বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[বিশ্ব]
শ্রমজীবী ভাষা, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১— নিউ ইয়র্ক টাইমসের সংবাদ অনুযায়ী (৮.১২.২১) এই মুহূর্তে ১৬টি ভ্যাকসিন ইমার্জেন্সি ব্যবহারের ছাড়পত্র পেয়েছে। ৬টি ভ্যাকসিন সর্বত্র ব্যবহারের জন্য পূর্ণ অনুমোদন পেয়েছে। এই ৬টির মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত এবং গৃহীত ৫টি ভ্যাকসিন হল – আমেরিকার মডার্না কোম্পানির mRNA ভ্যাকসিন, ফাইজার/বায়োএনটেকের mRNA ভ্যাকসিন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি/অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি নন-রেপ্লিকেটিং ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন, রাশিয়ার গামালেয়ার ভ্যাকসিন এবং চীনের সাইনোফার্মার তৈরি ভ্যাকসিন।
এরকম ভাবার কোনও কারণ নেই যে মডার্না বা ফাইজারের মতো দানবীয় হাঁ-মুখ বহুজাতিক কোম্পানি কোভিডের জন্য কোটি মানুষের মৃত্যুতে দু’হাত দিয়ে দানসত্র খুলে বসেছে। দেখার চেষ্টা করব, “জাহান্নামের আগুনে” বসে মুনফার কত পুষ্প চয়ন করেছে এরা।
গতবছর যখন ভ্যাকসিন তৈরির প্রবল উদ্যোগ চলছে সেসময় নেচার পত্রিকায় (২৭.০৮.২০২০) প্রকাশিত হয়েছিল “The unequal scramble for coronavirus vaccine” শীর্ষক প্রবন্ধ। প্রবন্ধে বলা হয়েছিল – “ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডোজের চুক্তি করে ফেলেছে। এর ফলে পৃথিবীর মাঝারি এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ভ্যাকসিনের সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়বে … আগস্টের মাঝামাঝি তৈরির মাঝ পথে রয়েছে এরকম ৮০ কোটি ভ্যাকসিন আমেরিকা কিনে নিয়েছে। এবং আরও প্রায় ১০০ কোটি কিনবে বলে স্থির করেছে। ইংল্যান্ড ৩৪ কোটি ডোজ (প্রতিটি নাগরিকের জন্য ৫টি করে ডোজ) এবং জাপান একশ কোটি ডোজের কাছাকাছি কিনে নেবে।”
COVAX (COVID-19 Vaccine Global Access Facility) নামে একটি যৌথ উদ্যোগ জন্ম নিয়েছে এই অতিমারি শুরুর গোড়ার দিকে। এতে রয়েছে বিল এবং মেলিন্দা গেটস-এর সংগঠন GAVI (Global Alliance for Vaccines and Immunization), Coalition for Epidemic Preparedness Innovations (CEPI) এবং WHO। এদের লক্ষ্য হল ৯২টি low-income and middle-income দেশে সমান স্বচ্ছভাবে এবং ন্যায্যতা রক্ষা করে যাতে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া যায়।
নেচার-এ গ্যাভিন ইয়ামি (যিনি ডারহাম ইউনিভার্সিটি, নর্থ ক্যারোলাইনার সেন্টার ফর পলিসি ইম্প্যাক্ট অন গ্লোবাল হেলথ-এর ডিরেক্টর) “Rich countries should tithe their vaccines” (২৫.০২.২০২১) শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এখানে তিনি যে বিষয়গুলোর ওপরে জোর দিয়ছিলেন সেগুলো হল – (১) কোভিড-১৯ প্রতিরোধের লক্ষ্যে ১৯ কোটির বেশি ডোজ দেওয়া হয়েছে (জনস হপকিন্স সেন্টার-এর ২.০৩.২০২১-এর হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ২৫ কোটি টিকা দেওয়া হয়েছে যা গত এক সপ্তাহে ১৭% বৃদ্ধি পেয়েছে), (২) এর ৩/৪ অংশ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০টি ধনী দেশে, (৩) এই ১০টি ধনী দেশের জিডিপি পৃথিবীর মোট জিডিপির ৬০%, (৪) ২৫০ কোটি জনসংখ্যার ১৩০টি দেশে একটিও ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া হয়নি, (৬) উচ্চ আয়ের দেশ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৬%, কিন্তু এরা অর্ধেকের বেশি ভ্যাকসিন কিনে নিয়েছে। তিনি মন্তব্য করেছেন – “সার্স-কোভ-২ সংক্রমণ চরমভাবে অনিয়ন্ত্রিত তখন ভাইরাসের বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্টে বিবর্তিত হবার সুযোগ থাকে।”
