বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[বিশ্ব]

[বিশ্ব]

স্বাস্থ্যের দারিদ্র্য এবং রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যভাবনা

স্বাস্থ্যের দারিদ্র্য এবং রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যভাবনা

জয়ন্ত ভট্টাচার্য

photo

ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী (২২ মার্চ, ২০২২) বিশ্বে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৯,০০,০০০ (প্রতি ১ লক্ষ মানুষে ১২৭ জন) এবং ভারতের ক্ষেত্রে এ চিত্র – রোগীর সংখ্যা ২৫,৯০,০০০ (প্রতি ১ লক্ষে ১৮৮ জন)। তুলনামূলক মৃত্যুর সংখ্যা যথাক্রমে – ১২,৮০,০০০ (প্রতি ১ লক্ষে ১৭ জন) এবং ৪৯৩,০০০ (প্রতি ১ লক্ষে ৩৭ জন)। সরকারি পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, বিশ্বের মোট যক্ষ্মা রোগীর প্রায় ২৫% ভারতে বাস করে এবং বিশ্বের মৃত্যুহারের দ্বিগুণের বেশি মৃত্যু ঘটে ভারতে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার করে “অমৃত মহোৎসব”-এর প্রবল যজ্ঞের মাঝে এরকম ঘটনা ঘটে কেন? পরিহাসের মতো শোনালেও একই মিটিং-এ ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে টিবি-মুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এরকম বৈপরীত্যের উত্তর যে কোনও সংবেদী মানুষই খুঁজতে চাইবেন।
এখানে আরেকটি তথ্য নজরে রাখতে হবে। ২০২১ সালের সরকারি হিসেব অনুযায়ী মাল্টি-ড্রাগ রেজিজট্যান্ট টিবি রোগীর সংখ্যা ভারতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি – ১২৪,০০০ (প্রতি লক্ষে ৯.১ জন)। শতকরা হিসেবে ২৭%। চীনে ১৪% এবং রাশিয়ায় ৮%। ল্যান্সেট-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ৩০টি দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মাল্টি-ড্রাগ রেজিজট্যান্ট টিবি রোগী রয়েছে। এদের মধ্যে আবার একটি অংশের মধ্যে মাল্টি-ড্রাগ রেজিজট্যান্ট সুপ্ত অবস্থায় আছে। এরকম রোগীর সংখ্যা চীনে প্রায় ৬০ লক্ষ, ভারতে ৪০ লক্ষ এবং রাশিয়ায় ১৮ লক্ষের মতো।
মাল্টিড্রাগরেজিস্ট্যান্ট টিবি এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে নিবেদিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন সংগঠক-গবেষক প্রয়াত পল ফার্মার হাইতির হতদরিদ্র মানুষের মাঝে কাজ করে প্রত্যক্ষভাবে দেখিয়েছেন – (১) নিতান্ত অল্প দামে এ রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব, (২) যেকোন সম্পদহীন দেশেই এটা করা সম্ভব, যদি সদিচ্ছা এবং ভিশন থাকে, এবং (৩) দরিদ্রদের শুধু ওষুধ দিলে হবেনা, সঙ্গে খাদ্য এবং পুষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে। এথনোগ্রাফি জার্নালে “দ্য কনজাম্পশন অফ দ্য পুওরঃ টিউবারকিউলোসিস ইন দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি” গবেষণাপত্রে তিনি লিখেছিলেন – “এমন একটি যুগে যখন আমাদের হাতে কার্যকরী চিকিৎসা রয়েছে তখন কেন টিউবারকিউলোসিস সদ্য যুবকদের মধ্যে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হবে? ... এরকম একটি প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য আমাদের অসুস্থ টিবি রোগীদের জীবনের অভিজ্ঞতা দেখলে হবেনা, বরঞ্চ দেখতে হবে বৃহত্তর সামাজিক পটভূমি যার মাঝে এরা সংক্রামিত এবং অসুস্থ হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার অ্যাডভেঞ্চারের মধ্য দিয়ে যায়, যার পরিণতি হল বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হওয়া, অন্যদের মাঝে এই মারাত্মক রোগ ছড়িয়ে পড়া এবং সবশেষে মৃত্যু।” তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, দারিদ্র্য এবং টিবিকে নিয়ে সহবাস করা গ্রামীণ হাইতি এবং আমেরিকার ভেতরের দরিদ্র জনতার একইরকমের ভয়াবহ ফলাফল দেয়।
