বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[দেশ]
সামনে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট, তারপরই আগামী বছরের গোড়ায় লোকসভা ভোট। মোদি সরকার ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখাতে নানা কর্মসূচি নিতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে গ্যাসের দাম কমিয়েছে। খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম লাগাতে মাঠে নেমে পড়ছে। বিরোধীদের ঐক্য ভাঙতে ব্যাপক প্রচারে নেমেছে। এর বিপরীতে শ্রমিক-কর্মচারী এবং কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগঠনগুলি ঐক্যবদ্ধভাবে মোদি সরকার বিরোধী আন্দোলন তীব্র করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
২৪ আগস্ট ২০২৩ নয়াদিল্লির তালকটোরা স্টেডিয়ামে শ্রমিক ও কৃষক সংগঠন সমূহের যৌথ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম এবং সংযুক্ত কিসান মোর্চা এই কনভেনশনের আয়োজন করেছিল। দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্য থেকে শ্রমিক, কৃষক এবং কৃষি শ্রমিক সংগঠনের প্রায় ৭০০০ প্রতিনিধি কনভেনশনে অংশ নিয়েছিলেন।
মোদি সরকারের কর্পোরেট তোষণ নীতি, শ্রমিক ও কৃষক বিরোধী নীতি এবং সাম্প্রদায়িক কর্পোরেট আঁতাতের বিরুদ্ধে, দেশজুড়ে ঘৃণা এবং হিংসার আবহ তৈরি বিরুদ্ধে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেন শ্রমিক-কৃষক নেতৃবৃন্দ। মণিপুর, হরিয়ানায় সহ সারা দেশে আক্রান্ত হচ্ছে সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনজাতির মানুষেরা। শ্রমজীবী মানুষের উপরে মোদি সরকারের বেড়ে চলা শোষণ ও আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে রণকৌশলের পর্যালোচনা করা হয়, গ্রহণ করা হয় আন্দোলনের পরিকল্পনা। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম এবং সংযুক্ত কিসান মোর্চার তরফে ঘোষণা করা হয়, দেশের একতা, বহুত্ববাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রমে শ্রমিক-কৃষকরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আওয়াজ তোলা হয় ‘জনতা বাঁচাও, জীবিকা বাঁচাও’।
যৌথ কনভেনশন থেকে শ্রমিক কৃষক সংগঠনগুলি একগুচ্ছ আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
৩ অক্টোবর ২০২৩ সারা দেশে কালো দিবস হিসাবে পালন করা হবে। ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর লখিমপুরখেরিতে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী পুত্রের গাড়ির চাকার তলায় ৮ জন আন্দোলনরত কৃষকের মৃত্যু হয়েছিল। কৃষিমন্ত্রী অজয় মিশ্রকে বরখাস্ত করা ও আইনানুগ শাস্তির দাবি জানানো হবে।
২৬-২৮ নভেম্বর সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজভবনের সামনে দিন-রাত্রি মহাসমাবেশ সংগ্রাম সংগঠিত করা হবে। ২৬ নভেম্বর ২০২০ ছিল শ্রমিক-কৃষক সারা ভারত ধর্মঘটের দিন যে দিন দিল্লিতে ঐতিহাসিক কৃষক সমাবেশ শুরু হয়েছিল।
আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারি দু’ মাসব্যাপী সারা দেশে মোদি সরকারের কর্পোরেট স্বার্থবাহী নীতি ও বিভাজন ও ঘৃণার নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে কনভেনশন। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা, চার বিতর্কিত শ্রম কোড বাতিল সহ জনজীবনের গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে আন্দোলন তীব্র করে তোলা হবে।
নয়া দিল্লির কনভেনশনে সামিল হয়েছিলেন সারা ভারত কিসান সভা, কীর্তি কিসান ইউনিয়ন, ক্রান্তিকারি কিসান ইউনিয়ন, বিকেইউ, বিকেইউ টিকায়েত, জয় কিসান আন্দোলন, এনএপিএম, কিসান সংঘর্ষ সমিতি, তেরাই কিসান ইউনিয়নের মতো সংগঠনগুলি। সামিল ছিলেন আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি, সিআইটিইউ, এআইসিসিটিইউ, এআইইউটিইউসি, টিইউসিসি, সেবা, এলপিএফ সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
শ্রমিক-কৃষকদের কর্মসূচিকে ইতিমধ্যে সমর্থন জানিয়েছেন কংগ্রেস ও বাম দলগুলি।