বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[দেশ]
মণিপুরের মেয়েরা
আমি চিত্রাঙ্গদা। মণিপুররাজকন্যা।
পিতৃবংশে কভু পুত্রী জম্মিবে না-
দিয়াছিলা হেন বর দেব উমাপতি
তপে তুষ্ট হয়ে। আমি সেই মহাবর
ব্যর্থ করিয়াছি। অমোঘ দেবতাবাক্য
মাতৃগর্তে পশি দুর্বল প্রারস্ত মোর
পারিল না পুরুষ করিতে শৈবতেজে,
এমনি কঠিন নারী আমি।
…।
তাই পুরুষের বেশে
নিত্য করি রাজকাজ যুবরাজরূপে;
ফিরি স্বেচ্ছামতে: নাহি জানি লজ্জা, ভয়,
অস্তঃপুরবাস; নাহি জানি হাবভাব,
বিলাসচাতুরী; শিখিয়াছি ধনুবিদ্যা,…
[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চিত্রাঙ্গদা]
উপরের লাইনগুলি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাঙ্গদা’র লাইন। কবির মানস চোখে আঁকা মহাভারতের কল্পচরিত্রের বিবরণ যেখানে অতি সুচারুভাবে ফুটে ত্তঠে। তবে, সেই চিত্রাঙ্গদা ছিলেন মণিপুরের রাজনন্দিনী। কিন্তু, কবির অঙ্কিত সেই চারিত্রিক বৈশিষ্ট বাস্তবে মণিপুরের সব কন্যাদের মধ্যেই যেন বর্তমান। তারা সাহসী, তেজস্বিনী, আত্মনির্ভর। তারা অনন্য সাধারণ। তারা মণিপুর কন্যা। এদের মণিপুরের হাটে, মাঠে, ঘাটে দেখা যায়, পরিবারের দায়িত্ব নিতে দেখা যায়, এরা বহুবার দেখা বহু আন্দোলনের পুরোভাগে থেকেছে, লড়াই করেছে।
মণিপুর উপত্যকার কেন্দ্রে অবস্থিত ইমা কেইথেল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মেয়েদের ঐতিহাসিক লড়াইয়ের সাক্ষী। অতীতের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, দুটি বড় নুপিলান আন্দোলনের নেত্রীত্বে মেয়েদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল । এই দুটি নুপিলান নারীর যুদ্ধ নামে পরিচিত। প্রথম নুপিলান ১৯০৪ এ, দ্বিতীয়টি ১৯৩৯এ। প্রথম আন্দোলনটি হয়েছিল পুলিশ আবাসন পুনর্নির্মানের উদ্দেশ্যে যখন মণিপুরি পুরুষদের কাবো উপত্যকায় কাঠ সংগ্রহ করতে যাওয়ার জন্য সরকারি নির্দেশ জারি হয় ।বলা হয়, সেই সপ্তাহকাল চলা নুপিলান আন্দোলনে প্রায় হাজার পাঁচেক নারী অংশগ্রহণ করেছিল । যদিও সরকার আন্দোলনটিকে সেষ পর্যন্ত দমন করতে সক্ষম হয়, বিতর্কিত নির্দেশনামাটি প্রত্যাহার করে নেয়। দ্বিতীয় নুপিলান-টি হয় যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সরকার বহুল পরিমানে চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয় যার ফলে সেখানে দুর্ভিক্ষের মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাদের সংগ্রামী লড়াই করেক মাস চলে । কয়েকজনের মৃত্যু হয়। এক সময় আন্দোলন স্থিমিত হয়ে পড়ে। সেদিনের আন্দোলন্দ্দ্বয়ে মেয়েরা যে সাহসী পরিচয় দিয়েছিলেন তার ছাপ আজকের মণিপুর বহন করে।
স্বাধীনতা উত্তর কালেও বারংবার মণিপুরের মেয়েদের সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সক্রিয়তা দেখা গেছে। ১৯৭০এর দশকে আমরা মণিপুর কন্যাদের সংগ্রামী রূপ দেখি। প্রাথমিক পর্যায়ে মদ ও মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে তারা পথে নেমেছিল মিরা পাইবি, অর্থাৎ মশালধারী মেয়ে নামে সংগঠনের মাধ্যমে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, এই মীরা পাইবিরা ‘মশালধারী মেয়ে’ হিসাবে পরিচিত কারণ জ্বলন্ত মশাল হাতে তাদের রাতবিরেতে অনেক সময়ই মিছিলে হাঁটতে দেখা যায়। এরা ‘মণিপুরের সামাজিক পরিসরের অভিভাবিকা’, বা ‘মা’ হিসাবেও খ্যাত। এখানে বয়স্ক মহিলারা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মীরা পাইবিরা নিজেদের একটি অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন বলে দাবি করে। এক সময়ে এই সংগঠন মানবাধিকারের আন্দোলনে যুক্ত হয়। মণিপুরে মানবাধিকার রক্ষার জন্য সেনা, আধা সেনার বিরুদ্ধে মশাল হাতে মিরা পাইবি-রা এগিয়ে আসে। ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আইরম শর্মিলার Armed Forces Special Powers Act (AFSPA)র বিরুদ্ধে লড়াইকে তারা সমর্থন জানিয়েছিল ।