প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন আগে ২০০২ সালে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এ অমর্ত্য সেন একটি আমন্ত্রিত প্রবন্ধ লিখেছিলেন “হেলথ: পারসেপশন ভার্সাস অবজার্ভেশন” শিরোনামে। সেখানে রোগীর নিজের রোগ সম্পর্কে বোধ বা “ইন্টার্নাল ভিউ” এবং রোগ ও রোগী সম্পর্ক ডাক্তার বা প্যাথোলজিস্ট-এর মতামত বা “এক্সটার্নাল ভিউ” এই দুয়ের মাঝে টানাপোড়েন ও সমন্বয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তাঁর জোর ছিল স্বাস্থ্যনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ দুয়ের মাঝে সামঞ্জস্য আনতে হবে। বিহারের উদাহরণ দিয়ে, যেখানে অর্থনীতি ও শিক্ষার হার অনেক নীচে, প্রবন্ধে দেখানো হয়েছিল যে সেখানে রোগীর নিজের রোগ সম্পর্কে তথ্য জানানোর হার অনেক কম – তার কারণ অশিক্ষা এবং দারিদ্র্য। অথচ শিক্ষার হারে ভারতের সবচেয়ে অগ্রণী রাষ্ট্র কেরালাতে “self-reported morbidity”-র হার অনেক বেশি। সহজবোধ্য যে স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বা পরিষেবা, পরিষেবা নেবার জন্য রোগীদের আগ্রহ ও বাস্তব অবস্থা, যথেষ্ট মাত্রায় পরিষেবা পৌঁছনোর বাহক ব্যবস্থাগুলো সবকিছু একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। অর্থাৎ, স্বাস্থ্য একটি সদা-গতিশীল বিষয় যা পারিপার্শ্বিক সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং অর্থনীতিকে যেভাবে দেখা হয় সে বিষয়টি, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থান ও সর্বোপরি মানুষ বা নাগরিকের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবনধারণের ব্যবস্থা নিয়ে রাষ্ট্র কি অবস্থান নেয় এ সমস্ত কিছুর ওপরেই নির্ভর করে।
পাবলিক হেলথ-এর প্রখ্যাত গবেষক মাইকেল মার্মট বলছেন, “দুঃখজনকভাবে গরীব দেশগুলোতে মানুষ অপ্রয়োজনীয়ভাবে মারা যায়। আবার ধনী দেশগুলোতেও যারা সামাজিক সুযোগ সুবিধের ক্ষেত্রে প্রান্তিক তাদের মাঝে মৃত্যুহার বেশি।” অন্যত্র বলছেন, “যদি কোন জনসমষ্টির স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এটা বোঝাবে যে set of social arrangements পরিবর্তন করতে হবে।” প্রায় একইধরণের কথা এসেছে ড্রাফট ন্যাশনাল হেলথ পলিসি (২০১৫)-তে। বলা হয়েছে ভারতের জিডিপি-র বৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশের হেলথ ইক্যুইটির কোন পরিবর্তন হয় নি।
পল ফার্মার তাঁর সবচেয়ে পরিচিত গ্রন্থ প্যাথলজিস অফ পাওয়ার-এ নির্দ্বিধায় বলেছিলেন, “আমরা যে বিশ্বকে জানি সে বিশ্ব বেশি বেশি করে পরস্পর-সংবদ্ধ হচ্ছে। এর অনুসিদ্ধান্ত হিসেবে বলা যায় যে বিরাট চেহারায় চরম যন্ত্রণা ভোগ করাকে, যেমন গণহত্যার ক্ষেত্রে, কদাচিৎ ক্ষমতাশালীদের ক্রিয়াকলাপ থেকে পৃথক করা যায়।” (পৃঃ ৪২) এ পুস্তকেই পরে বলেছেন – “আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে দরিদ্র মানুষদের ক্ষেত্রে যা ঘটে সেগুলো কখনওই ক্ষমতাশালীদের কার্যকলাপের থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। নিশ্চিতভাবে, যারা নিজেদেরকে দরিদ্র বলে তারা তাদের নিয়তিকে খানিকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু জীবনের ওপরে নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত হয়ে