বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[দেশ]
১৯৩৭ সালের ৬ মে। আমেরিকার নিউ জার্সির ম্যাঞ্চেস্টার টাউনশিপের আকাশে উড়ছিল একটা এয়ারশিপ। হাইড্রোজেন গ্যাসে ভরা। তৈরি করেছিল জার্মানির জেপেলিন কোম্পানি। এয়ারশিপের নাম ছিল হিন্ডেনবার্গ। একদা জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল পল ভন হিন্ডেনবার্গের নামে। ওই দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ অবতরণের সময় গ্যাস লিক করে এয়ারশিপ ফুটো হয়ে যায় ও মাটিতে আছড়ে পড়ে। এয়ারশিপে যাত্রী ছিলেন ৯৭ জন। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৩ জান যাত্রী ও ২২ জন বিমানকর্মীর। সেই থেকে হাওয়া ভরা বা গ্যাসভরা বেলুন ফুটো হয়ে যাওয়ার প্রতীক হয়ে আছে হিন্ডেনবার্গ।
এই ঘটনার ৮৬ বছর পরে আরেক হিন্ডেনবার্গ ফুটো করে দিল আদানি গোষ্ঠীর সম্পত্তির হাওয়া ভরা বেলুন। না, আদানিদের বেলুন ফুটো হয়ে গ্যাস বেরোয়নি। মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফুটো করে দিয়েছে আদানিদের জালিয়াতির ভাঁড়। আর তাতেই হু হু করে দাম কমছে আদানিদের শেয়ারের, চুপসে যাচ্ছে এই গোষ্ঠীর ফোলানো– ফাঁপানো সম্পত্তির বেলুন। শেষ পর্যন্ত এই বিষয়টা কোথায় গিয়ে থামবে কেউ জানে না। এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে বিশ্বের ৩ নম্বর ধনী গৌতম আদানির অবস্থান নেমে এসেছে ২৯ নম্বরে।
আদানিদের মূল সমস্যাটা কোথায়। হিন্ডেনবার্গ জানাচ্ছে, কর ফাঁকি দিয়ে ও ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আদানিদের শেয়ারের দাম বাড়িয়ে রাখা হয়েছে। আসলে দাম যা হওয়া উচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি দেখানো হয়েছে শেয়ারের দাম। এসবই কর্পোরেট দুনিয়ার রাঘব বোয়ালদের কারসাজি। এর মানে ডিসেম্বরের শেষে যদি আপনি আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার কিনে থাকেন, (ধরা যাক)২৪০০ টাকা দরে তাহলে এখন তার দাম ১৪০০ টাকার কিছু বেশি। ২৪ জানুয়ারির আগে আদানি গ্রুপের সব কোম্পানির শেয়ারের মোট দাম ছিল ১৯ লক্ষ কোটি টাকা। ২৪ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ১ মাসের মধ্যে সেই দাম কমে হয়েছে ৭.৩ লক্ষ কোটি টাকা। এর মানে এক মাসের মধ্যে আদানিদের শেয়ারের দম কমেছে প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি ট্রান্সমিশন এবং আদানি গ্রিন এনার্জি— এই তিন কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ।
শুধু আদানিদের কোম্পানির ক্ষতিই হয়নি। ক্রমশ জানা গেছে আদানি গোষ্ঠীতে এসবিআই আর এলআইসির বিনিয়োগ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। তাহলে কত ক্ষতি হল এই দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার? কত ক্ষতি হল বাকি সব ব্যাঙ্কের। উত্তরটা ঠিক করে দিলেন নির্মলা সীতারামন। বললেন, ‘বাজারে শেয়ার আসে, শেয়ার যায়। এফপিও চালু হয়, বাতিলও হয়। একটা কোম্পানির জন্য কিছু যাবে আসবে না।’ঠিক এরপরেই মুখ খুললেন এসবিআই সহ অন্য ব্যাঙ্কের কর্তারা। মুখ খুলল এলআইসি। তারা জানাল, আদানি শেয়ার তারা কিনেছে বটে, তবে ক্ষতি এমন কিছু হবে না। এলআইসি বলল, আদানিতে তাদের বিনিয়োগ তাদের মোট সম্পত্তির মাত্র এক শতাংশ।
