বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[শিল্প]

[শিল্প]

পদাতিক

তন্বী হালদার

photo

মানুষের বাচ্চা মানুষ হয়। কিন্তু মানুষ কারে কয়। হাঁটতে হাঁটতে সুধন্য ভাবছিল। সুধন্য তামাম দুনিয়ার উদ্দেশ্যে বিড়বিড় করছিল, “উঁয়ারা মানুষ লয় শুয়ারের বাচ্চা”। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে মাথাটায় গোলমাল হচ্ছে। আর সমস্ত শরীরের ভেতর পা দুটোকে অসম্ভব ভালবাসতে ইচ্ছা করছে। সুধন্য একা নয়। ওদের দলটায় পনেরো জন সুধন্য আছে। যদি নাম বলা যায় তাহলে পনেরো জনের পিতৃ প্রদত্ত নাম আলাদা আলাদা। কিন্তু এখন ওরা একজনই। ওদের উদ্দেশ্য বিধেয় সব একাকার হয়ে গেছে। সব থেকে বড় সুধন্য যে তার বয়েস পঁয়ষট্টি ছুঁই ছুঁই। তাল গাছের মত ঢ্যাঙা এবং দড়ি পাকানো চেহারা। ছুঁচলো দাড়ি। চোখে ছানি পড়ার জন্য কম দেখে। কিন্তু কান দুটো প্রচণ্ড সজাগ। সেই পনেরো জন সুধন্য বাহিনীকে এক প্রকার তাতিয়ে নিয়ে চলেছিল। বলছিল, “নে হাঁট, ভয় খাস না। আজ পর্যন্ত সক্কল যুদ্ধে সেরা সেনারাই হতেছে পদাতিক। শুনিস লাই আগে যখন রাজায় রাজায় যুদ্ধ হতো পদাতিক সৈন্যদের কত্ত দাম ছিল। পদাতিকরাই তো শত্তুর পক্ষের উপর রে রে করে ঝাঁপায়ে পড়তো। তবে কি জানোস, যারা যুদ্ধ করে তারা যুদ্ধটো চায় না, আর যারা যুদ্ধটো করেক না তারা যুদ্ধোটো চায়”।
সুধন্য দলটার সবচেয়ে ছোট সুধন্য হাঁটবার শুরুতে প্রথমে রাগে দাঁত কিড়মিড় করছিল। বিড়বিড় করে গালিও দিচ্ছিল নিজের অদৃষ্টকে। বিরাশি কিলোমিটার হাঁটার পর তার বিষ দাঁত ভেঙে গেছে। নেতানো ভিজে কাপড়ের মতো বার বার শুয়ে পড়ছে। সিনিয়র সুধন্যর কোনও জ্ঞান তার শুনতে ভাল লাগছিল না। বাস্তবিক কারোরই ভাল লাগছিল না। দলের অন্য এক সুধন্য ঘাই মেরে ওঠে, “ঐ কাকা চুপ মারো তো। তোমার বালের পদাতিক বুঝাতে হবেক লাই। শালো মনে হচ্ছে কেউ ঠ্যাঙে দড়ি বিন্ধে হড়হড়িয়ে লিয়ে গেলে বাঁচি”।
পনেরো জন সুধন্যদের একটাই পরিচয় ছিল, “শ্রমিক”। এখনও একটাই পরিচয় শুধু একখানা শব্দ সামনে জুড়েছে, “পরিযায়ী শ্রমিক”। ওপরওয়ালাদের ফাইলে লেখা হচ্ছে ইংরেজিতে ওদের হালহকিকত, “মাইগ্রেটেড লেবার”। বেশির ভাগ সবটাই ঢপবাজি কথা লেখা হচ্ছে ঐ ফাইলের নোটে। বাস্তব চিত্র আলাদা। সেখানে অনেক সুখসুবিধা দেওয়া হচ্ছে এই লোকগুলোকে। সেই কোন মুলুকে গাঁ গঞ্জে পরিবার, পরিজন রেখে কাজে আসে এরা। তিল তিল করে টাকা জমায়। এখন তবু মোবাইলের দৌলতে