বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[বিশ্ব]

[বিশ্ব]

নব্য ফ্যাসিবাদকে হারিয়ে চিলিতে জয় বামপন্থার

নব্য ফ্যাসিবাদকে হারিয়ে চিলিতে জয় বামপন্থার

শান্তনু দে

photo

শ্রমজীবী ভাষা ১ জানুয়ারি, ২০২২— হেরেছে ভয়। জিতেছে আশা। ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে চিলিতে জয়ী বামপন্থা ঘেঁষা প্রার্থী গ্যাব্রিয়েল বোরিক। নব্য-ফ্যাসিস্তদের হারিয়ে নেরুদা, আলেন্দে, ভিক্টোর হারার দেশে গণতন্ত্রের জয়।
‘চিলির বোলসোনারো’ উগ্র দক্ষিণপন্থী নয়া নাৎসী প্রার্থী আন্তোনিও কাস্ত’কে হারিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাপ্রুভ ডিগনিটি’র প্রার্থী বোরিক। বামপন্থা ঘেঁষা জোট ব্রড ফ্রন্ট এবং চিলির কমিউনিস্ট পার্টিকে নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী ফ্রন্ট। পিনোচেতপন্থী কাস্ত গত রাষ্ট্রপতি ভোটে বুক বাজিয়ে বলেছিলেন, ‘পিনোচেত বেঁচে থাকলে তিনিও আমায় ভোট দিতেন।’
১৯ নভেম্বর, প্রথমদফার ভোটে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন কাস্ত। সমর্থনের হার ছিল ২৭.৯ শতাংশ। বোরিক পেয়েছিলেন ২৫.৮ শতাংশ। একমাস বাদে, চূড়ান্ত পর্বের ভোটে বোরিক পেয়েছেন ৫৫.৮৭ শতাংশ ভোট। কাস্ত ৪৪.১৩ শতাংশ। ১৯৯০, পিনোচেতের জমানার অবসানের পর থেকে শাসকশ্রেণীর প্রধান দুই রাজনৈতিক দল— উগ্র দক্ষিণপন্থী ইনডিপেন্ডেন্ট ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (আইডিইউ) এবং সোস্যালিস্ট পার্টির (সোস্যাল ডেমোক্র্যাট)— নাম ছিল না ব্যালটে, কারণ দুটি দলই হেরে গিয়েছিল প্রথম রাউন্ডে।
এই বিশ্বে নয়া উদারনীতির প্রথম পরীক্ষা চিলিতে। পিনোচেতকে হটানোর পর চিলির মূল লড়াই ছিল গণতান্ত্রিক অধিকারগুলির পুনর্প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এই লড়াই-সংগ্রামের ফসল রূপান্তরিত হয়নি সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে। বরং এই সংগ্রাম থেকে উঠে এসেছিল আইডিইউ এবং সোস্যালিস্ট পার্টি’র মধ্যে এক দ্বিদলীয় ব্যবস্থা। অর্থনীতির প্রশ্নে যাদের মধ্যে ছিল না তেমন কোনও পার্থক্য। নয়া উদারবাদের প্রতি উভয়েরই ছিল আনুগত্য। সেকারণে রক্ষণশীলদের মতো সোস্যালিস্টরাও বিচ্ছিন্ন হন মানুষের থেকে। সেইসঙ্গেই তাবৎ রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে মোহভঙ্গ হতে শুরু করে। নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে তাঁরা নিজেদের দূরত্ব রাখতে শুরু করেন। পিনোচেতকে হটানোর পরেই নির্বাচনে যেখানে ভোটদানের হার ছিল ৯০ শতাংশ, সেখানে ২০১৭-তে তা নেমে আসে ৪০ শতাংশে। শাসকশ্রেণীর দুই দলের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ।
চিলির কমিউনিস্ট পার্টি, যারা আলেন্দের নির্বাচনের পরেও ছিল দাপুটে রাজনৈতিক শক্তি, পিনোচেতের জমানায় তাদের নির্মমভাবে দমন করা হয়। স্বৈরতন্ত্রের জমানায় পার্টি হারায় তার বহু নেতা-কর্মীকে। পিনোচেত-পরবর্তী দিনগুলির শুরুতে তারা মিশেল বাসেলেটের মতো সোস্যালিস্টদের সমর্থন করলেও, অভিজ্ঞতায় দেখেন সরকার উদারনীতি নিয়ে চলায় পার্টির শক্তি বাড়ছে না। এই পরিস্থিতিতে তারা পার্টির স্বাধীন পরিচিতি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। এবং জনগণের নিত্যদিনের ইস্যুগুলির উপর গুরুত্ব দেন, আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেন।
