বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[দেশ]
শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রমিকশ্রেণীর রাজনৈতিক ক্ষমতা
সংগঠিত শ্রমিকশ্রেণীর ক্ষয়প্রাপ্তি এবং অসংগঠিত শ্রমিকদের সংখ্যাবৃদ্ধি— নয়া উদারবাদী অর্থনীতির আমলে আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের সামনে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুঁজির লাগামছাড়া অভিযানের জেরে শ্রমিক শ্রেণীর এই দুই অংশের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই চলেছে। সংগঠিত শ্রমিক শ্রেণী তাদের শতাব্দী প্রাচীন অর্জিত অধিকারগুলি কিছুটা ধরে রাখতে পেরেছে ইউরোপের দেশগুলিতে। কিন্তু আমেরিকা এবং বিশ্বের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলিতে, পুঁজিবাদী তথা নয়া উদারবাদী ব্যবস্থা যত বেশি জেঁকে বসেছে, তত বেশি সেই সব অঞ্চলে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে সংগঠিত শ্রমিক শ্রেণী। পুঁজির বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে সংগঠিত শ্রমিকশ্রেণী পুঁজির শোষণের সামনে একটা লক্ষ্মণরেখা টেনে দিতে পেরেছিল। এবং বিশ্ব পরিসরেই শ্রমিকদের জন্য একটা সম্মানজনক অস্তিত্বের অধিকার অর্জন করতে পেরেছিল। এটা শুধুমাত্র ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের জয়ের কারণেই এটা সম্ভব হয়নি। বরং, অনেক বেশি সম্ভব হয়েছিল রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে শ্রমিকশ্রেণীর জয়ের কারণে। সোভিয়েতে সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ও তার ব্যাপ্তি, গোটা বিশ্বজুড়েই পুঁজিবাদী তথা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলিকে বাধ্য করেছিল পুঁজির নিয়ন্ত্রণহীন আধিপত্যের ওপর লাগাম পরাতে। ফলে বিশ্ব পরিসরেই, শ্রমিকশ্রেণী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ৭০ এর দশকের মাঝমাঝি পর্যন্ত কোণঠাসা করে রেখেছিল লগ্নি পুঁজিকে। এর ফলে বিশ্বজুড়েই মুনাফার হার স্থবিরতার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। কারণ পুঁজির হাত থেকে বেরিয়ে যায় বিশ্ব বাজারের একটা বিপুল অংশ। এবং যে অংশে পুঁজির নিয়ন্ত্রণ ছিল সেখানে উদ্বৃত্ত মূল্যের একাংশ ব্যয় করতে হত রাষ্ট্রের কল্যাণকর কর্মসূচিতে, এর আগে যা গিয়ে জমা হতো পুঁজিপতিদের ভাণ্ডারে। এক কথায়, পুঁজির মুনাফার ওপর কার্যকর থাবা বসিয়েছিল শ্রম। শেষ পর্যন্ত এতে গভীর সঙ্কটে পড়ে পুঁজি। লগ্নি পুঁজির মুনাফার হার স্থবিরতায় পৌঁছে যায়।
ব্রিটেনে মার্গারেট থ্যাচার এবং আমেরিকায় রোনাল্ড রেগনের আমলে মুনাফার হারের এই স্থিতাবস্থা ভাঙতে তৎপরতা শুরু হয় পুঁজির মদতে ও পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের নেতৃত্বে। এই পর্বে ফের লগ্নি পুঁজি বিশ্বজুড়ে তার হৃত সাম্রাজ্য ও মুনাফার হার ফিরে পাওয়ার প্রয়াস শুরু করে। এই লক্ষ্যেই হামলা শুরু হয় সংগঠিত শ্রমিকশ্রেণীর অধিকার ও অস্তিত্বের ওপর। ক্রমশ রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র তুলে দিয়ে বেসরকারিকরণ ও শ্রমিকদের অর্জিত অধিকারগুলি সংকোচনের মাধ্যমে পুঁজি ক্রমশ তার হৃত মুনাফার হার ফিরে পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে।
