বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[দেশ]

[দেশ]

২০২৪ এর নির্বাচন কি নতুন সূচনা?

২০২৪ এর নির্বাচন কি নতুন সূচনা?

বসন্ত মুখোপাধ্যায়

photo

১৯৭৭ সালের মতোই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি জলবিভাজিকা হয়ে থাকবে। ১৯৭৫ সালে প্রয়াত শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে স্বৈরতান্ত্রিক শাসক হয়ে উঠেছিলেন। এবং ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ নামিয়ে এনে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক জমানা কায়েম করেছিলেন। সেই পর্বে সব ধরনের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছিল অথবা সঙ্কুচিত করা হয়েছিল। তবে সংসদীয় গণতন্ত্রের ওপর এমন স্বৈরতান্ত্রিক এমন আক্রমণ ভারতের সাধারণ নাগরিকেরা মেনে নেননি। জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে এবং ঐক্যবদ্ধ বিরোধী শক্তির উদ্যোগে ১৯৭৭ সালের ভোটে তাঁরা ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে। স্বৈরতান্ত্রিক জমানাকে খতম করে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সংসদীয় গণতন্ত্রকে। সেই প্রথম একটা গভীর রাজনৈতিক সঙ্কটকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে বহুত্ববাদী ভারতের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি প্রমাণ করেছিল যে, এদেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অত সহজে উপড়ে ফেলা যাবে না। স্বাধীনতা উত্তর কালে গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে একটা বড় পরীক্ষায় সফলভাবে উতরে গিযেছিল ভারত।
১৯৭৭ এর নির্বাচন শুধু ভারতের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই রক্ষা করেনি। একইসঙ্গে এদেশে কংগ্রেসের একচেটিয়া শাসনেরও অন্তিমপর্বও ঘোষণা করেছিল। এরপরেই ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে আঞ্চলিক শক্তিগুলি। বিভিন্ন প্রদেশে তারা নিজেদের শক্তি সংহত করে। দেশের তিনটি রাজ্যে রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে বামেরা। ক্রমশ ভারতীয় রাজনীতির এই সব ভিন্ন চরিত্রের লিবারাল আঞ্চলিক শক্তিগুলি এক জায়গায় আসে এবং বামেদের উদ্যোগে ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে কেন্দ্রে কংগ্রেসের বিকল্প জোট সরকার গড়ার পর্বে পৌঁছে যায়। এই প্রক্রিয়ারই একটি বিন্দুতে এসে বামেরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে নিজেদের প্রার্থীকে মনোনীত করার সুযোগ পেয়েও তাকে কাজে না লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়। দেশজুড়ে কংগ্রেসের একদলীয় শাসনের অবসান, জোট সরকার যুগের সূচনা এবং দীর্ঘ সময় জুড়ে নানান মাত্রায় তার অনুশীলন — এসবই ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের প্রত্যক্ষ পরিণতি। এই পর্বেই ভারতে মণ্ডল বনাম কমণ্ডলু রাজনীতির উদ্ভব এবং সামাজিক ন্যায়ের কর্মসূচিকে ঘিরে গোটা দেশজুড়ে, বিশেষত উত্তর ভারতে ওবিসি, দলিত ও পিছড়ে বর্গের রাজনীতির জোরালো উত্থান হয়, যা এখনও ভারতের মূল ধারার রাজনীতিকে প্রভাবিত করে চলেছে। এভাবে ১৯৭৭ সালে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ভারতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বইয়ে দিয়েছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ধারায়।
