বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[দেশ]
রামমন্দির নির্মাণ, সংবিধানের ৩৭০ ধারার বিলোপ সাধন এবং সারা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রণয়ন হল ভারতীয় জনতা পার্টি ও সংঘ পরিবারের রাজনৈতিক কর্মসূচির অভিমুখ। দেশব্যাপী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিভাজনের রাস্তায় হেঁটে এবং পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ইতিমধ্যেই তারা সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং সুপ্রিম কোর্টের বিতর্কিত রায়ে বলীয়ান হয়ে রামমন্দির নির্মাণ করেছে। ধর্মনিরপেক্ষতার মূল সাংবিধানিক ধারাকে লঙ্ঘন করে প্রধানমন্ত্রী অযোধ্যায় মহা ধুমধাম করে রামমন্দির উদ্বোধন করেছেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হয়েই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের লক্ষ্যে ২০১৬ সালেই ২১তম আইন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রকাশিত ওই সুপারিশ মনঃপুত না হওয়ায় ফের পর্যালোচনার ভার ২২তম আইন কমিশনের উপর ন্যস্ত হয়েছে। কিন্তু সারা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি অবিলম্বে প্রণয়নের অনিশ্চয়তা থাকায় আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ডে তথাকথিত ইউনিফর্ম সিভিল কোড বিল ২০২৪ উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় ৬ ফেব্রুয়ারি পেশ করা হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি বিশদ আলোচনার দাবি অগ্রাহ্য করে বিলটিকে বিধানসভার কোনও কমিটির কাছে প্রেরণ না করে ওই দিনই বিলটি পাস হয়ে যায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে। দেশের মধ্যে প্রথম উত্তরাখণ্ডেই এমন আইন প্রণীত হল। এই আইনটি কতটা সংবিধানের ‘অনুসারী ও অভিন্ন’ এবং কতটাই বা ‘দেওয়ানি বিধি’র শর্তের অনুসারী তা আলোচিত হবে।
(২)
সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ের নির্দেশমূলক নীতি সমূহের ৪৪ ধারায় রাষ্ট্রকে সারা দেশের জন্য এক অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের জন্য উদ্যোগী হওয়ার কথা বলা হয়েছে। (The state shall endeavour to secure for the citizens a uniform civil code throughout the territory of India.)। এই ধারায় দুটি বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে। প্রথমত, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সারা দেশের জন্য প্রণয়ন এবং দ্বিতীয়ত, সকল নাগরিককে এই বিধির অধীনে অন্তর্ভুক্তির জন্য রাষ্ট্রের সর্বাত্মক প্রয়াস।
উত্তরাখণ্ডে প্রণীত এই আইনটি সংবিধানের নির্দেশকে মান্যতা দেয়নি। প্রথমত, সংবিধানের নির্দেশ হল সারা দেশের জন্য বিধিটি প্রণয়নের। আলোচ্য বিধিটি শুধুমাত্র দেশের একটি অঙ্গরাজ্যের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। কোনও রাজ্য সরকার সারা দেশের জন্য আইন প্রণয়নের অধিকারী নয়। অথচ সংবিধানের নির্দেশ হল বিধিটি সারা দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে হবে। দ্বিতীয়ত, আইন প্রণয়নের পূর্বে সকল নাগরিকের সঙ্গে সর্বাত্মক আলোচনা করার সাংবিধানিক নির্দেশকে উত্তরাখণ্ড সরকার মান্যতা দেয়নি। বস্তুত কোনও রাজ্য সরকারের সেই পরিসরও নেই। কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার এই বৃহৎ আলোচনা করতে সক্ষম। আর সেই উদ্দেশ্যই ২১ তম আইন কমিশন এক আলোচনা পত্র সরকারের কাছে পেশ করে। একটা ঐক্যমতে উপনীত হওয়ার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও করেছিলেন। কিন্তু সরকার সেই সুপারিশকে মান্যতা না দিয়ে ২২তম আইন কমিশনকে সেই একই দায়িত্ব দিয়েছেন।
