বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[দেশ]

[দেশ]

ভারত কি ডিজিটাল দাস-বিপ্লবের নয়াসীমান্ত?

ভারত কি ডিজিটাল দাস-বিপ্লবের নয়াসীমান্ত?

দেবাশিস আইচ

photo

১ নভেম্বর, ২০২২, শ্রমজীবী ভাষা— দু’হাতে চোখ-মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা ছোট্ট মেয়ে। এরপরের দৃশ্যে দেখা গেল একটি অনলাইন খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থার রঙিন পোশাক বুকের সামনে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক যুবক। মেয়েটি সে দৃশ্য দেখে খুশিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কোলে উঠে পড়ল। জানা গেল, ওই যুবকটি মেয়েটির বাবা। জানা গিয়েছে, অনেকদিন কাজ ছিল না ওই যুবকের। এক মেয়ে স্কুলে পড়ে, স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। কাজটা তাই খুব দরকার ছিল। সেই কাজ হাসি ফুটিয়েছে মেয়ের মুখে। না, এ কোনও বিজ্ঞাপনের ‘রিল’ নয়। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বা যাকে ‘ভাইরাল’ হওয়া বলে, এটি তেমনই একটি ছোট ভিডিও। যা খবর হয়ে উঠেছে নেটিজেনদের ভালোলাগা ও মন্তব্যের সৌজন্যে। আরও খবর, ৮৬ হাজার লাইক কুড়িয়েছে, ১০ লাখের বেশি দর্শক পেয়েছে ভিডিওটি। অনলাইন সংস্থার দফতর থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। তারা লিখেছে, “খুবই সুন্দর, মনছোঁয়া ভিডিও।“
‘সুন্দর’ ও ‘মনছোঁয়া’ সন্দেহ নেই। অন্তত, ধারাবাহিকভাবে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, এবং বেকারত্বের হার বেড়ে যাওয়ার এই দুঃসময়ে। এই উৎসবের মরশুমেও বেড়েছে বেকারত্বের হার। সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে, জুন, জুলাই মাসে দেশে বেকারত্বের হার ছিল যথাক্রমে ৭.১৪%, ৭.৮৩% ও ৬.৮৩%। অগস্টে উঠেছিল ৮.২৮ শতাংশে। সেপ্টেম্বরে কমে দাঁড়িয়েছিল ৬.৪৩%। উৎসবের মরশুমে প্রথম তিন সপ্তাহে ফের বেড়েছে বেকারত্ব। ২ অক্টোবর যে সপ্তাহ শুরু, সে সপ্তাহে ছিল ৭.২২%, ৯ অক্টোবরের সপ্তাহে ৭.৩২% এবং ১৬ অক্টোবরে ৮.৭৮%। গ্রামাঞ্চলে এই সপ্তাহে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছিল ৯.৪২%। এমন একটি সময় যে কোনও কাজই সাধারণ পরিবারে খুশির ছোঁয়া আনবে বইকি।
এই সেই কাজ— যার স্থিতি হয়তো কয়েক মুহূর্তও হতে পারে— যে কাজ বিষয়ে নীতি আয়োগের ‘পলিসি ব্রিফ’-এর (২০২০) মুখবন্ধে বলা হচ্ছে, “খরগতিতে দ্রুত বেড়ে ওঠা গিগ শ্রমিকেরা বিশ্বজুড়ে এক নতুন অর্থনৈতিক বিপ্লবের আগমন ঘোষণা করছেন। ভারত— অর্ধ বিলিয়ন শ্রমিকের জনতাত্ত্বিক লভ্যাংশ এবং বিশ্বের তরুণতম জনসংখ্যা, দ্রুত নগরায়ন, স্মার্টফোনের এবং তার সঙ্গে যুক্ত প্রযুক্তির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা— এই বিপ্লবের এক নতুন সীমারেখা।” এই গিগ-প্ল্যাটফর্ম সেক্টরে এখন ঠিক কত শ্রমিক রয়েছেন? নীতি আয়োগের হিসাবে ২০২০ সালে এই জাতীয় শ্রমিকের সংখ্যা ২১.৭৭ লক্ষ (৭.৭ মিলিয়ন)। এবং আয়োগের হিসাবে ২০২৯-৩০ সালে এই গিগ অর্থনীতিতে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়াবে ২.৩৫ কোটি (২৩.৫ মিলিয়ন)।
