বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[দেশ]

[দেশ]

ভারত ও চীনে অর্থনীতির প্রগতির ধারা

ভারত ও চীনে অর্থনীতির প্রগতির ধারা

নির্মলেন্দু নাথ

photo

সুপ্রাচীন সভ্যতার দেশ ভারত ও চীন। প্রাচীন সভ্যতার দেশ হওয়া সত্বেও দুটি দেশই কয়েক শতাব্দী পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল। বিগত শতাব্দীর মধ্যভাগে দুটি দেশই পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়, তবে ভিন্ন পথে। ভারত স্বাধীন হয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে মূলত অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে আর চীন শৃঙ্খলমুক্ত হয় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে বিপ্লবের মাধ্যমে। অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়ার ফলে ভারতের প্রকৃত শাসন ক্ষমতা দেশের বড় বুর্জোয়া ও বড় ভূস্বামীর অনুকূলেই থেকে যায়। অপরদিকে চীনে বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার কারণে চীনা সমাজের বড় বুর্জোয়া ও বড় ভূস্বামী উৎখাত হয়ে যায়, শাসন ক্ষমতা শ্রমিক কৃষকের অনুকূলে থাকে। এই প্রাথমিক ভিন্নতা দুটি দেশকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করে। বর্তমানে একটি দেশ আয় বৈষম্য ও ক্ষুধার ভারে জর্জরিত। ঋণের ফাঁদে পড়ার উপক্রম। অপর দেশটি ‘নয়া দৌড়’এর মারফত ক্ষুধা ও আয় বৈষম্য হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিকাশ ও দারিদ্র্য মোচনের নানা পন্থা আছে। যদি বিকাশের মাত্রাকে হিসেব করা হয় জিডিপি বৃদ্ধি দিয়ে, তাতে জিডিপি বাড়ে, উৎপাদন বাড়ে। কিন্তু এই বাড়তি উৎপাদন কোনও বাড়তি নিয়োগ সৃষ্টি করে না। এই উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য মোচনের সম্পর্ক থাকে না। এই ধরনের উৎপাদনে দক্ষ শ্রমিকের মজুরি বাড়ে। বাড়ে এমন পণ্যের চাহিদা যা ব্যবহার করে স্বচ্ছল ও উচ্চবিত্তরা। সেই পণ্য যোগান দেয় দক্ষ শ্রমিকরাই। এক্ষেত্রে ক্রেতা এবং বিক্রেতা মিলে অন্য জগত তৈরি হয়। যেখানে গরিব মানুষের কোনও প্রবেশ অধিকার থাকে না। যদি উৎপাদন বৃদ্ধি বাড়তি নিয়োগ সৃষ্টি করতে পারে তাতে অবশ্য ভিন্ন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিকাশের সুফলও কিছুটা হলেও সমাজের নিচু তলার মানুষের কাছেও পৌঁছে যায়। এটাকে পুঁজি চালিত বাজার অর্থনীতিতে ‘ট্রিকল ডাউন থিওরি’বলে।
