বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[দেশ]

[দেশ]

অফুরাণ পথ ও ফুরিয়ে যাওয়া জীবন

অফুরাণ পথ ও ফুরিয়ে যাওয়া জীবন

অনিতা অগ্নিহোত্রী

photo

১ মে, ২০২০, শ্রমজীবী ভাষা - ধনতন্ত্রের সাজানো গোছানো বসার ঘরে পরিপাটি কভার পরিয়ে রাখা পুরানো বালিশগুলি ফেটে গেছে। তুলো উড়ছে ঘরময়, গরিবের রক্তমাখা তুলো। সেগুলিকে ধরে বালিশের ভিতর চালান দেওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে এক জটিল প্রক্রিয়া।
একশো কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এসেছিল মেয়েটা, ছোট মেয়ে জামলো মাকদম, বারো বছর বয়স। পেরোতে পারল না পঞ্চাশ কিলোমিটার, পথের এক তৃতীয়াংশ। খিদে জনিত দুর্বলতা, ইলেকট্রোলাইটের অভাব, বিপুল ক্লান্তির সঙ্গে লড়াইতে হেরে গিয়ে পথেই লুটিয়ে পড়ল সে। ১৮ ই এপ্রিল। সকালে পেটে ব্যথার কথা বলছিল সে। কে জানে কত তীব্র ছিল সেই ব্যথা। সঙ্গে পরিবারের কেউ ছিলেন না, থাকলে হয়তো তাকে যথা সময়ে কেউ দিতেন খাবার বা জল। জামলো গিয়েছিল তার এলাকার আরও এগারো জন শ্রমিকের সঙ্গে। তারাও মহিলা ও শিশু। দলের একমাত্র মোবাইলটিতে চার্জ ছিলনা।
লকডাউন হয়ে গেছিল মার্চ মাসের পঁচিশ তারিখে, এতটাই অতর্কিতে যে দেশের লক্ষ লক্ষ দেশান্তরী শ্রমিক আটকে পড়ে ছিলেন নিজেদের কাজের জায়গায়। সরকারের উদার নির্দেশ সত্ত্বেও সে সব জায়গায় তাঁদের বৃহত্তম অংশের না ছিল কাজ, কাজেই মজুরির সুবিধে ছিলনা। বাড়ি ভাড়ার জন্য ঘর মালিকদের কাছ থেকে আসছিল প্রাত্যহিক চাপ। খাবার ও রেশনের ব্যবস্থা ছিলনা অনেক জায়গাতেই, কারণ শ্রমিকরা অন্য রাজ্যে রেশন পান না। তাঁদের হক নিজের নিজের গ্রাম ও শহরে। লকডাউনের জাতীয় ঘোষণায় অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মহীনদের হিত অর্থাৎ খাওয়া পরার ব্যাপার, বাড়ি ভাড়ায় রেয়াৎ করার মত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি সরকার নাগরিকদের ব্যক্তি গত ঔদার্যের উপর ন্যস্ত করেছিলেন। তখনও আতঙ্কিত দরিদ্র মানুষ জানেন না পরের দিন সকালে চাল ডালের দোকান খোলা থাকবে কিনা। বহু যোজন পথ কি

ভাবে পেরিয়ে তাঁরা পৌঁছবেন নিজেদের গ্রামে তার কোনও উল্লেখও করা হয়নি। ফিরে না গেলে ভিন রাজ্যের শহরের অন্নহীন, আবা হীন শুষ্ক অন্ধকূপে তাঁরা আগামী একুশ (পরে যোগ হয় আরও উনিশ দিন, মোট চল্লিশ দিন) দিন কিভাবে কাটাবেন তারও কোনও রূপরেখা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়নি। যতদিনে করা হল, তার মধ্যে আতঙ্ক অস্থিরতা তুমুল। দেশান্তরী শ্রমিক দের বলা হচ্ছে, যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন, আপনাদের খাবার, রেশন সবই দেওয়া হবে। আপনারা দলে দলে পথে বেরোলে সংক্রমণ ছড়াবে। নিজের রাজ্যে পৌছলেও সেখানে আপনাদের কোয়ারান্টিন করা হবে, কাজেই যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন।
