বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[দেশ]

[দেশ]

জাতি-বর্ণ ব্যবস্থার অভিশাপ ভারত থেকে আমেরিকায়

জাতি-বর্ণ ব্যবস্থার অভিশাপ ভারত থেকে আমেরিকায়

অভিজ্ঞান সরকার

photo

ভারতবর্ষের অমৃতকালে, অর্থাৎ ক্ষমতা হস্তান্তরের ৭৫ বছর পালন কালে সুদূর আমেরিকায় একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে। এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সেদেশের সিয়াটেলে নগরে জাতি-বর্ণ সঞ্জাত বৈষম্য বিরোধী একটি আইন (Anti Caste Discrimination Law) পাস হয়েছে। সিয়াটেল ও অন্য শহরেগুলিতে কর্মক্ষেত্রে এবং গণপরিসরে ক্রমবর্ধমান জাতি-বর্ণ বৈষম্যর ঘটনার প্রেক্ষিতে এই আইন লাগু করতে লড়াই চালিয়েছিল প্রায় ৪০ টি দলিত অধিকার সংগঠন, যাদের নেতৃত্বে আছে ক্যালিফোর্নিয়ার ইক্যুয়ালিটি ল্যাব। সিয়াটেলের আইনটিতে বলছে, “The legislation will prohibit businesses from discriminating based on caste with respect to hiring, tenure, promotion, workplace conditions, or wages. It will ban discrimination based on caste in places of public accommodation, such as hotels, public transportation, public restrooms, or retail establishments. The law will also prohibit housing discrimination based on caste in rental housing leases, property sales, and mortgage loans” (এই আইনের দ্বারা চাকুরি ও ব্যবসায় নিয়োগ, মেয়াদ, পদোন্নতি, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ও মজুরির ক্ষেত্রে যাবতীয় জাতি-বর্ণ ভিত্তিক বৈষম্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। এই আইন দ্বারা জাতি-বর্ণ ভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হচ্ছে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত জায়গাগুলি অর্থাৎ হোটেল, গণ-পরিবহন, গণ-শৌচালয় বা গণ-বিপননের স্থানে। এই আইন আরও প্রসারিত করা হবে বাড়ি ভাড়া, সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধকী ঋণের ক্ষেত্রেও।) এই বয়ানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল আইনপ্রণেতারা ব্যবসা বাণিজ্যে জাতি-বর্ণের বৈষম্যের রূপ হিসাবে মজুরি (wage) বৈষম্যকে চিহ্নিত করেছেন। আম্বেদকর জাতি-বর্ণ ব্যবস্থাকে সামাজিক শ্রমের বিভাজন রূপে দেখেননি, বরং সমাজে শ্রমজীবীর বিভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। আম্বেদকর আরো এক ঐতিহাসিক সত্যের উচ্চারণ করেছিলেন, হিন্দুরা যদি পৃথিবীর অন্যান্য প্রদেশে যায় ভারতীয় জাতি-বর্ণের সমস্যা সেই প্রদেশের সমস্যা হয়ে উঠবে। আম্বেদকরের পর্যবেক্ষণ ‘প্রফেটিক’, বার বার তাকে স্মরণ করলে ক্ষতি নেই।

সিয়াটেলের আইন পাসের পরপরই, এই বছর জুন মাসে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট সেনেটে জাতি-বর্ণকে বৈষম্যমূলক আইনের আওতায় নিয়ে এসে একটি বিল পাস হয়েছে। অর্থাৎ জাতি-বর্ণ (caste) এখন জাতিবিদ্বেষ (xenophobia), বর্ণবিদ্বেষের (racism) এর সমতুল্য একটি ঘৃণ্য অপরাধ। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট অ্যাসেম্বলিতে এই বিলটিকে আইনে পরিনত করবার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

