বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[দেশ]
শ্রমজীবী ভাষা, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২— আজকাল প্রায় প্রত্যেকদিনই দৈনিক সংবাদপত্রে ভারতীয় জীবনবীমা নিগমের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ছে। নিগমের পক্ষ থেকে বীমাগ্রাহকদের লুব্ধ করা হচ্ছে জীবনবীমার শেয়ার কেনার জন্য – যা নাকি অতিশীঘ্রই বাজারে এসে হাজির হবে। সেই উদ্দেশ্যে বীমাগ্রাহকদের ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলা, PAN নাম্বার জীবানবীমার কাছে নথিভুক্ত করার আবেদন জানানো হচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকরই হয়তো কিছুটা অবাক লাগছে যে ভারতের সর্ববৃহৎ বীমা কোম্পানী তথা পৃথিবীর একটি অসাধারণ আর্থিক প্রতিস্থান বার্ষিক অর্থবর্ষের শেষে তার আর্থিক ক্রিয়াকর্মের উপর ধ্যান না দিয়ে খামোখা ডি-ম্যাটের উপর অত্যাধিক উৎসাহী হচ্ছে কেন? যতই সরকার পক্ষ থেকে প্রচার করা হোক না কেন যে তারা জীবানবীমার উন্নতি সাধনে উৎসাহী কিন্তু প্রকৃত অবস্থা সচেতনভাবে বিচার করলে সরকার যে একটি বিশেষ নীতির বশবর্তী হয়ে জনগনের পুঁজি কর্পোরেট জগতের হাতে তুলে দিতে বদ্ধপরিকর - সেটা বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধির প্রয়োজন নেই। ১৯৯১ সালের পর থেকে সরকারী নীতিতে যে পরিবর্তন শুরু হয়েছে – যা কিনা ২০১৪ সালের পর থেকে বিপুলভাবে প্রকট হয়েছে দক্ষিনপন্থী সরকারের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে – সেই পরিবর্তনের উৎস একমাত্র নব্য-উদারবাদ। মিশ্র অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করে নব্য উদারবাদকে নগ্নভাবে আলিঙ্গনই এ সবের মূল। গত ২০২০-২১ সালের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ভারতীয় জীবনবীমা নিগমকে শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত করার প্রস্তাব পেশ করেন এবং বর্তমান অর্থবর্ষে এই সরকার ৫-১০% শেয়ার বিক্রি করে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা আয় করার লক্ষ্যে অবিচল। এই উদ্দেশ্যে সরকার এলআইসি-র মূল্যায়ন করানো শুরু করেছে অস্বচ্ছ এবং ভুল পদ্ধতিতে। সংসদে জীবনবীমা আইনকে পরিবর্তন করে সরকারি জীবনবীমাতে বিদেশি পুঁজির লগ্নিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ যে কতটা দেশবিরোধী তথা দেশের মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর তা বিচার করতে এলআইসি-র জন্মের ইতিহাস একটু দেখে নিতে হবে। তাহলে এটাও বোঝা যাবে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবনবীমা এবং সাধারণ বীমার কর্মচারীদের প্রায় সবকটি সংগঠনই কেন সাধারণ ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে “Save The People, Save The Nation” এর লক্ষ্যে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
এলআইসি-র জন্ম ও লক্ষ্য