১৯৮০ ও ১৯৯০ দশক জুড়ে মণ্ডল রাজনীতি এবং কোয়ালিশনের রাজনীতির ধারা এদেশের রাজনৈতিক পরিসরে পাশাপাশি বহমান ছিল। এরই পাল্টা কমণ্ডলু রাজনীতির ধারক বাহকেরা সামাজিক ন্যায়ের শক্তিকে পরাজিত করে দেশে তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পাল্টা প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিল বিজেপির নেতৃত্বে। একাজে বিজেপিও জোট রাজনীতিরও সাহায্য নিয়েছিল। তবে তাদের লক্ষ্য ছিল একদলীয় শাসন কায়েম করে পুঁজির স্বার্থের উপযোগী স্থায়িত্ব গড়ে তোলা। জোট রাজনীতির অস্থিরতা ও বিভিন্ন স্বার্থের সংঘাত, পুঁজি কখনই এই অস্থিরতা পছন্দ করে না।
এই স্থিতাবস্থা গড়ে তোলার জন্য কমণ্ডলু রাজনীতির প্রবক্তারা সরাসরি পুনর্জীবিত করে তোলে দেশবিভাগের সময়কার হিন্দুত্ব তথা বিভাজনের রাজনীতি। এই রাজনীতিকে এতদিন দাবিয়ে রেখেছিল বহুত্ববাদী ভারতের গণতান্ত্রিক চর্চা। সংখ্যাগরিষ্ঠের হিন্দু ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির মিশেল ঘটিয়ে তারা একটা পাল্টা মতাদর্শগত ন্যারেটিভ তৈরি করে। প্রথম দিকে বাজপেয়ীর আমলে এই শক্তির কেন্দ্রের ক্ষমতা দখলের প্রয়াস স্থায়ীভাবে সফল হয়নি। তবে ১৩ দিন ও ১৩ মাসের বাজপেয়ী সরকারের শাসনকালের মধ্যে দিয়ে বিজেপি তাদের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিল।
ইতিমধ্যে বিশ্ব রাজনীতিতে বড়সড় পরিবর্তন ঘটে গেছে ১৯৯১ সালে। সোভিয়েতের পতনের পর দ্বিমেরু বিশ্বের অবসান ঘটে সাময়িক ভাবে। এই পরিস্থিতিতে সাবেকি সাম্রাজ্যবাদ, একেবারে নতুন চেহারায় নয়া উদারবাদী আর্থিক ব্যবস্থা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এই ব্যবস্থায় সরাসরি উপনিবেশ দখলের বদলে ক্রমাগত পুঁজি রপ্তানি করে সাবেক সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি বিপুল মুনাফা শোষণের ব্যবস্থা করে। এবং ক্রমশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী পর্বে স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশগুলিকে পরোক্ষ অধীনতা পাশে বাঁধার চেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়াতেই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মতো ভারতেও উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রামে অর্জিত অর্থনৈতিক পরিসর পুনর্দখলের প্রয়াস শুরু করে নয়া উদারবাদী পুঁজি। নতুন শতাব্দীর গোড়ায় সেই প্রক্রিয়া সুসংহত হয়ে ওঠে। এবং তার দ্বিধান্বিত সূচনা হয়েছিল মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বেই। স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতে তৈরি হওয়া মিশ্র অর্থনীতির পরিসরগুলি ক্রমশ দখল করে সেখানে নয়া উদারবাদী পুঁজির আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কাজে বিদেশি কর্পোরেট এবং ক্রোনি পুঁজির সঙ্গে জোট বাঁধে এদেশের কর্পোরেট ও ক্রোনি পুঁজি। এই জোট দেশ শাসনের জন্য বেছে নেয় বিজেপিকে। কারণ তাদের লক্ষ্য ছিল, ইউপিএর জোট যুগের নিয়ন্ত্রণে থেকে বেরিয়ে সারা দেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুঁজির অবাধ ও একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা। কোয়ালিশনে, বিশেষ করে বামশক্তি যদি সেই জোটে থাকে, তাহলে পুঁজির অবাধ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা কঠিন হয়ে পড়ে। কর্পোরেট ও ক্রোনি পুঁজির আরও লক্ষ্য ছিল, আঞ্চলিক শক্তির অধীনে ভারতের খণ্ড খণ্ড বাজারকে একটি সুসংহত, কেন্দ্রীভূত বাজারে পরিণত করা, যা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে জিএসটি ব্যবস্থার প্রচলন কিংবা রাজকোষ ঘাটতি কমানোর আইন পাশ করিয়ে। পুঁজির পক্ষে, সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে, এই কাজটি সবচেয়ে ভালভাবে করা সম্ভব একদলীয় শাসনেই। ইউপিএ আমলের পরে বিজেপি এই কাজটি করার দায়িত্ব সচেতনভাবেই নিজের কাঁধে নিয়ে নেয় এবং অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ২০১৪ সালে বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে জিতে রাষ্ট্রশাসনের অধিকার কায়েম করে। এই জয়ের কৌশল রচনা ও প্রয়োগে মদত ছিল দেশি বিদেশি কর্পোরেট পুঁজির।
একই সঙ্গে বিজেপি এদেশে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করা শুরু করে বিশেষ করে মোদির আমল থেকে। একদিকে মুসলিমদের ‘অপর’ সাজিয়ে সব রকম আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ঘৃণা জাগিয়ে তুলে হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষকে স্থায়ী চেহারা দেওয়া হয়। অন্যদিকে আরএসএসকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় বর্ণহিন্দু নেতাদের অধীনে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ— ওবিসি, দলিত ও পিছড়ে বর্গকে হিন্দু পরিচিতি সত্তার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এইভাবে প্রচুর অর্থব্যয়ে (যার মধ্যে ছিল বিদেশ থেকে আসা প্রভূত পরিমাণ অর্থ) এবং আরএসএস ক্যাডারদের কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলা হয় এক হিন্দুত্ববাদী ভোট ব্যাঙ্ক। বিজেপির হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে হিন্দু ধর্মের বিরোধ মৌলিক চরিত্রের। কারণ হিন্দু ধর্ম বহুত্ববাদী। অথচ বিজেপির হিন্দুত্ববাদ চরম একেশ্বরবাদী। বিজেপির হিন্দুত্বের ঈশ্বরের কাছে অন্য কোনও সম্প্রদায়, গোষ্ঠীর দেবতার কোনও ঠাঁই নেই। এই একেশ্বরবাদ আবার পুঁজির কেন্দ্রীভূত শাসন কায়েম করার ধর্মীয় হাতিয়ার। মোদির আমলের এক দশকে সারা ভারতজুড়ে এই ন্যারেটিভকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং হিন্দুত্বের ভোটব্যাঙ্ক কাজে লাগিয়ে দিল্লির মসনদে বসে এদেশের অর্থনীতিতে ক্রমাগত দেশি বিদেশি কর্পোরেট ও ক্রোনি পুঁজির স্বার্থ ক্রমাগত সম্প্রসারিত করে গেছে বিজেপি-আরএসএস।। যাতে পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ বা সংগ্রাম গড়ে উঠতে না পারে, সেজন্য ধাপে ধাপে ভারতের শাসনকাঠামো থেকে গণতান্ত্রিক উপাদানগুলিকে নির্মমভাবে ছেঁটে ফেলে গড়ে তোলা হয়েছে নরেন্দ্র মোদির স্বৈরতান্ত্রিক শাসন যার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে ফ্যাসিবাদের বহু উপাদান। এই ভাবে, ইন্দিরার ভারত যে স্বৈরশাসন প্রত্যক্ষ করেছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি সুসংহত ও ধারাল একটা স্বৈরশাসন, যার মধ্যে ফ্যাসিবাদের বহু বৈশিষ্ট্য প্রকট, এদেশে পুনরার্ভিভূত হয়েছে নরেন্দ্র মোদিকে আশ্রয় করে। এবার তার হাতিয়ার দেশি বিদেশি কর্পোরেট পুঁজি এবং হিন্দুত্ববাদের ফ্যাসিবাদী রাজনীতি।
মনে করা হয়েছিল, নির্বাচনের মাধ্যমে কর্পোরেট পুঁজি ও সাম্প্রদায়িক শক্তির এই জোটকে উৎখাত করা খুব কঠিন হবে। আশঙ্কা ছিল, এবার বিজেপি ভোটে জিতলে তারা ভারতের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে একদলীয়, এক ব্যক্তিভিত্তিক ফ্যাসিবাদী শাসন কায়ম করবে। এবং রাষ্ট্রের রঙ বদলে দিয়ে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করবে।