আমেরিকায় ভারতীয়দের সংখ্যা কম নয়, স্বপ্নরাজ্য হওয়ার কারণে নানা ভাবে ভারতীয়রা ওদেশে পৌঁছান - কেউ ট্যাক্সি চালাতে, কেউ সিলিকন ভ্যালিতে কাজ করতে, কখনও উচ্চশিক্ষার্থে বা ব্যবসাবাণিজ্য করতে। ভারতীয়কে ছায়ার মত অনুসরণ করে তার জাতি-বর্ণ পরিচয়। বিষয়গুলি প্রকাশ্যে আসে যখন ইক্যুয়ালিটি ল্যাব তাদের সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে ২০১৮ সালে, যেখানে ১৫০০ জন আমেরিকান দলিত তাদের জাতি-বর্ণ জনিত বৈষম্যের অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেন। ২০১৯ সাল নাগাদ একাধিক আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় জাতি-বর্ণ পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ২০২০ সালে এক বিগ টেক কোম্পানি Cisco  এবং তার দুই ভারতীয় বংশোদ্ভূত পদস্থ কর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ক্যালিফোর্নিয়া রেগুলেটারি ইউনিয়ান, এক দলিত সহকর্মীকে হেনস্তা করা ও পদোন্নতিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দেওয়ার কারণে। জাতি-বর্ণ ব্যবস্থার ভাইরাস সাগরপাড়ি দিয়ে আমেরিকার ভারতীয়দের মধ্যে এতদূর ছড়িয়েছে যে অ্যাপেল ও আইবিএম কোম্পানি তাদের জেনারেল এমপ্লয়ী কনডাক্ট পলিসিতে জাতি-বর্ণ ভিত্তিক বৈষম্যমূলক আচরণকে নিষিদ্ধ করেছে।

সিয়াটেলের জাতি-বর্ণ সঞ্জাত বৈষম্য বিরোধী আইন আমেরিকার হিন্দু সমাজে বড়সড় ঝড় তুলেছে। হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন এই আইনকে হিন্দু ধর্ম ও ডায়াস্পোরার উপর আঘাত বলে চিহ্নিত করেছে। এই সংগঠনটি আমেরিকায় নরেন্দ্র মোদির পক্ষে প্রচার চালায়। আরএস এসের পত্রিকা পাঞ্চজন্য সিয়াটেল আইনটিকে ‘হিন্দুফোবিয়া’র ফলাফল বলে জানিয়েছে। আইনটি করে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে, জাতি-বর্ণকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে এই অভি্যোগও করা হয়েছে। যদি আমরা জানি প্রবাসী ভারতীয়দের উচ্চবর্ণ অংশটি বিভিন্ন দেশে দীর্ঘদিন ধরেই জাতি-বর্ণ ভিত্তিক সংগঠন বাণিয়ে নিজের জাতি-বর্ণ পরিচয়ের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখার কাজটি করে চলেছে যেমন অ্যাসোসিয়েশন অফ জাঠস অফ আমেরিকা, লোউভা পাটিদার সমাজ, কানাডার শ্রীগৌড় ব্রাহ্মণ গ্রুপ অফ টরেন্টো, ব্রাহ্মণস অফ টরেন্টো ইত্যাদি। এছাড়াও শখানেক গ্রুপের নাম করা যায়। এই জাতি-বর্ণের সংগঠনগুলি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের কমিউনিটি পরিচয় দেয়। যদিও ‘কমিউনিটি’ গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হল সন্তানসন্ততিকে স্বজাতি-বর্ণের মধ্যে বিয়ে দিয়ে সম্মানরক্ষা করা। প্রবাসী ভারতীয়দের সামাজিক ক্ষেত্রে মিলিত হবার মৌলিক ভিত্তি হল জাতি-বর্ণ, অন্যান্য পরিচয় গৌণ।

