বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[বিশ্ব]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কিউবার ওপর থেকে সব ধরনের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। সম্প্রতি রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে এই প্রস্তাব সমর্থন করেছে বিপুল সংখ্যক দেশ। কিউবার বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, কিউবার বিরুদ্ধে ৬২ বছর ধরে চালিয়ে যাওয়া এই মার্কিন অবরোধ গণহত্যার সমান অপরাধ। তাঁর মতে, গণহত্যার মতো অপরাধ সংঘটিত করার লক্ষ্যেই তাঁদের সরকারের বিরুদ্ধে ‘বাণিজ্যিক যুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে মোট দেশের সংখ্যা ১৯৩। পরিষদ তাদের যে বার্ষিক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে তাতে বলা হয়েছে, কিউবার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চালিয়ে যাচ্ছে তা তুলে নিতে হবে। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৮৭টি দেশ। প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজরায়েল। ভোটদানে বিরত ছিল মলডোভা সাধারণতন্ত্র।
সাধারণ পরিষদে কিউবার বিদেশমন্ত্রী ব্রুনো রডরিগেজ পারিল্লা বলেন, এই অবরোধ আমাদের জনগণের মানবাধিকারকে খারিজ করছে। এই অবরোধ কোনও দেশের বিরুদ্ধে নেওয়া সবচেয়ে ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী, একতরফা এবং জবরদস্তি করে চাপানো ব্যবস্থা। রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছে তাঁর আর্জি, আমেরিকাকে অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য করে কিউবাকে শান্তিতে বাঁচতে দিন। সেই ১৯৯২ থেকে বহুবার সাধারণ পরিষদ আমেরিকাকে অবরোধ তুলে নিতে বলেছে। তারপরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। তাই কিউবার বিদেশমন্ত্রীর প্রশ্ন, এভাবে আর কতদিন চলবে?
রডরিগেজ জানান, কীভাবে ১৮ থেকে ২৩ অক্টোবর কিউবার লোকেদের বিদ্যুৎ ছাড়াই দিন কাটাতে হয়েছে। দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ থাকত মাত্র কয়েক ঘণ্টা। অনেকের বাড়ির কলে জল ছিল না। হাসপাতালে কাজ চলেছে জরুরি ভিত্তিতে। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের ক্লাস সাসপেন্ড করে দেয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজও বন্ধ ছিল।
২০১৯ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধে’ আরও কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। কিউবার বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বৈদ্যুতিক গ্রিডগুলি চালু রাখার জন্য জ্বালানি ও স্পেয়ার পার্টস আমদানি করতে দেয়নি। অথচ বাইডেন প্রশাসন বলছে তারা নাকি কিউবার জনগণকে সাহায্য করছে। রডরিগেজ এর প্রশ্ন, এসব কথা কি লোকে আদৌ বিশ্বাস করবে? তিনি হিসেব কষে দেখিয়েছেন, ৬২ বছর আগে যে অবরোধ চাপানো হয়েছিল তার জন্য এতদিনে কিউবার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১.৪৯৯ লক্ষ কোটি ডলার। যখন সোনার বিনিময়ে ডলারের দাম ধার্য করা হতো, এই হিসাব কষা হয়েছে সেই সময়কার দামে। আরও সাম্প্রতিক হিসাবে, গত ১৮ বছর অবরোধের ফলে কিউবার ক্ষতি হয়েছে ২৫২ লক্ষ কোটি ডলার। তাঁর কথায়, ‘সাম্রাজ্যবাদ গোটা বিশ্বকে এই হুঁশিয়ারি দিচ্ছে যে, যদি কোনও দেশ সাহসের সঙ্গে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেষ্টা করে এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই গড়ে তুলতে চায়, তাহলে বিদ্রোহী মনোভাব দেখানোর অপরাধে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।’
কিউবার দাবির পক্ষে সোচ্চার হন, বলিভিয়া ও ইরানের প্রতিনিধিরাও। এমনকি হাঙ্গেরির প্রতিনিধি বলেন, কিউবার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু মার্কিন অবরোধ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। কিউবার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই অবরোধ বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।