এখন জাতি দাঙ্গায় বিধ্বস্ত মণিপুরে মণিপুর কন্যাদের নিয়ে নানা প্রশ্ন মনে আসে। এরা কি নির্যাতিতা? নির্যাতিতা হলে কি শুধুই নির্যাতিতা? জাতি সংঘাতে মণিপুরের মেয়েদের ভূমিকা কী? তাদের হাতে কি আজ মানবাধিকার রক্ষিত হয়, না লঙ্ঘিত হয়? তারা কি শান্তির দূত, না কি নিজ নিজ গোষ্ঠীগুলির পক্ষপাতী যোদ্ধা? দেখাই যাক আরো একটু গভীরে গিয়ে, আলোচনা করে।
মণিপুরের জাতি সংঘাত
ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্য মণিপুর বহু জনজাতি গোষ্ঠীর বাসস্থান। তাদের মধ্যে মেইতেইরা রাজ্যের জনসাধারণের প্রায় ৫৩ শতাংশ। কুকি ও অন্যান্য জনজাতিরা মিলে প্রায় ৩০ শতাংশ। মেইতেইরা প্রধানত হিন্দু ধর্মাবলম্বি, কুকিরা মূলত খ্রিস্টান। দীর্ঘ দিন ধরে পুঞ্জিভূত জমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারের লড়াই এই জনগোষ্ঠীগুলির মধ্যের তিক্ত সম্পর্কের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। মাঝে মধ্যেই তা তীব্র সংঘাতের রূপ নেয়। সম্প্রতি মেইতেইরা তফশিলি জনজাতি [শিডিউল্ড ট্রাইব] তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবি তোলে। সে দাবিকে কেন্দ্র করে নতুন করে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। তফশিলে অন্তর্ভুক্তি হলে, ইতিমধ্যেই প্রভাবশালী এই মেইতেই জনগোষ্ঠী আরো ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠবে সেই আশঙ্কা করে কুকিরা তার বিরোধিতা করতে নামে।
এই বছরের, অর্থাৎ ২০২৩এর মে মাসের তিন তারিখে মণিপুরের ইম্ফাল উপত্যকায় বসবাসকারী মেইতেই ও সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকার কুকিদের মধ্যে তীব্র জাতি সংঘাত ঘটতে দেখা যায়। সেদিন ইম্ফালের দক্ষিণ দিকের শহর চুড়াচাঁদপুরে কুকিদের মিছিলকে কেন্দ্র করে হিংসার ঘটনা ঘটে। দু’ পক্ষই নিজ নিজ সশস্ত্র রক্ষী দল গঠন করে।
দফায় দফায় ঘটে চলে সংঘাত। সেই সংঘাতে মণিপুর বহু মৃত্যু ও নানা ধরনের হিংসার ঘটনার সাক্ষী থাকে। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, কয়েক শ’ মানুষ মারা যায়, বারো হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে অন্যত্র— অনেক ক্ষেত্রে সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে চলে যায়। বহু বাড়ি, গাড়ি, ধর্মস্থান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সরকারের তরফ থেকে বারবার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, কারফেউ লাগু হল, প্রয়োজনে দেখা মাত্র গুলি চালানোর নিদানও সরকার দিল। এরই মধ্যে বারবার কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের আঙ্গুল ওঠে।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ও বহু সংবাদ মাধ্যম মণিপুরের ঘটনাক্রমকে নিছক দুটি জাতিগোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব হিসাবে তুলে ধরলেও অন্যান্য কতকগুলি বিষয় মনে রাখা ভাল: ১) আরএসএস ভারতের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ভূমি পুনরুদ্ধারের ঘোষিত পরিকল্পনা এবং মণিপুর রাজ্যে ও কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি-র হিন্দু তোষণ নীতি যার ফলে মেইতেইদের নানা ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা; ২) বাংলাদেশ, চীন, মায়ানমার বেষ্ঠিত মণিপুরের ভৌগোলিক অবস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম; ৩) জঙ্গলবাসী জনজাতির মানুষদের অনেক ক্ষেত্রেই তাদের এলাকা থেকে উচ্ছেদ করায় কর্পোরেট স্বার্থ জড়িয়ে থাকে।
