বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[বিশ্ব]

[বিশ্ব]

জোহেন্সবার্গে ব্রিকস সম্প্রসারিত হল

জোহেন্সবার্গে ব্রিকস সম্প্রসারিত হল

পর্যবেক্ষক

photo

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেন্সবার্গে ব্রিকস দেশগুলির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়ে গেল। এই শীর্ষ বৈঠক থেকে ছ’টি নতুন দেশকে ব্রিকসে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। এই ছ’টি দেশ হল আর্জেন্টিনা, ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, মিশর এবং ইথিওপিয়া। আগামী বছরের গোড়ায় তারা ব্রিকস-এ অন্তর্ভুক্ত হবে।

সোভিয়েতের পতনের পর প্রায় এক মেরু বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশগুলি দুনিয়া জুড়ে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস শুরু করে। বিশ্বব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের ঋণের শর্তে এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে অর্থনৈতিক সংস্কার চাপিয়ে দেয়। নয়া উদারনীতির এই পর্বে পৃথিবী জুড়ে অসাম্য তীব্র হয়ে ওঠে।

এই প্রক্ষাপটে উন্নয়নশীল দেশগুলির সমস্যা বিশ্ব মঞ্চে উত্থাপন করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৬ সালে ব্রিকস যাত্রা শুরু করে। শুরুতে চীন, রাশিয়া, ভারত ও ব্রাজিলকে নিয়ে এই গোষ্ঠী তৈরি হলেও পরবর্তীকা‍লে যুক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এখন ব্রিকসের সদস্য সংখ্যা দাঁড়াল এগারো।

ইতিমধ্যে ৪০টিরও বেশি দেশ ব্রিকসে যোগ সদস্য হতে চাইছে। তাদের মধ্যে আছে আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, সুদান, তিউনিসিয়া, মিশর, জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ, বাহারিন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, সিরিয়া, বেলারুস, কাজাকিস্তান, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, তুরস্ক, উরুগুয়ে, ভেনেজুয়েলা।

২০১৪ সালে ব্রিকস ব্যাঙ্ক বা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক চালু হয়েছে যা বিশ্বব্যাঙ্ক এবং আইএমএফের বিকল্প হিসাবে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সহজ শর্তে ঋণ দেবে। ব্রিকস তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির মুদ্রার অনাকাঙ্ক্ষিত অবমূল্যায়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ নেবে।

নতুন সদস্য দেশগুলি ছাড়াই ৫টি ব্রিকস দেশের জনসংখ্যা প্রায় ৩২১ কোটি। বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৪২%। জনসংখ্যা, আয়তন এবং জিডিপির ভিত্তিতে ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া এবং চীন বিশ্বের প্রথম ১০টি দেশের অন্যতম। ব্রিকসের ৫টি দেশই জি-২০ এর সদস্য রাষ্ট্র। বিশ্ব অর্থনীতিতে জি-৭ এর চেয়ে ব্রিকস রাষ্ট্রগুলির শেয়ার আকারে বড়। অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলেও আগামী দিনগুলিতে বিশ্ব ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রেও ব্রিকস ভুমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মোদি সরকারের সময়কালে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রণনৈতিক সহযোগিতায় আবদ্ধ হলেও এবং ভারত-চীন পারস্পরিক সম্পর্কে টানাপোড়েন থাকলেও উভয় দেশ ব্রিকসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ঐক্যমত পোষণ করেছে। ব্রিকস সম্প্রসারণে পাঁচটি উদ্যোক্তা দেশই সর্বসম্মত হয়েছে।

জোহেন্সবার্গে এক পার্শ্ববৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। শি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে শ্রদ্ধা করে চীন। শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার অতিসক্রিয়তা কার্যত সরকারকে দুর্বল করা এবং বিরোধীদের উৎসাহ দেওয়া। শি-এর সঙ্গে বৈঠক করে হাসিনা আমেরিকাকে বার্তা দিতে চাইলেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

‘জোহানেসবার্গ ঘোষণাপত্র’ প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে ইউক্রেনের নাম না করে সংঘাতের মোকাবিলায় ব্রিকসের অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। ঘোষণাপত্রের বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলতি সংঘাতের বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সংলাপ এবং সংঘবদ্ধভাবে আলোচনার মাধ্যমে বিবাদের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে ব্রিকস। এ ব্যাপারে সব রকম সহযোগিতা করতে আমরা তৈরি।’

উন্নয়নশীল দেশ তথা গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠ হিসাবে ব্রিকস-এর গুরুত্ব উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। সন্দেহ নেই আগামীদিন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্রিকসের গুরুত্ব ও প্রভাব বাড়বে। পাশাপাশি দুই প্রধান সদস্য দেশ চীন ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানা‍পোড়েন প্রভাবিত করতে পারে ব্রিকস-এর কর্ম তৎপরতাকে।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.