বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[বিশ্ব]
শ্রমজীবী ভাষা, ১৬ অগাস্ট, ২০২১— কৃষক, শিক্ষক, সংগঠক, প্রেসিডেন্ট। ব্যক্তি একজন কিন্তু তাঁর পরিচয় চারটি। কি করে হয়? হয়। বিরল ভাবে হয়। এই যেমন পেদ্রো কাস্তিলিওর ক্ষেত্রে হয়েছে!
অন্যতম দরিদ্র এক গ্রামে ১৯৬৯ সালে পেদ্রোর জন্ম। নয় ভাই বোনের মধ্যে পেদ্রো তৃতীয়। মা-বাবা দু' জনই অক্ষরজ্ঞানহীন। পেশা তাঁদের কৃষি। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলে যেমনটা হয়। পেদ্রোর বেলাতেও তাই হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই মা-বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করে বেড়ে উঠেছেন তিনি।
কৃষি কাজ করলেও পড়াশোনায় ছাড় দেননি পেদ্রো। স্কুল ছিল অনেক দূরে। বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে দু' ঘন্টা সময় হেঁটে তবেই স্কুলে পৌঁছাতে হতো পেদ্রোকে।
পড়াশোনার খরচ জোগাতে কিশোর ও তরুণ বয়সে পেদ্রোকে কফি খেতে কাজ করতে হয়েছে। আইসক্রিম বিক্রি করতে হয়েছে। রাজধানীতে গিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে সংবাদপত্র। এভাবে দরিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হন তিনি।
শিক্ষা জীবনশেষে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হন পেদ্রো। ২৫ বছর ধরে এই পেশায় নিজেকে নিযুক্ত রাখেন তিনি।
২০০২ সালে রাজনীতিতে নাম লেখান পেদ্রো। তখন তিনি মেয়র পদে নির্বাচনে লড়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যান।
পেদ্রো আলোচনায় আসেন ২০১৭ সালে। স্কুল শিক্ষকদের বেতন-বৃদ্ধি সহ অন্যান্য দাবিতে ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেন তিনি। এ আন্দোলন তাকে পরিচিতির পাশাপাশি জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তারপর পেদ্রো যে মিশনে নামেন তার গল্প এলাম, দেখলাম, জয় করলাম— অনেকটা এরকম।
এলাকায় সোনার খনি আছে। কিন্তু সেখানকার মানুষের জীবনে তার ন্যূনতম প্রভাবও নেই। মানুষ গরিবের মধ্যেও গরিব। ধনী-গরিব, গ্রাম শহরের মধ্যকার বৈষম্য বিস্তর। বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গ্রামীণ গরিব জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নেই। নেই স্বীকৃতি। এসব বিষয় পেদ্রোকে মূলধারার রাজনীতিতে নামতে প্রভাবিত করে।
২০২১ সালে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ান পেদ্রো। প্রথম দফার নির্বাচনে অখ্যাত এই প্রার্থীকে কেউ হিসাবের খাতায় রাখেনি। কিন্তু রাজনীতিতে চমক দেখান পেদ্রো। প্রায় দেড় ডজন প্রার্থীকে পিছনে ফেলে প্রথম হন তিনি।
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে পেদ্রোর প্রতিপক্ষ কিকো ফুজিমোরি। এবার কঠিন লড়াই। বামপন্থী বনাম ডানপন্থী। পেদ্রো বামপন্থী, কিকো ডানপন্থী।
নির্বাচনী প্রচারে পেদ্রো তাঁর গ্রামীণ পরিচয়ই তুলে ধরেন। তিনি কৃষকের মতো মাথায় গোল টুপি পরে প্রচারে অংশ নেন। তিনি প্রচারে শোষণ-বঞ্চনা, দারিদ্র ও বৈষম্য নিরাসনের কথা বলেন। তাঁর প্রচারে সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের কথা ছিল। তাঁর প্রচারের কেন্দ্রে ছিল জনগণ। তিনি বলেন ধনী দেশে কোনও গরিব থাকবে না।
অন্যদিকে পেদ্রোর প্রতিপক্ষ কিকোর জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক পরিবারে। তাঁর বাবা দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি পেদ্রোকে উগ্র বামপন্থী বলে অভিহিত করেন। বলা হয় পেদ্রোর সঙ্গে কমিউনিষ্ট গোষ্ঠীগুলির যোগসূত্র রয়েছে।
৬ জুন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। ১৫ জুন ভোট গণনা শেষ হয়। পেদ্রো পান ৫০% র কিছু বেশি ভোট। কিকো ৪৯% ভোট। ভোট গণনা শেষ হতেই পেদ্রো নিজেকে জয়ী দাবি করেন। কিকো মানতে নারাজ। কিকো জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন। অভিযোগের পর্যালোচনা শুরু হয়। তাতে দেড় মাস সময় লাগে। ১৬ জুলাই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। কিকোকে ৪৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন পেদ্রো।
২৮ জুলাই প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন পেদ্রো। অভিষেক ভাষণে পেদ্রো সগৌরবে জানিয়ে দেন, এই প্রথম তাঁর দেশ পেরু একজন কৃষক নেতৃত্বে পরিচালিত হবে।