তবে আয় বৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য মোচনের যে ইতিবাচক সম্পর্ক তাতে সরকারের ভূমিকাও আছে। সরকারের বাজেটে এমন সব খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হয় যা আমজনতার ক্রয় ক্ষমতা বাড়ায়। এই ক্রয় ক্ষমতা এমন সব পণ্যের চাহিদা আনে প্রযুক্তি যেখানে অনেক বেশি শ্রম-ঘন। এতে বাড়ে অদক্ষ শ্রমিকের নিয়োগ এবং তার মধ্যে দিয়ে দারিদ্র্য মোচনে অগ্রগতি ঘটে। পুঁজি চালিত বাজার অর্থনীতিতে এই ধরনের সরকারি প্রকল্পের সীমাবদ্ধতা আছে। এগুলো হল দারিদ্র দূরীকরণের জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচি, এর জন্য সরকারি বাজেটে টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু এই বরাদ্দ বাড়ানোর একটা সীমা থাকে। সরকার এইসব প্রকল্প গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য কর আদায়ে গুরুত্ব বাড়াতে পারে। করদাতারা একটা পর্যায়ের পর এই রকম আয়ের হস্তান্তর পছন্দ নাও করতে পারে। এক পর্যায়ে এটাও হতে পারে আয়ের হস্তান্তর অর্থনৈতিক বিকাশের গতি কমিয়ে আনছে। তাতে অর্থেরও টান পড়ে যা শেষে দারিদ্র বাড়ায়। রাষ্ট্র যদি অর্থনীতির ড্রাইভার এর সিটে থাকে এবং রাষ্ট্রের গরিবমুখী অর্থ হস্তান্তরের ফলে শ্রম-ঘন উৎপাদন বাড়তে থাকে এবং তা পুঁজি-ঘন উৎপাদনে যে ঘাটতি সেটা পুষিয়ে দিতে পারে, তাহলে সমস্যা নেই। আয়ের হস্তান্তর থেকে গরিব মানুষের চাহিদা বাড়বে এবং উৎপাদনের অভিমুখও সেই চাহিদা অনুযায়ী বদলে যাবে। পুঁজি-ঘন উৎপাদন যেভাবে জিডিপি বাড়ায় ততটা হয় না। কিন্তু উৎপাদন কমে গিয়ে গরিবি বেড়ে যাচ্ছে এটাও হয় না। ভারতের মতো দেশের পরিপ্রেক্ষিতে অমিত ভাদুড়ির ‘ডেভেলপমেন্ট উইথ ডিগনিটি’র ছক হল এটা। প্রাক-মোদি জামানায় এদেশে ট্রিকল ডাউন তত্ত্বের বিকল্প হিসেবে ডেভেলপমেন্ট উইথ ডিগনিটির এই ছক যথেষ্ট সমাদৃত ছিল।
গণদারিদ্র্য মোচনের লক্ষ্যে উপরোক্ত দুটি পন্থা ছাড়া তৃতীয় একটা পন্থার কথাও বলা হয়। এটা হল রাষ্ট্রকে চালকের আসনে বসিয়ে রেখে বাজারমুখী সংস্কার করা। এখানে লক্ষ্য হচ্ছে উৎপাদিকা শক্তির বিকাশের মধ্যে দিয়ে যৌথ স্বাচ্ছন্দ্যের বৃদ্ধি ঘটানো। রাষ্ট্রপরিচালিত বাজারমুখী সংস্কার, ভূমি সংস্কার, মজবুত জনস্বার্থ এবং মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে একটা উৎপাদন-কুশল ব্যবস্থা করে তুলবে যার অভিমুখ থাকবে মানুষ ও মানুষের জীবন যাপনের উপযোগী পণ্যের উৎপাদন। সাধারণভাবে এটিকে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি বলা হয়। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার সমসাময়িক বিশ্বে পাঁচ ধরনের বাজার অর্থনীতি রয়েছে। এগুলি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত বাজার অর্থনীতি, ফ্রান্সের পরিকল্পিত বাজার অর্থনীতি, জার্মানির সামাজিক বাজার অর্থনীতি, সুইডেনের জনকল্যাণমূলক জাতীয় বাজার অর্থনীতি এবং জাপানের সরকার কেন্দ্রিক বাজার অর্থনীতি। এই সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতির ধারণাই চীনে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং দারিদ্র মোচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

