বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[শিল্প]
সলিল চৌধুরীর বাবা আসামের চা বাগানের ডাক্তার ছিলেন। লেখাপড়ার জন্য তিনি সুভাষগ্রামে রেলগেটের কাছে মামাবাড়িতে চলে এলেন। কলেজে পড়তে পড়তে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলেন। ১৯৪৬ সালের ২৬ জুলাই ‘ডাক ও তার’ শ্রমিক ধর্মঘটের সমর্থনে সুভাষগ্রামে রেল লাইনের উপর সমাবেশ হচ্ছে। বিক্ষোভ সমাবেশে যেমন হয়, অনেকে স্লোগান দিচ্ছে, কেউ বক্তৃতা দিচ্ছে, কেউ গল্প গুজব করছে। দেখা গেল সলিল চৌধুরী রেল লাইনের উপর বসে রেলের পাথর নিয়ে কখনো দুটো পাথর ঠুকছেন, কখনো পাথর এদিকে ছুড়ছেন, ওদিকে ছুড়ছেন, কখনো একটা পাথর সামনে ছুড়ে মারছেন। পাথর নিয়ে নানা কাজ করছেন। সবাই ভাবলেন, সময় কাটাচ্ছেন। হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠলেন। বললেন, হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। কি হয়ে গেছে? গেয়ে উঠলেন ‘ঢেউ উঠছে কারা ছুটছে’। ওইখানে বসে বসে গানের কথা চয়ন করে কবিতা তৈরি করলেন। পাথর দিয়ে তাল ঠুকে ঠুকে সুর সৃষ্টি করলেন। রেল লাইনের উপর বসে বসেই ওই গান সৃষ্টি করলেন। এই হচ্ছে সলিল চৌধুরী, যাকে বলে সরাসরি সংগ্রামের ময়দান থেকে সৃষ্টি।
আর একবার আমি তেভাগা আন্দোলনের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে ওনাকে চন্দনপিরি গ্রামে নিয়ে যাচ্ছি। যেতে যেতে সলিলদাকে বললাম, একটা কথা জিজ্ঞেস করি, সুন্দরবনের নদী বাঁধ সুন্দরবনের মানুষের জীবনে কী গুরুত্ব, ওখানকার লোকেরা বোঝেন। আর যারা নিয়মিত ওখানে যান, ওখানকার জীবনযাত্রা জানেন, তারা বোঝেন। আপনার গানে আছে ‘রক্তের বাঁধ বেঁধে মোরা কবে বলো শুধবো তা’। রক্তের বাঁধ বাঁধা, এই কথা আপনি কোথা থেকে পেলেন। সুন্দরবনের বাদা এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা যারা জানেন না, তারা তো এই কথা বলতে পারেন না। কীভাবে লিখলেন? সলিলদা বললেন, তুমি ভাবছো কলকাতায় বসে আমি এই গান লিখেছি। না, আমি ওখানে চন্দনপিরি আর আশেপাশের গ্রামে ১৫ দিন গিয়ে থেকেছি। ওখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। ওখানকার নদী বাঁধ দেখেছি। তারপর ওই গান লিখেছি। এই হচ্ছে সলিল চৌধুরী।