এখানে একটি বৈজ্ঞানিক তথ্য মাথায় রাখা দরকার। mRNA ভাইরাসের দুটো চরিত্র আমাদের জন্য উদ্বেগজনক – (১) চরিত্রগতভাবে এগুলো “error-prone” অর্থাৎ একটি ভাইরাস থেকে আরেকটি ভাইরাস তৈরির সময়ে এর জিনের সিকোয়েন্সে গণ্ডগোল হয় যাকে সহজ কথায় মিউটেশন বলে, এবং (২) যত বেশি রেপ্লিকেশন অর্থাৎ ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি হবে তত বেশি মিউটেশন হবে। যেমনটা দেখছি আমরা ডেল্টা এবং ওমিক্রনের ক্ষেত্রে।
“ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ” এবং “ভ্যাকসিন অসাম্য” ভাইরাসের নতুন নতুন স্ট্রেইন তৈরি হবার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। টিকাকরণ যত কম হবে তত বেশি সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে। আবার যত বেশি সংক্রমণ হবে ভাইরাসের রেপ্লিকেশন তত বেশি হবে। রেপ্লিকেশন বেশি হওয়া মানেই মিউটেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া। WHO এবছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত দেশের ক্ষেত্রে অন্তত ১০% জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিন দেবার কথা বলেছিল। ৫০টির বেশি দেশ এই টার্গেট মিস করেছে। তার মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকা মহাদেশে। ৬ মাস আগে সুবিখ্যাত নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনের একটি খবরের (৫.০৬.২১) শিরোনাম ছিল “The Peril of Not Vaccinating the World”। সতর্কবার্তা ছিল – “যদি ভ্যাকসিন অনুপস্থিত থাকে তাহলে বিশ্বব্যাপী এক অতল সংকটের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
খানিকটা পুরনো হিসেব দিই। নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রে “ফাইজার রিপস হান্ড্রেডস অফ মিলিয়নস ইন প্রফিট ফ্রম কোভিড ভ্যাকসিনস” (মে ৪, ২০২১) শিরোনামে প্রকাশিত খবর জানিয়েছিল – (১) ২০২১-এর প্রথম তিন মাসে ফাইজার কোম্পানি ভ্যাকসিন বিক্রী করে ৩.৯ বিলিয়ন ডলার লাভের মুখ দেখেছে, এবং (২) যেখানে ধনী দেশগুলোতে ৪ জনের ১ জন মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে দরিদ্র দেশে এ সংখ্যাটা প্রতি ৫০০ জনে ১ জন।
গার্ডিয়ান একটি সংবাদে সদ্যসমাপ্ত জি-৭ বৈঠক নিয়ে সখেদে বলেছিল – পৃথিবীর বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলোকে অত্যন্ত দ্রুত এবং নিশ্চিতভাবে ৯ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য দিয়েছে অতিমারি জনিত মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য। পৃথিবীর মানুষকে সুরক্ষিত রাখার জন্য টিকাকরণের জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ নেই।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এর “ফ্রম ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম টু ভ্যাকসিন ইকুইটি”-এ বলা হয়েছিল – “সমগ্র বিশ্বের টিকাকরণ কেবলমাত্র একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয়, এটা আমাদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি সুরক্ষিত করে আত্ম-স্বার্থও রক্ষা করে। ধনী দেশগুলোতে প্রথম টিকাকরণ করার পরে বাকি বিশ্বের সিদ্ধিলাভ হবে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।”
হালের চিত্র
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল WHO-র মঞ্চ থেকে বলেছিলে (৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১) – “যদি কোম্পানি এবং ধনী দেশগুলো যারা বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে তার যদি মনে করে যে বিশ্বের দরিদ্ররা তাদের ফেলে দেওয়া ভ্যাকসিনের উচ্ছিষ্টতে সন্তুষ্ট থাকবে তাহলে আমি নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকবো না।” এর অর্থ হল অধুনা বিশ্বে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে ভ্যাকসিনের সরবরাহ এবং উপযুক্ত টিকাকরণের ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিয়েছে। সংকটের ছবি দেখে নেওয়া যাক।