১৯৫৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভারতীয় জীবনবীমা নিগমের জন্ম হয়। তার আগে ১৯৫৬ সালের ১৯ জানুয়ারী তদানীন্তন নেহেরু সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে ১৫৪ টি দেশি, ১৬টি বিদেশি ইন্স্যুওরেন্স কোম্পানি ও ৭৫টি প্রভিডেন্ট ফান্ড সোসাইটির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন এবং ২০ জানুয়ারি ৪২টি তত্ত্বাবধায়ক (Custodian) নিযুক্ত করে তাদের হাতে সরকারি নিয়ন্ত্রণের ভার দেন। পরবর্তীকালে ১ লা সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬ সালে ভারতীয় জীবনবীমা নিগম প্রতিষ্ঠা করে তার হাতে এই সব কোম্পানীগুলির নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রদীপ জ্বালানোর আগে সলতে পাকানোর পর্বও আছে। ভারতের মুক্তি আন্দোলন বা স্বাধীনতা আন্দোলনের পিছনে যে জাতীয় চেতনা ক্রিয়া করছিল – বীমা জাতীয়করণের ধারণাও সেই চেতনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই জাতীয় চেতনার মূল লক্ষ্য ছিল একটি সুন্দর, সঠিক ও সুষম (fair, just and eqal) সমাজের প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৩১ সালে কংগ্রেসের করাচী অধিবেশনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে লক্ষ লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষ যদি না প্রকৃত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করে তবে তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতাও বেশি দিন স্থায়ী হবে না। - “in order to end exploitation of the masses, political freedom must include real economic freedom of the starving millions.” পরবর্তীকালে কংগ্রেস সোশালিস্ট গ্রুপের অধিবেশনে ১৯৩৪ সালে Charter of Freedom প্রকাশ পায় – “Congress finally believed it necessary to nationalise public savings and that the state must occupy the strategic position in the economy. অর্থাৎ মানুষের সঞ্চয়ের উপর ব্যাক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণই যে কাম্য এবং সেই সঞ্চয়কে জাতির গঠনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা এটা ভারতের জাতীয় আন্দোলনের সুস্পষ্ট ধারণা ছিল জহরলাল নেহেরু বিদেশী কোম্পানীর দ্বারা দেশীয় নাগরিকের সঞ্চয় তছরুপ সম্বন্ধে সাবধানতাপুর্বক ভারতবাসীকে দেশীয় কোম্পানীর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শণ করতে আবেদন করেন – “leakage of national resources is taking place in the field of insurance. I hope that all Indians will realise the importance of stopping this drain of insurance money and patronise only Indian Institutions.” স্বাধীনতার পরে ১৯৪৮ সালে সংবিধানের Constituent assembly রেসোলিউশন নেয় – “This assembly is of the opinion that steps should be taken as early as possible to initiate legislation to transfer to state ownership, control and management of the business of insurance.” ফলে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের অঙ্গীকারকে সম্মান জানিয়ে এবং ‘fair, just and equal society’ তৈরীর স্বপ্নকে সাকার করার পদক্ষেপ হিসাবেই ১৯৫৬ সালে এলআইসি-র জন্ম হয়। সংবিধানের প্রাণশক্তি Directive Principles এর ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদএ যে সামাজিক ন্যায়, সাম্য ও রাষ্ট্রের শুভঙ্করী আদর্শের কথা বলা হয়েছে এলআইসি-র জন্মকে সেই আদর্শের দিকেও একটি সঠিক পদক্ষেপ বলা যায়। তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী সি. ডি. দেশমুখ বীমা জাতীয়করণের উদ্দেশ্যে সংসদে ব্ক্তব্য