বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[রাজ্য]

[রাজ্য]

অভয়া আন্দোলন: কথোপকথন
ডা. তমোনাশ চৌধুরীর সাক্ষাৎকার

অভয়া আন্দোলন: কথোপকথন
ডা. তমোনাশ চৌধুরীর সাক্ষাৎকার

ঊর্মিমালা

photo

শ্রমজীবী ভাষা: অভয়া মঞ্চ কি?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: অভয়া মঞ্চ হল ৯ অগস্ট নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে মানুষের আন্দোলন চলতে চলতে একসঙ্গে হওয়ার একটা জায়গা। শুরুতে পাঁচটি চিকিৎসক সংগঠনের যে যৌথ মঞ্চ আছে মূলত সেই জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গলের আহ্বানে বেশ কয়েকটা বড় কর্মসূচি হয়েছিল, যাতে যুক্ত হচ্ছিল বহু সংগঠন। যেমন কর্মচারীদের সংগঠন, আইনজীবীদের, শিক্ষকদের, শ্রমিক, নাগরিক বা এলাকাভিত্তিক সংগঠন বা শুধুমাত্র অভয়া আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কিছু সংগঠন। সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ছিল ১ অক্টোবর কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্রসদন পর্যন্ত মিছিল, যেখানে প্রথমে পুলিশ ১৬৩ ধারা দেয়, মামলা করে শেষ অবধি মিছিল হয়। সেখানে প্রায় ৫৭-৫৮টি সংগঠন আমাদের সঙ্গে পা মেলায়। মিছিলের পর তাঁদের নিয়ে আমরা কিছু রিভিউ মিটিং করি। সেসময়ই দ্রোহের কার্নিভালের পরিকল্পনা হয়। সরকারি বিসর্জন কার্নিভালের দিন অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর। যেহেতু পুজোটা এবার আমাদের কাছে ছিল একটা প্রতিবাদ। সেই কার্নিভালেও আমাদের মামলা করে অনুমতি পেতে হয়। সেখানে প্রায় ৮০টির মতো সংগঠন যুক্ত হয়। এরপর ২৮ অক্টোবর আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসে একটি মিটিং করে অভয়া মঞ্চ গঠিত হয়। বর্তমানে যুক্ত সংগঠনগুলির মোট সংখ্যা ১১৪।

শ্রমজীবী ভাষা: এই আন্দোলন কি 'অরাজনৈতিক'? অভয়া মঞ্চ কি ‘অরাজনৈতিক’?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: অভয়া মঞ্চ কোনও রাজনৈতিক দল নয়। এর কোনও কোনও অংশীদারের কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে, কিন্তু সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের শাখা সংগঠন আমাদের অভয়া মঞ্চে নেই। ন্যায়বিচারের আন্দোলন কখনো অরাজনৈতিক হতে পারে না। কারণ উল্টোদিকে যারা আছেন, যাদের কাছে ন্যায়বিচার চাইছি সেই সরকার এবং সরকার যারা চালান তারা রাজনৈতিক শক্তি। এই আন্দোলন নিশ্চিতভাবেই একটা রাজনৈতিক আন্দোলন। কিন্তু অভয়া মঞ্চ সর্বোতভাবে অদলীয়।

শ্রমজীবী ভাষা: কি বিচার চাওয়া হচ্ছে?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: প্রথমত অবশ্যই অভয়ার নৃশংস হত্যার বিচারের দাবিতে এই আন্দোলনের শুরু। এরপর আমরা দেখলাম আমাদের রাজ্যে ফারাক্কা, জয়নগর, জয়গাঁ অসংখ্য জায়গায় একের পর এক এরকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। তাছাড়াও নারীনির্যাতনের ঘটনাও আমাদের রাজ্যে আকছার হয়ে যাচ্ছে। তাই সামগ্রিকভাবে অভয়ার ন্যায় বিচারের সঙ্গে এগুলিও যুক্ত আছে।

শ্রমজীবী ভাষা: এখন তো CFSL রিপোর্ট সামনে আসায় বিতর্ক বাড়ছে। কি ধরণের বিচার পাওয়া যাবে বলে মনে করেন?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: যারা অভয়াকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুন করেছে, ‘যারা’ কথাটি আমি জোর দিয়েই বলছি কারণ একজন ব্যক্তির পক্ষে অতগুলো আঘাত করে মাত্র ২২-২৩ মিনিটের মধ্যে খুন করা সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি এতে অনেকে যুক্ত। সুতরাং প্রকৃত দোষীদের এবং এই ঘটনা যাদের পরিকল্পনায় ঘটেছে তাদের খুঁজে বের করা, তৃতীয়ত এই ঘটনার তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে যারা যুক্ত আছে, এই তিন ধরণের লোককে চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করাটাই আমাদের কাছে ন্যায়বিচারের দাবি।

