বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[দেশ]
১) শ্রমিকেদের বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত অধিকার কেড়ে নেওয়ার হাতিয়ার চারটি শ্রম কোড বাতিল করতে হবে।
২) আট ঘণ্টার কাজের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আট ঘণ্টার বেশি কাজ করালে দ্বিগুণ মজুরি দিতে হবে।
৩) সম কাজে সম বেতন এবং নারী-পুরুষের সমান কাজে সমান বেতন নিশ্চিত করতে হবে।
৪) সমস্ত অসংগঠিত, পরিযায়ী, অস্থায়ী, ঠিকা ও চুক্তিভিত্তিক, সাময়িক সময়ের শ্রমিক এবং গিগ শ্রমিকদের বাঁচার মতো মজুরি, কাজের নিরাপত্তা এবং সামাজিক সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৫) আশা, অঙ্গনওয়াড়ি ও মিড ডে মিলের প্রকল্প কর্মীদের কাজের নিরাপত্তা, বাঁচার মতো মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা এবং সরকারি কর্মী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
৬) কর্মক্ষেত্রে মহিলা শ্রমজীবীদের যৌন হেনস্থা বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চা শ্রমিক, নির্মাণ কর্মী, গৃহ কর্মী, মহিলা হকার সহ সমস্ত মহিলা শ্রমজীবীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে টয়লেট এবং তাদের শিশুদের জন্য ক্রেসের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭) কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি দপ্তরে শূণ্যপদে অবিলম্বে নিয়োগ করতে হবে। সরকারি দপ্তরে সমস্ত অস্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক, ঠিকা কর্মীদের স্থায়ী করতে হবে।
৮) ১০০ দিনের কাজের জন্য বাজেট বরাদ্দ ছাঁটাই করা চলবে না। ১০০ দিনের কাজের মজুরি বৃদ্ধি করতে হবে। ১০০ দিনের কাজের মজুরি বকেয়া রাখা চলবে না। গ্রামীণ কর্ম সংস্থান প্রকল্পের সময় বছরে ২০০ দিন করতে হবে।
৯) কৃষি মজুর, ক্ষেত মজুরদের বাঁচার মতো মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত ও কার্যকরি করতে সুসংহত আইন করতে হবে।
১০) মান্ডি ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে কৃষকের ফসলের অধিকার ফড়ে ও কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না। কৃষি বাণিজ্য কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না।
১১) প্রান্তিক, গরীব কৃষক এবং বর্গাদারদের জন্য সি২ + ৫০% সূত্রে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের নিশ্চিত করতে আইন করতে হবে। ফড়ে, চালকল মালিক, ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নয়— সরকারকে সরাসরি প্রান্তিক, গরীব কৃষক এবং বর্গাদারদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল ক্রয় করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় বরাদ্দ করতে হবে এবং পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
১২) প্রান্তিক, গরীব কৃষকদের কৃষি ঋণ মকুব করতে হবে। বর্গাদারদের কৃষি ঋণ দিতে হবে। এর জন্য সরকারি ব্যয় বরাদ্দ করতে হবে।
১৩) সরকারের মর্জি মাফিক সামান্য অনুদান নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমস্ত কর্মহীনদের বেঁচে থাকার মতো ন্যূনতম আয় (ভাতা) আইনিভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য সরকারি ব্যয় বরাদ্দ করতে হবে।
১৪) খাদ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু ও বৃদ্ধদের সুরক্ষা, শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় বরাদ্দ রাষ্ট্রকে করতে হবে।
১৫) প্রান্তিক, গরীব মানুষকে বঞ্চিত করে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎকারীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। কর্পোরেট ও সেল কোম্পানির কাছ থেকে অসাংবিধানিক বেআইনি অর্থ সংগ্রহকারীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
১৬) প্রান্তিক, গরীব ও শ্রমজীবীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় বরাদ্দ করতে বড় ব্যবসায়ীদের কর্পোরেট ট্যাক্স ৩৫% করতে হবে। কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের ট্যাক্স ছাড় দেওয়া চলবে না। বড় ব্যবসায়ীদের অনাদায়ী ব্যাঙ্কঋণ কঠোরভাবে আদায় করতে হবে।
১৭) ছোট ব্যবসায়ীদের উপর জিএসটি হার কমাতে হবে।
১৮) জল, জঙ্গল, জমি, পাহাড়, সমুদ্র উপকূল সহ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকায় গড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, বীমা, খনি, রেলওয়ে, বিমান বন্দর, প্রতিরক্ষা সহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না।
১৯) ফৌজদারি নতুন তিনটি আইন— ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা, ভারতীয় সাক্ষ্য আইন বাতিল করতে হবে। রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল করো। মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করো।
২০) ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব আইন সিএএ বাতিল করতে হবে। মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষ বন্ধ করো। মণিপুরে জাতিদাঙ্গা বন্ধ করো। নারী, নিম্নবর্ণ, পেছিয়ে থাকা জাতি ও জনজাতিদের উপর অবদমন বন্ধ করতে কঠোর আইন বলবত করো।