বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[খেলা]

[খেলা]

মোবাইল এবং মেসি

মোবাইল এবং মেসি

শুভ্রাংশু রায়

photo

২০২২ কাতার ফিফা বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল কে বা কারা যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে এককথায় যে উত্তর পাওয়া যাবে সেটাই এই লেখার শিরোনাম। দ্বিতীয়টি সকলের জানা। নতুন করে বলার কিছু নেই যে বিশ্বকাপের শিরোপা টিম আর্জেন্টিনা জিতলেও আপামর জনতার কাছে মেসিই যেন এবারের বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছেন। কিন্তু প্রথম বিষয়টি? এমনটি বলার কারণ এটাই যে মোবাইল ফোন বা মুঠোফোনকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার মূল চালিকা শক্তি পুঁজি বিনিয়োগকারীরা বা ইনভেস্টরা খুব সহজে অনেক বেশি মানুষকে হাতের মুঠোয় আনতে পেরেছে। ফলে তারা একদিকে যেমন ফুটবলকে খেলাকে বেচতে পেরেছেন অন্য দিকে অসংখ্য পণ্যকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
কতো টাকার ব্যবসা হয়েছে এই মোবাইল টেলিকাস্টের মাধ্যমে বা ওয়েব দুনিয়ায় দেশে দেশে মোবাইলে খেলা দেখানোর স্বত্ব কতো টাকায় বিক্রি হয়েছে সেই পরিসংখ্যানের বাইরে গিয়ে বলা যায় লেনদেনের পরিমাণ ছিল বিপুল এবং তার লভ্যাংশের একটা অংশ ফিফার তহবিলে জমা হয়েছিল প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই। অবশ্য টেলিভিশনে ব্রডকাস্টিং রাইট বিক্রির বিষয়টি আগে থেকেই ছিল। এবারের বিশ্বকাপে বেশ জাঁকিয়ে বসলো ওয়েব টেলিকাস্ট রাইট বিক্রির বিষয়টিও। অর্থাৎ বিক্রিবাটায় আরো ইজাফা। পুঁজির আরো সঞ্চালন।
ফিফা বিশ্বকাপের সঙ্গে পুঁজির যোগ অনেকের মতে শুরু হয়েছিল সেই সত্তরের দশক থেকেই। বিশেষত ব্রাজিলের ১৯৭০এ জুলেরিমে কাপ জিতে যাওয়ার পরে এই বিশ্বজনীন ফুটবল প্রতিযোগিতাটি ঘিরে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য গোষ্ঠীর নজর এড়িয়ে যায়নি। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বেশ কিছু নিয়ম ছিল, রীতিনীতির বিষয় ছিল, সঙ্গে পুঁজিবাদী সদস্য দেশগুলির সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক সদস্য ব্লকগুলির টানাপোড়েনের বিষয়টিও যুক্ত ছিল। তাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থাগুলি ফুটবল বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার প্রতি একটু বেশিই আগ্রহী হয়ে উঠে। ১৯৭০ দশকে ফিফার সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু আন্তজার্তিক বাণিজ্য গোষ্ঠী বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৭৪ ফিফা সভাপতি নির্বাচনে ব্রাজিলিয়ান ক্রীড়া প্রশাসক যোয়াও হ্যাভেল্যাঞ্চ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন ব্রিটিশ ক্রীড়া প্রশাসক স্ট্যানলি রাউসের বিরুদ্ধে। সেবার প্রথম এবং এখনো অবধি ইউরোপের বাইরে একমাত্র ফিফা সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন হ্যাভেল্যাঞ্চ। অভিযোগ ওঠে এই নির্বাচনে এশিয় ও আফ্রিকান সদস্যদের মধ্যে প্রচার ও ভোট সংগ্রহের জন্য হ্যাভেল্যাঞ্চের পক্ষে টাকা বিনিয়োগ করে অ্যাডিডাস ও কোকোকোলার মতো কোম্পানিরা। এই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ না হলেও হ্যাভেল্যাঞ্চ ফিফা সভাপতি হওয়ার কিছুদিন পরেই ফিফার ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে সরাসরি এই দুটি বহুজাতিক সংস্থাকে যুক্ত করে নেওয়া হয়। সত্তরের দশকের শেষের দিক থেকেই দেখা যায় ফিফার নীতি এবং অফিস পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি পরিবর্তন আনা হয়। ফিফার নিজস্ব অফিসে ও ডেভেলপমেন্টে পেশাদার লোক নিয়োগ শুরু হয়। ফিফা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ (কোনও সদস্য দেশের এমনকি সরকারি আইনও) মানবে না এমন একটি অতিরাষ্ট্রীয় বিষয়ও জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এই সময় ফিফার অর্থ আমদানির নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয় টেলিভিশনে ব্রডকাস্টিং রাইট বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে। যদিও ১৯৫৪ সালে বিশ্বকাপের কিছু খেলা প্রথমবারের জন্য টেলিভিশনে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তা লাইভ ছিল না। প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম লাইভ সম্প্রসারণ ঘটেছিল ১৯৭০ সালে। সেই বছর ফাইনাল ম্যাচটি ঘিরে অন্য উন্মাদনা মূলত ইউরোপ ও ল্যাতিন আমেরিকায় তৈরি হয়েছিল কেননা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, যে দেশ তৃতীয়বারের জন্য বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি অর্থাৎ জুলেরিমে কাপ জয়ী হবে সে দেশ ট্রফিটি চিরতরে ঘরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। দুই ফাইনালিস্ট ব্রাজিল ও ইতালির সামনে সেই সুযোগ ছিল কারণ উভয় দেশই ইতিমধ্যে দু’বার করে জুলে রিমে কাপ জিতেছিল।
১৯৭০ বিশ্বকাপ বিশেষত ফাইনাল ম্যাচটি টেলিভিশনে সরাসরি ইউরোপ ও আমেরিকা ও গুটিকয়েক এশিয় দেশে দেখানো হয়েছিল এবং টিভিতে সম্প্রচার রাইট বা ব্রডকাস্টিং রাইট বাবদ কিছু অর্থ ফিফার ঘরে এসেছিল। ১৯৮৬ মেস্কিকোয় অনুষ্ঠিত মারাদোনাময় বিশ্বকাপ ভারত সহ অন্যান্য এশিয় আফ্রিকান দেশগুলিতে টেলিভিশনে দর্শক সংখ্যা অনেকটাই বৃদ্ধি করলেও ১৯৯০এ ‘ইতালিয়া ৯০’ টেলিভিশন দর্শক সংখ্যাবৃদ্ধিতে অনেকটাই আগের বিশ্বকাপগুলিকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। রিকি মার্টিনের অনবদ্য থিম সং, অনেকগুলি ক্যামেরার সাহায্যে ঝকঝকে টেলিভিশন সম্প্রচার, গোলের পরে রজার মিল্লার ‘মিল্লা ড্যান্স’, সেমিফাইনালে ইতালি-আর্জেন্টিনা মহারণ সর্বোপরি ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে মাঝরাতে মারাদোনার কান্না— এই সবকিছুর পাশাপাশি ভারতীয় দর্শকদের নিশ্চয় স্মৃতিতে রয়েছে প্রতিযোগিতা শুরুর অন্তত একমাস আগে থেকে দামের ছাড়ের ক্ষেত্রে টিভি কোম্পানিগুলি কীরকম প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছিল। তারপর চার বছর অন্তর একটি করে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা এসেছে আর ব্রডকাস্টিং রাইট বাবদ ফিফার আয় বেড়েই চলেছে। বেড়েছে বিজ্ঞাপনের বহর। ফুটবলের বিশ্ব তারকারা পৃথিবীর হয়তো এক প্রান্তে খেতাবী লড়াইয়ে মত্ত তো সুদূর এশিয়া বা আফ্রিকার কোনও গ্রামীণ এলাকায় বিশ্বকাপের বিজ্ঞাপন ঝুলছে এ দৃশ্য সেই ৯০-এর দশক থেকে কার্যত অনেকের কাছেই গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল।
নতুন শতাব্দীতে দক্ষিণ আফ্রিকা (২০১০), ব্রাজিল (২০১৪) এবং রাশিয়ায় (২০১৮) অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের আসরগুলি নিয়ে প্রতিযোগিতার শুরুর আগে বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে বিতর্ক হলেও এবারের বিশ্বকাপ কাতারের আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে যে ধরনের বিতর্কের ঝড় বয়েছে তা অনেকের কাছে আর অজানা নয়। তবে সেইসব বিতর্কিত দিকগুলি বাদ দিয়ে অবশ্যই যে বিষয়টি এবারের বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে অনন্য ছিল যা এই নিবন্ধের