শ্রমজীবী ভাষা: এই আন্দোলনে বিপুলসংখ্যক স্বতঃস্ফূর্ত মানুষকে টেনে আনার পিছনে শুধু কি প্রচারমাধ্যম? নাহলে সংগঠন ছাড়া, রাজনৈতিক দল ছাড়া এই কিভাবে বিরাট জমায়েত সংগঠিত হল?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: এই এত মানুষের প্রতিবাদে সামিল হবার প্রথম কারণ দীর্ঘদিন ধরে ছোট ছোট অত্যাচার অন্যায় চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও মানুষ হয়তো প্রতিবাদে বেরোবার পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বলতে পারেন, মানুষের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ যন্ত্রণার অগ্নুৎপাতের উৎসমুখ হয়েছিল আরজিকরের ঘটনা।
৯ তারিখেই কিছু প্রতিবাদ হয়েছিল, বামপন্থী গণসংগঠন দেহটাকে আটকে রাখার চেষ্টা করেছিল যাতে আরেকবার পোস্টমর্টেম করা যায়। কিন্তু এই আন্দোলনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছেন অভয়ার মা-বাবা, তাঁদের শক্তিশালী দৃঢ় অবস্থান। মা-বাবার এই ‘মেনে না নেওয়ার’ মনোভাব আন্দোলনকে একটা অভিমুখ দিয়েছে।
একটি সাধারণ পরিবারের নানান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে একমাত্র মেয়েকে বড় করা, ডাক্তারি পাশ করে মেয়েটির MD করতে যাওয়া - সন্তানকে ঘিরে একটা স্বপ্ন গড়ে ওঠা, এবং স্বপ্নটা যখন প্রায় পূরণের পথে তখন তাঁকে হত্যা করা। এটাই মানুষকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। এরসঙ্গে মানুষ connect করেছিল। বেশিরভাগ মানুষ মনে করেছে এটা যেন তাঁদের বাড়ির মেয়েরই ঘটেছে। মানুষ দেখলো আজ যদি এমন ঘটনা আরজিকরের মতো একটা সরকারি হাসপাতালের সুরক্ষিত জায়গায় হয়, সেখানে কেবল ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী থাকে না, অনেক রোগী থাকেন, রোগী বাড়ির অনেক মহিলারা থাকেন, সেখানে ডাক্তারেরই যদি নিরাপত্তা না থাকে, বাকিদের নিরাপত্তা কোথায়?

শ্রমজীবী ভাষা: গণমাধ্যম বিশেষ করে মূলধারার মিডিয়া অভয়া আন্দোলনকে যথেষ্ঠ প্রচার দিয়েছে বা দিচ্ছে। এর কারণ কি?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: মিডিয়ার ভূমিকা নিশ্চিতভাবেই প্রশংসনীয়। মিডিয়া হয়ত অনেক আন্দোলন দেখায় না, কিন্তু অভয়ার নৃশংসতা তাদেরকেও নাড়া দিয়েছে। কারণ মিডিয়াতে যাঁরা কাজ করেন, ১০-১২ কেজি ওজনের ক্যামেরা কাঁধে ঘোরেন, রোদ জল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রিপোর্ট লেখেন, দিনের শেষে তাঁরাও মানুষ। এমনকি মিডিয়া হাউসের ওপরে যাঁরা আছেন তাঁরাও আমার ধারণা দেখেছেন যে এটা সমাজের ক্ষেত্রে একটি মারাত্মক ঘটনা। একারণেই হয়ত তাঁরাও এই আন্দোলনের সঙ্গে থেকেছেন। আর উল্টোদিকে দেখলে, যে খবর মানুষ শোনে সেই খবরটা কিছুটা শোনানোর দায়িত্ব থাকে মিডিয়ার।

