বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[সম্পাদকীয়]

[সম্পাদকীয়]

নতুন বছরে পথ চলা

নতুন বছরে পথ চলা

সম্পাদকীয়, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

photo

শ্রমজীবী ভাষা, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০২৩— নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা বন্ধ করে দেওয়া হল। অতিমারির সময়ে এপ্রিল, ২০২০ থেকে গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনাটি চালু করা হয়েছিল।
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন, ২০১৩ অনুযায়ী রেশনে উপভোক্তারা সমস্ত অগ্রাধিকার ক্যাটাগরির রেশন কার্ডে জনপ্রতি ৫ কেজি খাদ্যশস্য এবং অন্ত্যোদয় কার্ডে প্রতি পরিবার ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়ার অধিকারী। গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনায় গরীবদের মাথাপিছু অতিরিক্ত ৫ কেজি খাদ্যশস্য বিনামূল্যে সরবরাহ করা হতো।
এই খাতে ২০২০-২১ সালে কেন্দ্রীয় বাজেট বরাদ্দ ছিল ১.১৩ লক্ষ কোটি টাকা, ২০২১-২২ সালে ১.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ সালে ১.৩০ লক্ষ কোটি টাকা। এই প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার খাদ্যে সুরক্ষার জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ছাঁটাই করলো।
প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়াতে গরীব পরিবারগুলি মাসে ওই পরিমাণ খাদ্যশস্য বাজার থেকে কিনতে অতিরিক্ত ৭৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা খরচ করতে বাধ্য হবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে কার্যত ৮১.৩৫ কোটি রেশনের উপভোক্তার ৫০ শতাংশের রেশনের অধিকার হ্রাস পাবে এবং দেশের প্রায় আধাআধি মানুষের খাদ্য সমস্যা প্রকট হবে।
ভারত সরকার এমন একটা সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিল যখন বিশ্ব ক্ষুধা সূচক ২০২২-এ ভারতের স্থান ১২১টি দেশের মধ্যে ১০৭তম স্থানে। ক্ষুধা সূচকে ভারতের উপরে আছে সমস্ত প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা— এমন কি আফ্রিকার সুদান, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, রুয়ান্ডা।
অন্যদিকে, বিশ্ব সামাজিক অগ্রগতি সূচক ২০২২-এ ভারতের স্থান ১৬৯ দেশের মধ্যে ১১০তম৷
এই সময় প্রকাশিত ভারতের সামাজিক অগ্রগতি সূচকে দেশের রাজ্য ও জেলাগুলিকে ছয়টি শ্রেণী বা স্তরে ভাগ করা হয়েছে। ১) খুব উচ্চ সামাজিক অগ্রগতি; ২) উচ্চ সামাজিক অগ্রগতি; ৩) উচ্চ মধ্য সামাজিক অগ্রগতি; ৪) নিম্ন মধ্য সামাজিক অগ্রগতি; ৫) নিম্ন সামাজিক অগ্রগতি এবং ৬) খুব নিম্ন সামাজিক অগ্রগতি।
সামাজিক অগ্রগতি মাপা হয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - মৌলিক মানবিক প্রয়োজন, ভাল থাকা এবং সুযোগের বিভিন্ন মানদণ্ডে।
মৌলিক মানবিক প্রয়োজন মাপা হয়েছে পুষ্টি, প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা, পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং আশ্রয়ের সুযোগের হিসেব করে।
ভাল থাকার মূল্যায়ন করা হয়েছে জ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ, স্বাস্থ্যের সুযোগ এবং পরিবেশের মাপকাঠিতে। এবং সুযোগ মাপা হয়েছে ব্যক্তিগত অধিকার, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং পছন্দ, অন্তর্ভুক্তি এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগের মাপকাঠিতে।
কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দল বিজেপি ও তৃণমূল নিজেদের উন্নয়ন নীতি নিয়ে নিজেরাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু সামাজিক অগ্রগতি মাপকাঠিতে গুজরাতের ও বাংলার স্থান প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরে নয়— একেবারে চতুর্থ স্তরে। এই চতুর্থ স্তরে আছে বিজেপি শাসিত হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ত্রিপুরা।
সামাজিক অগ্রগতির নিম্ন স্তর বা পঞ্চম স্তরে রয়েছে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ। এবং সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে বিজেপি শাসিত আসাম— বিহার, ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে এক সারিতে।
সামাজিক অগ্রগতির খুব উচ্চ স্তরে আছে গোয়া, সিকিম, মিজোরাম, হিমাচল প্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরালা। এর মধ্যে তামিলনাড়ু ও কেরালার সামাজিক অগ্রগতি বিশেষ আকর্ষণ ও গবেষণার বিষয়।
নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতি আরও গভীর মন্দা ও সংকোচনের মুখে পড়ার আশঙ্কা। সুতরাং এই ছবিগুলি মাথায় রেখে শ্রমজীবী জনতাকে পথ চলতে হবে।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.