বাড়ির মানুষের সঙ্গে যখন তখন কথা বলতে পারে। ভিডিও কলে প্রাণের অস্তিত্বের স্বাদ নিতে পারে। সদ্যোজাত কচি কণ্ঠের কান্না দেখে, হাসি দেখে। বৌ বাচ্চাকে চেনায়, “ঐ দেখ বাব্বা। তুর জন্য কত্ত কিছু লিয়ে আসবে”। মরদ চুমা দেয়। বৌ চারপাশ দেখে ঠোঁট টিপে হাসে। “যাঃ বেহায়া”। মরদ জোর খাটায়, “তু দে বটে। একখানা”। ইংরেজি বলে, “পীলিজ”। বৌ চকিতে হরিণীর মতো চারপাশে নজর করে মোবাইলে চুমু দিয়ে ফোন কেটে দেয়। দু’জনেই তারপর বেশ ক’দিনের জন্য সুখ সায়রে ভাসতে থাকে। দূর দেশে যখন এই সুধন্যর দল নিজেদের মধ্যে জটলা করে, কম দামি দেশি দারু খেয়ে নিজেদের মধ্যে মজলিস বসায়, দেশ গাঁয়ের গান, নাচ করে তখন একে অপরের সঙ্গে সুখ দুঃখের গল্প বলে। মন নরম মরদের চোখে কান্না এসে যায়। এক জায়গায় থাকতে থাকতে ওরা দলা পাকিয়ে একটা মণ্ড পাকিয়ে একটা পরিবার হয়ে ওঠে। মালিক পক্ষকে খুশি করতে অনেক সময় একে অপরের সঙ্গে বেইমানিও করে। সেই সাহেবরা যখন এদেশে এসে দেশটার বাপ হয়ে উঠলো, তখন থেকেই এই নীতি চলছে। “ডিভাইড এন্ড রুল” পলিসি। যত সতীর বাহান্ন পিঠ হবে তত লুটে পুটে খাওয়া যায়।
ওরা অসংগঠিত শ্রমিক। ওদের মাথার উপর ভিন্ন ভিন্ন ছাতা। কারও লাল, কারও সবুজ, কারও গেরুয়া। ওদের মালিক জানে ওরা যদি একটা ছাতার তলায় আসে তাহলে ওরা একটা প্রকাণ্ড জলের স্রোত হয়ে উঠবে। ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে, “রাজার গদি বালিশ তোশক”। কারও কারও নতুন আশনাই হয় নতুন শহরে। থেকে যায় নতুন জায়গায়। ঘর বাঁধে। পুরোনো ঘরে পরগাছা বাসা বাঁধে। দিনে দিনে পুরোনো ঘরটা আর দেখাই যায় না। সব কিছু ঢাকা পড়ে যায়। এভাবে পুরোনো সংসার উজার হয়ে যায় অনেকের। সুধন্যরা যখন নিজেদের মধ্যে কথা চালাচালি করে সবাই একটা কথা বলেই, “মুদের মুলুকে যদি কাজ থাইকতো ঘর থুয়ে এত্তদূর আসতে হতো না”।
এই তো মাত্র দু’বছর আগে আমাদের দেশের হুজুর একটা খেলা খেলে দিলে। হঠাৎ করে একদিনের লকডাউন, তারপর টানা একুশ দিনের। না হুজুর কোনও ব্যবস্থা ছাড়াই তালা ঝুলিয়ে দেন। সুধন্যরা ন্যূনতম নিজেদের গোছাতে পারে নি। এলোমেলো হয়ে গিয়ে প্রথমে হতাশায় দিশেহারা হয়ে গেছিল মানুষগুলো। কত বাচ্চা, মেয়েমানুষও ছিল। এই প্রথম তারা শরীরের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে পা’কে জানলো। হাঁটতে শুরু করলো তারা। প্রথমটায় মনে হয়েছিল, “এ কী এমন ব্যাপার”।