এটা কল্পনা করা অবিশ্বাস্য যে জাতি-বর্ণের প্রেত ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতেও পিছু নেবে, কিন্তু বাস্তবে তাই হয়েছে। চোখধাঁধানো অ্যাপেলের অফিসে একজন উচ্চশিক্ষিত দলিত হেনস্তা ও অপমানের শিকার হতে পারে সেই ভাবনা আধুনিক মনন চেতনায় উঁকি দেওয়া কষ্টসাধ্য, কিন্তু অতি ঘোর বাস্তব। পুঁজিবাদ, কর্পোরেট চাকরী, প্রবাসী হওয়া - কোনও কিছুই জাতি-বর্ণের অমোঘতা মুছতে পারেনা।

১৯৩৬ সালে আম্বেদকর লিখেছিলেন ‘অ্যানিহিলেশন অফ কাস্ট’, ভেবেছিলেন জাতি-বর্ণ ব্যবস্থা বিলুপ্ত হবে, বা করতে হবে। আর আনন্দ তেলতুম্বে বলছেন ভারতবর্ষ আজকের দিনে আগের চেয়েও বেশি জাতি-বর্ণবাদী, এই দু’ হাজার তেইশ সালে। আনন্দ তেলতুম্বে উজ্জ্বলতম দলিত গবেষক, যাকে ভারতরাষ্ট্র তিনবছর কারাবন্দী রেখেছিল, ব্রাহ্মণ্যবাদী রাষ্ট্রকে ক্ষুরধার কলমে আক্রমণ করবার জন্য। আনন্দের অভিমত ফেলে দেবার মত নয়, ভারতবর্ষে জাতি-বর্ণ বিভাজন যে আরো গেঁড়ে বসছে তার প্রতিফলন নানা সূচকে প্রতিফলিত। ন্যাশেনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর খাতায় জাতি-বর্ণ ভিত্তিক হিংসা ও বৈষম্যের নথীভুক্তি প্রতি বছর উত্তরোত্তর বাড়ে। আবার জাতি-বর্ণের উপর ভিত্তি করে সামাজিক পরিচয় লাভের প্রবণতারও ক্রমাগত বৃদ্ধি হচ্ছে। বর্তমানে সাধারণ ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটগুলিকে প্রতিযোগিতায় ফেলেছে জাতি-বর্ণ ভিত্তিক ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট— সাধারণ ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটেও ৯৯ শতাংশ বিবাহ হয় জাতি-বর্ণের ভিত্তিতে। জাতি-বর্ণ ভিত্তিক ডেটিং অ্যাপ ও হুক আপ অ্যাপও চলে এসেছে। আম্বেদকরের জাতি-বর্ণ প্রথার বিনাশের আকাঙ্ক্ষা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়েছে এই ৭৫ বছরে। মাঝে বিশ্বায়ন, ইন্টারনেট বিপ্লব ইত্যাদি ভারতে ঘটেছে জাতি-বর্ণ কাঠামোটি যথাযথ বজায় রেখেই।

আম্বেদকর সারাজীবন জাতিবাদ-বর্ণবাদের সমস্যাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন, ব্যাখ্যা করেছেন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষিতে। আম্বেদকর-পাঠ খুব সরল নয়। তার অসামান্য প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের নজির তার লেখাপত্রগুলি, যা ভারতবর্ষের লক্ষ-কোটি দলিত মানুষের মুক্তির পাথেয়। আবার তার বেশ কিছু লেখা বিভিন্ন অন্যান্য মুক্তি সংগ্রামের পথিকদের কাছে অস্বস্তির বিষয় বিশেষত তৎকালীন কমিউনিস্টদের ক্ষেত্রে। Failure of Parliamentary Democracy will result in Rebellion, Anarchy and Communism তেলেঙ্গানা সংগ্রামের কাছাকাছি সময়ে লেখা। এই লেখায় আম্বেদকর কমিউনিস্টদের নিয়ে সতর্ক করছেন, সংবিধানকে হাতিয়ার করে সংসদীয় গণতন্ত্রের মধ্যেই যাবতীয় রাজনৈতিক সমাধানের সূত্র রয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন। আম্বেদকরপন্থীরা পরবর্তীকালে কমিউনিস্ট বিরোধিতার দলিল রূপে এই লেখাটি প্রভূত পরিমাণে ব্যবহার করে থাকেন। সামাজিক আন্দোলনে সংবিধানবাদের (constitutionalism) আকর প্রবন্ধ হিসেবেও ধরা হয় রচনাটিকে।