তো এই গিগ বা ইন্ডাস্ট্রির ভাষায় গিগ ও প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্কারদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজের নানা রকমফের রয়েছে। যেমন, কোনও ‘স্টার্টআপ’ বা অন্য প্ল্যাটফর্মে যাঁরা কোডিং, গ্রাফিক্সের কাজ করেন তাঁদের উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন বলে ধরা হয়। সম্পর্কহীনভাবে দূরবর্তী স্থান থেকেই এঁরা কাজ করতে পারেন। আবার ওলা, উবের চালক, শেয়ার রাইডার, আমাজন থেকে জোমাটো, স্যুইগির ডেলিভারি বয়রা নিম্নদক্ষতা সম্পন্ন শ্রেণীতে পড়েন। এঁদের কাজের আদেশ-নির্দেশ আসে দূরে থাকা এক মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে— কিন্তু কাজটি করতে হয় গায়ে-গতরে। আর অবশ্যই এঁদের মাঝে রয়েছেন মধ্যদক্ষতা সম্পন্নরা। প্লাম্বার,মইলেকট্রিসিয়ান, বিউটিসিয়ান এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। আরবান কোম্পানি, হাউসজয় ডট ইন, উবের, আসান জবস এঁদের ‘রিমোট’ নিয়োগকর্তা। কিন্ত কাজ করতে হয় শারীরিকভাবে। মোট গিগ ও প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্কারদের ২২% প্রথম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। মধ্যশ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ৪৭% এবং ৩১% নিম্নদক্ষতা সম্পন্ন। এঁদের সকলেরই মিল যে জায়গায় তা হল, এঁদের কাজ অ্যাপ নির্ভর, এবং এঁরা কোম্পানির বা কোনও প্ল্যাটফর্মের কর্মী বা শ্রমিক নন। এবং ‘নতুন অর্থনৈতিক বিপ্লব’-এর এই তরুণবাহিনীর শ্রমিক বা কর্মী হিসাবে না আছে মর্যাদা, না আছে অধিকার। অধিকার বিষয়টিকে এখানে কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা, আইন অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি, পিএফ, গ্র্যাচুইটি, বোনাস— এইসব দিক দিয়ে ভাবলে চলবে না। কেননা, এঁরা যে শ্রমিক সেই স্বীকৃতিটাই নেই যে। শ্রম মন্ত্রক বা শিল্পমহলে কোথাও এই প্রায় ২২ লক্ষ শ্রমজীবী বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট শ্রমনীতিই নেই। নীতি আয়োগ বলছে, গিগ শ্রমিকগোষ্ঠী হল, যাঁরা চিরাচরিত নিয়োগকর্তা-কর্মচারী সম্পর্কের বাইরে জীবনজীবিকা অতিবাহিত করছেন। সাধারণভাবে ,তাঁদের প্ল্যাটফর্ম ও নন-প্ল্যাটফর্ম নির্ভর শ্রমিক বলা যায়। আরও বলা হচ্ছে, প্ল্যাটফর্ম নির্ভর কর্মীরা হল তাঁরাই, যাঁদের কাজ অনলাইন সফটওয়ার অ্যাপ নির্ভরশীল, আর নন-প্ল্যাটফর্ম গিগ কর্মীরা হলেন সাধারণভাবে প্রচলিত ক্ষেত্রের বা কনভেনশনাল সেক্টরের আংশিক বা পুরো সময়ের ঠিকা মজুরি শ্রমিক।