হাঁটার শুরুতে নিজেদের অভিজ্ঞতার ঝুলি যে যার মতো উজার করে দিচ্ছিল। এই যেমন বড় সুধন্য বলে, “জানিস তুরা মুই কত্ত হেঁটেছি। হামার বাপ ছিল বাগাল। বাপুকে ভাত দিতে সেই কুঁকড়া ডাকা ভোরে হাঁটতে শুরু করতাম। সুয্যিদেব যখন ইয়া মোচওয়ালা তাগড়া জোয়ানের মত খাড়াইয়া তেজ ঝালতো হামি পৌঁছাতাম ঐ বাগাল দেওয়া ঠনঠনে মাঠে। রোদের আলোতে চোখ ঘোলা ঘোলা লাগতো ঠিক। মাথার চান্দি টুটাফুটা হতো তবু হাঁটতে কুনো কষ্ট লাগতো না। বরং আমোদ লাগতো। রোজ কত্ত কিছু দেখতাম”।
অন্য এক সুধন্য বলে, “আর হামি জানো কাকা, লিখাপড়ার খুব শখ ছিল। বাপ, মাও উস্কাতো, “হ’ তুই লিখ্যা পড়া শিখে ইজ্জতদার মানুষ হবি। শেয়াল, কুকুরের নাহান জেবনে নাই বাঁচবি। মাস্টার হবি, ডাক্টার হবি, উকিলবাবু হবি। কিন্তু উরা জাইনতো না একডা মানুষ একসনে এতগুলান হওয়া যায় না। এক বর্ষায় বাপুকে বিষধর সাঁপে কাটলো মহাজনের জমিতে বীজতলি রুইতে গিয়ে। তারপর পাকা বেল গাছ থেকে পড়ার মতো মা’টা জ্বরে পড়লো আর টুপ করে মরে গেল। ব্যস আমার লিখ্যাপড়াও জম্মের মতো ঘুচে গেল। তবে হ যে ক’দ্দিন ইস্কুল গেছি কত পথ যে হাঁটিছি ভাবতেই পারবেক লাই তুমরা বটে”।
ছোট সুধন্য একটু লাজুক গলায় বলে, “হামার গল্পটা বুলবো?”
সক্কলে ধোয়া দিয়ে ওঠে, “হ হ বলনা কেনে”।
ছোট সুধন্য আবার বলে, “কেউ পোঁদে লাগবা না তো”।
মাঝারী সুধন্য ঠোনা দিয়ে বলে ওঠে, “কেনরে তুর পোদখানা কি মখমলের তাকিয়া যে লেগে সুখ হবে। ঐ তো চামসিপানা চামচিকে”।
ছোট সুধন্য রেগেমেগে তেড়ে যায়, বড় সুধন্যকে নালিশ জানায়, “কাকা ভাল হবেক লাই কিন্তু। চুপ মারতে বলো”।
বড় সুধন্যর বয়সের ভারে শরীর আর চলছিল না। কিন্তু এদের কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। কে না জানে কান্ডারি যদি মনের বল হারায়, সে দলের ভাঙন অবশ্যাম্ভাবী। তাই একটু ধমক লাগিয়ে বলে, “আরে তু উর কুথায় কান দিস লাই। বল হামি শুনবো”।
ছোট সুধন্য বলে, “সে হামার পিরিতের গল্প”।
হাঁটতে হাঁটতে কুকুরের মতো জিভ বের করে খাবি খাওয়া মানুষগুলো পিরিতের কথায় একটু চনমন করে ওঠে। সবাই উৎসুক।
কোন একটা সুধন্য ঝাঁজি দিয়ে বলে, “বলবি তো বল। এত রঙ্গ কেনে বাপু”।
