বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[দেশ]
আরএসএস এবং বিজেপি ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করার জন্য তৎপর হয়েছে। যদিও বিষয়টি অনেক বছর ধরেই তাদের অ্যাজেন্ডাতে ছিল, ‘হিন্দু, হিন্দি, হিন্দুস্থান’-এর মতোই পুরোনো। দেশটিকে প্রকৃত অর্থেই হিন্দুরাজ্য করে তোলার একটি প্রচেষ্টা এবং সাধারণ মানুষকে সুচতুর ভাবে বোঝানো যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু না হলে সংবিধানের অবমাননা হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন যে তাঁরা এটা করতে চাইছেন মুসলমান কন্যাদের জন্য, যদি দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হয় তবে প্রকারান্তরে সংখ্যালঘুরাই এর সুফল ভোগ করবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব, বিধিটি কার্যকর করার ন্যায্যতা কতটা তার বিশ্লেষণ করব, সংবিধানের সঠিক নির্দেশ কি এবং বিজেপি-আরএসএস-এর উদ্দেশ্যই বা কি তা বুঝে নেব।
সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুসারে ভারত একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতির সংমিশ্রণে গঠিত এই উপমহাদেশে বহু ধর্ম এবং গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন তাদের নিজস্ব বিশ্বাস, রীতিনীতি, ধর্ম এবং ঐতিহ্য অনুসরণ করে। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যই মূল ভারতভাবনা। সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলি ধর্ম-ভাষা-জাতপাত-লিঙ্গ নির্বিশেষে সমস্ত ভারতবাসীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের মতো আমাদের দেশেও আইন সাধারণভাবে দু’ ধরনের— ফৌজদারি বা ক্রিমিনাল এবং দেওয়ানি বা সিভিল। দেশের ফৌজদারি আইন প্রধানত ইন্ডিয়ান পেনাল কোড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে দেশের সমস্ত নাগরিক এই আইনের অধীন। অপরাধমূলক কাজ করলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী যাই হোক না কেন— সকলের জন্য একই ফৌজদারি আইন প্রযোজ্য হয় এবং সেই আইন মোতাবেক সকলের অভিন্ন বিচার এবং সাজা হয়ে থাকে।
ভিন্নতা দেখা যায় ব্যক্তিগত বা পারিবারিক আইনগুলোতে অর্থাৎ দেওয়ানি বিধিতে। ব্যক্তিগত আইন বা পারিবারিক আইন ভারতীয় নাগরিকদের বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, রক্ষণাবেক্ষণ, উত্তরাধিকার প্রভৃতির মতো ব্যক্তিগত ক্ষেত্রগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই আইনগুলো মূলত বিভিন্ন সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক রীতিনীতি দ্বারা প্রভাবিত। হিন্দুদের যেমন পৃথক পারিবারিক ব্যক্তিগত আইন আছে, ঠিক তেমনই মুসলমান, খ্রিস্টান, পার্সি, ইহুদী, শিখ এবং অন্যান্যদেরও নিজস্ব ব্যক্তিগত আইন আছে। তাছাড়া ভারতের বিভিন্ন অংশে বসবাসকারি আদিবাসীদেরও নিজস্ব এবং নির্দিষ্ট পারিবারিক আইন আছে; ব্রিটিশ, পর্তুগীজ এবং ফরাসীদের দ্বারা শাসিত অতীতের কলোনিগুলিতে ব্রিটিশ, পর্তুগীজ এবং ফরাসীদের আইনগত ঐতিহ্যের কিছু প্রভাব আজও বিদ্যমান এবং কার্যকর আছে।
ব্যক্তিগত আইনের উৎপত্তি
