বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[খেলা]
হৃষিকেশ মুখার্জির ক্লাসিক কমেডি ‘গোলমাল’-এ, ভবানী শংকর (উৎপল দত্ত) চাকরির ইন্টারভিউয়ে রামপ্রসাদ দশরথপ্রসাদ শর্মা (অমল পালেকার)-কে ‘ব্ল্যাক পার্ল’ পেলে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে রামপ্রসাদ জানান, পেলে যেদিন কলকাতায় পা রাখেন, ৩০-৪০ হাজার ফুটবলপ্রেমী মাঝরাতে দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন। এমনই জাদু ছিল ভারত থেকে হাজার মাইল দূরে ব্রাজিলের এই মহান ফুটবলারের। দিয়েগো মারাদোনার ‘ঈশ্বরের হাত’, লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ জয়ের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ হওয়ার কয়েক দশক আগে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি বাংলাকে ‘পাগল’ করে দিয়েছিলেন।
তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী পেলে, ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ সালে মোহনবাগানের বিপক্ষে নিউইয়র্ক কসমসের হয়ে ইডেনে মোহনবাগান ফুটবলারদের খেলা দেখে মুগ্ধ হন। সবুজ-মেরুন ‘সৈনিকরা’ ফুটবল সম্রাটকে গোল করতে দেননি সেদিন।
কোচ পিকে ব্যানার্জি পেলেকে আটকানোর দায়িত্ব গৌতম সরকারকে দিয়েছিলেন। স্বপ্নের ম্যাচে স্টার মার্ক পেয়ে পাশ করেন গৌতম। মোহনবাগান সন্ধ্যায় পেলের জন্য একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানে পেলেকে একটি হিরের আংটি উপহার দেওয়ার কথা ছিল। ‘ব্ল্যাক পার্ল’ খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করতে বেশি আগ্রহী ছিল। গোলরক্ষক শিবাজি ব্যানার্জির সঙ্গেই প্রথম দেখা হয় তাঁর। শোনা যায়, যখন শিবাজি ব্যানার্জির নাম ঘোষণা করা হয়, তখন বেশ কয়েকজন রীতিমতো ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রেখেছেন পেলেকে। সেই ব্যারিকেডের চক্রব্যূহ ভেদ করে বেরিয়ে এসে শিবাজি ব্যানার্জিকে জড়িয়ে ধরেন পেলে।
এই ম্যাচটি কলকাতা ময়দানের বিখ্যাত ফুটবল প্রশাসক ধীরেন দে-র প্রচেষ্টার ফল। তখন মোহনবাগানের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। গৌতম সরকারের স্মৃতিচারণায় জানা যায়, “আমি বিশ্বাস করতে পারিনি যখন ধীরেনদা আমাদের বলেছিলেন যে পেলে আমাদের বিপক্ষে খেলবে। আমরা বলেছিলাম, মিথ্যে বোলো না। পরে জেনেছি বাস্তবে তা ঘটতে যাচ্ছে। আমরা ঘুমহীন রাত কাটিয়েছি। তিন সপ্তাহ আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল।” আরও একটা কথা ময়দানে কান পাতলে শোনা যায়, ম্যাচে প্রথম গোল করা শ্যাম থাপা নাকি ইস্টবেঙ্গল থেকে মোহনবাগানে সই করেছিলেন কেবল পেলের বিরুদ্ধে খেলার জন্য।
এই ম্যাচের চার দিন পর মোহনবাগান আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছে। এর পর রোভার্স কাপ ও ডুরান্ড কাপও জিতেছে। সাত বছর আগে দুর্গাপুজোর সময় পেলে আবার বাংলায় আসেন। তখন বৃদ্ধ হয়েছেন ‘সম্রাট’। হাতে লাঠি। কিন্তু আবেগটা একই ছিল। পেলে বলেছিলেন, “আমি ভারতে আসার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি কারণ আমি এখানকার মানুষকে খুব পছন্দ করি।” তিনি চলে যাওয়ার সময় আবারও বলেছিলেন, “আমি যদি কোনওভাবে সাহায্য করতে পারি তবে আমি আবার আসব।” ভারতে আর আসা হয়নি পেলের। ৮২ বছর বয়সে ব্রাজিলের সাও পাওলোর একটি বেসরকারি হাসপাতালে দেহান্ত হয়েছে তাঁর। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। প্রায় এক মাস হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, তাঁর বৃহদন্ত্রের টিউমারটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তাঁর পরিবার বা ডাক্তাররা কেউই বুঝতে পারেননি যে, টিউমারটি অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে তিনি কিডনি ও কার্ডিয়াক ডিসফাংশনের জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যুগেরও সমাপতন হল।