বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[খেলা]
ভাষান্তর: পারমিতা সরকার
শ্রমজীবী ভাষা, ১ নভেম্বর, ২০২১— মহিলা হ্যান্ডবল খেলোয়াড়দের ড্রেস-কোড হিসেবে বিকিনি পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়। এর বিপরীতে পুরুষদের শর্টস পরতে দেখা যায়। একই ধরনের লিঙ্গ বৈষম্যের দৃষ্টান্ত খেলাধুলার জগতে সর্বত্র দেখা যায়।
এই বিষয়ে অলিম্পিক ও ক্রীড়া জগতে লিঙ্গ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ও টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাক্তন অধ্যাপক হেনরি জেফারসন লেন্সকি বলেছেন, “কিছু কিছু ক্রীড়া ক্ষেত্রে নারী দেহের অতিরিক্ত যৌনতা সত্যিই গুরুত্ব পেয়ে থাকে এবং জিমনাসটিক, বীচ ভলিবল ও বীচ হ্যান্ডবল তার মধ্যে প্রধান।
উনি আরও বলেছেন যে ড্রেস কোড বৃহত্তর ক্ষেত্রে নির্ধারিত হয় অর্থ ও বাণিজ্যিক স্বার্থের ভিত্তিতে। এর নিয়মগুলি তৈরি হয় সেই সব পুরুষদের দ্বারা যারা আন্তর্জাতিক সঙ্ঘের উচ্চ পদে আসীন। টোকিয়ো এ আমরা যা দেখেছি তা শুধু দুঃখজনকই নয় বরং আশ্চর্যজনক।
লেন্সকিজ এর মতে, ক্রীড়া ক্ষেত্রে নিয়ম ও পরিধানবিধি নারীদের জন্য বৈষম্যমূলক কারণ সেই একই বিবেচনা পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এর দায়িত্ব আইওসি এবং আন্তর্জাতিক সঙ্ঘগুলির উপরেই বর্তায়।
অলিম্পিক্সে জিমনাসটিকসে মহিলা প্রতিযোগীদের মূলত আঁটসাঁট পোশাক leotard পরিহিত অবস্থায় আমরা দেখি যাতে দুটি পা অনাবৃত থাকে।
জিমনাসটিকসে পুরুষ প্রতিযোগীরা হয় একটু ঢিলেঢালা শর্টস অথবা পুরো পা ঢাকা পোশাক পরেন তাদের পারফরমেন্সের সময়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ২০১৯ সালে ওয়ার্ল্ড আর্টিস্টিক জিমনাস্টিক চাম্পিয়নসিপে ঝো জিঙ্গুয়ান-এর কথা।
পারাওল্যম্পিক্স এর চ্যাম্পিয়ন স্প্রিন্টার, অলিভিয়া ব্রীন কে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ এর সময় বলা হয় যে তার খেলার পোশাক “অত্যন্ত ছোট ও অনুপযুক্ত”।
“আমি বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। আমি বহু বছর ধরে একই ধরণের “ব্রীফ” পরে আসছি যেগুলি বিশেষত দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি হয়। আশা করছি আমি সেই পোশাক
পরেই টোকিয়ো এ খেলবো। যে প্রশ্নটি আমার মনে উঁকি দিয়েছে তা হল, আমার মত একই ভাবে একজন পুরুষ প্রতিযোগীকে কি সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে?

অলিম্পিক্সে জিমনাসটিকসে মহিলা প্রতিযোগীদের মূলত আঁটসাঁট পোশাক leotard পরিহিত অবস্থায় আমরা দেখি যাতে দুটি পা অনাবৃত থাকে।
জিমনাসটিকসে পুরুষ প্রতিযোগীরা হয় একটু ঢিলেঢালা শর্টস অথবা পুরো পা ঢাকা পোশাক পরেন তাদের পারফরমেন্সের সময়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ২০১৯ সালে ওয়ার্ল্ড আর্টিস্টিক জিমনাস্টিক চাম্পিয়নসিপে ঝো জিঙ্গুয়ান-এর কথা।
পারাওল্যম্পিক্স এর চ্যাম্পিয়ন স্প্রিন্টার, অলিভিয়া ব্রীন কে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ এর সময় বলা হয় যে তার খেলার পোশাক “অত্যন্ত ছোট ও অনুপযুক্ত”।
“আমি বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। আমি বহু বছর ধরে একই ধরণের “ব্রীফ” পরে আসছি যেগুলি বিশেষত দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি হয়। আশা করছি আমি সেই পোশাক
পরেই টোকিয়ো এ খেলবো। যে প্রশ্নটি আমার মনে উঁকি দিয়েছে তা হল, আমার মত একই ভাবে একজন পুরুষ প্রতিযোগীকে কি সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে?