উত্তরাখণ্ড সরকারের দাবি, তারা ৬০ হাজার মানুষের মতামত নিয়ে আইনের খসড়াটি প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু এই খসড়ার উপর জনমত যাচাই করা হয়নি। আগেই উল্লেখিত হয়েছে, বিধানসভায় বিলটি পেশ করার পর সদস্যদের যথেষ্ট বিতর্কের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে সংসদীয় প্রথা অনুযায়ী সভার কোনও কমিটির কাছে বিশদ পর্যালোচনার জন্য প্রেরণ না করে তড়িঘড়ি করে বিলটি পাস করানো হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতিও কালক্ষেপ না করে বিলটিতে অনুমোদন দিয়েছেন। লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে এহেন তৎপরতার পেছনে বিশেষ অভিসন্ধি আছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা যে অভিমত প্রকাশ করেছেন তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে অভিন্ন দেওয়ানি আইনের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এক বাড়িতে যদি এক সদস্যের জন্য এক নিয়ম এবং অন্য সদস্যের জন্য ভিন্ন নিয়ম থাকে তবে পরিবারটি ঠিক ভাবে চলতে পারে না। তেমনি দেশও দুই রকম বিধি দিয়ে সঠিক ভাবে পরিচালিত হতে পারে না’।
প্রধামন্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসা, যদি প্রতিটি রাজ্য উত্তরাখণ্ডের মতো আইন প্রনয়ণ করতে থাকে তবে তা সারা দেশের জন্য অভিন্ন আইন হিসাবে কীভাবে গণ্য হতে পারে? এর ব্যাখ্যা প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউই দিতে পারবেন না। লক্ষ্যণীয়, তপশিলি জনজাতিদের এই আইনের আওতায় রাখা হয়নি এই যুক্তিতে যে, এই সংযুক্তি জনজাতিদের প্রথা ও বিশ্বাসের উপর আঘাত হানবে। যুক্তিটি যথার্থ। কিন্তু এই যুক্তিতে কেন অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ভিন্ন ভিন্ন প্রথায় বিশ্বাসীদের আইনের আওতার বাইরে রাখা হল না তার ব্যাখ্যা মেলে না। সংবিধানের ৩৭১ নম্বর ধারায় এরকম অনেক ব্যতিক্রম আছে যা পরে আলোচিত হবে। এখানে যেটা স্পষ্ট করা প্রয়োজন তা হল, উত্তরাখণ্ডের তথাকথিত ‘অভিন্ন’ দেওয়ানি বিধিটি ‘অভিন্ন’ নয়।
(৩)
উত্তরাখণ্ডের এই আইনটিকে দুটি কারণে ‘সিভিল’ হিসেবে গণ্য করা যায় না। এক, এই আইনটির বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি বিধি সমূহ ‘হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৯৫৫’-র হুবহু নকল। এই আইনটিকে ‘সিভিল কোড’ বলা যায় না। অথচ এই আইনে বিবাহের নিষিদ্ধ সম্পর্ক, বিবাহবিচ্ছেদ, দাম্পত্য অধিকার সংক্রান্ত বিধিগুলিকে রাজ্যের সব সম্প্রদায়ের উপর আরোপ করা হয়েছে। দেশের অনেক রাজ্যে খুড়তুতো ভায়ের সঙ্গে বিবাহে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। আইনটি তাই স্ববিরোধিতা দোষে দুষ্ট। উপজাতিদের ক্ষেত্রে প্রথার মান্যতা থাকলেও দেশের হিন্দুদের ক্ষেত্রে প্রথাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এই স্বীকৃতির ভার আমলাতন্ত্রের উপর অর্পিত হয়েছে। এছাড়াও, বিবাহবিচ্ছেদ বা বিবাহ বাতিলের আইনি নথি থাকা সত্ত্বেও নতুন আইনে সেই তথ্যকে নিবন্ধিত করা আবশ্যিক করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। দুই প্রাপ্তবয়স্ক যুগলের বিবাহ বন্ধন ছাড়া এক সঙ্গে বসবাসের (লিভ ইন রিলেশনশিপ) উপরও শর্ত আরোপ করে বলা হয়েছে যে, এই সম্পর্ক এক মাসের বেশি হলে সেই সম্পর্ককেও নিবন্ধিত হতে হবে। বহু বিবাহ (Polygamy) ও হালালা (Halala) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাধারণভাবে এতে আপত্তির কোনও কারণ নেই। আপত্তির বিষয় হল, বিধিটি মুসলিমদের লক্ষ্য করেই প্রণীত হয়েছে। কিন্তু যে সত্যটি স্বীকার করা হয়নি তাহল শুধুমাত্র মুসলিম সমাজেই বহুবিবাহ প্রথা চালু নেই। মুসলিমদের মধ্যে যেখানে এই প্রথার হার ১.