cover

কিন্তু এবারের নির্বাচনে আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, ইন্দিরা আমলের মতোই, ভারতের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রকে ফ্যাসিবাদীদের হাত থেকে রক্ষা করতে রাস্তায় নেমে এলেন সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতির চাপে গড়ে উঠল বিরোধী জোট। এবং সেই জোটের নেতৃত্বে ১৯৭৭ সালের মতো মোদিকে পুরোপুরি ক্ষমতাচ্যুত করতে না পারলেও, তাকে দুর্বল করে দিলেন ভারতের আমজনতা। মোদির শাসন যদি হয় ইন্দিরা স্বৈরতন্ত্রের আরও পরিণত ও ধারাল রূপ, এবারের নির্বাচনে সাধারণ ভোটদাতাদের ভূমিকায় তাহলে মিশে রয়েছে ১৯৭৭ এর ভোটদাতাদের চেয়েও অনেক বেশি প্রাজ্ঞতা ও সাহস। এই নাগরিকেরা হিন্দুত্ববাদের দুর্গ খোদ উত্তরপ্রদেশেই হিন্দুত্ববাদী শক্তির ক্ষমতার ভিতে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছেন। হিন্দু পরিচিতি সত্ত্বা থেকে বেরিয়ে এসে ওবিসি, দলিত ও পিছড়ে বর্গের মানুষেরা একটার পর একটা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীদের পরাস্ত করেছেন। খোদ ফৈজাবাদে বিজেপি হেরেছে। বারণসীতে মোদির জয়ের ব্যবধান ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার থেকে কমে ১ লক্ষ ৫২ হাজারে নেমেছে। যেমন ওবিসি, দলিত ও পিছড়ে বর্গের মানুষেরা বিজেপিকে ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন, তেমনি উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জাঠ কৃষকেরা বিজেপি প্রার্থীদের শাস্তি দিয়েছেন ভোটের বাক্সে কৃষকদের স্বার্থ বিপন্ন করে তোলার জন্য। একইভাবে উত্তরপ্রদেশের যাদব ও মুসলিমরা একযোগে হাত ধরাধরি করে, বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সম্প্রীতির নতুন সেতু রচনা করে বিজেপি প্রার্থীদের হারিয়েছেন। দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের মানুষ সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করে আঁকড়ে ধরেছেন আঞ্চলিক শক্তিকে। এভাবেই যেন আমরা সেই ১৯৭৭ এর সঙ্ঘাত ও সংগ্রামের আরও এক উচ্চমাত্রার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি, যার মধ্যে রয়েছে অজস্র নতুন রাজনৈতিক উপাদান। হিন্দি বলয়ের একেবারে কেন্দ্রে হিন্দুত্ববাদের রাজনীতির এই পরাজয় এবং বহুত্ববাদী ভারতের পুনরুত্থান নিঃসন্দেহে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
মোদি ও বিজেপিকে ফিরে যেতে হয়েছে জোট রাজনীতির বৃত্তে। এ মহাভারতে ফের শুরু হতে চলেছে আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীভূত শক্তির মধ্যে নতুন দড়ি টানাটানির খেলা। যিনি নিজেকে পরমাত্মা বলে দাবি করেছিলেন, তিনি এখন পিঠ কুঁজো করে শরিকদের সন্তুষ্ট রাখতে ব্যস্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। যে মোদি সংবিধানকে বাতিল করতে চেয়েছিলেন, তিনি সংবিধানকে প্রণাম করার ছবি দিয়ে ভাবছেন লোকের স্মৃতি মুছে দেবেন। মোদির এক জোট শরিক মুসলিমদের সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্ধ্রে ক্ষমতায় এসেছেন। আরেক শরিক বিহারে চান জাতগণনা এবং সংরক্ষণ। দুটো রাজনীতিই হিন্দত্বের রাজনীতির কবর খুঁড়তে চায়।
পারবেন মোদি এই দুই হিন্দুত্ববাদ বিরোধী শক্তিকে একই ঘাটে জল খাওয়াতে? জোট রাজনীতির প্রতি বাঁকে বাঁকে রয়েছে সঙ্কট। মোদি সেই সঙ্কট এড়াতে পারবেন না। কীভাবে তাঁর মতো আত্মম্ভরী শাসক শরিকদের দাবি মিটিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে নিজের লোহার মূর্তি গলিয়ে মাটির ঢেলা হয়ে উঠবেন, আগামী দিনে ভারত তা দেখবে। বহুত্ববাদী ভারত এক দশক ধরে বহু কিছু সহ্য করে মোদিকে যে সহবৎ শিখিয়েছে, মোদি কি তা সইতে পারবেন? ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে ভারতের আমজনতা আবারও যে ব্যতিক্রমী ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন, হিন্দুত্ববাদী তথা ফ্যাসিবাদী ভারত হয়ে ওঠার হাত থেকে দেশকে আপাতত বাঁচালেন, যেভাবে এদেশের গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, প্রজাতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থাকে এক গভীর সঙ্কট থেকে উদ্ধারপর্বের সূচনা করলেন, সেজন্য আগামী বহু বছর ধরে তাঁদের সেলাম জানাতেই হবে।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.