মহিলা ক্রীড়াবিদরা ক্রমশ প্রাচীনপন্থী ইউনিফর্ম বিষয়ক নিয়মকানুনগুলি বর্জনএর পথ নিয়েছেন যেই নিয়মগুলি ঐতিহাসিকভাবে মহিলাদের স্বছন্দ্যের চেয়ে তাদের সৌন্দর্যআনুরাগের ওপর বেশী দিয়ে এসেছে।
প্রসঙ্গত, চার্লস স্টার্ট ইউনিভার্সিটির সৃজনশীল শিল্পবিদ্যার অধ্যাপক র্যাচেল জেফারসন বুকানন ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখিয়েছেন, “এখন যখন নারী শরীর প্রদর্শনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এক সময়ে এর বিপরীতটাই ছিল প্রচলিত। উনিশ শতকে যখন উচ্চ মধ্যবিত্ত্ব পরিবারের মহিলারা অনুমতি পেলেন লন টেনিসের মত খেলায় অংশগ্রহণ করার, তাদের পোশাক ছিল যথার্থভাবে নারীসুলভ, রুচিশীল ও সেগুলির নক্সা তৈরি হত এমনভাবে যাতে তাদের বলিষ্ঠতার চেয়ে সম্ভাব্য পানিপ্রার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নিঃসন্দেহে সেই খেলোয়াড়দের কোর্সেট ও এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য পরিধেয় তাদের সামনে ঝাঁপ দেওয়া ও কোর্টে লাফানোর ক্ষমতাকে সীমিত করতে পারত যেভাবে আজকের খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে হয়…”
একইভাবে ইউরোপীয়ান আর্টিস্টিক জিমনাসটিকস চ্যাম্পিয়ন্সিপস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মহিলা প্রতিযোগীরা চলতি বছরে পরিধানবিধির নিয়মকানুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন সুইজারল্যান্ডে। জার্মান জিমন্যাস্টরা ফুলবডি স্যুট পরে ক্রীড়াবিদদের ওপর যৌনতার প্রতিবাদ করেছন। এই প্রতিবাদের সূত্রপাত হয় সারা ভসের প্রদর্শনের দ্বারা যা পরবর্তীতে তার দলের অন্য সদস্যরা অনুসরণ করে।
আন্দোলন এর মাধ্যমে মহিলা ক্রীড়াবিদরা কিভাবে তাদের শরীর প্রদর্শন করবেন খেলার সময়ে এই ব্যাপারে তাদের পথ প্রসস্থ হয়।
পাশ্চাত্যের উদারপন্থীরা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে ‘ড্রেস-কোড’ এর বিধিনিষেধ সম্পর্কে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। বিষয়টিকে তারা গণতন্ত্র, ব্যক্তিগত পছন্দ ও মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ দেখেছেন। কিন্তু অলিম্পিক্স ও অন্যান্য ক্রীড়া ক্ষেত্রে যা ঘটে চলেছে তা নির্লজ্জ যৌনতার নামান্তর।
ভারতে, দেখা গিয়েছে সরকার ও বড় ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রচারের ফলে ক্রিকেটের সম্পর্কে মানুষের প্রচণ্ড উৎসাহ। কিন্তু শুধু ক্রিকেট খেলাই যথেষ্ট ছিল না, তাদের প্রয়োজন ছিল অর্ধ-পরিহিত নারীদের টিকিট বিক্রি ও মিডিয়া প্রচারের জন্য।
সঙ্ঘ পরিবার সহ অন্যান্য সংস্কারপন্থীরা এই বিষয়ে গালভরা বুলি আওড়ান, ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলেন, ব্যক্তিকে শাস্তি দেন। কিন্তু তারা এই নির্লজ্জ পরিধানবিধি ও অশ্লীল রীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন না। তারা সাম্রাজ্যবাদ ও ব্যবসায়িক স্বার্থের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করেন না। ভারতীয় নারীবাদী ও প্রগতিশীলেরা এই নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। এমনকি, মূলধারার মিডিয়াও কোনও প্রশ্ন তোলেনি। উপরন্তু তারা বিষয়টিকে উপভোগ করেছে এবং নারী প্রতিযোগীদের অনাবৃত দেহ পণ্য হিসেবে বিক্রি করেছে।
Courtesy: countercurrents.org