৯ শতাংশ, হিন্দুদের মধ্যে তা ৩ শতাংশ, উপজাতিদের মধ্যে ২.৪ শতাংশ, তপশিলি জনজাতিদের মধ্যে ২.৪ শতাংশ এবং ওবিসিদের মধ্যে ১.২ শতাংশ। সব সম্প্রদায়েই এই হার নিম্নগামী। কুৎসিত ‘হালালা’প্রথার বিরুদ্ধে শামিমা বেগমের সুপ্রিম কোর্টের আবেদন প্রমাণ করে যে, এই সব প্রথার বিরুদ্ধে মুসলিম–সহ সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বহুবিবাহ সহ এই ধরনের বিবাহের নিম্নগামী হার সেই সচেতনতারই ফলশ্রুতি। ২১তম আইন কমিশন তাই যথার্থ ভাবেই মন্তব্য করেছিলেন যে ‘ব্যক্তিগত’ আইন সংস্কারের জন্য চাই বৃহত্তর পরিসরে মত বিনিময়। বহু যুগের সংস্কার শুধু মাত্র আইন প্রনয়ণ করে দূরীভূত করা যায় না।
দ্বিতীয় যে কারণের জন্য বিলটিকে সিভিল বলায় আপত্তি আছে তা হল, প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে কোনও শর্তের খেলাপ হলে শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে। বিবাহ নিবন্ধীকরণ শুধু আবশ্যিক করা হয়েছে তাই নয়, নিবন্ধীকরনের সময়সীমা ২০১০ সালের পূর্ববর্তী (Retrospective) সময় পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। শর্তের খেলাপ হলে দশ হাজার থেকে পঁচিশ হাজার টাকার জরিমানা শুধু ধার্য করা হবে তাই নয়, আমলাদের তদন্তে যদি কোনও বক্তব্য মিথ্যা প্রতিভাত হয়ে থাকে তবে তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডও হতে পারে।
সর্বশক্তিমান আমলাতন্ত্র বিবাহ নিবন্ধীকরণে অসম্মতি জানালে কোনও আদালতে তার বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না - আপিল করতে হবে রেজিষ্টার জেনারেলের কাছে। একটি সংস্কার মূলক আইনে মানুষের এমন হেনস্থা অকল্পনীয়। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, লিভ ইন রিলেশনের নিবন্ধীকরনের সময় নিবন্ধক যে সংক্ষিপ্ত তদন্ত করবেন সেই তদন্তে যদি কিছু সন্দেহজনক বিষয় তন্তকারীর নজরে আসে, তবে তিনি পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অবগত করবেন। দুই প্রাপ্তবয়স্ক যুবক–যুবতীর উপর এমন নজরদারি সংবিধানে প্রদত্ত পছন্দের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং মানাধিকার লঙ্ঘনের এক নির্লজ্জ উদাহরণ। বস্তুত, সংবিধানে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রয়নের যে নির্দেশিকা আছে তার অভিমুখ হল ন্যায্যতা, বৈষম্যহীনতা এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের ও বহুত্ববাদের পরম্পরা রক্ষা। উত্তরাখণ্ডের প্রণীত আইনটি এই নীতি সমূহকে সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘন করেছে। উল্লেখ্য যে, রাজ্যে প্রণীত আইনটি রাজ্যে বসবাসকারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হওয়ার কথা। কিন্তু আইনে বসবাসকারীদের তালিকায় অস্থায়ী ভাবে বা চাকুরির বদলির কারণে কিছু সময়ের জন্য রাজ্যে যাঁরা বসবাস করবেন, তাদের ক্ষেত্রেও আইনটি কার্যকরী করার সংস্থান আছে। এটি চরম অগণতান্ত্রিক ও সংবিধান বিরোধী। অনুরূপ ভাবে বিবাহিত যুগলের একজনও যদি উত্তরাখণ্ডের নাগরিক হন এবং তারা ভিন্ন রাজ্যে বসবাস করেন তবে তাঁদের ক্ষেত্রেও আইনটি কার্যকর হবে। রাজ্যের বাইরেও রাজ্যের আইন কার্যকর হওয়ার সংস্থান সম্পূর্ণত সংবিধান বিরোধী। এমনি অনেক সংবিধান বিরোধী ধারা এই নতুন আইনে প্রণীত হয়েছে যার বিশদ আলোচনা ভিন্ন পরিসরে হওয়া প্রয়োজন।