ভারতে ব্যক্তিগত আইনের ধারণা বহু শতাব্দীর পুরোনো। মোগল আমলে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী বা জাতির নিজস্ব পারিবারিক আইন ছিল। মোগল সম্রাটরা মুসলমান ছাড়া অন্য কোনও ধর্মীয় গোষ্ঠীর বা জাতির পারিবারিক আইনে কোনও পরিবর্তন করেন নি। মোগল আমল থেকে চলে আসা এই নীতিকে সামনে রেখে ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭২ সালে ব্রিটিশ ভারতে ‘ব্যক্তিগত আইন’ নীতি চালু করেন। এই নীতি মোগল আমলের মতো হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য পৃথক ব্যক্তিগত আইনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৮৫৯ সালে মহারাণীর ঘোষণায় বলা হয় যে, ধর্মীয় বিষয়ে কোনওভাবেই হস্তক্ষেপ করা হবে না। তাই যখন ফৌজদারি আইনগুলো ‘সংহিতাবদ্ধ’ করা হয়েছে এবং দেশের সকল নাগরিকের জন্যই সাধারণ হয়ে উঠেছে, তখন ব্যক্তিগত আইনগুলি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য তাদের নিজস্ব পৃথক কোড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। পরবর্তীকালে হিন্দু পারিবারিক আইন, মুসলিম পারিবারিক আইন, খ্রিস্টান পারিবারিক আইন, পার্সি পারিবারিক আইন এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত আইনগুলিকে ‘সংরক্ষিত’ এবং ‘সংহিতাবদ্ধ’ করা হয়েছে।
স্বাধীনতা-উত্তর ভারত, সংবিধান ও দেওয়ানি বিধি
১৯৪৭ সালে দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে স্বাধীন হল ভারত। হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে বিভেদের বীজ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বপন করেছিল তারই ফলশ্রুতি এই বিভাজন— ভারত বা হিন্দুস্থান আর পাকিস্তান। কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে এই দেশভাগ অখন্ড ভারতের আপামর জনসাধারণ মেনে নিতে পারেন নি। অসংখ্য হিন্দু যেমন পাকিস্তান সীমানানির্দিষ্ট দেশ থেকে ভারতে চলে আসতে পারেন নি, তেমনই অগুণতি মুসলমান পরিবার পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি ত্যাগ করে চলে যেতে পারেন নি পূর্ব বা পশ্চিম পাকিস্তানে। হিন্দু-মুসলমানের মিলিত বাসভূমি ভারতে সংবিধান রচনার প্রাক্কালে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ভারতের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মৌলিক অধিকারের একটি তালিকা তৈরি করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয় মৌলিক অধিকার বিষয়ক উপসমিতিকে যার সভাপতি ছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। এই উপসমিতি অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে লিপিবদ্ধ করেন অ-ন্যায়বিচারযোগ্য মৌলিক অধিকার হিসেবে। যদিও উপসমিতির সকল সদস্য এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হননি। কারও কারও মত প্রকাশিত হয়েছিল যে, একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে সুরক্ষিত করা মৌলিক অধিকারের সুযোগের মধ্যে পড়ে না। ভিন্নমতের প্রবক্তারা বলেছিলেন অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে লাগু করা উচিত।
১৯৪৮ সালে আম্বেদকার গণপরিষদে আলোচনার জন্য খসড়া সংবিধান পেশ করেন। সেই খসড়া সংবিধানে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিধান খসড়া অনুচ্ছেদ ৩৫ হিসাবে রাষ্ট্রীয় নীতির নির্দেশমূলক নীতিতে (যা আদালত দ্বারা প্রয়োগযোগ্য নয়) স্থান পায়। ১৯৪৮ সালের ২৩ নভেম্বর গণপরিষদে আলোচনার জন্য বিষয়টি উপস্থাপিত হয় এবং বিতর্ক শুরু হয়। আম্বেদকার এই বিতর্কে অংশগ্রহণ করে বলেন, ‘বিবাহ, উত্তরাধিকার ক্ষেত্রগুলি ব্যতীত দেশে ইতিমধ্যে একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিদ্যমান আছে। এই দুটি ক্ষেত্রই এর লক্ষ্য।’ তিনি আরও বলেছিলেন যে, অভিন্ন নাগরিক কোড শুধুমাত্র ঐচ্ছিক। এটি নির্দেশমূলক নীতিমালায় (directive principles) থাকার কারণে, রাষ্ট্র অবিলম্বে এই বিষয়ে আইন আনতে বাধ্য নয়, এটি যে কোনও সময়ে কার্যকর করা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন যে, অনুচ্ছেদটি কেবলমাত্র প্রস্তাব করছে যে, রাষ্ট্র একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রচলন করার চেষ্টা করবে, এটি সমস্ত নাগরিকের উপর চাপিয়ে দেবে না। আম্বেদকার আরও উল্লেখ করেছিলেন যে, মুসলিমদের ব্যক্তিগত আইন শরিয়ত প্রয়োগ আইন ১৯৩৭ চালু হওয়ার আগে দেশের অনেক অংশে মুসলমানরা এদেশের হিন্দু আইন মোতাবেক চলতেন। প্রস্তাবিত প্রাথমিক সংশোধনীর প্রতিক্রিয়া বিতর্কে আম্বেদকার যুক্তি দেন যে, এই বিধানটি ভবিষ্যতের আইনসভাগুলিকে এরকম আইন প্রণয়নের অনুমতি দেবে তখনই, যখন তা সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের সম্মতি পাবে। এরপরে খসড়া ধারা ৩৫ সম্পর্কে ভোট নেওয়া হয় এবং গণপরিষদ অনুচ্ছেদটি গ্রহণ করে, যা পরে ভারতের সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ হিসাবে পুনরায় সংখ্যায়িত হয় এবং ধারাটি এভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়, “ভারতের ভূখণ্ড জুড়ে রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য অভিন্ন নাগরিক আইন সুরক্ষিত করার চেষ্টা করবে।”
একবার একটি আইন সংসদে তৈরি হয়ে গেলে, রাজ্যসরকারগুলির সেই আইন পরিবর্তনের বিশেষ কোনও সুযোগ থাকে না। তদুপরি, সংবিধানের ২৫৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে এই ধরনের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সম্মতির প্রয়োজন হয়। সুতরাং প্রধানত কেন্দ্রীয় সরকারেরই ক্ষমতা আছে কোনওরকম আইন তৈরি করার। যদিও এখনও পর্যন্ত অভিন্ন দেওয়ানি বিধির জন্য কোনও খসড়া বা মডেল নেই, সংবিধান প্রণেতারা কল্পনা করেছিলেন যে, এটি এমন একটি অভিন্ন আইন হবে যা বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, দত্তকগ্রহণ, উত্তরাধিকার এবং এই ধরনের বিষয়গুলির ক্ষেত্রে প্রতিটি ধর্মের বা গোষ্ঠীর স্বতন্ত্র ব্যক্তিগত আইনগুলোকে প্রতিস্থাপন করবে।
স্বাধীন ভারতে অনেকগুলি ব্যক্তিগত আইন প্রচলিত আছে, তার মধ্যে কয়েকটির উল্লেখ প্রয়োজন। হিন্দু ব্যক্তিগত আইন চারটি বিলে লিপিবদ্ধ আছে: হিন্দু বিবাহ আইন, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, হিন্দু সংখ্যালঘু এবং অভিভাবকত্ব আইন এবং হিন্দু দত্তক ও রক্ষণাবেক্ষণ আইন। এই আইনে ‘হিন্দু’ শব্দটি শিখ, জৈন এবং বৌদ্ধদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। আবার Anand Marriage Act 1909 এর মাধ্যমে শিখ সম্প্রদায়ের জন্য আলাদাভাবে বিবাহ পদ্ধতি চালু আছে। শরিয়ত মুসলমানদের ঐসলামিক রীতি অনুযায়ী আচার অনুষ্ঠান অনুসরণ করার অনুমতি দেয়, বিবাহ, তালাক, সন্তানের হেফাজত বা উত্তরাধিকার— এইসব ক্ষেত্রে। কিন্তু এই আইনের ক্ষেত্রেও কোনও অভিন্ন প্রযোজ্যতা নেই। শরীয়ত আইন জম্মু ও কাশ্মীরে প্রযোজ্য নয়। সেখানকার মুসলমানরা তাদের প্রথাগত আইনদ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়া, ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আদিবাসী এবং জনজাতি গোষ্ঠীগুলি তাদের ধর্ম নির্বিশেষে নিজস্ব প্রচলিত আইনগুলি মেনে চলে।