ইউরোপ ও আমেরিকায় দু'দশক ব্যাপী পুঁজি বনাম শ্রমের এই লড়াইয়ের মধ্যেই সোভিয়েতের পতন হয়। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে পুঁজি ও শ্রমের যুদ্ধে শ্রম, কিংবা বলা ভাল রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত শ্রমিকশ্রেণী, যে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছেছিল, সোভিয়েতের পতনে সেই অবস্থান হাতছাড়া হয়। এরপরেই লগ্নি পুঁজি নানা ভাবে তার বিশ্বজোড়া হৃত সাম্রাজ্য পুনর্দখলে নেমে পড়ে আরও বেপরোয়াভাবে। এবং সেই পুনর্বিজয়ের পালাই এখন চলছে, যার ধাক্কা শ্রমিক শ্রেণীর ওপর এসে পড়ছে নানা ভাবে এবং তার জেরেই সংগঠিত ও অসংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যেকার ব্যবধান বেড়ে চলেছে। সুতরাং, শ্রমিকশ্রেণীর আরও একটা বড় ধরনের রাজনৈতিক বিজয় ছাড়া লগ্নি পুঁজির অশ্বমেধের ঘোড়াকে লাগাম পরিয়ে সংযত করা যাবে না, পুঁজির উচ্ছেদ তো দূরের কথা।
আজকের শ্রমিক আন্দোলনের সমস্যার গভীরে যেতে হলে শ্রমিকশ্রেণীর রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের ডায়মেনশন বা মাত্রাটিকে স্বীকৃতি দিতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতা শ্রমিকের হাতে না থাকলে পুঁজি কখনই তাকে রেয়াত করবে না। বড়জোর কিছু বাড়তি আর্থিক সুবিধা দিতে পারে মাত্র।
ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে শ্রম ও প্রযুক্তি
আমরা দেখছি, নয়া উদারবাদের আমলে বিশ্বের মোট শ্রমিকবাহিনীর মধ্যে একদিকে সংগঠিত শ্রমিকদের অনুপাত কমে আসছে, এবং অন্যদিকে ধাপে ধাপে তাদের অর্জিত অধিকারগুলি ছাঁটাই করা হচ্ছে। ফলে এখনকার সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন অনেকটা আত্মরক্ষামূলক বা ডিফেন্সিভ। অর্জিত অধিকারগুলি রক্ষা করাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে শ্রমিক আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। নতুন অধিকার আদায়ের কাজটা পিছনে থেকে যাচ্ছে।
আমরা জানি, পুঁজি তার মুনাফার হার ধরে রাখার জন্য ক্রমাগত প্রযুক্তির উন্নতি ঘটাতে থাকে আরও কম দামে পণ্য বাজারে নিয়ে আসার জন্য। প্রযুক্তির চলন আবার শ্রমিকশ্রেণীর আঙ্গিক গঠনে বজল আনে। মার্কস তাঁর পুঁজি গ্রন্থে দেখিয়েছেন, কীভাবে ম্যানুফ্যাকচারিং, হস্তশিল্প ও গৃহস্থালী ভিত্তিক শিল্পকে আপাদমস্তক বদলে দিয়ে পত্তন হল আধুনিক শিল্পের, যেখানে এক সঙ্গে হাজার হাজার শ্রমজীবী কাজ করতে আসেন। মুনাফার তাগিদে তৈরি হয় নতুন নতুন মেশিন, তৈরি হয় বিপুল পরিমাণে পণ্য উৎপাদনের প্রযুক্তি আর সেই প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে পুঁজি গড়ে তুলেছিল আধুনিক ফ্যাক্টরি ব্যবস্থা, যেখানে জড়ো হল শিল্প শ্রমিক বা প্রলেতারিয়েত। আবার এই সব ফ্যাক্টরিতে উৎপন্ন বিপুল পরিমাণ পণ্যের বাজার খুঁজতে গিয়ে বিকশিত হল উপনিবেশবাদ, যা পরে লগ্নি পুঁজিভিত্তিক সাম্রাজ্যবাদে পরিণত হয়।
বিশাল বিশাল ফ্যাক্টরি এবং তাকে ঘিরে হাজার হাজার প্রলেতারিয়েত — উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে জন্ম নেওয়া এই ব্যবস্থাটি কীভাবে বিকশিত হয়ে উঠল পুঁজি গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে ১৫ নম্বর অধ্যায়ে ‘মেশিনারি অ্যান্ড মডার্ন ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক আলোচনায় মার্কস এটা দেখিয়েছেন। আবার উদ্বৃত্ত মূল্য অর্জনে কীভাবে শ্রমিকদের শোষণ করা হচ্ছে সেই আলোচনা মার্কস করেছেন ‘ওয়ার্কিং ডে’শীর্ষক দশম অধ্যায়ে। গোড়ার যুগে কারখানায় পরিশ্রম করানো হতো ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত। ফ্যাক্টরি ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে হাজার হাজার শ্রমজীবীকে এক ছাদের তলায় জড়ো করে শোষণ করা, সেখান থেকে বিপুল উদ্বৃত্ত মূল্য সঞ্চয় করা, ক্রমশ নানা রূপে তীব্র পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে ওঠা, এই সব লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের বিকাশ ও উদ্ভব, ক্রমশ প্রলেতারিয়েতের শ্রেণীচেতনা পরিণত হয়ে রাজনৈতিক দল গঠন, রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লড়াই ও শ্রমিকশ্রেণীর জয়লাভ— বিংশ শতকের প্রথম ৫০ বছরে আমরা মার্কস বর্ণিত প্রক্রিয়াটির পূর্ণ পরিণতি দেখতে পাই এই সব ঘটনার মধ্যে দিয়ে। এই ব্যবস্থায় পুঁজির মুনাফা অর্জনকারী প্রযুক্তিই তৈরি করে দিয়েছিল শ্রমিকশ্রেণীর আঙ্গিক গঠন, যার প্রধান রূপ হল কারখানা ও কারখানা সংলগ্ন বস্তি এলাকাকে ঘিরে বিপুল সংখ্যায় শ্রমিকদের অবস্থান, যা শ্রমিকশ্রেণীকে সংগঠিত করে তোলার পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছিল।
এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, পুঁজির দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে সোভিয়েতে বা চীনে যে শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছিল, সেটা আঙ্গিকের দিক থেকে সেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মতোই। অর্থাৎ কারখানা ব্যবস্থা। এসব দেশে মৌলিক ফারাকটা ছিল উদ্বৃত্ত মূল্য পুঁজিবাদীর পকেটে না গিয়ে জমা হতো রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডারে এবং সেই অর্থ খরচ হতো শ্রমিকশ্রেণী সহ সাধারণ মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে।
একবিংশ শতকে প্রযুক্তির রূপান্তর
গত শতকের শেষ থেকেই আমরা পুঁজিবাদী প্রযুক্তিতে এক বিশাল পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। প্রথমত, প্রযুক্তিতে কায়িক শ্রমের অংশ কমেছে। ফলে আজকের দিনে নতুন করে স্তাখানোভাইটদের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। নানা ধরনের দক্ষতা ভিত্তিক শ্রমের চাহিদাই এখন বেশি। এছাড়া আগের মতো বড় বড় কারখানা গড়ে পণ্য উৎপাদনের ব্যবস্থাও ক্রমশ পুরনো হয়ে যাচ্ছে। গত শতকের হিন্দ মোটর্সের গাড়ি কারখানা এবং এই শতকের জার্মানির ভোকসওয়াগেল গাড়ি কারখানা (যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ফাইভ জি প্রযুক্তির ব্যবহার হয়)–র শ্রমিক ও প্রযুক্তির মধ্যে দুস্তর ব্যবধান তৈরি হয়েছে। আবার এমন নয় যে এই সব প্রযুক্তি পিছিয়ে পড়া দেশে আনা যাবে না। উন্নত প্রযুক্তি বিদেশে চালান করে সেখানকার সস্তা শ্রম কাজে লাগিয়েও পুঁজি তার মুনাফার হার বজায় রাখতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় চীনের প্রভূত উন্নতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মার্কিন গাড়িশিল্প এবং সেই সব কারখানার শ্রমিকেরা উধাও হয়ে গেছে। এই উধাও হওয়া নিঃসন্দেহে আমেরিকার সংগঠিত শ্রমিকশ্রেণীকে দুর্বল করেছে। এবং এর পরের প্রজন্মের শ্রমিকেরা ভিড় করেছেন অ্যামাজন, সুইগি ইত্যাদির সংস্থার কাজগুলিতে। এই সব ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকারই কেড়ে নিয়েছেন কোম্পানিগুলি রাষ্ট্রের মদতে। এভাবেই প্রযুক্তির রূপান্তর সংগঠিত শ্রমিকশ্রেণীর আঙ্গিক গঠনে ক্রমশ বড়সড় বদল নিয়ে এসেছে। আবার, উন্নত প্রযুক্তি যখন পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে আনা হচ্ছে, সেখানে কাজের ঘণ্টা চূড়ান্ত পর্যায়ে বাড়িয়ে শোষণকে চূড়ান্ত করা হচ্ছে (মানেসরের সুজুকি গাড়ি কারখানা)। ফলে ৮ ঘণ্টা কাজের দিন উঠে গিয়ে কাজের দিন ফের সেই ৯ বা ১০ ঘণ্টায় গিয়ে ঠেকছে। অথচ সেই অনুপাতে মজুরি বাড়ছে না। অথচ ইউরোপের দেশগুলিতে শ্রমিক শোষণের এতটা সুযোগ নেই।