কমিউনিস্টরা সক্রিয় ছিলেন শ্রমিক এবং ছাত্রদের মধ্যে। ২০০৭, খনিশ্রমিকদের ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেয় কমিউনিস্ট পার্টি এবং ট্রেড ইউনিয়ন। গণআন্দোলন তীব্র করতে তারা নেয় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা। তৈরি করে কপার ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (সিটিএফ)। অসংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যে ইউনিয়ন। জোরদার করে মজুরি বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষার লড়াই। শেষে মজুরি বাড়াতে ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা দিতে বাধ্য করে সরকারকে, যার সুফল পান প্রায় ৯০,০০০ শ্রমিক। শ্রমিকশ্রেণী ধীরে ধীরে আমজনতার রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুগুলি নিয়ে আন্দোলন করতে শুরু করে। ২০১১, ছাত্রদের অস্বাভাবিক ফি-বৃদ্ধির বিরুদ্ধে শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। অক্যুপাই ক্যাম্পাস। শিক্ষার বেসরকারিকরণ ও পণ্যায়নের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে ছাত্ররা। তারা দাবি করে বিনা খরচে, উচ্চমানের সরকারি শিক্ষা। রাষ্ট্র পুলিশ নামায়। চলে বর্বর দমনপীড়ন। এই আন্দোলন থেকেই উঠে আসে বোরিকের পার্টি ফ্রেন্তে অ্যামপ্লিও (এফএ)। যেমন কমিউনিস্ট নেত্রী হিসেবে উঠে আসেন ক্যামিলা ভাল্লেজো। ২০১৩-তে, ক্যামিলার মতো বোরিকও চিলির সংসদে নির্বাচিত হন। পাশাপাশি, পেনশন সংস্কার, পেনশন তহবিলের বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন অবসর নেওয়া কর্মীরা। আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে প্রায় ২০ লক্ষ পেনশনার রাজধানী সান্তিয়াগোর রাস্তায় মিছিল করেন। এইসব প্রতিবাদ থেকে জন্ম নেয় একাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। রাস্তার প্রতিবাদ-আন্দোলন থেকে সংসদে নির্বাচিত হন প্রায় ২০ জন নেতা। এদিকে এফএ মূলস্রোতের দলগুলির সঙ্গে দূরত্ব রেখে তার ছাত্র-অভিভাবক থেকে তার শক্তি বাড়াতে শুরু করে সমাজের অন্যান্য অংশের মধ্যে। ২০১৭’র রাষ্ট্রপতি ভোটে পায় ২০ শতাংশ ভোট। উঠে আসে নতুন বামপন্থী শক্তি হিসেবে।
এবারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বামপন্থীদের প্রার্থী কে হবে, তা নিয়ে প্রাইমারি নির্বাচনে এফএ’র বোরিক হারিয়ে দেন কমিউনিস্ট প্রার্থী দানিয়েল জাদুকে। নির্বাচনে হারার পরেই অবশ্য জাদুসহ কমিউনিস্ট পার্টি নেমে পড়ে বোরিককে জেতানোর লড়াইয়ে। দু’জনের কর্মসূচীতেই ছিল ধনীদের উপর করবৃদ্ধি, এই পেনশন ব্যবস্থাকে বদলে সরকারি পেনশন ব্যবস্থা, আদি জনগোষ্ঠী মানুষদের অধিকারের সুরক্ষা, সরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে জোরদার করা। দু’জনেই বলেছিলেন, খনির উপর, বিশেষ করে তামা ও লিথিয়ামের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ। পরিবেশের কথা মনে রেখে সওয়াল করেছিলেন ‘সবুজ উন্নয়নে’র। জয়ের পর বছরপঁয়ত্রিশের বোরিক তাই বলেছেন, ‘চিলি যদি নয়া উদারবাদের আঁতুড়ঘর হয়ে থাকে, এবার তা হবে নয়া উদারবাদের কবরস্থান।’