তবে এখানেই বিষয়টা শেষ হয়ে যায় না। ২৪ ফেব্রুয়ারি জানা গেল,আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে বিনিয়োগ করায় এক মাসে এলআইসির সম্পদের মূল্য কমেছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। এলআইসি সূত্রে খবর, এলআইসি আদানি গোষ্ঠীর যে ৭টি সংস্থার শেয়ার কিনেছে ৩১ ডিসেম্বর তার বাজার দর ছিল ৮২ হাজার কোটি টাকা। ১৩ ফেব্রুয়ারি সেই দাম কমে হয়েছিল ৩৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। ফলে এখন যদি দাম আরও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আদানিদের শেয়ার বিক্রি করতে চায় এলআইসি, তাহলে তাদের ক্ষতি হবে ৪৯ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। এর চেয়েও বড় কথা হল এলআইসি এই শেয়ারগুলির জন্য যত টাকা বিনিয়োগ করেছিল, এখন তার দাম আসল বিনিয়োগ থেকে ৩২০০ কোটি টাকা কমে গেছে। এসবিআইয়ের ক্ষতির পরিমাণ এখনও সামনে আসেনি। অথচ আদানিদের কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর স্বয়ং কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব বাজারকে অভয় দিয়ে বলেছিন, মাভৈঃ, আমাদের নিয়মকানুন খুব কড়া। বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কেউ করতে পারবে না।
শেয়ার দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার পর আদানিরা পাল্টা আক্রমণের পথে গেল। জানাল, ভারতের অর্থনীতিকে ধ্বসাতেই মাঠে নেমেছে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ। পাল্টা হিন্ডেনবার্গ জানিয়ে দিল, জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে দুর্নীতি আড়াল করা যাবে না। হয় তাদের প্রশ্নের উত্তর দিক আদানিরা, নয়ত তাদের বিরুদ্ধে আদালতে যাক। কোনওটাই করে উঠতে পারল না আদানিরা। সেই সময় বাজারে তারা ছেড়েছিল আদানি এন্টারপ্রাইজের ২০০০০ কোটি টাকার নতুন শেয়ার। কাণ্ডকারখানা দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আর আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার কেনার দিকে হাঁটলেন না। কোম্পানির সিইও জনৈক সিং। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যে আপনাদের শেয়ার কিনছেন না, এব্যাপারে কী বলবেন। উত্তরে সিইও জানালেন, একটা ইংরেজ অফিসারের হুকুমে জালিয়ানওয়ালা বাগে ভারতীয় সেনারাই ভারতীয়দের হত্যা করেছিল। এর মানে দাঁড়াল, মার্কিনীদের নির্দেশে সাধারণ ভারতীয়রা আদানির মতো দেশপ্রেমিকের শেয়ার বয়কট করছে। কর্পোরেটের স্পর্ধা এদেশে কতদূর বেড়েছে এই উক্তিই তার প্রমাণ।
নতুন শেয়ার বিক্রি হচ্ছে না। পুরনো শেয়ারের দাম পড়ছে। ৬ দিনে আদানিদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াল ১০ লক্ষ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত আবু ধাবির এক সংস্থা এবং এদেশের কর্পোরেটের রাঘব বোয়ালেরা রাতারাতি ২০ হাজার কোটির শেয়ার কিনে নিল। কিন্তু কার নির্দেশে আদানিকে রক্ষায় এগিয়ে এল তারা? মোদি এবিষয়ে একটা কথাও বলেননি। মুখ খোলেননি নির্মলা সীতারামনও। তাহলে নির্দেশ দিল কে বা কারা? বুঝ মন যে জান সন্ধান। ২০ হাজার কোটির শেয়ার বিক্রি হয়ে গেছে। এদেশের কর্পোরেট লবি আর আড়ালে থাকা তাদের ‘মিত্রোঁ’রা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু দেখা গেল তা হচ্ছে না। যারা দেশপ্রেমের আড়ালে বাঁচতে চেয়েছিল তাঁদের বেলুন ফুটো করে দিল তাদেরই প্রিয় বিদেশি কর্পোরেটরা।
প্রথম ক্রেডিট সুইস ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিল আদানিদের শেয়ার জমা রেখে তার বিনিময়ে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে তারা। তার মানে আদানির শেয়ারের দাম যা দাবি করা হচ্ছে, আসল দাম ঠিক ততটা নয়। তাই আদানিতে ভরসা নেই তাদের। এরপর মার্কিন সংস্থা সিটি গ্রুপ একই কথা জানিয়ে দিল। এবং নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ পছন্দের শেয়ারের তালিকা থেকে আদানিদের কোম্পানিগুলিকে সরিয়ে দেওয়া হল। ফরাসি সংস্থা টোটাল এনার্জিস জানাল, হাইড্রোজেন জ্বালানি নিয়ে আদানিদের সঙ্গে তাদের প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখছে তারা। এরপর নরওয়ের সরকারি ফান্ড জানাল, ২০১৪ সাল থেকেই আদানিদের শেয়ার ধীরে ধীরে বিক্রি করে দিচ্ছিল তারা। ২০২২এর ডিসেম্বরের পর আদানিদের শেয়ারে তাদের একটি টাকাও বিনিয়োগ করা নেই। এর মানে আন্তর্জাতিক বাজারে আদানিদের ওপর ভরসা ক্রমশ তলানিতে ঠেকছে। তার চেয়েও বড় কথা, আদানিদের জালিয়াতির কথা কি নরওয়ের সরকারি ফান্ড কর্তারা আগে থেকে জানতেন? না হলে কেন তারা এত আগে থেকে আদানিদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে সঙ্কটের ঠিক আগে হাত ধুয়ে সাফ করে দিলেন? একথাও মনে রাখা দরকার যে, হিন্ডেনবার্গ আদানিদের নিয়ে তাদের গবেষণা শুরু করেছিল ২ বছর আগেই। তার মানে গোলমাল যে আছে কেউ কেউ তা আগেই টের পেয়েছিল। জানত না শুধু এদেশের শাসকেরা। সবশেষে রেটিং সংস্থা মুডিজও আদানিদের গোষ্ঠীর শেয়ারকে নেতিবাচক বলে দাগিয়ে দিল।
আন্তর্জাতিক কর্পোরেট পুঁজি যখন আদানিদের নিয়ে যখন তাদের অনাস্থার কথা জানিয়ে দিল, তখন আর আটকে রাখা গেল না। এদেশে ও বিদেশে আদানিদের শেয়ারের দাম পড়তেই লাগল। অবস্থা বেগতিক দেখে ২০০০০ কোটি টাকার এফপিওই প্রত্যাহার করে নিল আদানিরা। এবার আদানিদের উদ্ধারে স্বয়ং নির্মল সীতারামন। বললেন, ‘বাজারে শেয়ার আসে, শেয়ার যায়। এফপিও চালু হয়, বাতিলও হয়। একটা কোম্পানির জন্য কিছু যাবে আসবে না।’ঠিক এরপরেই মুখ খুললেন এসবিআই সহ অন্য ব্যাঙ্কের কর্তারা। মুখ খুলল এলআইসি। তারা জানাল, আদানি শেয়ার তারা কিনেছে বটে, তবে ক্ষতি এমন কিছু হবে না। এই যুক্তি সঙ্গত কারণেই মানলেন না বিরোধীরা। তাঁরা সংসদে দাবি তুললেন, এই কেলেঙ্কারি নিয়ে জেপিসি তদন্ত হোক। সরকার নারাজ। মোদি সংসদের ভাষণে বললেন বহু কথা, কিন্তু আদানি নিয়ে স্পিকটি নট। যদিও তাঁর আমলেই আদানির এত উত্থান। আদানির ভারী দোস্ত তিনি। আর নির্মলা বলে যাচ্ছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি সব সময় এক পায়ে খাড়া আছে। গোলমাল কিছু হলেই ধরবে। তারপর থেকেই আরবিআই, ব্যাঙ্ক, এলআইসি কর্তারা বলছেন, হম সব তৈয়ার। বাজারে কড়া নজর রেখেছি। কোনও ভয় নেই। অথচ সেবি, সিবিআই, ইডি, আরবিআই— কাউকে দিয়েই কোনও তদন্ত হল না। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলি এই জালিয়াতি ধরতে পারল না কেন, কেন হিন্ডেনবার্গ পারল, সেই প্রশ্নেরও কোনও উত্তর নেই। যখন এমনকী বিদেশি ব্যাঙ্ক ও রেটিং সংস্থাগুলিও আদানিদের নিয়ে অনাস্থা দেখাচ্ছে, তখনও সরকার নীরব। তাহলে আদানিদের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কত? উত্তর, দেবা ন জানন্তি কুতো মনুষ্যাঃ।
ইতিমধ্যেই আদানি–মোদি যোগ নিয়ে সোচ্চার হয়েছে ব্রিটেনের ফিনান্সিয়াল টাইমসের মতো পত্রিকা। সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে এই পত্রিকা লিখেছে, বেশ কয়েকটি ঘটনা রয়েছে যা থেকে মনে করা যেতে পারে প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি থাকের কারণে আদানি গোষ্ঠী ব্যবসায়িক ভাবে উপকৃত হয়েছে।
মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই যান অস্ট্রেলিয়া সফরে। সেখানে সঙ্গী ছিলেন গৌতম আদানি। সেটা ছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরের জি ২০ শীর্ষ সম্মেলন। সেই সফরে অস্ট্রেলিয়ার কুইনসল্যান্ডে কারমাইকেল কয়লা খনিতে আদানিদের বিনিয়োগের জন্য এসবিআই ১০০ কোটি ডলার ঋণ মঞ্জুর করে। অথচ ওই খনি চালু করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সেদেশের পরিবেশ আন্দোলনকারীরা। পরের বছরে বাংলাদেশ সফরে যান মোদি। সেখানে আদানি পাওয়ার সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয় বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের। চুক্তিতে বলা হয় ঝাড়খণ্ডের একটি প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেবে আদানিরা। চুক্তির পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। ফিনান্সিয়াল টাইমস জানাচ্ছে, গত মাসে ইজরায়েলের হাফিয়া বন্দর উন্নয়নে আদানিদের নেতৃত্বে থাকা একটি কনসর্টিয়াম জমা দিয়েছে ১২০০ কোটি মার্কিন ডলার। কে না জানে গত কয়েক বছর ধরে ইজরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছেন মোদি এবং পেগাসাস স্পাইঅয়্যার কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে ইজরায়েলেরই। গত বছর কলম্বো বন্দরে একটি কন্টেনার টার্মিলান গড়ার বরাত পেয়েছে আদানিরা, চীনকে কোণঠাসা করার জন্য এই প্রকল্পে আগ্রহী ছিল ভারত সরকার। শ্রীলঙ্কার দাবি, এই প্রকল্পে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে ভারত সরকার, যদিও তা অস্বীকার করেছে দিল্লি। এর আগে শ্রীলঙ্কার ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের শীর্ষকর্তা দেশের পার্লামেন্টে বলেছিলেন, আদানিদের সঙ্গে একটি রিনিউয়েবেল এনার্জি প্রকল্পের চুক্তিতে শ্রীলঙ্কার বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করেন শ্রীলঙ্কার তৎকালীন শাসক রাজাপক্ষে। পরে সেই কর্তাকে পিছু হঠতে হয় আদানিদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য। এখন বাংলাদেশের বিদ্যুৎকর্তারা এখন আদানিদের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তির পুনরালোচনা চাইছেন। বাংলাদেশের অধ্যাপক আনু মহম্মদ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ চুক্তিতে বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে করা হয়নি, করা হয়েছে আদানি–মোদিকে সন্তুষ্ট করতে। এই সব তথ্যই ধীরে ধীরে উন্মোচিত করে দিচ্ছে আদানি–মোদি ঘনিষ্ঠতার ছবি।
তথ্য যখন একে একে সামনে চলে আসছে তখনই দাঁত–নখ বের করছে মোদি সরকার। আরও তথ্য যাতে সামনে না আসে সেজন্য মোদি সরকার চাইছে সংবাদ মাধ্যমে যেন আদানিদের কেলেঙ্কারির কোনও খবর প্রকাশিত না হয়। তবে সরকারের সেই চক্রান্তে জল ঢেলে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধীদের জেপিসি গড়ার দাবি খারিজ করে দিয়েছে সরকার। তবে সরকারের মনোনীত লোকেদের দিয়ে আদানি কেলেঙ্কারি তদন্ত করার দাবি খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। দেখা যাক, এবার এই কেলেঙ্কারির তদন্তের ভার কাদের ওপরে দেন প্রধান বিচারপতি।
সংক্ষেপে এই হল আদানি বৃত্তান্ত। তবে এই শুরু। আদানিদের কারণে গোটা ভারতীয় কর্পোরেট সেক্টরের ওপরেই আন্তর্জাতিক পুঁজির অনাস্থা বাড়ছে। বিদেশি বিনিয়োগ টাকা থেকে ডলারে সরে যেতে পারে। বিদেশি ব্যাঙ্কগুলো এদেশি কোম্পানিগুলির শেয়ারে বিনিয়োগ করার আগে এখন অন্তত ২ বার ভাববে।
উদারনীতিবাদী অর্থনীতির বিপদ দুটো। এক, এই আমলে ক্রোনি পুঁজির সঙ্গে সহযোগিতা করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সহ সরকরি সম্পত্তি বেচে দিয়ে ক্রোনিদের বিপুল মুনাফা পাইয়ে দেওয়া হয়। সরকারি মদতে ব্যাঙ্কগুলিকে লুঠপাট করে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়। সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুঠের ব্যবস্থা করা হয়। গত সাত দশক ধরে তৈরি করা দেশের সম্পদ এভাবেই লুঠ হচ্ছে মোদি সরকারের আমলে। আদানির শেয়ার কেলেঙ্কারি তার অন্যতম প্রমাণ। নয়া উদারবাদী অর্থনীতি ও রাজনীতি যে হাত ধরাধরি করে চলে তার একেবারে চরম উদাহরণ হল এদেশে বিজেপির শাসন পর্ব।
ক্রোনি পুঁজি ও তাদের রাজনৈতিক দোসরেরা দেশের সম্পদ লুঠ করেই চলবে। ক্রোনিদের টাকায় ফুলে ফেঁপে উঠবে শাসক বিজেপির তহবিল। সেই টাকায় বিধায়ক, সাংসদ কিনে জনতার রায়কেও বদলে দেওয়া চলতে থাকবে। এটাই নির্ভেজাল নয়া উদারবাদ। এই শক্তিকে উৎখাত না করতে পারলে লুঠপাট থেকে মুক্তি নেই।