ছোট সুধন্য যেন তার সেই ছোট্ট ছবির মতো সুন্দর গ্রামটায় মনে মনে চলে যায়। কী সুন্দর তার গ্রাম। আলাদা আলাদা ঋতুতে তার আলাদা আলাদা রূপ। হাঁটতে হাঁটতে চোখ বোজে ছোট সুধন্য। গ্রীষ্মের রাতে চাল ধোয়া রঙের মতো বৈশাখী পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে। সঙ্গে বেল, জুঁই ফুলের সুবাসের নেশা ধরানো মৌতাত। কত কত রাত সে উঠোনে খাটিয়ায় শুয়ে শুয়ে এমন রাতে আকাশের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতো। ফাগুনিয়াকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছোট সুধন্য বলতে শুরু করে, “মুই তো মোদের পাশের গাঁয়ের মোড়লের মেয়েকে পিরিত করতাম। কাঁড়াখুরার মিলাতে হামাদের দেখা। ঐ পেত্থম দেখাতেই বুক ঢিপ ঢিপ পেরেমের শুরু। ফাগুনিয়ার সঙ্গে দিখা কইরতে হামি রোজ ভুতোবাবা পাহাড় ভেঙে ওদের গাঁয়ে যেতাম। ধরা পড়ার পর উর বাপে চড় থাপ্পড় দিয়েছিল বটে কিন্তু হামাদের দুজনের একরোখা জিদের কাছে হার স্বীকার যায় ফাগুনিয়ার বাপ। তবে জানো উর বাপের বিটিপণ হামি ইখনো চুকাতে পারি লাই তাই লতুন বৌকে থুয়ে ভিন রাজ্যে কাজে আসলাম। কিন্তু ভাগ্য দেখো ফির ফিরে যাচ্ছি। লকডাউন হল, মালিক বললো ধান্দা পাতি ইখন লাটে উঠলো। হামি তো তুদের মাহিনা দিতে পারবোক লাই। তবু একমাসের মাহিনা দিয়েছে বেশি”।
কথাটা শুনে সবার মন খারাপ হয়। খিদেতে তখন পেটের ভেতর নাড়িভুঁড়ি পাকিয়ে যাচ্ছে। গা গুলোতে গুলোতে মুখ দিয়ে নুন জল কাটছে। সবার কাছে যৎসামান্য খাবার আছে। কেউ তাই মুখ খুলতে চাইছে না, পাছে অন্য কাউকে ভাগ দিতে হয়। বড় নিষ্ঠুর সময়। কিন্তু পেটে কিছু না পড়লে পা দু’খানা এবার বিদ্রোহ করবে বুঝতে পারে বড় সুধন্য।
যে যার টিফিন কৌটো খুলে কৃপণের মতো একটু একটু করে খাবার খেতে শুরু করে। বেশিরভাগ রুটি চিনি বা গুড়। মুড়ি বাতাসা। পাউরুটি। যে যার টিফিন বাটি আড়াল করে খেতে থাকে। যেন হীরে, জহরত আগলাচ্ছে। বড় সুধন্য সকলের বাপ সমান। সে বুঝতে পারে কারোরই পেট ভরছে না। সে আপন মনে বিড়বিড় করে, “হামরা শ্রম দেই কিন্তু শ্রমের মূল্য পাই না।
হামাদের শ্রমিকের ইজ্জত দেয় না কেউ। অথচ প্রতি দিন হামরা আঁখ পিষাই হই”।
সেজ সুধন্য বলে, “হই গো কাকা তুমার কী হইছে একলা একলা বিড়বিড় করো ক্যান বটে”।
বড় সুধন্য কথা ঘুরায়, “তুদের কারও রুটি লাগবেক তো নে”।
ছোট সুধন্যর পেটের এক কণাও ভরেনি। তার ডান হাতখানা সবে লম্বা হতে যাচ্ছিল। তার আগেই মেজ সুধন্য জোরে একটা হাই লাগায়, “কেনে গো এরপর তুমি পেটকে লকডাউন দিবা। ইখনো কত দিন হাঁটতে লাগবো, কী খাবার জুটবো কেউ জানি না। আর তুমি তো পলায়েও যাচ্ছো না”।