ল্যান্সেট-এর মতো জার্নালে “Challenges in ensuring global access to COVID-19 vaccines: production, affordability, allocation, and deployment” শিরোনামে একটি দীর্ঘ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল এ বছরের গোড়ায় (ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১)। সেখানে বলা হয়েছিল ভ্যাকসিন সরবরাহের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলো হল – কি হারে, কি দামে, মানুষের নাগালের মধ্যে কিনা, বিশ্বব্যাপী বিতরণ হচ্ছে কিনা যাতে যেখানে প্রয়োজন পড়ে সেখানে পাওয়া যায়, এবং স্থানীয় জনসধারণের মধ্যে পৌঁছুচ্ছে কিনা।
২৪ মার্চ, ২০২১-এ ১৫ জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী এবং চ্যারিটেবল সংগঠনের প্রধান আমেরিকার হেলত্যহ এবং হিউম্যান সার্ভিসেসের সেক্রেটারি জেভিয়ার বেসেরা, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথের ডিরেক্টর ফ্রান্সিস কলিন্স এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের ডিরেক্টর অ্যান্থনি ফাউচিক্কে একটি চিঠি লিখেছিলেন “Moderna and Its Use of an NIH-Owned Patent for COVID-19 Vaccines” শিরোনামে। এই চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেন “Moderna is currently charging between US$10 and US$40 for a dose for Mrna-1273, despite it costing less than $3 a dose to manufacture.” অর্থাৎ মডার্নার যে ভ্যাকসিন তৈরি করতে ৩ ডলারের কম খরচ হয় সে ভ্যাকসিন কোম্পানিটি বাজারে বিক্রী করছে ১০ থেকে ৪০ ডলার দামে। মুনাফার পরিমাণ ৩৫০% থেকে ১৩৫০%। ঐ চিঠিতে আরও বলা হয় আমেরিকার ট্যাক্সদাতারা সরকারের হাত ঘুরে এই ভ্যাকসিনের জন্য ২.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার ১১ মাসে কোভিড ভ্যাকসিন বাজারে আনার জন্য আমেরিকা এবং ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন মোট প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ টাকা সাধারণ মানুষের করের টাকা।
People’s Vaccine Alliance নামে একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আছে যারা বিভিন্ন দরিদ্র দেশে যাতে ক্রয় ক্ষমতার মূল্যে ভ্যাক্সিন পৌঁছয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। ২১ অক্টোবর, ২০২১-এ এরা “Dose of Reality: How rich countries and pharmaceutical corporations are breaking their vaccine promises” শিরোনামে ৩৩ পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টে বলা হয় – “অতিমারি শুরুর সময়কাল থেকে সমস্ত উৎপাদিত ভ্যাক্সিনের ০.৭%-এরও কম পৌঁছেছে নিম্ন আয়ের দেশে। এর একটি কারণ হল মডার্নার মতো কোম্পানি এদের উৎপাদনের ৮৪% অত্যন্ত বেশি দামে ধনী দেশগুলোকে বিক্রি করেছে যাতে এদের মুনাফার পরিমাণ আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। এর থেকে যা স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হল ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানির সম্পদ এবং ধনী দেশের প্রয়োজনাতিরিক্ত ভ্যাক্সিন জমিয়ে রাখার ফলে গরীব দেশের হাজার হাজার মানুষ পরতিদিন কোভিড-১৯-এ মারা যাচ্ছে। World Health Organization (WHO)-র মতে এই মৃত্যু ‘সম্পূর্ণত প্রতিরোধযোগ্য’।” মডার্না এবং ফাইজার/বায়োএনটেক ইত্যাদি কোম্পানি যে ভ্যাক্সিন তৈরি করছে তার মাত্র ০.৭% গরীব দেশগুলোতে পৌঁছুচ্ছে। প্রায় সম্পূর্ণ উৎপাদিত ভ্যাক্সিন চড়া দামে কিনে নিচ্ছে ধনী দেশগুলো যেখানে পৃথিবীর বিপুল জনসংখ্যার মাত্র ২৫% বা তার কম বাস করে এ দেশগুলোতে (বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য )।