মুনাফার স্বার্থে পুঁজি নতুন নতুন যে প্রযুক্তি আনছে তাতে আর আগের মতো শ্রমিক সংখ্যার দরকার পড়ছে না। কায়িক শ্রমঘন প্রযুক্তির বদলে আসছে মেধাভিত্তিক দক্ষতাঘন প্রযুক্তি। এটাই সংগঠিত শ্রমিকশ্রেণীর আঙ্গিক গঠনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বদল নিয়ে আসছে। এবং নিয়ে আসছে নতুন নতুন সমস্যা। এর পাশাপাশি, পুরনো ক্ষেত্রগুলিতে কাজের সময় বাড়িয়ে, লোক নিয়োগ কমিয়ে ক্রমশ কোণঠাসা করে ফেলা হচ্ছে শ্রমিক কর্মচারীদের। আবার যে সব সংগঠিত ক্ষেত্রে নিজেদের মতো করে কিছুটা আর্থিক দাবি আদায় করে নিতে পারছেন (ব্যাঙ্ক ইত্যাদি) তাদের সঙ্গে অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানসিক দূরত্ব বাড়ছে।
বাড়ছে অসংগঠিত নিয়োগ
উন্নত প্রযুক্তিঘন পুঁজি ক্রমশ পুরোনো উৎপাদন ব্যবস্থাকে শিল্পক্ষেত্র থেকে ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে। ফলে পুরনো প্রযুক্তি ভিত্তিক কারখানার শ্রমিকেরা কাজ হারাচ্ছেন। বহু শিল্প এখন ধাপে ধাপে বেসরকারি হাত তুলে দেওয়া হচ্ছে যারা স্থায়ী নিয়োগ করছে না। (উদারহণ হিসাবে বলা যায়, নিরাপত্তা রক্ষীদের পুরো ক্ষেত্রটাই অসংগঠিত। এখানে বহু লোক কাজ করেন যাদের পুরনো কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নানান বৈষম্যমূলক শর্তে কোনও ক্রমে এরা কাজটা করে চলেছেন)।
এরই পাশাপাশি সঙ্কট তৈরি হয়েছে কৃষিক্ষেত্রে। সার ,বীজ, বিদ্যুৎ ইত্যাদির ওপর থেকে ভরতুকি তুলে নেওয়ায় চাষ আর লাভজনক নয়। ফলে কৃষিক্ষেত্র থেকে বহু লোক এসে ভিড় করছেন অসংগঠিত কাজের বাজারে। শহরেও বেকার বাহিনীর বড় অংশ চলে আসছেন অসংগঠিত কাজে। সব মিলিয়ে শহর, আধা শহর ও গ্রাম মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে এক বিশাল অসংগঠিত শ্রমিক বাহিনী। এবং এঁদের নিয়োগের শর্ত ও মজুরির মধ্যে প্রচুর বৈষম্য রয়েছে। এবং যেহেতু এঁরা সংগঠিত নন তাই কী বেসরকারি মালিক, কী রাষ্ট্র — কেউই এদের নিয়োগ ও মজুরির নিরাপত্তা দিতে রাজি নয় (উদাহরণ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা)।
চাই ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ
এই শতকে কী সংগঠিত, কী অসংগঠিত— দুটি ক্ষেত্রেই পুঁজির শোষণ ও হামলা বেড়েছে। এবং এখনকার নয়া উদারাবাদী রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রেই পুঁজির পক্ষেই দাঁড়াচ্ছে। অন্যদিকে, আর্থিক মানদণ্ড ও সুবিধার বিচারে সংগঠিত এবং অসংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যে মানসিক ব্যবধান বাড়ছে। অথচ দু'পক্ষের শত্রু একটাই — পুঁজি ও তার তাঁবেদার রাষ্ট্র। এই পরিস্থিতিতে পুঁজির হামলা ঠেকাতে গেলে সংগঠিত ও অসংগঠিত শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামই কাম্য। শুধুমাত্র এই কাজটার জন্যই গড়ে তোলা যেতে পারে স্থায়ী একটা মঞ্চ যেখানে পুঁজির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের রাস্তাগুলি খুঁজে বের করা যাবে, মতামত বিনিময় করা যাবে এবং যৌথ কাজের ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করা যাবে। সংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকেরা অসংগঠিতদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে স্থায়ী ধরনের কিছু উদ্যোগও নিতে পারেন। এতে দু'পক্ষের মধ্যে সংহতি বোধ তৈরি হতে পারে। আর এই কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যাবে যদি সচেতন সংগঠকেরা, বিশেষ করে ছাত্র–যুব কর্মীরা অতীত দিনের মতো দলে দলে শ্রমিক মহল্লা গুলিতে যাতায়াত শুরু করেন। এভাবে নতুন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার উপযোগী সংগঠন ও আন্দোলনের রূপ খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেওয়া খুবই জরুরি।— ১ নভেম্বর, ২০২২, শ্রমজীবী ভাষা