রাখেন – “The nationalisation of life insurance business is a further step in the direction of more effective mobilisation of peoples’ savings……. Insurance is an essential social service which a welfare state must make available for its people…….. With profit motive eliminated and the efficiency of service made the sole criterion under nationalisation, it would be possible to spread the message of insurance as far and wide as possible.” এইভাবেই সংসদে আইন পাশ করিয়ে এলআইসি-র জন্ম হল। দেশের শিল্পায়নের জন্য অর্থসংগ্রহ ও দেশের প্রত্যন্ত কোণের মানুষটিকেও সুরক্ষা বলয়ে আনার দায়িত্ব অর্পণ করা হলো। সেই সঙ্গে সংগৃহীত অর্থের সুরক্ষার দায়িত্বও ন্যস্ত করা হলো।
এলআইসি-র সাফল্য ও অবদান
প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক যে জীবনবীমা নিগম তার উপরে প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে কি? এখনো পর্যন্ত ৩৬ লক্ষ কোটি টাকা ভারতীয় অর্থনীতিতে লগ্নি করেছে জীবনবীমা নিগম – তার মধ্যে ৮২% সরকারি নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে। প্রতি বছর ৪-৫ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নি করার মতো অর্থ উদ্ধৃত্ত হয়। ১৯৫৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা সরকারকে ডিভিডেন্ট প্রদান করেছে। ২০২০-২১ সালে প্রিমিয়াম বাবদ আয় ৪.০২ লক্ষ কোটি টাকা এবং লগ্নিযোগ্য আয় ২.৭২ লক্ষ কোটি টাকা। ৪০ কোটি মানুষকে জীবনবীমা নিগম সুরক্ষা দিতে পেরেছে। বীমার পরিভাষায় পেনিট্রেশন (মোট প্রিমিয়াম আয় ও GDP’র অনুপাত) ৩.২ যা কিনা বিশ্বের প্রামাণ্য অনুপাত ৩.৩৫ এর খুব কাছাকাছি। দাবি নিষ্পত্তি ও পলিসি সংখ্যার বিচারে ভারতীয় জীবনবীমা নিগম আজ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এলআইসি-র সম্পদ পৃথিবীর বেশ কিছু দেশের GDP’র থেকেও বেশি। নিগমের গ্রাহকদের নিয়ে যদি আলাদা একটি দেশ গঠন করা যেত তাহলে জনসংখ্যার বিচারে তার স্থান হতো পৃথিবীতে তৃতীয়- চীন ও ভারতের পরেই। সম্পদের বিচারে বিশ্বে ১০ নং বীমা প্রতিষ্ঠান ও Global written Premium (GWP)র বিচারে নিগম বিশ্বে ৫ নং স্থান অধিকার করেছে। সরকারের প্রদত্ত পাঁচ কোটি টাকার প্রেক্ষিতে আজ নিগমের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৮ লক্ষ কোটি টাকা। ১৯৫৬ সালে জাতীয়করণের সময় যেসব বীমা কোম্পানীকে সরকার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন, তাদের বীমাগ্রহকদের দাবি মেটাতেই নিগমকে সরকার প্রদত্ত পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে ফেলতে হয়েছিল। সম্প্রতি Global Inequality Report বা তার আগে Oxfam report অনুযায়ী পৃথিবীর মধ্যে ভারতবর্ষ বৈষম্যের বিচারে প্রথম স্থানাধীকারী। Global Hunger Index’এ ভারতবর্ষের অবস্থান পাকিস্তানেরও নীচে। দারিদ্র্য কী ভয়ঙ্কর প্রকট হয়ে উঠেছে এই দেশে – তা বোঝা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় পলিসি পিছু গড় প্রিমিয়াম নিগমের ক্ষেত্রে মাত্র ১৬০০০ টাকা যেখানে প্রাইভেট কোম্পানিগুলির ক্ষেত্রে এই “Ticket Size” প্রায় ৮৯,০০০ টাকা। দারিদ্র্য, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষদের কখনই নিগম পরিত্যাগ করেনি। সমাজের যে মানুষগুলির সবচেয়ে বেশি বীমার প্রয়োজন সেই দরিদ্র মানুষেরা সবসময়ই নিগমের দ্বারা সুরক্ষিত হয়ে এসেছে।