সযত্নে একটা বিড়ির বান্ডিল নিয়ে এসেছিল বড় সুধন্য। একটা বিড়ি জ্বালায়। কৃপণের মতো টান দেয়। খুকখুক করে কাশিও ওঠে। বিড়ির আগুন দেখে স্বয়ং মেজ সুধন্যও লোভ সামলাতে পারে না। হাতটা বাড়ায়। আর একটা টান দিয়ে বড় সুধন্য বিড়িটা মেজ সুধন্যর হাতে দেয়। সঙ্গে তিনটে বিড়ি বের করে অন্য একজনের হাতে দিয়ে বলে, “যা মিলেজুলে খা”।
পেটে সামান্য হলেও দানাপানি পড়াতে ওদের সকলের শরীর তখন কচুর পাতায় জলের মতো টলমল করছে। হাই উঠছে ঘনঘন। রাতের হিমেল বাতাস শরীরকে উল্টোবাগে টেনে ধরছে। পা দু’খানা যেন কাতর প্রার্থনা জানাচ্ছে, “আমাকে একটু রেহাই দে বাপ”। তাই সুধন্যর দল সিদ্ধান্ত নেয় এট্টুস না শুলে পরে কাল আর কেউ হাঁটতে পারবে না। চারদিকে লকডাউন। দিনের বেলাতেও নিশাচরী নিঃস্তব্ধতা। গাড়িঘোড়া রাস্তাঘাট থেকে ম্যাজিকের মতো গিলি গিলি হাপিস হয়ে গেছে। রেললাইনের পাটিতে তাই ওরা মাথা রাখে। এর থেকে নরম বালিশ পরিযায়ী শ্রমিকদের কেই বা দেবে।
কিন্তু ভাগ্য ওদের সঙ্গে চরম রসিকতা করে। ভুঁইয়ের সঙ্গে শরীর রাখার সঙ্গে সঙ্গে ওদের চোখে নেমে আসে যেন বিষ্ণুর যোগনিদ্রা। যে যার বাক্স প্যাঁটরা আগলে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। রাতের আঁধারের পেট চিরে দানবের মতো একটা মালগাড়ি ওদের উপর দিয়ে পিষে চলে যায়। ষোলোজন সুধন্য একসঙ্গে চরম গন্তব্যে পৌঁছে যায়। আশপাশে ছড়িয়ে থাকে তাদের খণ্ড বিখণ্ড শরীরের টুকরো। ঠিক যেন হুজুরদের খাবার থালায় মাটনকষা বা চিলি চিকেন। সুধন্যদের যক্ষের ধনের মতো আগলিয়ে রাখা খাবারের সঙ্গে রক্ত মাখামাখি হয়ে ছড়িয়ে থাকে। যা শিয়াল কুকুরদেরও বিবেকে লাগে খেতে। যতদিন লোকগুলো শ্বাস নিত ততদিন তারা ছিল হুজুরদের ভোটার। তাই একটু হলেও দাম ছিল। লাশ হয়ে যাওয়া মানুষের পরিচয় নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। তারা আর ইভিএম যন্ত্রের বোতাম টিপে হুজুরদের জেতাতে আসবে না। তাই পরদিন যখন আলো ফোটে লোকে লোকারণ্য হয়, পুলিশ এসে সবাইকে মস্তানি দেখিয়ে হটিয়ে দিয়ে পুটুলির মতো করে সব সুধন্যকে একটা সুধন্য বানিয়ে নিয়ে যায় লাশকাটা ঘরে।
লাশকাটা ঘরের মেঝেতে পুটুলি খুলে সবাই অবাক হয়ে যায় একটা পা কম আছে। দুর্ঘটনার জায়গা থেকে উদ্ধার হওয়া একটা কাঠের ক্রাচ পাওয়া যেতে তাদের ধন্দ কাটে। ওরা বলাবলি করে, “এই বুড়ো লোকটার একটা পা ছিল না। তবুও সবার সঙ্গে এতটা পথ হাঁটলো কী করে! — শ্রমজীবী ভাষা, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.