আছে জমির অধিকারের সঙ্গে, উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে, এবং আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক এবং আইনী কাঠামোগুলো যার মাঝে এরা বিজড়িত হয়ে আছে তার সঙ্গে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদ এবং নিয়ন্ত্রণ উভয়ই মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে বেশি বেশি করে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে। যারা সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে কাজ করেন তারা এর বিপরীত প্রবণতাটি কামনা করেন।” (পৃঃ ১৫৮)
কিন্তু পল ফার্মার বিপ্লবী ছিলেন না। একজন তীক্ষ্ণ, নিবেদিত, সমাজমনস্ক চিকিৎসক ছিলেন। তিনি স্বাস্থ্যকে মানবাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই করেছেন। পৃথিবীর দূরতম প্রান্তের দরিদ্রতম মানুষটির কাছেও কেন সর্বোচ্চমানের চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়া যাবেনা? এ প্রশ্ন তিনি বারংবার করেছেন। জনস্বাস্থ্য এবং মূলধারার মেডিসিন চিরে চিরে দেখিয়েছেন এদের মধ্যেকার অন্তর্নিহিত দুর্বলতা কোথায়? শিক্ষিত-অশিক্ষিত, চিকিৎসক-অচিকিৎসক, নীতিপ্রণেতা এবং রাষ্ট্রনেতাদের কাছে বারংবার বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ এবং একাধিক প্রাণঘাতী রোগের হাতেকলমে চিকিৎসা করে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা যায় – শুধুমাত্র প্রবল ইচ্ছাশক্তি মানুষের মাঝে সঞ্চারিত করে।
স্বাস্থ্য নিয়ে হালের অবস্থাকে আরেকটু ভাল করে বুঝতে হলে আমাদের একবার ইতিহাসের পেছন দিকে যাবার প্রয়োজন। উল্লেখযোগ্য, ১৯৪৫ পর্যন্ত স্বাস্থ্য ছিল একটি “ভুলে যাওয়া” বিষয়। নরওয়ের ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেলথ এবং আন্তর্কাজিত জগতে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মান্য, অগ্রণী ব্যক্তিত্ব কার্ল ইভাং জানাচ্ছেন – “যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে লীগ অফ নেশনস-এর কভেন্যান্ট খসড়া রচনা করা হচ্ছে সেসময়ে স্বাস্থ্য একটি ‘ভুলে যাওয়া বিষয়’ ছিল। কেবলমাত্র একেবারে শেষ মুহূর্তে স্বাস্থ্য-কে ঢোকানো হয়, যার পরিণতিতে তৈরি হয় ‘হেলথ সেকশন অফ দ্য লীগ অফ নেশনস’। এটা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানিজেশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার অগ্রদূত।” (K. Evang, “Political, national and traditional limitations to health control”, Health of mankind, ed. Gordon Wolstenholme and Maeve O’Connor, 1967, পৃঃ ১৯৬-২১১) ইভাং-এর বয়ানে – “কে ভেবেছিলো যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যখন রাষ্ট্রপুঞ্জের চার্টার তৈরি হচ্ছে তখন স্বাস্থ্য আবার ‘ভুলে যাওয়া বিষয়’ হয়ে যাবে?” ঠিক এটাই ঘটেছিলো যখন ১৯৪৫-এর বসন্তে সান ফ্রান্সিসকোতে “জরুরী ভিত্তিতে” বিশ্ব স্বাস্থ্য-কে আলোচ্য তালিকায় আনা হয়। তিন জন মানুষ সেদিন উদ্যোগ নিয়েছিলেন – ব্রাজিলের তরফে ডাক্তার Paula Souza, চীনের তরফে ডাক্তার Szeming Sze এবং নরওয়ের তরফে ডাক্তার কার্ল ইভাং স্বয়ং। (পূর্বোক্ত, পৃঃ ২০২-২০৩)
