বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[খেলা]

[খেলা]

ভারত তথা বাংলার ফুটবল কি ভাবে এগোচ্ছে

ভারত তথা বাংলার ফুটবল কি ভাবে এগোচ্ছে

সৌরেন পুরকায়স্থ

photo

সাম্প্রতিক কালে যেভাবে ভারতীয় ফুটবল এগোচ্ছে তাতে আমরা বুঝতে পারছি, ভবিষ্যৎ ধোঁয়াশায় ভরা। ভারতীয় ক্রিকেটের দাপটে ফুটবল ব্রাত্য হয়ে গেছে অনেকদিন।
এআইএফএফ এর দীর্ঘমেয়াদী রোড ম্যাপ করা হয়েছে ২০৪৭ সাল। ততো দিন আমরা কি থাকব?
আগামী বিশ্বকাপে আটটি দেশ এমন কি নয়টি দেশ এশিয়ান জোন থেকে বিশ্বকাপে সুযোগ পেতে পারে। সব এশিয় দেশগুলো যেখানে উঠে পড়ে লেগেছে আগামী বিশ্বকাপে খেলার প্রস্তুতির জন্য সেখানে আমাদের রোড ম্যাপ ২০৪৭! ভাবা যায়।
ফুটবলের উন্নতিকল্পে এখনকার আমাদের তিন প্রধানের ভূমিকাও অত্যন্ত হতাশজনক। নিজস্ব কোনও একাডেমি নেই। নেই কোনও মাঠ। আইএসএল অথবা আই লিগে পারফরমেন্স নিদারুণ।
থাইল্যান্ডের মতন দেশেও মাঝারি মাপের ক্লাব দলের ন্যূনতম তিন-চারটে নিজস্ব মাঠ আছে। তিন প্রধানের মতোই ভারতীয় দলে বাঙ্গালী খেলোয়াড়দের অস্তিত্বও সংকটে। বাংলায় ফুটবলের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী আমরাই। তিন প্রধান ডার্বিতেই এমন মজে যে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ক্লাব দলগুলোকে হারাতে একরকম ল্যাজে গোবরে হয়, তার খবর আমরা রাখিনা, এমনকি ভ্রুক্ষেপও নেই। ভারতীয় ফুটবল নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারোর। তাই আন্তর্জাতিক স্তরে এএফসি ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে তিন প্রধান ও অন্যান্য ভারতীয় ক্লাব দলের লজ্জাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে আমাদের হেলদোল নেই। আক্ষরিক অর্থে ফুটবলটা আমরা কমই বুঝি। না হলে আন্তর্জাতিক স্তরে আমাদের অসফলতা একটা বিরাট প্রভাব ফেলত ক্লাবকর্তা ও সমর্থকদের মনে।
ভারতীয় ফুটবলের অতীত গরিমা আমরা ভুলে গেছি। মুষ্টিমেয় কয়েকজন যারা শুধুমাত্র ফুটবল নিয়ে চর্চা করেন ও গবেষণা করেন তারাই শুধু জানেন যে দুটো এশিয়ান কাপ আমরা জিতেছি। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬০এর মধ্যে চার বার অলিম্পিক ফুটবলে অংশগ্রহণ করেছি। দুনিয়া কাঁপানো ফ্রান্সের মতন দাপুটে টিম এর কাছে প্রথমে গোল খেয়ে তারপর শোধ করে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে হেরেছে ভারত। ড্র করেছে। কিংবদন্তি ফুটবলার শৈলেন মান্না, আহমেদ খান, বদ্রু ব্যানার্জি, নেভিল ডি সুজা, সাহু মেওয়া লাল, সারঙ্গাপানি রামান (অলিম্পিক ফুটবলে ভারতীয় দলের প্রথম গোলদাতা)— এই কিংবদন্তিদের নাম আজকের প্রজন্ম কি শুনেছে।
১৯৫৬ মেলবোর্ন অলিম্পিকসে আমরা চতুর্থ। তার আগে তদানীন্তন ভারত সরকারের অসহযোগিতা ও অদূরদর্শিতার ফলে আমরা ১৯৫০ বিশ্বকাপে এ সুযোগ পেয়েও অংশগ্রহণ করিনি। এশিয়ান ফুটবল জায়ান্ট ছিল ভারত। কি ভাবে কোন বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেল সেই স্বর্ণালী অধ্যায়?