শুরুতেই উল্লেখ্য করা হয়েছে তা হল ওয়েব দুনিয়ায় বিশ্বকাপের খেলাগুলো উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সরাসরি সম্প্রচার। ফলে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষজন অফিস আদালতে, ভ্রমণরত অবস্থায় বা অন্যান্য জরুরি কাজের মধ্যেই মোবাইলে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলি সরাসরি দেখার সুযোগ পেয়েছেন। যা এক বিশ্বজোড়া বিশাল ভার্চুয়াল অডিয়েন্স তৈরিতে সাহায্য করেছে। এই ভার্চুয়াল দর্শক শুধুমাত্র ফুটবল ম্যাচ দেখেনি ম্যাচের ফাঁকে ফাঁকে বা বিরতিতে বিজ্ঞাপনদাতাদের বিজ্ঞাপনও গলাধঃকরণ করতে হয়েছে তাঁদের।
ল্যাপটপ ও বিশেষত মোবাইল দর্শকের নতুন উপস্থিতি এবারের বিশ্বকাপকে অন্য মাত্রা দিয়েছিল। সব কিছুর টাটকা লাইভ আপডেট ছিল কাতার বিশ্বকাপের সময় একবারে যাকে বলে হাতের মুঠোয়। তাই খেলার মাঠের চোট আঘাত, রেফারির সিদ্ধান্ত, অনুশীলন শেষে প্রেস কনফারেন্স, এমনকি ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে সেলিব্রেশন সবকিছুতেই ক্যামেরা বিশেষত মোবাইল ক্যামেরা তাক করে রাখা ছিল। আর তেমন কিছু ঘটলেই দুনিয়া জুড়ে তোলপাড়। সামান্য একটি ঘটনাতেই ভাইরাল। সৌজন্যে সোশ্যাল মিডিয়া।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বকাপের খেলার সময় বা খেলার বাইরে কোনও ঘটনা ঘটলেই ভার্চুয়াল দর্শকদের তরফে প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছিল একবারে চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই। এবারের বিশ্বকাপে যতগুলি রাজনৈতিক ইস্যু উঠে এসেছিল সাম্প্রতিক কোনও স্পোর্টিস ইভেন্টে এমনটি ঘটেনি। ফলে বিশ্বকাপের শুধুমাত্র ৬৪টি ম্যাচ চলাকালীন নয় এর বাইরেও ক্রীড়াপ্রেমী মানুষজন ব্যস্ত থেকেছেন তাঁর মোবাইল স্ক্রিনে নানা খবরের আপডেটে। শুধু আপডেট দেখা নয় অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেরাও কমেন্ট করেছেন। জড়িয়ে পড়েছেন আলোচনায় বা বিতর্কে। ভারতে অবশ্য টুর্নামেন্টের প্রথম দিন যে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে খেলা দেখা যাচ্ছিল তাতে প্রচণ্ড বাফারিং হওয়ায় অনেকেই উদ্বোধনী ম্যাচ ভাল করে দেখতে পাননি। যদিও টেলিভিশনের দর্শকদের তেমন কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু মোবাইলে ওয়েব সম্প্রচারের ব্যাঘাত হওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সংশ্লিষ্ট অ্যাপ সংস্থা তীব্র সমালোচনায় সম্মুখীন হয়। শুধুমাত্র ভারতেই কতো বিশাল সংখ্যক মানুষ তাঁদের মোবাইল ফোনে বিশ্বকাপের খেলাগুলি লাইভ দেখেছেন। দেখেছেন হাইলাইটস। মাঠের মধ্যে বা গ্যালারিতে ঘটে যাওয়া বিতর্কিত ঘটনা— গোল বাতিল, পেনাল্টির সিদ্ধান্ত, অফসাইড থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে কমেন্ট করতেও পিছুপা হননি অনেকেই। তাই ইরানি তরুণীর মাঠে জাতীয় জার্সির ২২ নম্ববের তলায় মাশা আমিনীর নাম দেখে অনেকেরই ইরানের রাষ্ট্রীয় দমনের কথা মনে পড়েছে। বা ওয়েলসের বিরুদ্ধে ইরানের ফুটবলারদের জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়া, ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বপক্ষে জার্মান দলের প্রথম ম্যাচে মুখ ঢেকে গ্রুপ ছবি তোলা, মরক্কোর খেলোয়াড়ের জয়ের পরে ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ ইত্যাদি ঘটনার রাজনৈতিক তাৎপর্য খেলার মাঠের চৌহদ্দিকে ছড়িয়ে গেছে। ফলে বিশ্বকাপ চলাকালীন খেলার পাশাপশি প্রাসঙ্গিক অনেক বিতর্কিত রাজনৈতিক বিষয়েও কমেন্টে ভরে গেছে বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটের দেওয়াল। এমনকি নড়েচড়ে উঠতে বাধ্য হয়েছেন আন্তর্জাতিক ঘটনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষকরাও। এমন বিতর্ক ও আলোচনার ভাইব্রেন্ট কনজিউমার বেসকে হাতছাড়া করতে রাজি হবে না অতিকায় বাণিজ্য সংস্থাগুলি। ফলে সহজেই অনুমেয় আগামীদিনে কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছে ওয়েব সম্প্রচারের দুনিয়া আরো লোভনীয় হতে চলেছে। ফলে একদিকে যেমন ওয়েব সম্প্রচার স্বত্ব নিয়ে আগামীদিনে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থাগুলির মধ্যে পারস্পরিক রেষারেষি বৃদ্ধি পাবে তেমনি ফিফার আয়ের একটি বড় অংশ বৃদ্ধি পাবে এই ওয়েব ব্রডকাস্টিং রাইট বিক্রি বাবদ অর্থের মাধ্যমে।
এবার মেসি প্রসঙ্গ। একথা ঠিক যে সেই মারাদোনার অনবদ্য পারফরমেন্সের সাহায্যে সেই ১৯৮৬ পরে ৩৬ বছরের ব্যবধানে লিওলেন মেসির আর্জেন্টিনা আবার বিশ্বকাপ জয়ী হতে সমর্থ হলেন। মেসির ট্রফি রুমে মারাদোনার মতো ফিফা বিশ্বকাপের আসল রেপ্লিকা স্থান পেল। প্রকৃত বিচারে সাফল্যের নিরিখে মেসি মারাদোনাকেও ছাপিয়ে গেলেন কারণ বিশ্বকাপের পাশাপশি মেসি কোপা আমেরিকা ও অলিম্পিক গোল্ড মেডেল রয়েছে যেগুলো ফুটবলার মারাদোনার পক্ষে অর্জন করা সম্ভবপর হয়নি। কিন্তু নিছক মাঠের সাফল্য দিয়ে দিয়েগো মারাদোনাকে মাপা যায় না। ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্ক বাদ দিয়ে প্রাসঙ্গিক অনেক রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রসঙ্গে দিয়েগো মারাদোনার মন্তব্য অনেক ক্ষেত্রে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল যা তাঁর ব্যক্তিত্বকে অন্যমাত্রায় প্রতিষ্ঠা করেছিল।
১৯৯০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইতালিকে হারিয়ে সে দেশে বেশ অপ্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন মারাদোনা। ইতালিয় জনতার থেকেও শাসকদের কাছে। নেপলস শহরে ইতালির বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে মারাদোনা নাপোলি সমর্থকদের কাছে সমর্থন চেয়ে বলেছিলেন, শিল্পোন্নত উত্তরের ইতালি কখনোই দক্ষিণে কৃষিপ্রধান দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা নেপলসের মানুষজনকে সহ নাগরিকের মর্যাদা দেয় না। মারাদোনার এই মন্তব্যে দলে দলে নেপলসবাসী মাঠে গিয়ে ইতালির বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করেননি কিন্তু মাঠে বেশ কিছু তরুণ নাপোলির পতাকা আর মারাদোনার ছবি নিয়ে মাঠে দেখা গিয়েছিল। সবথেকে বড় কথা বিশ্বকাপের আসরে মারাদোনার এই মন্তব্যের কারণে ইতালির মধ্যেকার চাপা থাকা এই বৈষম্যের কথা বিশ্ব দরবারে চাউর হয়ে গিয়েছিল। ফলে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর ওই দেশে খেলতে গিয়ে মারাদোনা নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে ছিলেন। মেসি খেলেন প্যারিসের ক্লাবে। এমনিতে স্বভাব ‘ইউরোপিয়ান’ মেসি ফ্রান্সের কোনও রাজনৈতিক বা সামাজিক ইস্যু নিয়ে মন্তব্য না করলেও ম্যাচ শেষে সেলিব্রেশনের সময় তাঁর সতীর্থদের করা কিছু আচরণ ফরাসি ফুটবলপ্রেমীরা যে ভালভাবে নেননি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া দেখেই টের পাওয়া গেছে। ফলে মরসুমের বাকি ম্যাচগুলিতে মেসিকে ভুগতে হবে না এমন গ্যারান্টি দেওয়া বেশ মুস্কিল। প্যারিস সঁ জঁমার সঙ্গে মেসির চুক্তি সম্ভবত আগামী মার্চ পর্যন্ত। দেখার বিষয় আগামীতে কি ঘটে বিশ্ব জয়ী নতুন রাজপুত্রের ফুটবল কেরিয়ারে।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.