বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[দেশ]

[দেশ]

মহারাষ্ট্রে আশা কর্মীদের ধর্মঘট

মহারাষ্ট্রে আশা কর্মীদের ধর্মঘট

প্রতিবেদন

photo

টানা এক সপ্তাহ ব্যাপী ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে জয় ছিনিয়ে নিলেন মহারাষ্ট্রের আশা কর্মীরা। ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন ৭২ হাজারেরও বেশি আশাকর্মী। এই ধর্মঘটের ফলে রাজ্য জুড়ে তৃণমূল স্তরে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হয়ে পড়েছিল। আশা কর্মীদের দাবি ছিল, সান্মানিক (বেতন) ও কোভিড ভাতা বৃদ্ধি, কাজের বোঝা কমানো, কোভিড-বিধি অনুযায়ী সুরক্ষার ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদি। বার বার দাবি জানানো সত্বেও সরকার তাঁদের সমস্যা নিয়ে উদাসীন ছিল। দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত আশা কর্মীরা আন্দোলনের রাস্তা নিতে বাধ্য হন। গড়ে তোলেন আন্দোলনের জন্য কমিটি। এই কাজে সিআইটিইউ বিশেষ ভূমিকা নেয়। ধর্মঘট শুরু হয় ১৫ জুন। জন আরোজ্ঞ অভিযান, স্বাস্থ্য বিষয়ক অসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির নেটওয়ার্ক, আশা কর্মীদের ধর্মঘটকে সমর্থন জানায়।
এত দিন মহারাষ্ট্রে আশা কর্মীরা সান্মানিক বা বেতন পেতেন মাসে ৫০০০ টাকা এবং কোভিড ভাতা মাসে ১০০০ টাকা। এই যথসামান্য টাকায় পরিবার প্রতিপালন প্রায় অসম্ভব। অতিমারি ও লকডাউনে যখন বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন, তখন আশা কর্মীদের এই সামান্য আয়ই তাঁদের পরিবারের বেঁচে থাকার উপায়।
ধর্মঘটের মহারাষ্ট্র সরকার এতটাই চাপে পড়ে গিয়েছিলেন যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেস তোপে সমাধানের রাস্তা খুঁজতে আন্দোলনরত আশা কর্মীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিন দিন আলোচনায় বসেন। তিনি প্রথম দিন থেকেই আশা কর্মীদের দাবিগুলির ন্যায্যতা মেনে নেন কিন্তু রাজ্য সরকারের আর্থিক সমস্যার কথা বলেন।
আশা কর্মীরা সারা দেশে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেন। অতিমারির পরিস্থিতিতে কোভিডের বিরুদ্ধে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যেমন সাহসী লড়াই চালাচ্ছেন তেমনই আশা কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামাঞ্চলে কোভিডের বিরুদ্ধে তৃণমূল স্তরে মানুষকে বাঁচাবার জন্য লড়াই চালাচ্ছেন।
তাঁদের কাজ এলাকার প্রসূতিদের প্রতি নজর রাখা। প্রসবের পর শিশু ও মায়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখা। শিশুদের টিকা দেওয়া। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্ভে করা। স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রচার করা। দিনে ৮/৯ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। রাতবিরেতে কারও অসুস্থতার খবর এলে তখনই ছুটতে হয়। গ্রামাঞ্চলে এমনিতেই যেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দুর্বল কোভিড মোকাবিলায় তাদের ভূমিকা সারা দেশেই প্রশংসা পেয়েছে। যদিও অধিকাংশ জায়গাতেই ন্যূনতম সুরক্ষা ব্যবস্থা তাঁদের সরবরাহ করা হয় না। তাঁদের দাবি, স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই দিতে হবে। আশা কর্মীদের অভিযোগ, শেষবার তাঁদের স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে গত বছরে। তাঁদের আর্তি, তাঁদেরও সুরক্ষা প্রয়োজন। মহারাষ্ট্রে কমপক্ষে ৫৭০ জন আশা কর্মী কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। তাই বেতন ও কোভিড ভাতা বৃদ্ধির দাবির সঙ্গে নিজেদের সুরক্ষার জন্য তাঁরা সরব হয়েছেন। বেছে নিয়েছেন ধর্মঘট-আন্দোলনের পথ।
অবশেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবিগুলি আংশিক ভাবে মেনে নেন। ২৩ জুন আশা কর্মীদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি, সান্মানিক বা বেতন মাসে ১০০০ টাকা ও কোভিড ভাতা মাসে ৫০০ টাকা করে বৃদ্ধি করতে সম্মত হন। এই সিদ্ধান্ত কার্যকরি হবে ১ জুলাই থেকে। এর ফলে আশা কর্মীদের সান্মানিক বা বেতন দাঁড়াল মাসে ৬০০০ টাকা ও কোভিড ভাতা মাসে ১৫০০ টাকা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশা কর্মীদের কোভিড সুরক্ষার বিষয়েও আশ্বাস দিয়েছেন। আন্দোলনের এই আংশিক জয়ে আশা কর্মীরা খুশি। তাঁরা এই আংশিক জয়কে স্বাগত জানিয়ে কাজে ফিরছেন।
এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিতে পারেন সারা দেশ ও পশ্চিমবাংলা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবাংলায় আশা কর্মীদের সান্মানিক মাসে ৪৫০০ টাকা। গত বছর তাঁরা ছয় মাস ১০০০ টাকা করে কোভিড ভাতা পেয়েছিলেন। এ বছর এখনও পর্যন্ত সেই ভাতা মেলেনি। এই অবহেলিত আশা কর্মীদের সংগঠিত করা ও তাঁদের অধিকারের আন্দোলনকে সহযোগিতা করা এ রাজ্যেও বিশেষ প্রয়োজন।
আশা কর্মীদের ধর্মঘটের পর মহারাষ্ট্রের রাজ্য সরকার পরিচালিত হাসপাতালগুলির পাঁচ হাজারেরও বেশি নার্স বেতন বৃদ্ধি ও কাজের বোঝা কমানোর দাবিতে ৪৮ ঘন্টা ধর্মঘটে নেমেছেন। তাঁদের অভিযোগ বার বার লিখিত ভাবে সরকারের কাছে দাবি পেশ করা সত্বেও সরকার কর্ণপাত করেনি। তাই তাঁরা ধর্মঘটে নামতে বাধ্য হয়েছেন। এর ফলে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে নার্সিং পরিষেবা ভাল রকম ব্যাহত হয়ে পড়েছে।
প্রচুর শূণ্যপদ থাকা সত্বেও নিয়োগ না হওয়ায় নার্সিং কর্মীদের কাজের বোঝা বেড়েই চলেছে। কোভিডের কারণে তাঁরা ছুটি পাচ্ছেন না। উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটির অনুমতি পাচ্ছেন না। ষষ্ঠ পে-কমিশনে ঘোষিত ৭২০০ টাকা নার্সিং ভাতা পাচ্ছেন না। নার্সিং কর্মীরা ভাতা বৃদ্ধি ও কাজের বোঝা কমানোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.