মেইতেই নারী ও কুকি নারী
যে কোনও লড়াইয়ের সময় দেখা যায় নারী দেহ প্রায়শই লড়াইয়ের ক্ষেত্রভূমিতে পরিণত হয়। এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীকে শায়েস্তা করতে সেই গোষ্ঠীর নারীদের উপর নির্যাতন নামিয়ে আনে, তাদের ধর্ষণ করে, অপহরণ করে, তাদের সম্মানহানি ঘটায়। মণিপুর এর ব্যতিক্রম নয় । রয়টার্স এর তথ্য অনুসারে, মে থেকে আগস্টের মধ্যে একুশজন মেয়ের মণিপুরের জাতি দাঙ্গায় মৃত্যু।
৪ মে মণিপুরের এরুপ কানগপপকি (Erup Kangpopki) গ্রামের দু’ জন কুকি মেয়ে তাদের জ্বলন্ত ঘর ছেড়ে ছুটতে থাকে। একজনের বয়স চুয়াল্লিশ, অন্য জনের একুশ। প্রথমজন গ্রামের প্রধানের স্ত্রী, অন্যজন তার প্রতিবেশী। তাদের ভয়াবহ কাহিনী প্রকাশ্যে আসতে সত্তর দিন সময় লাগে। সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব না পাওয়া ঘটনা, একটি হাড় হিম করা ভিডিওর মাধ্যমে জনসমক্ষে আসে। ইতিমধ্যে একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে। মেয়েদের নগ্ন করার ঘটনা, গণধর্ষণের ঘটনা। ইন্টারনেটের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তথ্য অপ্রতুল। তবে তারই মধ্যে নারী নির্যাতনের নানা ঘটনা সামনে আসতে থাকে। সামনে আসে সেই দুজন মেয়েকে মৃত্যু ভয় দেখিয়ে উলঙ্গ করে হাঁটানোর ঘটনার ভিডিও, যা দেখে একদিকে যেমন রাজনৈতিক ঝড় ওঠে, অন্য দিকে স্বতপ্রণোদিত হয়ে সুপ্রিম কোর্ট ঘটনাটির অনুসন্ধানের কথা বলে। জুলাই মাসে National Alliance of People’s Movements [NAPM] সহ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবি করে চিঠি লেখে। হিন্দুস্থান টাইমস সংবাদপত্রে ৭ অগাস্ট ২০২৩ এ প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, অন্তত বারোটি মর্মান্তিক ঘটনা। পাঁচ জন নারীর গণধর্ষণ, চার জনের হত্যা আর দশ জনের উপর নানা ধরনের যৌন নির্যাতন। মনে করা হয়, হিসাবের বাইরেও আরো বহু ঘটনা আছে।
মণিপুরে জাতি সংঘাত যত তীব্র হয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীগুলির পুরুষের পাশাপাশি, মেয়েরাও তত সংগঠিত হয়েছে। অভিযোগ ওঠে, তারা নাকি নিজ নিজ গোষ্ঠীর দাঙ্গাবাজদের সহায়তা করছে, মদত দিচ্ছে, আড়াল করছে।
শোনা যায়, মেইতেই ও কুকি নারীরা উভয়ে উভয়ের বিরুদ্ধে আজ আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। তাদের জাতি পরিচিতি তাদের লিঙ্গ পরিচিতির উপর প্রাধান্য পেয়েছে। কুকিদের তরফ থেকে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে যে, জাতিদাঙ্গায় অংশগ্রহণকারী মেইতেইদের অনেক সময়ই ইন্ধন যোগাচ্ছে মীরা পাইবি নামক নারী সংগঠনের মেইতেই মেয়েরা। এমনকি তারা মেইতেই পুরুষদের কুকি মেয়েদের ধর্ষণ করতেও উৎসাহিত করছে বলে শোনা যায়। কুইন্ট, হিন্দু, ইন্ডিয়া টুডে, দি ওয়াইয়ার প্রভৃতি সংবাদ সূত্রে এই মর্মে নানা টুকরো টুকরো খবরও উঠে আসে। Kuki Women Organisation for Human Rights এর সভানেত্রী নাইনেকিম বলেন, তিনি জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন মেইতেইরা ব্যাপক ভাবে যৌন নির্যাতন ও গণধর্ষণকে যুদ্ধের হাতিয়ার ও রণকৌশল হিসাবে ব্যবহার করছে। বলা বাহুল্য, মীরা পাইবিরা তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে। তাদের কথায়, আমরা কুকি মেইতেইদের মধ্যে কোন ফারাক করি না। কুকি মায়েরাও কষ্টে আছে, মেইতেই মায়েরাও কষ্টে আছে। [https://www.reuters. com/world/india/indias-brutal-ethnic-war-women-are-participants-well-victims-2023-08-08/]
