতম প্রধান তাত্ত্বিক লেখক ছিল সুভাষদা। বলা বাহুল্য, দুটি আলাদা সংগঠন মানেই ভিন্ন রাজনৈতিক মতামতও বটে। কিন্তু আমাদের মধ্যে এই ভিন্নতা ছিল সুস্থ মতাদর্শিক সম্পর্কের ভিত্তিতে। তাই ৫৬ বছরে নানা বিষয়ে মতান্তর হলেও, মনান্তর কখনোই হল না। সম্পর্ক এতটুকুও দুর্বল বা কলুষিত হল না। বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া এবং মতের আদানপ্রদানের মাধ্যমে তা আরও, আরও বেশি পোক্ত হয়ে উঠলো। আমৃত্যু।
সুভাষদা’র চিন্তা-ভাবনায় উথালপাথাল হয়েছে পরবর্তীকালে। আসলে কোনও কিছুতেই প্রশ্নহীন মান্যতা ছিল না তাঁর। রাজনীতির কোনও হিসেবই তখন মিলছে না; সব ‘তাত্ত্বিক’ নির্মাণই যেন প্রশ্নবোধক চিহ্নের মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে! অন্ধভক্তি নিয়ে বিচার করলে অবশ্য সবকিছুই ‘স্বাভাবিক’! সৎ এবং গভীরতম অনুসন্ধিৎসা ছিল মানুষটার প্রকৃত চালিকাশক্তি। ফলে, সারাটা জীবন শুধু বদলেই গেল সুভাষদা। অপরিবর্তিত রইলো শুধু তাঁর প্রশ্নহীন সততা, আন্তরিকতা, এবং জ্ঞানান্বেষণের তীব্রতম আকুতি।
ষাটের দশকে প্রেসিডেন্সী কলেজে পরিসংখ্যান বিভাগের ইংরেজিতে দুর্বল ‘গেঁয়ো’ ছাত্র সুভাষ যেমন একবিংশ শতাব্দীতে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একশোটি গান ইংরেজিতে অনুবাদ করেন; শঙ্খ ঘোষের সমর্থন নিয়ে তা ‘প্যাপিরাস’ থেকে বই আকারে প্রকাশিতও হয়। ষাটের দশকে হিন্দু হস্টেলে অনশন আন্দোলনের সৈনিক এবং সত্তর দশকে বিপ্লবী আন্দোলনের শরিক হিসাবে জেলখাটা ‘নকশাল’ সুভাষ যেমন শেষ জীবনে প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছিলেন। যৌবনের আইডল মার্কস-এঙ্গেলস সম্পর্কে প্রৌঢ়ত্বে এসে তাঁর বক্তব্য, “ওঁদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরও বেড়েছে, কিন্তু ভক্তি কমেছে।” কতটা সাহস এবং গভীর অনুশীলনের পর এই মন্তব্য করা সম্ভব, তা অনুমেয়।
জ্ঞানান্বেষী সুভাষদা দেখনদারি রাজনীতি এবং আত্মপ্রচারের মানসিকতাকে গভীরভাবে ঘৃণা করতেন। তাঁর যতটুকু নড়াচড়া চাক্ষুষ করেছেন সকলে, লোকচক্ষুর আড়ালে সুভাষ গাঙ্গুলির ভুমিকা আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সুভাষদা অনেকদিনই রাজনৈতিক কাজকর্ম থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তবুও, কানোরিয়া জুটমিলের গেটে যখন শ্রমিক নেতারা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন নব্বইয়ের দশকে, ‘ভিত্তি’ সংগঠনের ভূতপূর্ব সর্বক্ষণের কৃষক সংগঠক ‘সুরেনদা’ (রতিকান্ত হাজরা)-কে সঙ্গে নিয়ে সুভাষদাকে দেখি সেখানে উপস্থিত। কেন? ২০০৭ সালে যখন কৃষকদের নেতৃত্বে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে, পরবর্তীকালে ‘নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতৃত্ব’ হিসাবে প্রচার পাওয়া অনেক রাজনৈতিক মোড়লরা যখন নন্দীগ্রামের ধারেকাছেও ঘেঁষেনি, সুভাষদা কিন্তু তখনই সেখানে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। কোন তাগিদ থেকে? আসলে রাজনৈতিক বিচারে ‘অচল’ সুভাষ গাঙ্গুলির মস্তিস্ক ছিল অকল্পনীয় ‘সচল’। যা তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাকে করে তুলেছে আরও গভীর।
বছরের পর বছর, রাতের পর রাত নিরলস, ছেদহীন, গভীর তাত্ত্বিক অনুশীলনের লাগাতার প্রক্রিয়ায় সুভাষদার Biological Clock-ও যেন গেল পাল্টে! আমাদের রাত তাঁর কাছে হয়ে গেল ‘দিন’ – শুধু পড়া, পড়া, আর পড়া। সারা রাত, এবং দিনের জেগে থাকা সময়টুকুও জুড়ে। রাশিবিজ্ঞান, গণিতবিদ্যা, মার্কসবাদ, মানবসভ্যতা, দর্শনশাস্ত্র, মানবাধিকার, শিক্ষাব্যবস্থা, মনস্তত্ত্ব, কোয়ান্টাম মেকানিক্স … কোথায় নেই সুভাষ গাঙ্গুলি!