কাস্ত আকাশ থেকে পড়েননি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছিলেন চিলির সংসদের সদস্য। ইউডিআই’র নেতা, যে দল ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ছিল পিনোচেতের ফ্যাসিস্ত-সামরিক স্বৈরাচারের সঙ্গে। তাঁর বাবা মাইকেল কাস্ত ছিলেন হিটলারের নাৎসী দলের দলের সদস্য। নাৎসী বাহিনীর লেফটেন্যান্ট। জার্মান বাহিনীর হয়ে ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ইতালিতে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে পালিয়ে এসেছিলেন চিলিতে। তাঁর এক ছেলে মিগুয়েলকে পিনোচেত প্রথমে শ্রমমন্ত্রী করেন। পরে তাঁকে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট করেন। মিগুয়েল ছিলেন মিলটন ফ্রিডম্যানের তথাকথিত ‘শিকাগো বয়েজে’র একজন। আরেক ছেলে ক্রিস্টান কাস্ত ছিলেন পিনোচেত জমানায় কৃষক গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। আর আন্তোনিও কাস্ত ছিলেন চিলির নতুন সংবিধান লেখার জন্য গণভোটের বিরুদ্ধে। এহেন কাস্ত পরিবারের সন্তান আন্তোনিও এবারেও নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন, ‘আমি পিনোচেতবাদী নই, তবে উনি যা করেছেন, তাঁর মূল্য দিই।’ তাঁর মতে, পিনোচেতের স্বৈরতন্ত্র ‘আধুনিক চিলির ভিত তৈরি করেছে।’
ভোটের কুড়িদিন আগে কাস্ত ছুটে গিয়েছিলেন ওয়াশিংটনে (যেমন ২০১৭-তে ভোটের আগে গিয়েছিলেন বোলসোনারো)। কাস্ত গিয়ে দেখা করেছিলেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মার্কিন সেনেটের রিপাবলিকান সদস্য কিউবার বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক মার্কো রুবিও’র সঙ্গে। যাঁর সঙ্গে লাতিন আমেরিকার দক্ষিণপন্থীদের রয়েছে গভীর যোগাযোগ। রুবিও’র সঙ্গে কাস্তের বৈঠকে ছিলেন অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটসে (ওএএস) চিলির রাষ্ট্রদূত ইসা কোর্ট। ছিলেন পেপসিকো, ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপের মতো অন্তত ২০টি দাপুটে সংস্থার কর্তা।
যদিও লাভ হয়নি। চিলি ফিরেছে বামপন্থায়।
একদিনে নয়। একবছর ধরে রাস্তায় লড়াই। কারফিউ। সেনা জওয়ানদের বেয়নটের মুখেও অকুতোভয় প্রতিরোধ। সশস্ত্র বাহিনীর বর্বর দমনপীড়ন। যৌন হিংসা। এমনকি ধর্ষণ পর্যন্ত। এক প্রতিরোধের বিস্ফোরণ। এবং শেষে সাফল্য। সান্তিয়াগোর প্রাণকেন্দ্রের ঢাউস ব্যানার: ‘বিদায় জেনারেল! নতুন সংবিধান চেয়েছি আমার শ্রেণীর জন্য।’
শ্রেণীসংগ্রামের পাটিগণিত: লাতিন আমেরিকার ধনী দেশ হলেও, এই বিশ্বের সবচেয়ে অসাম্যের দেশগুলির অন্যতম চিলি। জিডিপি বৃদ্ধির হার ২০১৮-তে যখন ১.১ শতাংশ, তখন বৃহত্তম কর্পোরেশনগুলির মুনাফা বেড়েছে ১০-গুণের বেশি। ওই বছরের প্রথম ছ’মাসে ‘১০,০০০ মানুষ মারা গিয়েছেন শুধু সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় অপারেশন, কিংবা চিকিৎসা করানোর সুযোগ না পেয়ে।’ একই শহরের অভিজাত মহল্লার চেয়ে গরিব মহল্লার মহিলার আয়ু ১৮-বছর কম। জানিয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’। কী কারণে এই প্রকট ব্যবধান, তা বুঝতে তাই কারো অসুবিধা হয়নি। চিলি দেখেছে জল, বিদ্যুৎ, গ্যাস, স্বাস্থ্য, ওষুধ, পরিবহন, শিক্ষা এমনকি হিমবাহের বেসরকারিকরণ।
‘উৎখাতের মাধ্যমে কেন্দ্রীভবনের’এক ধ্রুপদী উদাহরণ চিলি। ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে ১ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের অধিকাংশের জীবনধারণ। যে চিলিতে মাথাপিছু আয় বছরে ২৫,০০০ ডলার, সেখানে অর্ধেক শ্রমিকের বেতন মাসে ৫৫০ ডলারের কম।
১৪ অক্টোবর, ২০১৯। মেট্রোরেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে হাইস্কুলের ছাত্রদের বিক্ষোভ দিয়ে শুরু। মেট্রোর ভাড়া ৩.৭৫ শতাংশ (৩০ পেসো) বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্ররা। দ্রুত এই
আন্দোলন এক অন্য মাত্রার চেহারা নেয়।
দাবি তখন নিছক ‘৩০-পেসো নয়, ৩০-বছরের অসাম্যের অবসান।’