ভারতের কথা

একথা সুবিদিত যে নয়া উদারনৈতিক ব্যবস্থায় ভারতের অর্থনীতিতে এক রূপান্তর হয়ে গেছে। পরিকল্পিত উন্নয়নের বদলে এসেছে মার্কিন ধাচের বাজার নির্ভর অর্থনৈতিক বিকাশ। এই বিকাশ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারকে ড্রাইভারের সিট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি উৎপাদন সংস্থাকে বাজারের নিয়ম ধরে উৎপাদন কুশলতার প্রমাণ করতে হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন অবান্তর হয়ে গেছে। এখন নীতি আয়োগের বিনিয়োগের অভিমুখ নির্ধারণে কোনও ভূমিকা নেই।
নয়া উদারবাদী অর্থনৈতিক সংস্কারের জমানায় অর্থনৈতিক বিকাশ যা জিডিপির বৃদ্ধি দিয়ে মাপা হয় সেটা ঘটেছে দ্রুত গতিতে। পারিবারিক আয় বৃদ্ধির হারে হয়েছে চমকপ্রদ অগ্রগতি। পিকেটি ও চান্সেলরদের হিসেব অনুসারে ১৯৫১ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে ভারতে যেখানে পারিবারিক আয় বেড়েছে গড়ে ৬৫ শতাংশ, ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সালের পরিসরে পারিবারিক আয়ের গড় বৃদ্ধি ঘটেছে এর থেকে অনেক বেশি। এমন কি সর্বনিম্ন ৫০ শতাংশ পরিবারও উপকৃত হয়েছে। ১৯৫১ থেকে ১৯৮০ সালের সময়সীমায় এদের আয় বেড়েছে ৮৭ শতাংশ আর ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এদের আয় বেড়েছে ৯০ শতাংশ। এই কথার অর্থ দারিদ্র মোচনে এর ভূমিকা আছে। তবে যেটা বলা দরকার, আয় বৃদ্ধির গড় হার যদিও বেড়েছে, আয় বৈষম্যও বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয় বৈষম্যের গিনি সূচকের স্থান এদেশে ১৯৫১ সালে ছিল ৪৩.৪ শতাংশ।
অর্থনীতিতে রাষ্ট্র যখন নিয়ন্ত্রক ছিল তখন বাজারের হাতে সবকিছু ছাড়া হয়নি। ১৯৫১ থেকে ১৯৮০ বৃদ্ধির হার কম ছিল। আয় বৈষম্যের গিনি সূচকের মানও ছিল নিম্নগামী। ১৯৮০ সালে এদেশে আয় বৈষম্যের গিনি সূচকের মান দাঁড়ায় ৩৯.৬ শতাংশ। ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সালের সময়সীমায় বাজারমুখী সংস্কার গড় আয় বাড়িয়েছে কিন্তু আয় বৈষম্যের গিনি সূচককে বাড়িয়ে তুলেছে ৬০ শতাংশ।
প্রশ্ন হচ্ছে, নয়া উদারবাদী অর্থনৈতিক সংস্কার আয় বাড়িয়ে দারিদ্র্য কতটা কমিয়েছে? এ বিষয়ে সমস্যা হচ্ছে তথ্যের। মোদি জমানায় ভারতবাসীর দারিদ্র নিয়ে কোনও সরকারি তথ্য পাওয়া যায় না। সর্বশেষ তথ্য ২০১১ সালের। তবে যা তথ্য পাওয়া যায় তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ১৯৯৩ থেকে ২০১১ সালের সময়সীমায় ১ শতাংশ আয় বৃদ্ধি হলে দারিদ্র্য কমেছে ০.১৮ শতাংশ। প্রসঙ্গত বলা যায় প্রাক-নয়া উদারবাদী জামানায় এক শতাংশ আয় বাড়লে দারিদ্র কমে ০.৩৫ শতাংশ। বর্তমানে আয় বাড়লে দারিদ্র হ্রাস পায় তবে সেটা ঘটে অনেক মন্থর গতিতে। এ কথা তাৎপর্য হল, বাজারমুখী নয়া উদারবাদী উন্নয়ন আয় বৃদ্ধি ঘটালেও সঙ্গে আনে আয় বৈষম্য। চুঁইয়ে চুঁইয়ে যে উন্নয়ন নিচের দিকে নামে দারিদ্র্য মোচনের ক্ষমতা তার কম।
এই সবকিছুর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্টে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী দৈনিক উপার্জন ৩ ডলার (২৫০ টাকা) থেকে ৪.২০ ডলারের (প্রায় ৩৬০ টাকার) মধ্যে থাকলে তাকে গরিব হিসেবে ধরা হয়। ৩৬০ টাকার বেশি দৈনিক আয় হলে সেই ব্যক্তি হবে নিম্ন মধ্যবিত্ত। বিশ্ব ব্যাঙ্কের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে দৈনিক আয় ২৫০ টাকার মানদণ্ডে ২০২৫ সালে ছিলেন ৩৫ কোটি মানুষ গরিব। অর্থাৎ প্রতি চারজনে একজন গরিব। ৩৫ কোটি মানুষকে এখনও পুষ্টিকর খাবার, জামাকাপড় ও মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়। অর্থাৎ অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের যে মৌলিক অধিকার তা থেকেই বঞ্চিত এক চতুর্থাংশ ভারতীয়। শুধু তাই নয়. স্বাস্থ্য বা শিক্ষার অধিকার তাদের কাছে দূর গ্রহের স্বপ্ন। ভারতের ৭ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের শিকার। প্রসঙ্গত বলা দরকার দৈনিক আয় ২৫০ টাকাকে দারিদ্র্য সীমার মাপকাঠি হিসেবে গণ্য করাতে বিশ্ব ব্যাঙ্কের দ্বিমত আছে। কারণ হিসাবটি ২০১১ সালের। কাজেই মানদণ্ড পরিবর্তিত হলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩৫ কোটি ছাপিয়ে অনেক বেশি হবে। বৈষম্য আরো প্রকট হবে। বর্তমানে ভারতের মোট সম্পদের ৪০ শতাংশ ওপরতলার ১ শতাংশ মানুষের হাতে। আর ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে মাত্র ৬.৪ শতাংশ সম্পদ।
মোদি জমানায় বিকশিত ভারতের এই বৈপরীত্যের চিত্রের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক তথ্যের সামঞ্জস্য আছে। দেশের অর্থনীতির হাল বোঝাতে জিডিপি এবং সরকারের দেওয়া মোট ঋণের তুলনা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তারা জানাচ্ছে, সরকারের নেওয়া ঋণ এবং জিডিপির অনুপাত ৮১.৩। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতির মোট পরিমাণ ১০০ টাকা হলে ঋণের পরিমাণ ৮১.৩ টাকা। এই হিসাব স্পষ্ট করেছে দেশের ঋণ শোধের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। ফলে ভারতবাসীর মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ লাগামছাড়া। বিগত দু’ বছরে মাথাপিছু এই ঋণের পরিমাণ প্রায় ৯০ হাজার টাকা বেড়েছে। এইটাই হল নতুন ভারত।