পূর্বোক্ত রিপোর্টে আরও বলা হয় – “Via their bilateral deals Moderna has sold an estimated nine of every ten doses to high income countries. Pfizer/BioNTech has sold eight times as many doses to high-income countries compared to doses sold to low and low-middle-income countries13.” ধনী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মধ্য দিয়ে মডার্না প্রতি ১০টি ডোজের ৯টি ডোজ এদেরকে বিক্রি করেছে। এবং ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার আগেই এ চুক্তি হয়ে বসেছিল। ফাইজার দরিদ্র এং মধ্য আয়ের দেশগুলোতে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে তার ৮ গুণ বেশি সরবরাহ করেছে ধনী দেশগুলোতে।
এজন্য পূর্বোক্ত “Moderna and Its Use of an NIH-Owned Patent for COVID-19 Vaccines” চিঠিতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি দাবি তোলা হয়েছি – (১) “বিশ্বব্যাপী উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করার জন্য প্রয়োজন World Health Organization-র সাথে টেকনোলজি ভাগ করে নেওয়া” এবং (২) “মানুষের ক্রক্ষমতার মধ্যে থাকা মূল্য নিশ্চিত করা”।
Oxfam একটি আন্তর্জাতিক চ্যারিটেবল সংস্থা। এদের ১৬ নভেম্বর, ২০২১-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে – “Pfizer, BioNTech and Moderna making $1,000 profit every second while world’s poorest countries remain largely unvaccinated”। এদের হিসেব অনুযায়ী প্রতি মিনিটে ৬৫,০০০ ডলার মুনাফা করছে ফাইজার, বায়োএনটেক এবং মডার্না। একমাসের আগের হিসেব পর্যন্ত মডার্না ০.২% ভ্যাকসিন গরীব দেশগুলোতে সরবরাহ করেছে যেখানে এই দেশগুলোর ৯৮% মানুষের পূর্ণ টিকাকরণ হয়নি। শুধু তাই নয় এ কোম্পানিগুলো অন্য কোন দেশকে ভ্যাকসিন টেকনোলজি এবং know-how হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানি। এই কোম্পানি “নো প্রফিট-নো লস” ভিত্তিতে ভ্যাকসিন বিক্রী করছে এবং ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের মতো অন্য দেশের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে টেকনোলজি হস্তান্তরও করছে। এদের তৈরি ভ্যাকসিনের দাম ৩ ডলার বা তার কম।
ভ্যাকসিন বিক্রির মধ্য দিয়ে এই অতিমারিকালে নতুন ৫ জন বিলিওনেয়ারের জন্ম হয়েছে। ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সমেত ১০০টির বেশি দেশ TRIPS তুলে নেবার দাবি জানিয়েছে। একে বর্তমান এবং প্রাক্তন ১০০ জনের বেশি নোবেলজয়ী সমর্থন করেছেন। কিন্তু ভবিতব্য ভুলবার নয়। বহাল তবিয়তে TRIPS আছে। ফাইজার পূর্বাভাষ দিয়েছে ২০২১ সালে ভ্যাকসিন বিক্রি করে ৩৬ বিলিয়ন ডলার রেভেন্যু আশা করছে।
ব্লুমবার্গ নিউজউইক-এ প্রকাশিত “When Lifesaving Vaccines Become Profit Machines for Drugmakers” খবর অনুযায়ী কলম্বিয়া ১ বিলিয়ন ডলার নাগরিকদের ভ্যাকসিনের জন্য খরচ করছে মডার্নার কাছ প্রতি ৩০ ডলারে কিনে। বলা হয়েছে “Covid vaccines are emerging as a $100 billion-plus business in 2021.” আফ্রিকার বাজার দখল করেছে চীনা সংস্থা সাইনোফার্মের ভ্যাকসিন। সেনেগালের মতো দরিদ্র দেশ যেখানে স্বাস্থ্যের জন্য মাথাপিছু ব্যয় ৬০ ডলারের কম সেখানে ৪ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সাইনোফার্মের ২০০,০০০ ডোজ ভ্যাকসিন কিনেছে – প্রতি ডোজ ২০ ডলার দামে।
এখানে তিনটি প্রশ্ন বিবেচনা করতে হবে – (১) ভ্যাকসিনকে public good হিসেবে দেখার জন্য বিশ্বব্যাপী জোরালো আওয়াজ উঠবে কিনা, (২) দানবীয় ফার্মা কোম্পানিগুলোর আকন্ঠ তৃষ্ণা মেটানোর জন্য যে মানবাধিকারের সংকট তৈরি হচ্ছে তাকে আমরা গুরুত্ব দেবো কিনা, এবং (৩) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যেমন বলেছে, “বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবন এবং স্বাস্থ্যের অধিকারকে বিপন্নতার স্বীকার” হতে দেবো কিনা।