‘Failure of Parliamentary Democracy…’ লেখার সময় কাল ছিল ১৯৫১, তার আগের বছরই প্রজাতন্ত্র রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে ভারতবর্ষ, সংবিধান রচিত হয়েছে। সংবিধান রচনার ড্রাফটিং কমিটির চেয়ারম্যান রূপে আম্বেদকরকে আহ্বান জানায় কংগ্রেস। কংগ্রেস, গান্ধী, নেহেরুর সাথে আম্বেদকরের রাজনৈতিক নেতির সম্পর্ক সুবিদিত। তা সত্ত্বেও আম্বেদকরকে ড্রাফটিং কমিটির চেয়ারম্যান বানানোর ক্ষেত্রে কংগ্রেসের দূরদর্শিতার প্রমাণ পাওয়া যায়। আম্বেদকর সংবিধানের রচয়িতা - এই নির্মাণের দ্বারা সমাজের সর্বনিম্ন স্তরের দলিত অংশকে জিতে নেওয়ার রাজনৈতিক চেষ্টা ছিল কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের।  যদিও বছর দুয়েকের মধ্যেই আম্বেদকর নিজে এই ‘সংবিধানের রচয়িতা’র তকমাকে অস্বীকার করেছিলেন। ১৯৫৩ সালে এক বিতর্ক সভায় এই ‘সংবিধানের রচয়িতা’ মিথটিকে খন্ডন করতে তিনি বলছেন “My answer is I was a hack. What I was asked to do, I did much against my will... Sir, my friends tell me that I have made the Constitution. But I am quite prepared to say that I shall be the first person to burn it out. I do not want it. It does not suit anybody.” (আমার বক্তব্য হল, আমি একজন ভাড়াটে লেখক ছিলাম (সংবিধানের)। আমি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করেছি... মহাশয়, আমার বন্ধুরা বলে যে আমি সংবিধান প্রণেতা। কিন্তু আমি বলতে চাই যে আমি হবো সেই প্রথম ব্যক্তি যে ওই বইটিকে পুড়িয়ে ফেলতে চাই। এটি কারোর মানানসই না।) (Vasant Moon, ed., Dr. Babasaheb Ambedkar: Writings and Speeches)। সংবিধানের রচয়িতা সংবিধান পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন এইটি ঐতিহাসিক সত্য, এবং এই ভয়াবহ সত্যটি প্রায় বিস্মৃত হয়েছে। কমিউনিস্টদের বাড়বাড়ন্ত রুখতে যে আম্বেদকর সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্রের উপর সম্পূর্ণ আস্থা ন্যস্ত করছেন, তিনিই এই কালাপাহাড়ের মতো বক্তব্য রেখেছেন। সংবিধানপন্থী ও আম্বেদকরপন্থীদের কাছেও এই আম্বেদকর অস্বস্তির আম্বেদকর।

