বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[দেশ]
শ্রমজীবী ভাষা, ১৬ মে, ২০২২— দলে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, পিশে দাও। ফ্যাসিস্টের যাবতীয় প্রবণতার দিকে ঝুঁকে থাকা রাষ্ট্র, ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের শাসকের হাতিয়ার এখন বুলডোজার— বিরোধী মত, বিরোধী পথ, বিরোধী সত্তাকেও চূর্ণ বিচূর্ণ করার অস্ত্র।
সাম্প্রতিক অতীতে দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পর প্রশাসন বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের বাড়ি, দোকানঘর এমনকি ধর্মস্থান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময় থমকে দাঁড়িয়েছে শ্রমজীবী মানুষের ব্যারিকেডের সামনে। হান্নান মোল্লা, বৃন্দা কারাত, রবি রাইদের নেতৃত্বে সম্মিলিত বাম শক্তি এগিয়ে এসেছে উচ্ছেদের মুখে পড়া মেহনতি মানুষের পাশে। হাজার খেটে খাওয়া মানুষ জাত ধর্ম বর্ণের ভেদাভেদ মুছে সম্মিলিত ভাবে রুখে দিয়েছেন রাষ্ট্রের আগ্রাসন।
জাহাঙ্গিরপুরির পর শাহীনবাগ। সেই শাহীনবাগ যেখানে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত ব্যারিকেড গড়ে তুলেছিল শাসকের 'এনআরসি' করে লক্ষ লক্ষ নাগরিককে বেনাগরিক করে দেবার রাষ্ট্রীয় চক্রান্তের সামনে। দেখিয়েছিল প্রতিরোধের স্পর্ধা।
কাজেই শাহীনবাগের মানুষদের উপরে রাষ্ট্রের আক্রমণ নেমে আসাটা ছিল সময়ের অপেক্ষা।
যথারীতি সেখানেও 'অবৈধ নির্মাণ' ভেঙে ফেলার অজুহাতে ধেয়ে এলো রাষ্ট্রের বুলডোজার। কিন্তু সেখানেও মেহনতি মানুষের প্রতিরোধের সামনে আটকে গেল বুলডোজারের চাকা।
তবে শাহীনবাগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধে সামিল হলো কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টিও।
কংগ্রেস যোগ দেওয়া দ্য ওয়্যার এর বিখ্যাত সাংবাদিক আর্ফা খানম পায়ের চোট নিয়েও যেভাবে বুলডোজারের সামনে দাঁড়ালেন, তা নজির হয়ে থাকবে।
জাহাঙ্গিরপুরির উচ্ছেদের মুখোমুখি দাঁড়াতে দেখা যায় নি কংগ্রেস কিম্বা আম আদমি পার্টিকে। কিন্তু শাহিনবাগে দেখা গেল, যা অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ।
তবে জাহাঙ্গিরপুরি বা শাহীনবাগ প্রথম না, বিজেপি আর বুলডোজার শব্দগুলো মিলে মিশে যাচ্ছে অনেক আগে থেকেই।
মধ্যপ্রদেশের খারগোন এবং শ্যোপুরে বুলডোজার চালিয়ে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট।
ভোপাল শহরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের পরিচালিত স্কুল কলেজ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কর্ণাটকের উদুপি শহরে হিজাব প্রতিবাদে যোগ দেওয়া প্রতিবাদী মুসলমানদের রেস্টুরেন্ট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বেছে বেছে আক্রমণ নামছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর।
বুলডোজার এবং হিন্দুত্ববাদ যখন সমার্থক হয়ে যাচ্ছে, তখন আশা জাগাচ্ছে জনগণের প্রতিরোধ।
বর্বর বিজেপি সরকার হিন্দু মুসলমান ভাগ করে মুসলমানদের বিপন্ন করে তুলতে চাইলেও তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ব্যারিকেডে থাকছে না জাত-ধর্মের বিভাজন।