প্রথম কয়েকদিনে উৎসাহী দুটি রাজ্য শ্রমিকদের নিজ গৃহে ফেরৎ পাঠানোর জন্য আন্ত:রাজ্য বাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে সে সব ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে হাতগুটিয়ে বসলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জেলা সীমানগুলি সিল করার নির্দেশ দেওয়ার ফলে শ্রমিকদের দল কেন, মাছিটিরও গলার সুযোগ রইল না। সংবাদমাধ্যমে দেশান্তরী শ্রমিকদের হাজারে হাজারে পথে নামা, বাস স্টেশনে , রেল স্টেশনে সিট দখলের অতিমানবিক চেষ্টার ছবি দেখে দেশের বিবেক মথিত। মধ্যবিত্ত ও তাঁদের উচ্চবর্তী শ্রেণীগুলি, বিস্মিত, কিছুটা যেন বিরক্ত ও। এত মানুষ! এরা এল কোথা থেকে? এরা কেন ফিরে যেতে চায়? দেখা গেল, কেবল তাঁরা নন, দেশের প্রশাসনে দায়িত্বশীল মাথারাও পাটিগণিতের হিসেব ভুলে বসে আছেন। শ্রমিকদের ৮৫ শতাংশ ই কাজ করেন অসংগঠিত ক্ষেত্রে। কাগজে কলমে আমরা জানি। এদের ২০ শতাংশও যদি দেশান্তরী শ্রমিক হন, তবে তাঁদের ঘরে ফিরে যাবার জন্য অন্তত সাত দিন ট্রেন বাস ট্রাক ইত্যাদি পরিবহন ব্যবস্থা খুলে রাখা উচিত ছিল। সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণে কোনও রাখঢাকই দেখা গেলনা, যখন বিদেশে বিমান পাঠিয়ে প্রবাসী ভারতীয় এবং আটকে পড়া ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আসা হল। কিছুদিন আগেও অন্য রাজ্যে আটকে পড়া ছাত্রছাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে গেল শয়ে শয়ে বাস।
দেশান্তরী শ্রমিকদের ঘন বসতিপূর্ণ শহরী অঞ্চলে রাখতে সেখানকার প্রশাসন ত্রস্ত। বস্তি অঞ্চলে অতি দ্রুত ছডিয়ে পড়ছে সংক্রমণ। আবার যেখান থেকে তাঁরা এসেছেন, তুলনামূলক ভাবে কম সম্পন্ন রাজ্যগুলিও তাঁদের ফেরাতে নারাজ। কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা, চিকিৎসা পরিকাঠামো সবতাতেই তাঁরা পিছিয়ে। অর্থাৎ লকডাউন হতেই হিসেবের খাতা থেকে বাতিল হয়ে গেলেন সেই সব লক্ষ লক্ষ মানুষ, যাদের শ্রমে চলে আমাদের শহর- গ্রামের অর্থনীতির চাকা। গার্হস্থ শ্রম, গৃহ নির্মাণ, ছোট কল কারখানা, মজদুরি, ইটভাটা, ফসল কাটা, ঝাড়া বাছাই এর কাজ কম মজুরিতে করতে আসা বহিরাগতরা।
দেশান্তরী শ্রমিকরা ঘরে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন সর্বত্র। দু’বেলা দুমুঠো খাবার পেলেই কি এমন কোথাও চল্লিশ দিন বা আরও অনির্দিষ্ট কাল রয়ে যাওয়া যায়, যেখানে কাজ নেই, মাথার উপর ছাত নেই, পরিবার পরিজন বা নিজ সমাজ নেই। খাবার তো জেলেও পাওয়া যায়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভীতি অতিক্রম করা ভীষণ কঠিন। একে তো দেশে যে সামান্য পরিমাণ টেস্টিং হচ্ছে তাতে উপসর্গ আছে এমন মানুষদেরও রোগনির্ণয়ের সম্ভাবনা অতিদূর। যদি পজিটিভ হন, তাঁকে যেতে হবে সরকারের ব্যবস্থা করা কোয়ারান্টাইনে অথবা হাসপাতালে। সঙ্গের বন্ধু ও সঙ্গীরা বর্জন করবেন তাঁকে, নিজ রাজ্যে সমাজের লাঞ্ছনা সইতে হবে তার পরিবারকে, এমন এক সময়ে যখন তাঁরা নি:স্ব, রোজগার নেই। গ্রামে ফিরে গেলে তবু মুখে দু’ ফোঁটা জল দেবে কেউ, কিন্তু পরদেশে? করোনা ভাইরাসের কারণে মৃত্যু ভয়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রবল হয়ে উঠেছে বর্জিত, ত্যক্ত হয়ে অনাহারে দিন কাটানোর ভয়।
