বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[দেশ]

[দেশ]

সীতারাম ইয়েচুরির প্রতি শ্রদ্ধা

সীতারাম ইয়েচুরির প্রতি শ্রদ্ধা

সঞ্জয় পূততুণ্ড

photo

দেশের বামপন্থী আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা সিপিআই(এম) দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি প্রয়াত হয়েছেন। দিল্লির এইমস হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১২ নভেম্বর তিনি বিদায় নিয়েছেন‌ অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই।

অন্ধ্রপ্রদেশের উচ্চ মাধ্যবিত্ত পরিবারের তাঁর জন্ম। স্কুলের জীবন শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য সর্বভারতীয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেন। প্রথম শ্রেণীতে অর্থনীতির স্নাতক হওয়ার পর সীতারাম ইয়েচুরি জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। জরুরির অবস্থা সময় তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে তিনি ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পার্টি সদস্যপদ অর্জন করেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি বহুজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে করেছিলেন। মাত্র তিরিশ বছরে তিনি সিপিআই(এম) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু অর্থনীতি নয় রাজনীতি ও মতাদর্শগত চর্চায় তিনি যথেষ্ট গভীরতা অর্জন করেন। হিন্দুত্ববাদের বিপদ সম্পর্কে গভীর বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ লেখাতে। তিনি পার্টির ইংরেজি মুখপত্র পিপলস ডেমোক্র্যাসি পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ১০ বছর। পূর্ব ইউরোপের সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পর যে দলিল ১৪তম পার্টি কংগ্রেসের গৃহীত হয় তার খসড়া রচনা করেছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে ২১তম পাটি কংগ্রেস থেকে তিনি সিপিআই(এম) দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

দীর্ঘ সময় তিনি পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব করেন পালন করেন। এই দায়িত্ব রূপায়ন করতে গিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই কাজে তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পর পৃথিবীর বহু দেশ থেকে শোকবার্তা এসেছে।
পশ্চিমবাংলায় থেকে তিনি রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ হিসেবে তিনি সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। রাজ্যসভায় তাঁর বক্তব্য যথেষ্ট গুরুত্ব পেত। ২০১৭ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ সংসদের সম্মান অর্জন করেছিলেন।

শুধুমাত্র কমিউনিস্ট বা বামপন্থী আন্দোলন নয়, দেশে একদলীয় আধিপত্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় ব্যাপকতম ঐক্য গড়ে তুলতে তিনি আঞ্চলিক ও সর্বভারতীয় দলগুলি সঙ্গে সম্পর্ক করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে বিজেপি বিরোধী জোট গড়ে তুলতে তিনি অগ্রগণ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। রাজনৈতিক লক্ষ্যে অবিচল থেকে তাঁর নমনীয়তা এই কাজে সাহায্য করেছে। সে কারণে তার প্রয়াণ কেবলমাত্র বামপন্থী আন্দোলনের কাছেই শূন্যতা সৃষ্টি করেছে এমন নয় দেশের গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামেও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতি হল।
তিনি যে সময় পার্টির নেতৃত্বের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সে সময় দেশের বামপন্থী আন্দোলন যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। কিন্তু পূর্ব ইউরোপ ও সোভিয়েতে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পরবর্তী সময় সারা পৃথিবীতে এবং দেশে শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন তথা বামপন্থী আন্দোলন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই কঠিন অবস্থাতেও তিনি সর্বভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার ভূমিকায় দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন।

তাঁর প্রয়াণে চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা, নিকারাগুয়া, ভেনেজুয়েলা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শোকবার্তা পাঠানো হয়েছে। নেপালের দুই কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে কেপি ওলি এবং পুষ্পকুমার দাহাল শোক জ্ঞাপন করে বলেছেন, নেপালের রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে গণতন্ত্র গড়ে তোলার সংগ্রামে তাঁরা সীতারাম ইয়েচুরির প্রভূত সহযোগিতা পেয়েছেন। সিরিয়া, তুরস্ক, গ্রীস, জাপান, স্পেন, পর্তুগাল, বাংলদেশের কমিউনিস্ট ও ওয়ার্কার্স পার্টিগুলি তাঁর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছেন। শ্রীলংকার জনতা বিমুক্তি পেরুমালা এবং পাকিস্তানের আওয়ামী ওয়ার্কাস পার্টি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শ্রমজীবী ভাষাও এই সময় তার প্রয়াণকে বড় আঘাত বলে মনে করে।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.