‘মার্কসবাদ’ এবং ‘বিজ্ঞান’ সম্পর্কে সুভাষদার গভীর অনুশীলনজাত পরবর্তী-উপলব্ধি তাঁর একাধিক প্রবন্ধে তিনি প্রকাশ করেছেন। অনেকেরই তাঁর উপর রুষ্ট, ক্ষুব্ধ, বিরক্ত হবার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু তাঁর পরিবেশিত ক্ষুরধার বক্তব্যের বিপক্ষ-যুক্তি কবে আমরা দেখতে পাবো, তার জন্য অপেক্ষায় আছি।
কোনও কাজে অনেকেই থাকলেও, তাঁদের মধ্যে কারও ভূমিকা হয়ে ওঠে প্রধান। ‘গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি’ (এপিডিআর) গঠনপ্রক্রিয়া সম্পর্কেও একথা প্রযোজ্য। প্রবীণ বিপ্লবী সুশীল বন্দ্যোপাধ্যায় (‘দাদু’)-র উৎসাহে যে ক’জন মুষ্টিমেয় তরুণ-তরুণী (সুভাষ গাঙ্গুলি, সঞ্জয় মিত্র, ভারতী চ্যাটার্জী, দিলীপ চৌধুরী) দৌড়ঝাঁপ করে সংগঠনটি দাঁড় করিয়েছিলেন, তার মধ্যেও প্রধান ভূমিকা ছিল সঞ্জয় মিত্র এবং সুভাষ গাঙ্গুলির। সত্তরের দশকে, এপিডিআর প্রকাশিত ‘ভারতীয় গণতন্ত্রের স্বরূপ’ নামক ঐতিহাসিক দলিলটির আগাগোড়াই সুভাষদার লেখা। বইটির অসামান্য প্রথম শৈল্পিক প্রচ্ছদ সৃষ্টিতে যে চারজনের ভূমিকা অবশ্যইমউল্লেখ্য, তাঁরা হলেন ভারতী
(চ্যাটার্জী/ গাঙ্গুলি), দিলীপ (চৌধুরী), শঙ্কর (চ্যাটার্জী), এবং হিরন (মিত্র)। ‘জরুরি অবস্থা’ চলাকালীন সময়ে ছাপাখানায় পুলিশী হামলা; ‘পরিশিষ্ট’ সহ অনেকগুলি পাতা এবং সীসার সমস্ত অক্ষর বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যাওয়া; মালিককে গ্রেপ্তার; ইত্যাদি বহুকিছুই এই বইয়ের প্রাসঙ্গিক ইতিহাস। সুভাষদার আবার পলাতক জীবন শুরু, তখনই। আগেই ছাপা হয়ে যাওয়া অংশগুলি গোপনে নিজের হেফাজতে রেখেছিলেন আইএসআই-এর প্রফেসর (অধুনা প্রয়াত) অমিতদা, অমিতাভ বসু। আজকের মতো নিরাপদ মুদ্রণের কথা তখন ভাবাই যেতো না! ছাপাখানায় সবমিলিয়ে তখন দেনা হয়েছিল আট হাজার টাকা; সোনার দামের বিচারে, যা বর্তমানের প্রায় দশ লক্ষ টাকার সমান। এপিডিআর-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম যুগ্ম-সম্পাদক সঞ্জয়দা (মিত্র) তখন বাড়িবাড়ি টিউশনি করে করে ব্যক্তিগতভাবে সেই পুরো টাকাটা পরিশোধ করেছিলেন পরবর্তীকালে।
কলকাতা হাইকোর্টে একসময়ে অত্যাচারী পুলিশ অফিসার রুনু গুহনিয়োগীর বিরুদ্ধে সাড়া জাগানো ‘অর্চনা গুহ মামলা’চলছিল। ‘ফ্রন্টিয়ার’পত্রিকায় সুভাষদা একটা চমৎকার লেখা দিয়েছিল এই মামলা নিয়ে। সর্বভারতীয় স্তরে ‘শ্রেষ্ঠ মানবাধিকার সাংবাদিকতা’বিচারে, ১৯৯৭ সালে, পিইউসিএল আহমেদাবাদের সম্মেলনে সুভাষদাকে সম্বর্ধনা এবং কুড়ি হাজার টাকা পুরস্কার দেয়। ফিরে এসে, সুভাষদা ১৮,০০০ হাজার টাকা ‘ফ্রন্টিয়ার’-কে এবং ২,০০০ টাকা সৌমেন গুহ (অর্চনা গুহর ভাই)-কে দেন সহযোগিতা হিসাবে।
কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক একটি মামলায়, অত্যাচারিত পক্ষের অন্যতম আইনি পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করেছিলেন সুভাষদা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জনৈক ব্যক্তির ডক্টরাল থিসিসের পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণের পুরো কাজটিই করে দিয়েছিলেন সুভাষদা। নাম-যশ-খ্যাতি-নেতৃত্ব-অর্থের হাতছানিকে চিরকাল অবজ্ঞা ছিল সুভাষ গাঙ্গুলির বৈশিষ্ট্য। সে’জন্যেই তিনি অনন্য, শ্রদ্ধেয়। যে’কাজেই তিনি যখন যুক্ত হয়েছেন, তার মধ্যে কোনও ফাঁক কিম্বা ফাঁকি ছিল না। যেখানেই সুভাষদার মনে হয়েছে ঘোষিত লক্ষ্যের প্রতি উদ্যোক্তাদের সৎ-আন্তরিকতার অভাব আছে, তিনি সেখান থেকে নীরবে সরে এসেছেন।
একটা কথা এখানে না বলে পারছি না। পুলিশী অত্যাচারে আমি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী তখন। ১৯৭৩ সালের কথা। ‘পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা’-র পরিস্থিতি। আমার অতি ঘনিষ্ঠ স্বজনরাও আমাদের সংশ্রব এড়িয়ে চলে। আত্মগোপনে থাকা সুভাষদা তখন কংগ্রেসী গুণ্ডাদের দাপটে এলাকাছাড়া দিলীপ (চৌধুরী)-কে নিয়ে আমার কাছে হাজির। “টাকাপয়সা লাগবে?” চালচুলোহীন দু’জনের প্রশ্ন! প্রকৃত আত্মীয়তা এভাবেই গড়ে ওঠে।
দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় যাঁদের সম্পর্কে সুভাষদার মনে হয়েছিল যে তাঁরা “Pathologically Honest”, তাঁদের কাছে তিনি শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন আন্তরিক, খোলামেলা, স্বচ্ছন্দ। কোনওদিনই গুটিয়ে থাকেননি তাঁদের কাছ থেকে। তাঁদের সঙ্গে বেড়াতে গেছেন; তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দিনের পর দিন থেকেছেন; নিমন্ত্রণে গিয়ে হাসিমুখে খাওয়াদাওয়া করেছেন। বিন্দুমাত্র বাধা ছিলনা।
সুভাষদার অনেক ছাত্র আজ বহু জায়গায় প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী। এমআইটি থেকে শুরু করে নানা সংস্থায়। ফোনে কথা বলতে গেলেই তাঁরা অশ্রুজলে ভাসছেন, অসীম শ্রদ্ধাশীল বেদনায়।
কয়েকদিন আগের কথা। কর্কটের কামড় এবং দু’বার কেমোথেরাপির ধাক্কায় সুভাষদা তখন ক্লান্ত, একেবারেই শয্যাশায়ী। একদিন বিকালে অত্যন্ত ক্ষীণ কন্ঠে কোনওরকমে আমাকে ফোনে বললেন - “দী-পু, অ-বস্থা খু-উ-ব ঢিলে!” স্বর প্রায় বেরুচ্ছে না! আমি বললাম, “ঠিক আছে। পরে কথা হবে।” ৫৬ বছরের সম্পর্কে অন্তিম বাক্যালাপ!
সুভাষ গাঙ্গুলির অবর্তমানে, পৃথিবীটা আরও যেন তমসাচ্ছন্ন হয়ে গেল আমার কাছে! মানুষ অনেক আছে, থাকেই। কিন্তু ‘সুভাষদা’ খুঁজে পাওয়া মুশকিল! বর্তমান সমাজে যাঁদের বড্ড বেশি প্রয়োজন।