কেন এই ১৮০ ডিগ্রী বিপরীত বক্তব্য তার? এই বিষয়টি বুঝতে বোধহয় তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে লেখা Prospects Of Democracy In India প্রবন্ধটি গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রবন্ধে আম্বেদকর বিস্ফোরক, এবং বলতে হয় আমাদের সকলের মৌলিক গণতান্ত্রিক বোধের ধারণাকে সজোরে ধাক্কা দিয়েছেন। আম্বেদকর লিখছেন “Democracy is quite different from a Republic as well as from Parliamentary Government. The roots of democracy lie not in the form of Government, Parliamentary or otherwise. A democracy is more than a form of Government. It is primarily a mode of associated living. The roots of Democracy are to be searched in the social relationship, in the terms of associated life between the people who form a society. What does the word ‘Society’ connote? To put it briefly when we speak of ‘Society,’ we conceive of it as one by its very nature. The qualities which accompany this unity are praiseworthy community of purpose and desire for welfare, loyalty to public ends and mutuality of sympathy and co-operation.” (গণতন্ত্র প্রজাতন্ত্রের ধারণা থেকে অনেকটাই ভিন্ন, এবং সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা থেকেও। সরকার, সংসদ বা অন্য কোথাও গণতন্ত্রের শিকড় প্রোথিত নয়। গণতন্ত্র সরকারের কোনও রূপের থেকেও বেশি। এটি প্রাথমিক ভাবে সম্মিলিত যাপনের একটি ধারণা। গণতন্ত্রের শিকড় সন্ধান করা উচিৎ সামাজিক সম্পর্কগুলির মধ্যে, মানুষের সম্মিলিত যাপনের মধ্যে যা সমাজ কাঠামো তৈরি করে। ‘সমাজ’ শব্দটির তাৎপর্য কি? সংক্ষেপে আমরা ‘সমাজ’ বলতে  বুঝি সংবদ্ধতার কথা বলি। যে গুণগুলি এই সংবদ্ধতাকে ঋদ্ধ করে তা হল সামাজিক সম্প্রদায়ের সর্বহিতের আকাঙ্ক্ষা, জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা ও পারষ্পরিক সহানুভূতি ও সহযোগিতা।)

ভারতীয় গণতন্ত্রের সামাজিক শিকড় খুঁজতে গিয়ে লিখছেন, “Indian Society does not consist of individuals. It consists of an innumerable collection of castes which are exclusive in their life and have no common experience to share and have no bond of sympathy. Given this fact it is not necessary to argue the point. The existence of the Caste System is a standing denial of the existence of those ideals of society and therefore of democracy।” (ভারতীয় সমাজে ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত নয়। এই সমাজ হল অসংখ্য জাতি-বর্ণের সমাহার যা নিজ নিজ অবস্থিতিতে অন্য জাতি-বর্ণকে বর্জনকারী মানসিকতায় দুষ্ট, এই জাতি-বর্ণগুলির কোনও অভিজ্ঞতা নেই যা সাধারণ, এই জাতি-বর্ণগুলি পরস্পরের সহানুভূতিহীন। এই বিষয়গুলির উদাহরণ এত পরিমাণে প্রকট যে এই নিয়ে তর্কের কোনও অর্থ হয় না। জাতি-বর্ণ ব্যবস্থার উপস্থিতি আদর্শ সমাজ ও তার উপর ভিত্তি করে গণতন্ত্রের ধারণাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে।)

ভারতীয় সমাজে জাতি-বর্ণ ব্যবস্থার অশুভ উপস্থিতি ভারতীয় সমাজকে এমন খণ্ডবিখণ্ড, বৈষম্যময় করে রেখেছে যে তা সমাজ ও গণতন্ত্রের মৌলিক ধারণার পরিপন্থী। জাতি-বর্ণর চেতনা মানুষকে কখনো খাটো কখনো উঁচু ভাবে চিনতে শেখায়, অকারণে। সংবিধানে উচ্চারিত সব মানুষ সমান এই বক্তব্যটিই অসাড় ভারতীয় সমাজের বাস্তবতায়, কারণ জাতি-বর্ণ প্রথা তা বলে না। ‘সংবিধান রচয়িতা’ আম্বেদকর দুই বছরের মধ্যে সংবিধানকে অস্বীকার করেছিলেন, সামাজিক বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে, বিরক্ত ক্রুদ্ধ হয়ে। সাত দশক বাদে সেই জাতি-বর্ণগত অগণতান্ত্রিক চেতনা অসাম্যের নজির তৈরি করছে বিশ্বজুড়ে। আমেরিকা ছাড়াও কানাডা ও ইউনাইটেড কিংডমেও চালু হতে পারে জাতি-বর্ণ বৈষম্যবিরোধী আইন।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.