এই রকম তীব্র কোনও ভয় থেকে জামলো মাকদম আর তার সঙ্গীরা গ্রামে ফিরে আসছিল। ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলার আডেড গ্রাম। ওই গ্রামের এক মহিলা ও একজন ঠিকাদার, জামলোর সঙ্গে আরও কয়েক জন মহিলা ও শিশুকে নিয়ে যান তেলেঙ্গানার পেরুরুতে লঙ্কা খেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে। জামলো গেছে বাড়ি থেকে ১৫০ কিলোমিটার এবং সে স্বেচ্ছায় যায়নি। বাবা মায়ের সঙ্গেও যায়নি সে। বরং, জামলোর বাবা মা আন্দোরাম আর সুকামতী জানতেন না কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁদের একমাত্র সন্তানকে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, জামলোর এখন ইউনিফর্ম পরে , চুলে বিনুনি বেঁধে গ্রামের স্কুলে ক্লাস সিক্স কি সেভেন এ পড়তে যাওয়ার কথা। অবসর সময়ে খেলাধুলো, অথবা ঘরের কাজে কিছু সাহায্য করা। শিশু জামলো হয়ে গেল বহুদূরে এক লঙ্কা খেতের শ্রমিক। লকডাউন ঘোষিত হওয়ার পর খেতের মালিক অবশ্যই প্রত্যাশিত উদারতা দেখায়নি। কাজ যখন বন্ধ তখন ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের বসিয়ে খাওয়ানো কে। বিশেষত, নির্দেশ নামাতে কোথাও বলা নেই, এই ধরনের খরচের জন্য কোনও ভর্তুকি সে পাবে কিনা।
প্রথম দফার লকডাউন ১৪ই এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা ছিল। সে সীমারও কোনও বিরতি না দিয়েই বাড়ানো হল ৩ মে পর্যন্ত। ঐ পর্যায়েও সরকার দেশান্তরী শ্রমিকদের ফেরার জন্য ২/৩ দিনের জন্য কিছু পরিবহনের ব্যবস্থা করতে পারতেন। কিন্তু করেন নি। সরকারের উদ্দেশ্য অবশ্যই মহৎ ছিল; সংক্রমণ কমানো। কিন্তু এমত সংকট কালে যারা সরকারকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তাঁদের পায়ে যে বহু দিন পথের ধুলো লাগেনি তা বোঝা যায়। জামলো আর তার সঙ্গীরা ফিরতি যাত্রা আরম্ভ করে ১৫ এপ্রিল। ততদিনে লকডাউনের দ্বিতীয় পর্ব আরম্ভ হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের ভূমিকা ও দায়িত্ব কিছু বাড়লেও, তা স্থানীয় স্তরে। চলমান, ক্লান্ত, নির্দেশনামা অমান্য করে ঘরের দিকে হেঁটে চলা শ্রমিকদের জন্য কোনও নির্দিষ্ট ব্যবস্থাই ছিল না। না পরিবহন, জল বা খাবার। পুলিশকে সারা দেশেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পথে বেরোন মানুষ জনকে লাঠির বলে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ার। যে রাজ্যে জামলোরা কাজ করতে গিয়েছিল, সেই তেলেঙ্গানা প্রশাসনের নির্দেশ ছিল, লকডাউন ভাঙলে, দেখা মাত্রই গুলির আদেশ। জাতীয় রাস্তা ধরে এলে মালবাহী ট্রাক বা কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বোধহয় প্রাণভয়েই জঙ্গল এবং পাহাড়ি ধরে কেবলই হেঁটে আসছিল দলটি। এই ভাবে তারা পেরোয় একশো কিলোমিটার পথ। অনেকটা দূরত্বই বলা যায়, বারো বছরের মেয়ের পক্ষে। করোনাভাইরাসের মতন অতিমারির ভয়াবহতা থেকে একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে আমরা বুঝবো, জামলো মাকদমের এই পথ হাঁটা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। বরং একেবারই নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। কোনও যানবাহনে কোনও মতে জীবন্ত বিজাপুরে নিজের বাড়িতে পৌছে গেলে, তার বেঁচে থাকা, কাজের জন্য ১৫০ কিলোমিটার উজিয়ে যাওয়া আমাদের দৃ্ষ্টি কোনও ভাবেই আকর্ষণ করতো না।
নিজের গ্রামে বা শহরে কাজ পাওয়া, সে এক বিরল সৌভাগ্য ভারতীয় শ্রমজীবীর পক্ষে। ২০১১ জণগণনার হিসেব অনুযায়ী, ৪৫ কোটি মানুষকে, জেলা বা রাজ্যের বাইরে যেতেই হয়। এদের মধ্য ৬.৩ কোটি শিশু শ্রমিক। তাদের মধ্যে আবার ৩ কোটি বালিকা। এদের অর্ধেকের বেশি দেশান্তরে যায় পরিবারের সঙ্গে। বাকিরা নিজেই, কোনও দলের সঙ্গে অথবা বিবাহ সূত্রে। ১০-১৪ বছরের বালিকারা যখন বিয়ে করে গ্রাম ছাড়ে তাদের অধিকাংশের পরিণতি কি হয়, অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের ফলে অকালেমৃত্যু, অথবা নামমাত্র বিবাহের পর হাতবদল ও পাচার, তার কিছু ধারণা পাওয়া যায় সংবাদমাধ্যমেই। স্থানীয় পঞ্চায়েত, সংগঠন, পুলিশের চেষ্টা সত্বেও এই বহির্গমন আটকানো যায় না, কারণ দারিদ্র্যের মূল কারণগুলি না বদলালে মানুষ গ্রাম ছাড়বেই। কেউ শর্তগুলি জেনে বুঝে, কেউ না বুঝে। বালিকারা সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত ও শোষিত হয়, কারণ প্রায়শই হাত পা বেঁধে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয় তাদের। কোথায় যায় দেশান্তরী শ্রমিক? মহারাষ্ট্র, গুজরাত, অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ ও তামিলনাডুতে। শহরের নানা কাজ, গ্রামাঞ্চলে কৃষিতে ভালো মজুরি, এসব কারণ ছাড়াও, একটি বড় অনুঘটক, আগে থেকে ভিন রাজ্যে যাচ্ছেন যাঁরা, তাঁরাই হয়ে যান দাদন ব্যবস্থার এজেন্ট, অর্থাৎ, গ্রাম ও মালিকের মধ্যবর্তী বর্গ।
আমাদের শ্রম আইন ২০১৬ পর্যন্ত বিপজ্জনক ক্ষেত্র ছাড়া চোদ্দ বছরের নীচে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ করেনি। অর্থাৎ শিশু শ্রম বিনা আমাদের অর্থনীতির চাকা অচল হয়ে পড়বে, আমরা ধরেই নিয়েছি। ইতিমধ্য এসেছে শিক্ষা অধিকার আইন। তা সত্ত্বেও ২০১৬ সালের সংশোধন-এ পারিবারিক ব্যবসার ক্ষেত্রে শিশু শ্রমকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই আড়ালের সুযোগ নিয়ে আরও নানাবিধ দুর্নীতি সম্ভবপর হচ্ছে। কিন্তু শ্রম আইনের ফাঁকগুলি