চীনের কথা

একথা সুবিদিত চীনে বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার ফলে চীনা সমাজের বড় বুর্জোয়া ও বড় ভূস্বামী উৎখাত হয়ে যায়। শাসন ক্ষমতা শ্রমিক ও কৃষকের অনুকূলে থাকে। দেশের সুবিপুল জনসংখ্যার দারিদ্র্য মোচন ও আয় বৈষম্য হ্রাসের লক্ষ্যে গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড ও কমিউন ইত্যাদি নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার শেষে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি গ্রহণ করা হয়। এই অর্থনীতির লক্ষ্য ছিল একটা উৎপাদন-কুশল অর্থনীতি গড়ে যৌথ স্বাচ্ছন্দ্যের বিকাশ ঘটানো। এই অর্থনীতির সুবাদে যাকে বলা যায় চরম দারিদ্র্য, চীনে তার অবসান ঘটেছে। ১৯৭৮ সালে চীনে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৭৭ কোটি ৭০ লক্ষ। ১৯৭৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে চীনে আয় বৃদ্ধির বার্ষিক হার ৯৬ শতাংশ। সেই সময় দারিদ্রে থাকা চীনা নাগরিকদের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। ২০১২ সালে সংখ্যাটি কমে দাঁড়ায় ১০ কোটি। এই ১০ কোটি চীনা নাগরিককে চরম দারিদ্র থেকে তুলে আনার জন্য চীন বাজার অর্থনীতির ওপর নির্ভর করেনি। পরিবর্তে দারিদ্র মোচনে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ এর কর্মসূচি গ্রহণ করে। ঠিক হয় ২০২০ সালের মধ্যে চীনের সব পরিবারকে দারিদ্ররেখার ওপর তুলে আনা হবে। ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং ঘোষণা করেন দারিদ্র মোচনের লক্ষ্য তারা পূরণ করেছেন। কথাটার সত্যতা নিয়ে পশ্চিমী পর্যবেক্ষকদেরও
দ্বিমত নেই। এখন প্রশ্ন কাজটা কীভাবে করা হয়েছে?
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ৭০ হাজার জন পার্টি কর্মীকে এই লক্ষ্য পূরণের জন্য তদন্ত-অনুসন্ধানে নামানো হয়। এইসব পার্টি কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন, স্থানীয় আধিকারিক ও সাধারণ মানুষের সহায়তায় দরিদ্র পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করেছেন এবং কী করলে এই পরিবারগুলোকে দারিদ্র্য রেখার উপরে তুলে আনা যায় তার পরিকল্পনা করেছেন। পরিকল্পনা হয়েছে পরিবার নির্দিষ্ট পরিকল্পনার রূপায়নের। মূল আর্থিক সহায়তা এসেছে চীনা সরকারের কাছ থেকে। ২০১৪ থেকে ২০২০ এই সময়সীমায় গণ লাইন প্রয়োগ করে এই পরিবার-নির্দিষ্ট কর্মসূচি রূপায়ণ করা হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক পার্টি কর্মীর নিরলস এবং নিঃস্বার্থ পরিশ্রমের ফলে ৫ বছরে ১০ কোটি দরিদ্র চীনা নাগরিক দারিদ্রমুক্ত হয়েছে। কাজটা করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় সামাজিক সহায়তা দানের মধ্যে দিয়ে। একই সঙ্গে ভূমি সংস্কার, শিক্ষা অভিযান ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার মনোন্নয়ন চীনে আয় বৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করে। পাশাপাশি কৃষিতে পারিবারিক চাষের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য রাখা হয়, পরিবারের আর্থিক উন্নতি মারফত জীবনযাত্রার স্বাচ্ছন্দ্য আনা। এই নীতি প্রয়োগ করেই চীনে চরম দারিদ্রের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়েছে। ভারতে বর্তমান কাঠামোয় যা স্বপ্নেরও অতীত।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.