cover

বোঝো ঠ্যালা। আমাজন আছে, ওলা, উবের, জোমাটো, স্যুইগি নামক কোম্পানি আছে, সেখানে গাড়িতে কোম্পানির ছাপ, পোশাকে কোম্পানির লোগো আছে— মানে ওই চালক বা ডেলিভারি বয় বা গার্লদের ওই কোম্পানি নিশ্চয় এই কাজে নিয়েছেন। কোম্পানির মালিক, বোর্ড অব ডিরেক্টরস নিশ্চয় আছেন, কর্মী নিয়োগের জন্য বেতনভুক কর্মচারীও রয়েছেন— তবু এসবই ‘চিরাচরিত নিয়োগকর্তা ও কর্মচারী সম্পর্ক’ বহিভূর্ত। একি এক বায়বীয় কিংবা ইথারতরঙ্গে ভাসমান সম্পর্ক? নাকি নিয়োগকর্তা রক্তকরবীর রাজা। আছেন তা পদে পদে মালুম হয় বটে কিন্তু এক গোপন ঘেরাটোপে অদৃশ্য থেকে যান।
আর যাঁরা সময়ে অসময়ে যখনই চাইছেন দরজায় পৌঁছে দিচ্ছে পছন্দের খাবার, প্রিয় বইটি বা হাল ফ্যাশানের পোশাক, যাঁদের মুখের দিকে এক ঝলক তাকিয়েই আমাদের চোখ বিঁধে যায় অর্ডার দেওয়া মালটি বুঝে নিতে— দরজা বন্ধ করতে না করতেই অদৃশ্য হয়ে যায় তাঁরাও। হয়তো পিঠটা দেখা যায় আর খিল তুলতে তুলতে ভুলে যাই মুখটি। যেন চলমান অশরীরী। মুহুর্ত সময় নষ্ট করার উপায় নেই যে। নেই তার কারণ, ডেলিভারির টার্গেট পূরণ করতে পারলে তবে মিলবে শরীরটা টিকিয়ে সংসার সামাল দেওয়ার মতো অর্থ। যেমন ধরা যাক, কোম্পানি নিয়ম করেছে, দিনে ‘ক’ পরিমাণ ডেলিভারি করলে, ‘খ’ পরিমাণ টাকার উপর বিক্রি হলে এবং ‘গ’ ঘণ্টা লগ ইন থাকলে দিনে ৭৫০ টাকা আয় নিশ্চিত হবে। বাস্তবে এই ‘ক’ সংখ্যা ডেলিভারির গাজরটির আর নাগাল মেলে না। গত অগস্ট মাসে ধর্মঘট বিভিন্ন শহরে ধর্মঘট করেছিল সুইগির ডেলিভারি বয়রা। অন্যতম, দাবি ছিল, মাসে ২৬,০০০ টাকা বেতন নির্ধারিত হোক। কেন এই দাবি? কারণ, ওই গাজরটি ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে। বেঙ্গালুরুর এক কর্মীর ভাষায়, দিনে ২৫টি ডেলিভারি করে ৬৫০ টাকা আয় হলে ৪২৫ টাকা ইনসেন্টিভ মিলবে। অতিমারির আগেও তা মিলত। এখন ঘণ্টায় দুটো কি তিনটে অর্ডার মিলছে। ফলে দৈনিক আয় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০-৪০০ টাকায়। এর পিছনে অন্যতম এক কারণ হল করোনা পরবর্তীকালে কর্মহীনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সংস্থাগুলি যে কোনও শর্তে অতিরিক্ত রাইডার নিয়োগ করতে পারছে। আয় কম হলেও রাতারাতি বেকার হয়ে পড়া বা পরিবারের সক্ষম মানুষটির আয় অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় অতি অল্পবয়সি যুবকরা কম আয়ের বেশি ঝুঁকির কাজ নিতেও পিছপা নন। এমনকি সাইকেল-রাইডারও নিয়োগ করছে সংস্থাগুলি। ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করে, দিনে গড়ে ১০০ কিমি সাইকেল চালিয়ে মিলছে ৩০০-৪০০ টাকা। রীতিমতো জলে না পড়লে এমন কাজে কেউ আসত না। আর কোম্পানি বিজ্ঞাপনে পরিবেশবান্ধব পরিসেবা, কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাসের গল্প শোনাচ্ছে। কথায় আছে না, দুর্জনের ছলের অভাব হয় না।