(৪)
আগেই উল্লেখিত হয়েছে যে তপশিলি উপজাতিদের প্রথা ও বিশ্বাসের কথা মাথায় রেখে এই নয়া আইনে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সংবিধান প্রণেতারা দেশের বহুত্বের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরাম (৩৭১ জি), নাগাল্যান্ড (৩৭১ এ), অসম (৩৭১ বি), মণিপুর (৩৭১ সি), অন্ধ্রপ্রদেশ (৩৭১ ডি), অরুণাচল প্রদেশ (৩৭১ এইচ) ধারায় রাজ্যগুলির প্রথা ও বিশ্বাসকে মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ষষ্ঠ তপশিল ভুক্ত রাজ্যগুলির আঞ্চলিক কাউন্সিলগুলির ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের অধিকারী নয়। স্বাভাবিক প্রশ্ন হল, সংবিধান যেখানে দেশের বৈচিত্র্যকে মাথায় রেখে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থার সংস্থান করেছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী কীভাবে এক দেশ এক আইন এবং এক পরিবার এক নিয়ম করার নিদান দেন ? এটি কি সংবিধান সম্মত হতে পারে? ২১ তম আইন কমিশন বিষয়টি গভীর ভাবে পর্যালোচনা করে সঠিক ভাবেই মন্তব্য করেছিলেন, ‘অভিন্ন বিধির সম্ভাব্যতার পথে প্রথম বাধা হল সংবিধানের ষষ্ঠ তপশিল ও ৩৭১ ধারা। কমিশনের পরামর্শ ছিল, বৃহত্তর আলোচনার মাধ্যমে পারিবারিক চালু আইনগুলি সংস্কার সাধন। স্মরণ করা প্রয়োজন যে হিন্দু কোড বিলের সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৪১ সালে গঠিত ‘হিন্দু ল রিফর্মস কমিটি’গঠনের মধ্য দিয়ে। এই কমিটির ধারাবাহিকতায় ড: আম্বেদকর হিন্দু কোড বিল সংসদে পেশ করেন। বহু বিতর্কের পর ১৯৫৫–৫৬ সালে শাস্ত্রীয় হিন্দু প্রথাগুলি বিধিবদ্ধ রূপ পায়। দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হলেও এখনও এই আইনের পূর্ণ সংস্কার সম্পূর্ণ হয়নি। হিন্দু অবিভক্ত পরিবার (Hindu Undivided Family)) বিশেষ সুবিধা পায়, যার সংস্কারও প্রয়োজন। দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পারিবারিক আইনগুলিও এই ধারায় সংস্কার সম্ভব।
প্রয়োজন হল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টি করা। এই আস্থার পরিবেশ তৈরি হলে খোলামনে আলোচনার পরিসর সৃষ্টি হবে এবং বহুদিন ধরে চলে আসা বিশ্বাসগুলির যুক্তিসম্মত সংস্কার সম্ভব হবে। বারংবার স্মরণ করা দরকার যে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির অর্থ এক দেশ এক আইন নয়— বৈষম্যহীন আইন। আসন্ন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে মানুষকে মৌল সমস্যাগুলি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এই বিভেদমূলক আইন তৈরি করা হয়েছে। আইনটি সম্পূর্ণত সংবিধান এবং দেশের বহুত্বের ধারণার পরিপন্থী। স্বভাবতই এই আইনের বিরুদ্ধে মানুষ সোচ্চার হয়েছেন। যথার্থ ভাবেই দাবি উঠেছে যে, বৃহত্তর আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করে সমস্ত সম্প্রদায়ের মতামতগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে একটা যুক্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো দরকার। এবং এভাবেই সংবিধান নির্দেশিত পথে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের কাজ সম্পূর্ণ করা যাবে।