মানুষ চান নয়া উদারবাদের বিকল্প। রাষ্ট্রপতি পিনেরার অবিলম্বে পদত্যাগ। একটি নতুন সরকার। তাঁরা চান মজুরিবৃদ্ধি, যা হবে দারিদ্রসীমার উপরে। ৪৫ নয়, সপ্তাহে ৪০-ঘণ্টা কাজ। ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, যৌথ দর কষাকষির নিশ্চয়তা। নাগরিক পরিষেবাসহ স্ট্র্যাটেজিক ক্ষেত্রের জাতীয়করণ। বেসরকারি পেনশন তহবিলের অবসান। ছাত্রদের ঋণমকুব। জলের কর ব্যবস্থার অবসান। প্রগতিশীল কর-কাঠামো। একটি নতুন অভিবাসী নীতি। শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, রাজনীতি থেকে অর্থনীতির— কাঠামোগত পরিবর্তন। সবমিলিয়ে একটি নতুন সংবিধান। আর তার খসড়া লেখার জন্য একটি নতুন নির্বাচিত গণপরিষদ।
শেষে এবছর ১৬ মে, চিলির জন্য ছিল এক ঐতিহাসিক দিন। নতুন সংবিধান লিখতে গণপরিষদের নির্বাচন দেখেছে এক রাজনৈতিক ভূকম্পন। যা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে দেশের রাজনৈতিক ক্যানভাস। নয়া উদারবাদ অবসানে এক নির্ণায়ক জনাদেশ। স্বৈরাচারী পিনোচেত জমানার অবসানের পর থেকে বামপন্থীদের অন্যতম বৃহত্তম জয়। নেরুদা, ভিক্টর হারা, আলেন্দের চিলিতে ইতিহাসের নতুন পাতা।
জোর ধাক্কা খেয়েছে রাষ্ট্রপতি সেবাস্তিয়ান পিনেরাকে ঘিরে উগ্র দক্ষিণপন্থী জোট। ১৫৫-সদস্যের গণপরিষদে পেয়েছে মাত্র ৩৭টি আসন (২৩ শতাংশের মতো সমর্থন)। নেই ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা। যার জন্য প্রয়োজন এক-তৃতীয়াংশ, অন্তত ৫২টি আসন। যেখানে কোনও সিদ্ধান্তের অনুমোদনের জন্য জরুরি দুই-তৃতীয়াংশ আসন। সমর্থনের হার মাত্র ২০.৫৬ শতাংশ। ১৯৬৪’র পর সবচেয়ে শোচনীয় পরাজয়। নির্বাচনের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো নির্বাচিত ১৫৫ জনের অর্ধেক ৭৯ জনই মহিলা। ৭৬ জন পুরুষ। আদি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ১৭ জন। তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো তথ্য হলো, নির্বাচিতদের গড় বয়স ৪৫। যার অর্থ, সংবিধানের খসড়া তৈরিতে তারুণ্য নিতে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
এই চিলিতেই, এই গ্রহে প্রথম উদারনীতির পরীক্ষা।
স্বৈরাচারী সামরিক শাসক জেনারেল পিনোচেতের জমানায়। ১৯৮০, চিলির ওপর নতুন সংবিধান চাপিয়ে দেন তিনি। ওই সংবিধানই ঠিক করে দেয়: দেশ চলবে নয়া উদারনীতিতে। ১৯৯০, স্বৈরতন্ত্রের অবসান হলেও, তারপর আট-বছর তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ। অবসর নেওয়ার পর আরও বারো-বছর ছিলেন চিলির সংসদের উচ্চকক্ষ সেনেটের দাপুটে সদস্য। এই সময়ে ৩৩-বার সংবিধান সংশোধন হয়েছে। কিন্তু বেসরকারিকরণের সঙ্গে জড়িত নয়া উদার কাঠামো থেকে গিয়েছে জীবন্ত। অটুট থেকে গিয়েছে নয়া উদারবাদের মডেল।
এহেন চিলিতে, পিনোচেতের সংবিধান বদলে নতুন সংবিধান চেয়ে মানুষ দিয়েছেন নির্ণায়ক রায়। গত অক্টোবরে, গণভোটে প্রায় ৭৮.২৭ শতাংশ মানুষ রায় দিয়েছেন নতুন সংবিধানের পক্ষে। কমিউনিস্ট-সহ প্রগতিশীলদের ডাকে সাড়া দিয়ে নতুন সংবিধান তৈরিতে সরাসরি নির্বাচিত গণপরিষদকেই বেছে নিয়েছেন ৭৯.২২ শতাংশ।
বলিভিয়া, পেরু, হন্ডুরাসের পর এবারে চিলি। লাতিন আমেরিকা লড়ছে। গণবিদ্রোহ থেকে ব্যালটে। অভিমুখ ফের বামপন্থায়। এবং লাতিন আমেরিকা শুধু লড়ছেই না। ভাঙছে নয়া উদারবাদী মডেলকে, তার মূল অক্ষ চিলি থেকে। এই গ্রহে নয়া উদারবাদের প্রথম পরীক্ষাগার ছিল চিলি। এহেন চিলিতে দক্ষিণপন্থীদের বরাবরের দাপট ভেঙে বামপন্থীরা, প্রগতিশীলরা তৈরি করেছেন এক নতুন সম্ভাবনা।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.