অন্য দিকে, মেইতেইদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় তাদের বেশ কয়েকজন মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। যদিও তারা বলে, প্রমাণের অভাবে অভিযোগ দায়ের করা সম্ভব হয় নি। বিপরীতে, তাদের প্রতিপক্ষরা এই সংবাদকে গুজব বা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ছড়ানো মিথ্যা সংবাদ বলে উড়িয়ে দেয়। [https://www. newsclick.in/how-fake-news-created-pretexts-lynch-kuki- zo-women-manipur]
মিলিটারির দিক থেকে অভিযোগ করা হয়, অনেক সময়ই মণিপুরি মেয়েরা, প্রধাণত মেইতেই সম্প্রদায়ের, সেনা বা আধা সেনাদের চিরুনি তল্লাসিতে সংঘবদ্ধ ভাবে বাধা দেয়। তারা মানববন্ধন করে নিরাপত্তা রক্ষীদের অগ্রগতি প্রায়সই প্রতিহত করে। এই মেয়েদের অনেকের হাতে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রও থাকে। সেই চাপের মুখে বহু ক্ষেত্রে মিলিটারিকে পিছু হটতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, মিলিটারিও পক্ষপাতের দোষে দুষ্ট। বলা বাহুল্য, ছবিটি অত্যন্ত জটিল।
কিন্তু অতীতে বার বার দেখা গেছে, শান্তির দাবিতে মণিপুরি মেয়েরা পথে নামে। চলমান হিংসার নিন্দায় সরব হয়।
কে জেতে, কে হারে?
আলোচনা থেকে স্পষ্ট, মণিপুরের জাতি সংঘাতে মেয়েরা ভিক্টিমও বটে, আক্রমণকারীও বটে। প্রধানত লিঙ্গ পরিচয়ে তারা ভিক্টিম হয়, নারী হিসাবে যৌন নির্যাতনের শিকার। তবে তা তাদের জাতি পরিচয়ের কারণে ঘটে। সেই জাতি পরিচয় আবার তাদের আক্রমণকারীও করে তোলে। এক জাতিগোষ্ঠীর নারী অপর জাতিগোষ্ঠীর নারীকে ভিক্টিম বানায়।
মণিপুরের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। তা হলেও, ভারতের অন্যান্য অনেক স্থানের তুলনায় মণিপুরে মেয়েদের স্বাধীন সক্রিয় আচার আচরণ ও দৃশ্যমানতা লক্ষ্যণীয়। সমাজের উন্নয়ণ ও অর্থনীতিতে তাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। হাটে বাজারের কেনাবেচায় তারা সামনের সারিতে। কৃষি, মাছের ব্যবসা, হস্তশিল্প প্রভৃতি অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ক্ষেত্রে তারা সক্রিয়। পরিবার ও সমাজে তারা সমান ভাবে কর্মঠ। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। এ হেন পটভূমিতে, আজ সমাজের সংকটময় সময়ে তারা সক্রিয়তার পরিচয় দেবে সেটাতে অবাক হওয়ার বোধ হয় খুব একটা কিছু থাকে না। বরং সেটাই স্বাভাবিক। তবে, মনে রাখতে হয়, সক্রিয়তা সব সময়ে ইতিবাচক হয় না। এ ক্ষেত্রেও তাই অনুমিত নিজ জাতি স্বার্থ অনেক সময়েই বৃহত্তর শান্তির পথে বাধা হয়ে ওঠে, যার ফলে অসাধু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিরা মুনাফা লোটার সুযোগ পায়। এ ক্ষেত্রে বহু নারী তাদের নিজ অবস্থার কারণে ছটফট করলেও, জাতি পরিচয়ের দ্বন্দ্ব অতিক্রম করতে পারে না, বৃহত্তর জটিল সমীকরণ বুঝতে অপারগ থাকে, যার নিদারুণ চিত্র ফুটে ওঠে এক সময়ের মানবাধিকার রক্ষাকারী মীরা পাইবিদের বর্তমান ভূমিকায়।