আইপিও-র যুক্তি
২০২০-২১-র বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এলআইসি-র আইপিও-র পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন –
১) নথিভুক্ত হলে এলআইসি-র বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা বাড়বে। ২) নিগমের প্রকৃত মুল্য নিরুপিত হবে এবং ক্ষুদ্র লগ্নিকারীরা শেয়ার কিনতে পারবে। ৩) শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হলে এলআইসি-র পুঁজির সংকুলান হবে। বিচার করে দেখলে তিনটি যুক্তিই অজুহাতের নামান্তর। প্রথমত প্রতিবছর সংসদে এলআইসি-র হিসাবপত্র পেশ করতে হয়- এছাড়াও IRDA তেও তার হিসাবপত্র জমা দিতে হয়। ফলে আলাদা করে তার বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। প্রতিদিনই প্রায় নথিভুক্ত কোম্পানিগুলির লাটে উঠে যাবার খবর পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরুপ YES BANK, IL&FS ইত্যাদির নাম করা যায়। দ্বিতীয়ত SEBI’র তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে মাত্র ৩% মানুষ শেয়ার বাজারে লগ্নি করেন। অর্থাৎ মাত্র ৩% মানুষের সুবিধার জন্য ১৪০ কোটি মানুষের সম্পদকে বিপদগ্রস্ত করার অর্থ কী? অর্থাৎ শ্রমিক-কৃষক তথা দরিদ্র মানুষের রক্ত জল করা অর্থের নিয়ন্ত্রণ ধনী ও কর্পোরেট জগতের হাতে তুলে দেওয়াই এর উদ্দেশ্য। মার্কসের পরিভাষায় এর নাম – “primitive accumulation of capital”। তৃতীয়ত যে সংস্থা প্রতিবছর ৪-৫ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নিযোগ্য অর্থ উৎপাদন করে তার অর্থের প্রয়োজন কোথায়? শেয়ার বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির পতন রুখতে যে সংস্থার প্রয়োজন হয় সরকারের, তার অর্থের আদৌ প্রয়োজন আছে?
প্রতিবাদ, প্রতিরোধ
সরকারের থেকে কোন টাকাই প্রায় না নিয়ে, কোন সময়েই Sovereign guarantee কে না ব্যবহার করে জীবনবীমা নিগম তার এই উন্নতির শিখরে উঠেছে একমাত্র বীমাগ্রাহকদের দ্বারা দেয় টাকার সাহায্যে। তাই সংসদে আইনের মাধ্যমে যে সংস্থা তৈরী, তাকে কর্পোরেশন না বলে Trustee বা Mutual Benefit Society বলা যায় – যে সংস্থা নিজের জন্য লভ্যাংশ কিছুমাত্র না রেখে ৫:৯৫ অনুপাতে সরকার ও বীমাগ্রাহকদের উদ্ধৃত্ত অর্থ প্রদান করে। এই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানকে কোনরকম পরিবর্তন করতে গেলে অবশ্যই সরকারকে সাধারণ মানুষের মত নিয়েই করতে হবে- বেশিরভাগ বিরোধী দলই সংসদে তাদের বিরুদ্ধে মত্ও জানিয়েছেন। আর তা যদি না করা হয় – তাহলে গণ প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করা বীমা কর্মচারী সমিতিগুলির ঐকান্তিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে যা কিনা তারা গত আড়াই দশক ধরে পালন করে এসেছেন। বীমাগ্রাহকদের প্রত্যেকটি টাকা রক্ষা করতে সারা ভারত বীমা কর্মচারী সমিতি বদ্ধপরিকর ও অঙ্গীকারবদ্ধ। তাদের আন্দোলনের কারণেই সরকার কিছুটা হলেও নার্ভাস এবং সেইজন্যই সংসদে অর্থমন্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন যে LIC’র Sovereign guarantee অটুট থাকবে এবং কোনওভাবেই সরকার তার অংশীদারীত্ব আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৭৫% এর কম এবং শেষপর্যন্ত ৫১% এর কম করবে না। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি যে কত ঠুনকো তা ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ বিল ও সাধারণ বীমা ক্ষেত্রকে বেসরকারীকরনের বিল (GIBNA Act, 2021) দিয়েই প্রমানিত হচ্ছে। আইপিও প্রতিহত করার কোনও সুযোগই তারা রাখতে চাইছে না। তাই জনগণকে লুব্ধ করার জন্য তাদের এই ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট নিয়ে অতিরিক্ত উৎসাহ। জীবনবীমা নিগম মানুষের স্বল্প সঞ্চয়কে প্রিমিয়াম হিসাবে সংগ্রহ করে তাকে Long Term Capital-এ পরিবর্তিত করেছে এবং সেই পুঁজিকে দেশ গঠনের কাজে লাগিয়েছে- যা কিনা প্রকৃত আত্মনির্ভরতার চাবিকাঠি। যেকোন অর্থনীতির মূলশক্তি যে স্বল্প সঞ্চয় তাকে দেশী বিদেশী পুঁজির হাতে তুলে দেওয়ার মধ্যে, “আত্মনির্ভর ভারতের” শুধুমাত্র আড়ম্বরই আছে। এটা অবধারিত যে Listing হলে এলআইসি-র পুঁজির বিন্যাস পরিবর্তিত হবে। জাতীয় স্বার্থের পরিবর্তে তাকে তখন নজর দিতে হবে শেয়ার হোল্ডারের লাভের উদ্দেশ্যে। স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক দ্বায়িত্ব অবহেলা করে এলআইসিস বাধ্য হবে চটজলদি লাভের দিকে লক্ষ্য রেখে নীতি নির্ধারণ করতে। অথচ আর্থিক ঘাটতি মেটানোর জন্য রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলি বিক্রির প্রয়োজন- এই ছেঁদো যুক্তির বিকল্প যে নেই তা নয়। সরকারি রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের আয় কমা সত্ত্বেও সাথে সাথে কর্পোরেট করও কমানো হচ্ছে। সম্প্রতি এই কর ৩০% থেকে ২২% করা হয়েছে। অতিমারির আবহে যেখানে আমরা দেখেছি ধনীরা আরো ধনী হয়ে উঠেছেন উল্টোদিকে দরিদ্র মানুষ আরো বেশি মাত্রায় দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছেন, সেখানে খুব কম পরিমান wealth tax এবং inheritance tax বাড়িয়েই সরকার তার ঘাটতি মেটাতে পারে। উল্লেখ্য, tax-to-GDP ratio ভারতে পৃথিবীর অন্যান্য সব উন্নত দেশের থেকে অনেক কম। কারণ প্রধান মন্ত্রী কর্পোরেটদের Wealth creator মনে করেন।
সারা ভারত বীমা কর্মচারী সমিতি জীবনবীমা নিগম বাঁচানোর লড়াইকে রাস্তায় নিয়ে যেতে প্রস্তুত। সংসদের ভিতরে পাশ হয়ে যাবার পরেও সরকার যে আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন তা কৃষক আন্দোলনের সাফল্য আমাদের দেখিয়েছে। গণআন্দোলন যে আপাত অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে তা আমরা দেখেছি। শুধু দেশের মধ্যে নয়, বিশ্বেও যে নয়া উদারবাদ পিছু হঠছে তা চিলিতে দেখা গেছে। সম্প্রতি Yale university-র অধ্যাপক গ্রেগ গ্র্যান্ডিন মন্তব্য করেছেন – “Allende is smiling. Neo – liberalism started in chile. It will end in chile”. বীমা কর্মচারী সমিতি যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তা LIC listing হওয়া মাত্র বিপুলভাবে গর্জে তো উঠবেই – আবার সাধারণ শ্রমিক কৃষকদের মতো তারাও যে একসাথে সরকারের নীতির রাজনৈতিক বদল চান এই অনুভব নিয়েই একইভাবে তারা প্রতিবাদে সামিল হবেন দেশজোড়া ৪৮ ঘন্টা ধর্মঘটে। এলআইসিকে বাঁচানোর লড়াই একদিকে যেমন দেশ বাঁচানোর লড়াই অন্যদিকে তেমনিই দেশের মানুষকে বাঁচানোরও লড়াই – SAVE THE PEOPLE, SAVE THE NATION.