সংবিধানের রাষ্ট্রীয় নীতির নির্দেশমূলক নীতিগুলির অন্তর্গত অনুচ্ছেদ ৪৪ অনুসারে ভারত রাষ্ট্র দেশের সমগ্র অঞ্চল জুড়ে নাগরিকদের জন্য একটি অভিন্ন নাগরিক কোড সুরক্ষিত করার চেষ্টা করবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি রাজ্যসরকারগুলি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ভারতের বৈচিত্রকে সম্মান করার জন্য ধর্মভিত্তিক নাগরিক কোডের অনুমতি বজায় রেখেছে। এখানে আমরা উল্লেখ করতে পারি যে, সংবিধানের প্রণেতারা অনুচ্ছেদ ৪৪-এ ‘ইউনিফর্ম’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, ‘সাধারণ’ শব্দটি নয়, কারণ, ‘সাধারণ’ মানে ‘সকল পরিস্থিতিতে এক এবং একই’, যখন ‘ইউনিফর্ম’ মানে ‘অনুরূপ পরিস্থিতিতে একই’।
ভারতের সংবিধানের মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র এবং বহুত্বের ধারণা। সংবিধানের ৪৪ ধারায় যেটা বলা ছিল তা গণতন্ত্রের কথা ভেবেই বলা ছিল। কিন্তু আরএসএস-বিজেপি এই ভাবনা বা ধারণাটিকে সুচতুরভাবে অন্যপথে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। তীব্র মুসলমান বিদ্বেষের দ্বারা পরিচালিত হয়ে মুসলমানদের ছোট করা বা খাটো করা তাদের লক্ষ্য। মুসলমানদের একাধিক (চারটে পর্যন্ত) বিবাহের অধিকার আছে। কিন্তু বর্তমানে প্রথাটি এই সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেও উঠে গেছে কারণ, এটি ব্যক্তি এবং পারিবারিক জীবনে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি করে। অথচ যেভাবে এটিকে সাধারণ মানুষের কাছে প্রচার করা হচ্ছে তা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য। প্রচার করা হচ্ছে, মুসলমানদের চারটে বিয়ে, চল্লিশটি বাচ্চা অর্থাৎ প্রবল জনসংখ্যাবৃদ্ধি। কিন্তু বাস্তব চিত্রটি ঠিক এমন নয়। বহু হিন্দুর জীবনও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে একটি বিবাহে সীমাবদ্ধ নয়। ‘হিন্দু খতরে মে হ্যায়’ আরএসএস–বিজেপির এই প্রচারও ভ্রান্ত। তাছাড়া, বিবাহ, তালাক বা এই সংক্রান্ত কোনও ব্যক্তিগত আইনে পরিবর্তন আনতে গেলে বারংবার দেখা গেছে যে মৌলবাদী বা প্রাচীনপন্থীরা প্রবলভাবে বিরোধিতা করেছেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার দায়িত্ব সংখ্যাগুরুদের উপর বর্তায়, কিন্তু বর্তমান ভারতে খাদ্য, পোষাক প্রভৃতির কারণে সংখ্যালঘুরা যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রয়োগে তা নিরসন করা যাবে কি? প্রশ্ন থেকেই যায়।
জোর করে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ বলে কোনও আইন চাপিয়ে না দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর পারিবারিক আইনগুলো নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। ১৯৫৫-৫৬ সালে হিন্দু পারিবারিক আইনে কিছু পরিবর্তন হয়েছে, স্পেশাল ম্যারেজ এ্যাক্ট সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ায় বিবাহ সংক্রান্ত আইনি জটিলতা অনেকাংশেই লাঘব হয়েছে; পণপ্রথাবিরোধী আইন, গৃহস্থ হিংসা নিরোধক আইন সকল সম্প্রদায়ের মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়েছে, তিন তালাক প্রথা সম্পূর্ণভাবে রদ না করা গেলেও তাৎক্ষণিক তিন তালাক রদ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু মেয়েদের জন্য অধিকারগুলো সব গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে সমান নয়। Right to equality, জন্মপরিচয়হীন শিশু, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনগুলি এখনও ভিন্ন ভিন্ন। আমাদের খুঁজে দেখতে হবে যে এই বিষয়ক আইনগুলির সংশোধন কীভাবে সম্ভব। দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-কথোপকথন, নারীদের ভূমিকা ও আন্দোলন ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে নিয়ে আসতে পারে।