এই ডেলিভারি বয়দের কোম্পানি ‘আদর’ করে নাম দিয়েছে ‘ডেলিভারি পার্টনার’। তা সংস্থার এই অংশীদার বা ভাগীদার, বা শরিক— নামকরণে যা মাহাত্ম্যই থাক না কেন, কার্যত এ যেন মুনিশ খাটা। মুনিশ তবু মনিবকে রক্তমাংসে দেখতে পায়। এখানে অ্যাপের আড়ালে থাকা মনিব শুধু হকুম জারি করেই খালাস। সে হুকুম পালন সম্ভব কি না তা নিয়ে কথা বলার কোনও অবকাশ নেই। বৃষ্টিতে ভিজে ডেলিভারি করতে হলে এক সময় কোনও সংস্থা ৩৫ টাকাও দিত। তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০-১৫ টাকায়। মাল তুলে বেরোনোর সময় যদি দেখা যায় বৃষ্টি হচ্ছে তখনই মিলবে এই রেন ইনসেন্টিভ। মাঝরাস্তায় বৃষ্টি নামলে তা আর মিলবে না। এর সঙ্গে আছে কথায় কথায় বসিয়ে দেওয়া কিংবা মাইলেজ জালিয়াতির অভিযোগ। বড় শহরের ট্র্যাফিক জ্যাম কাটাতে কাটাতে যদি ১০ মিনিট দেরিও হয়ে যায়, আর কাস্টমার বোতাম টিপে অপচ্ছন্দ জানিয়ে বসে—তবে পরের মুহূর্তেই বসিয়ে দেওয়া হবে রাইডারকে। বসিয়ে দেওয়া মানে আইডি ব্লক করে দেওয়া। কতদিনের শাস্তি তা তার কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। ১০-১২ ঘণ্টা ছোটাছুটিতে যথেচ্ছ পেট্রল পোড়ে। লাফ দিয়ে দিয়ে পেট্রলের দাম বাড়লেও তথাকথিত পেট্রল ইনসেন্টিভ বাড়ে না। যতটুকু দেওয়া হয় তা হাস্যরBlinkit-nov-1কম ভাবে কম। দূরত্ব বাড়লে বেস পে বাড়ে। অথচ, কোম্পানি অ্যাপে যদি দেখায় ৪ কিমি দূরে যেতে হবে, রাইডাররা গুগল করে বুঝতে পারে আসলে ওটা সাড়ে পাঁচ কিমি। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই আয় কমানোর আরও নানা ফন্দিফিকির তো আছেই।
এই পুজোর মুখে কলকাতায় ব্লিঙ্কিট-এর ডেলিভারি বয়রা ধর্মঘট করে বসেছিল। উৎসবের দিনে যখন অতিরিক্ত আয় করার জন্য মুখিয়ে থাকেন শ্রমজীবী মানুষ, সংগঠিত শিল্পের শ্রমিক ও কর্মচারীরা বোনাসের হিসাব করেন— তখন ব্লিঙ্কিটের শ্রমিকরা লড়াইয়ে নামলেন তাঁদের আয়ের চরম সংকোচনের বিরুদ্ধে। মূল্যবৃদ্ধির এই ভয়াবহ সময়ে, উৎসবের লগ্নে ব্লিঙ্কিট একতরফা ভাবে তাঁদের বেস পে এক ঝটকায় ৫০ টাকা থেকে ২০ টাকা করে দেয়। পাশাপাশি, সুইগির ডেলিভারি বয়রা প্রায় কাছাকাছি সময়ে কাজ বন্ধ করে বসেছিল। সুইগির শ্রমিকদের দাবি ছিল তাঁদের ন্যূনতম মজুরি (প্রথম ৮ কিমি’র জন্য) ১০ থেকে ২০ টাকা করা হোক। এবং প্রতি অতিরিক্ত এক কিলোমিটারের জন্য ৫ টাকার বদলে দেওয়া হোক ১০ টাকা। দ্য কুইন্টের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্লিঙ্কিটের এক জন শ্রমিক প্রতি অর্ডার পিছু ৫০ টাকা পেত তখন তাঁরা দিনে হাজার টাকাও রোজগার করতে পারত। পেট্রল ও খাওয়ার খরচ বাদ দিয়েও অন্তত ৬০০ টাকা ঘরে নিয়ে যাওয়া যেত। আয় অর্ডার পিছু ২০ টাকায় নেমে আসা মানে