এইরকম গড়িমা পূর্ণ ফুটবল ইতিহাস খুব কম দেশেরই আছে কিন্তু। দুঃখের বিষয় আমাদের অবস্থান এখন বিশ্ব ফুটবলে তলানিতে। একদা বিশ্বের প্রথম সারির দল হওয়া সত্বেও বর্তমানে আমরা ফিফা র্যাংকিংএ ১০৪, ১০৬ বা ১০৭এর মধ্যে ঘোরাঘুরি করি।
আরো দুঃখজনক, বর্তমান প্রজন্ম জানেই না ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাস।
বাংলার ফুটবল কলকাতা কেন্দ্রিক।
বিভিন্ন জেলাতে লীগ হলেও সেই লিগ ফুটবল খেলোয়াড়রা এআইএফএফএর CRS (Centralized Registration System)এ অন্তর্ভুক্ত নয়।
এআইএফএফএর স্বীকৃত লীগ হতে গেলে তাতে সিআরএসএ নথিভুক্তি বাধ্যতামূলক।
তাহলে জেলা লীগ আর খেপ খেলার কি তফাৎ।
শুধুমাত্র কলকাতা লীগের অংশগ্রহণকারী দলগুলিই সেকেন্ড ডিভিশন আই লিগে খেলতে পারে।
অন্যান্য রাজ্যে, রাজ্য লীগ হয় এবং তার ভিত্তিতেই লীগে দলীয় অবস্থান অনুযায়ী সেকেন্ড ডিভিশনে আই লিগের দল নির্বাচিত হয়। বাংলা ব্যতিক্রম। যেখানে রাজ্য লীগ হয় না। কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ না খেললে আই লিগ সেকেন্ড ডিভিশন এ খেলার যোগ্যতা অর্জন করা যায় না।
জেলার ফুটবলাররা ভীষণভাবে বঞ্চিত। কলকাতায় সুযোগ না পেলে তাদের নিজের জেলাতেই খেপ খেলতে হয়।
খুব নগণ্য সংখ্যক ক্লাব আছে যারা জেলার প্লেয়ারদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে। বেশিরভাগ কলকাতার ক্লাব আর্থিক অসঙ্গতিতে ধুঁকছে। স্পন্সর সব ক্রিকেটে, ফুটবলে নেই। বেশ কিছু কর্মকর্তার ঐকান্তিক চেষ্টায় ক্লাবগুলো চলে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর গল্প।
আর্থিক অনটনের মধ্যেও ক্লাবগুলো ছেলেদের খেলার সুযোগ করে দেয়। সামান্য অনুদান ও উপকরণের মাধ্যমে চলে খেলাধুলা। এই পরিকাঠামোতে তো ফুটবলের উন্নতি করা সম্ভব নয়। তার মধ্যেই প্রতিভাবানেরা উঠে আসে কিন্তু সুযোগের অভাবে আবার হারিয়ে যায় বেশিরভাগ।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস রাজ্য লিগ হলে অনেক ভাল প্লেয়ার আমরা পাবো। জেলা স্তরে অনেক পৃষ্ঠপোষক আছেন যারা ভাল দল গঠন করতে ইচ্ছুক। আর্থিক দিক থেকে যথেষ্টই শক্তিশালী। ভাল দল অবশ্যই গঠন করতে পারবে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে প্রচুর প্রতিভা অন্বেষণে আমরা সফল হবো।
ফুটবল প্রশাসনকে এই বিষয়টা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
জেলা প্রতিনিধিদের একত্রিত হয়ে রাজ্য লীগের দাবি করতে হবে।
এক সময় মধ্যবিত্ত বাঙালিরা ফুটবল খেলতো। এখন আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েরা বাংলার ফুটবলকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ৭০ দশকের প্লেয়ারদের তুলনায় এখনকার প্লেয়াররা অপুষ্টিজনিত কারণে খর্বকায়। প্রান্তিক পরিবার থেকে আসার কারণে দেহ মজবুত নয়।
পঞ্চম থেকে দ্বিতীয় ডিভিশন ফুটবল লীগের ম্যাচগুলো খেলার অযোগ্য কর্দমাক্ত মাঠে হয়। প্রায় খাটালই বলা চলে। এই সব মাঠে ভাল ফুটবল খেলা প্রায় অসম্ভব। ভরা বর্ষায় লিগ না করে অন্য সময় করা যায় কিনা বিবেচনা করা প্রাসঙ্গিক ও বাঞ্ছনীয়।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.