নিয়ে সরকার বিচলিত নন। দেশান্তরী শ্রমিকদের গ্রাম ছাড়ার আগে নথিভুক্তি, এজেন্ দের সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত নিয়ে রাখার কাজ সামান্যই হচ্ছে। জেলা স্তরে এই কাজ দরিদ্র জেলাগুলিতে হলে দেশান্তরী শ্রমি রা তাঁদের খাদ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষা অন্যত্র গিয়েও পেতে পারতেন। সবচেয়ে জরুরি, তাঁরা কোথায় চলেছেন, কোন গন্তব্যে, তা জানার একটা উপায় থাকতো। তা যদি হত, তাহলে সাড়ে ছ’ কোটি শিশু শ্রমিক কেন কাজের খোঁজে ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে সে বিষয় কিছু তথ্য সরকারি ভাবে পাওয়া যেত। কিন্তু যে সরকার শ্রম আইন সংস্কার বলতে বোঝেন, প্রলম্বিত কর্ম দিবস (পুঁজিপতিরাও তাই বোঝেন), তাঁদের কাছ থেকে কি আশা করা যায়?
জামলো মাকদম যদি কোনওমতে বেঁচে গ্রামে ফিরে আসত, কীই বা সে আশা করতে পারত জীবনের কাছ থেকে। ছত্তিশগড়ের বস্তার, বিজাপুর, দান্তেওয়াড়ার বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে উগ্রপন্থী হিংসা ও পুলিশ প্যারামিলিটারীর মাঝে পড়ে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে এ অঞ্চলের আদি সন্তান গোণ্ড আদিবাসিদের জীবন। ২০০৫-১৫ উগ্রপন্থী দমনের নামে সালওয়া জুড়ুম অভিযানে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম, আদিবাসিদের জমি থেকে বেদখল করা হয়েছে, মেয়েরা লাঞ্ছিত, ধর্ষিত হয়েছে। এসবের কোনও বিচার বা ক্ষতিপূরণ হয়নি। কাজ ও শান্তির খোঁজে কাছাকাছি তেলেঙ্গানায় বসত করতে গেছে কয়েক হাজার পরিবার। লক্ষ লক্ষ মেয়ে-পুরুষ ক্ষিদের হাত থেকে বাঁচতে দেশান্তরী হন বর্ষার আগে। মেয়েদের অনুপাত ছেলেদের চেয়ে বেশি। জামলোর পরিবারের অনুমতি ছাড়াই তাকে এতদূর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কেবল তাদের দারিদ্র ও অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে। জামলোর মৃত্যুর পর এখন তদন্ত হচ্ছে, ক্ষতিপূরণ পাবে তার পরিবার, জেলার শ্রম আধিকারিকের জবাবদিহি তলব হবে। কিন্তু জামলো বেঁচে থাকলে পরের বছরও সে কাজ করতে যেত, ওই ভাবে, তেলেঙ্গানা বা অন্য কোথাও। যাবে ও জামলোর সঙ্গী শিশুরা, সারা দেশের আর ও কোটি কোটি মেয়ে। সচেতন প্রশাসন অবশ্য জামলোর মৃতদেহের করোনা পরীক্ষা করাতে ত্রুটি করেনি। তার সহযাত্রীদেরও কোয়ারান্টাইন করা হয়েছে। জামলোর পেটে খাবার ছিলনা, কিন্তু সে ছিল করোনা নেগেটিভ। আশা করা যায়, দেশের এই দুর্দিনে হতভাগিনী একটি স্বাভাবিক অন্তেষ্টি পেয়েছিল, অন্তত, তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে জামলোর মাকে কেউ বাধা দেয়নি।
তথ্য সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস; অরিত্র চক্রবর্তী, শ্রম ব্লগ; চিলড্রেন অন দ্য মুভ, ইন্ডিয়া মাইগ্রেশন নাউ।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.