দিনের শেষে একরকম খালি হাতেই বাড়ি ফেরা। পুরো পুজোটাই বিনা আয়ে আন্দোলনেই কাটে ব্লিঙ্কিটের শ্রমিকদের। প্রায় ১২ দিন পর কিছুটা হলেও আপোষরফা করে নেয় মালিকপক্ষ। বিগত প্রায় এক বছরে দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাইয়ে বার বার কাজ বন্ধ করে ক্ষোভবিক্ষোভ দেখিয়েছেন গিগ শ্রমিকরা। ফ্লারিশ ভেঞ্চার-এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ভারতের প্রায় ৯০% গিগ ওয়ার্কার অতিমারি-কালীন সময়ে আয় হারিয়েছেন। সমীক্ষাকৃত শ্রমিকদের ৪৪% এই সময় ধারকর্জ করে চালিয়েছেন; ৪৫% ভোগব্যায় কমাতে বাধ্য হয়েছেন; ৮৩% সঞ্চয় ভেঙেছেন; ৫৭% ধার করা টাকা শোধ করতে পারেননি। এই ভয়াবহ আর্থিক সমস্যার রেশ কাটতে না কাটতে কাজে ফিরে এলেও শ্রমিকরা দেখছেন নানা ছলছুতোয় কোম্পানিগুলো বেসিক পে কমিয়ে কিম্বা তা বন্ধ করে মর্জিমাফিক স্ল্যাব সিস্টেম চালু করে বেঁচেবর্তে থাকার মতো আয়টুকুতেও থাবা বসাচ্ছে।
নীতি আয়োগের ২০২০-র প্রস্তাব হচ্ছে, গিগ ও প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্কারদের ‘কোড অন সোশাল সিকিউরিটি’-র আওতায় নিয়ে আসা। শুধু এঁদেরই নয়, প্রায় ২৫০ মিলিয়ন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদেরও এই শ্রমকোডের আওতায় নিয়ে আসাই কেন্দ্রীয় সরকারের অভিপ্রায়। ২০২০-২১ সালের বাজেট পেশের সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সামাজিক সুরক্ষা প্রস্তাবের কথা পাড়লেও ওয়েজ কোড ও অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ, ওয়ার্কিং কন্ডিশনস কোড বিষয় নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি সরকার বা সরকারি থিংক ট্যাঙ্কের সদস্যরা। অর্থাৎ, এই বিপুল পরিমাণ শ্রমিকের মজুরি, পেশাগত বিপত্তি, কাজের সময়, শর্ত, রোগভোগ, দুর্ঘটনা কোনও কিছু নিয়েই মাথা ঘামাতে রাজি নয় সরকার।
ক্ষুধা ও বেকারত্বের তরুণ ভারতকে ডিজিটাল-দাসে পরিণত করতে পারা বিপ্লবই বটে। এবং আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি, ভারতকে গিগ-বিপ্লবের নয়াদিগন্ত ঘোষণাকারী তুখোড় ব্রেনের অধিকারী মোদির চিন্তাবিদদের ভয়ঙ্কর আখ্যা দিয়ে শাহের এনআইএ ইউএপিএ ধারায় মামলা দায়ের করবে না।
তথ্যসূত্র:
১। India’s booming gig and platform economy/ Perspectives and recommendations on the future of work, Policy brief, Niti Aayog, 2020.
২। Behind the veil of algorithems: A report on workers in the ‘Gig’ economy, PUDR, 2021.
৩। ডেলিভারি ভয়েস, ফেসবুক পেজ।
৪। Post-pandemic exploitation of food delivery workers, and the legal reforms needed, Nilabhra Bhattacharya, Newsclick.in, 15 October 2021.

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.