স্বাস্থ্যের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারেবারে ভুলে যাওয়া হচ্ছিলো কেন? সম্ভবত বাণিজ্য হিসেবে স্বাস্থ্য কি পরিমাণ মুনাফা দিতে পারে তা তখনো অব্দি বহুজাতিক কোম্পানী এবং ইউরো-আমেরিকার দেশগুলোর নজরে আসে নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী (যে অব্দি যথেষ্ট গবেষণালব্ধ তথ্য পাওয়া যায়) ভারত হেলথ কেয়ার এবং আনুষঙ্গিক উপাদান বিক্রীর অন্যতম দ্রুত-বর্ধনশীল বাজার। ওষুধপত্রের বিক্রি ১৭.৩% হারে বেড়ে হয়েছে ১৭.৩ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিকভাবে এ বাজার ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের। ২০২২-এ এসে এর বৃদ্ধি নিশ্চয়ই আরও অনেকগুণ বেড়েছে। যদিও সঠিক হিসেব আমার কাছে নেই। ২০০৫ সালে প্রযুক্তি-নির্ভর মেডিসিনের চাপে পড়ে ব্রাজিলকে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। অধুনা গবেষকেরা দেখিয়েছেন, আফ্রিকার যে দেশগুলোতে এবোলা এরকম মারণান্তক চেহারা নিল সে দেশগুলো আইএমএফ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-এর চাপে জনস্বাস্থ্য খাতে খরচা কমিয়ে উচ্চ-প্রযুক্তি নির্ভর (যেখানে সিটি স্ক্যানার বা এমআরআই কিনতে হয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে) স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়তে বাধ্য হয়েছে। পরিণতিতে এবোলা যখন মহামারির চেহারা নিয়েছিল তখন তার সঙ্গে মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামো এ দেশগুলো হারিয়ে ফেলেছে।
ক্লিনিকাল হেলথ তথা ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং পাবলিক হেলথ তথা জনস্বাস্থ্য এ দুয়ের মাঝে বিস্তর ফারাক – দুটি আলাদা দর্শনের জগৎ। আমরা আমাদের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ৫-৭ বা তার বেশি সময় ধরে যা শিখি তা হল একজন ব্যক্তি রোগীকে সবচেয়ে ভালোভাবে কি করে চিকিৎসা করা যায়। এখানে জনস্বাস্থ্য বা জনতার স্বাস্থ্য একেবারেই অনুপস্থিত। ফলে পাস করে বেরনো চিকিৎসক সমাজের মানসিক অবস্থানে এবং সামাজিক দর্শনে রয়ে যায় ক্লিনিকাল হেলথের দুর্মর ছাপ। পাবলিক হেলথ এখানে দুয়োরাণী। একটা উদাহরণ হচ্ছে, এ মুহূর্তে ভারতে ৩০,০০,০০০-এর বেশি মানুষ মারাত্মক এবং মারণান্তক সিলিকোসিস রোগে ভুগছে। এ রোগ আমাদের প্রায় পড়ানো হয়না বললেই চলে। এ রোগ দরিদ্র হবার রোগ, দারিদ্র্যের অভিশাপের রোগ – পেটের দায়ে কৃষিতে সংকুলান না হবার জন্য বিভিন্ন খাদানে ক্রাশার নিয়ে কাজ করার রোগ। ক্লিনিকাল হেলথের শিক্ষা আমাদের কাছে এ রোগকে অদৃশ্য, অশ্রুত করে রেখেছে। একে দৃশ্যমানতা এবং শ্রাব্যতার স্তরে তুলে আনার প্রচেষ্টা কি আমরা চালাবো? এরকম আরও অনেক রোগের কথা বলা যায়। প্রসঙ্গত, আমেরিকায় অ্যাসেবেস্টোসিস রোগে (সিলিকোসিস ধরনের একটি রোগ) বছরে প্রায় ৪০,০০০ মানুষ মারা যায়। এ নিয়ে নিউ ইংল্যান্ড জার্নালের মতো পত্রিকায় ১৫ আগস্ট, ২০১৯, সংখ্যায় বিশেষ প্রবন্ধ প্রকাশিত হল “A Most Reckless Proposal – A Plan to Continue Asbestos Use in the United States”। আমরা কবে পারবো এরকম সদর্থক উচ্চারণ করতে? এরকম এক পদক্ষেপ নিতে?
PLoS-এর মতো মান্য জার্নালে ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত সম্পাদকীয় “নিউক্লিয়ার ওয়েপনস অ্যান্ড নেগলেক্টেড ডিজিজেস: দ্য টেন থাউস্যান্ড-টু-ওয়ান গ্যাপ”-এ বলা হয়েছিল – “১১টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের পারমাণবিক অস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যা খরচ হয় তার ১/১০,০০০ ভাগেরও কম খরচে অবহেলিত রোগগুলোকে নির্মূল করা ও বিশ্বের উত্তেজনা কমিয়ে শান্তি রক্ষা করা সম্ভব।”
রাষ্ট্র এবং জনতা কোন পথে হাঁটবে সে পথ নিজেদেরই বেছে নিতে হবে।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.