শ্রমজীবী ভাষা: গোটা আন্দোলনটি আপাতত কয়েকটি ইস্যুআদায় ভিত্তিক। এই বিপুল জনজোয়ার সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: সমাজ পরিবর্তনটা দৃশ্যমান হয় একটা দীর্ঘ সময়ের পর। কিন্ত সমাজের পরিবর্তনটি প্রতি মুহূর্তে ঘটে। খুব সহজ ভাষায় একটা উদাহরণ দিই: যখন জলটা গরম হয় আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু জলটা গরম হয়ে গেছে বুঝতে পারি যখন সেখান থেকে বাষ্প বেরোতে শুরু করে। সেভাবেই সমাজের পরিবর্তনটা হয়তো আমরা এই মুহূর্তে অনুভব করতে পারছি না, কিন্তু মানুষের মনের মধ্যে পরিবর্তনটা ঘটছে। আমার ধারণা এই ঘটনা সামগ্রিকভাবে রাজ্যের, এমনকি সারা দেশের অনেক মানুষের মনকে নাড়া দিয়েছে এবং সমাজের কিছু পরিবর্তনের কথা তাঁরা ভাবছেন। একটা সময় গিয়ে সেটা দৃশ্যমান হবে, কেবল তখনই বলা যাবে এই আন্দোলনের ফলে ওই পরিবর্তন হয়েছে।

শ্রমজীবী ভাষা: বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররাও এই আন্দোলনের সমর্থনে থেকেছেন। তাঁরা কি সত্যিই বেসরকারি হাসপাতালের দূর্মূল্যতা, ডাক্তার-কর্পোরেট ব্যবস্থার বিরুদ্ধে?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: বেসরকারি হাসপাতালের অনেক ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার যে ব্যয়ভার তার বেশির ভাগটাই কিন্তু হাসপাতালের। চিকিৎসকরা তার একটা অংশ মাত্র পান। শুধু তাই নয় বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের এমনকি চিকিৎসকদেরও পরিবারের চিকিৎসার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যেতে হয় ইএসআই বা সরকারি হাসপাতালে। তাছাড়া বেসরকারি চিকিৎসক জানেন, তাঁর পাশের বাড়ির প্রতিবেশীরই হয়তো আর্থিক সামর্থ্য নেই তিনি যেখানে কাজ করেন সেখানে চিকিৎসা করানোর। তাঁদেরও ভরসা সরকারি হাসপাতাল। আমি নিজে এখনো মনে করি, একমাত্র সরকারি ব্যবস্থাই মানুষের রোগ সারাবার জায়গা হতে পারে। সরকারি ব্যবস্থাটা ভাল না হলে, যাঁদের পকেটে পয়সা আছে যাঁরা চিকিৎসা কিনে নিতে পারেন আর যাঁদের পকেটে চিকিৎসা কেনার পয়সা নেই তাঁদের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য তৈরি হবে। হার্ট অ্যাটাক হয়ে অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে যাঁকে ঠেলা করে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আর যাওয়ার পথে রাস্তার পাশে বড় বেসরকারি হাসপাতালের নিয়ন আলোর বোর্ডে তিনি দেখবেন যে হার্ট অ্যাটাকের প্রথম দু’ ঘন্টার মধ্যে সেখানে ভর্তি হলে তিনি বেঁচে যেতে পারতেন, এই অবস্থা কিন্তু সমাজটাকে ভাল থাকতে দেবে না। এই বৈষম্য আমরা যত কমিয়ে আনতে পারবো সমাজটা তত সুস্থ হবে। যাঁরা ভাবছেন যে অর্থ দিয়ে তিনি সব কিনে নিতে পারবেন সেটা খুব ভুল ধারণা। যাঁরা পিছনে পড়ে থাকছে তাঁদের সঙ্গে না নিতে পারলে, একদিন তাঁরা কিন্তু এমন হ্যাঁচকা টান মারবেন যা সকলকে ফেলে দেবে।

শ্রমজীবী ভাষা: এই আন্দোলনে নার্স, আয়া, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবকর্মী, মর্গ প্রমুখ সহায়কদের নিরাপত্তা, দাবিদাওয়া ও অংশগ্রহণ সম্পর্কে কি ভাবছেন?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: এটা শুধুমাত্র চিকিৎসকদের সুরক্ষার বিষয়ই না। এই আন্দোলনে মহিলা চিকিৎসক, নার্সিংস্টাফদের নিরাপত্তার কথা আছে। সাধারণ মানুষ যাঁরা রোগী রোগিনী হয়ে হাসপাতালে থাকেন তাঁদের নিরাপত্তার কথা আছে। এর বাইরে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে মহিলা ও অন্যান্য কর্মচারী সহ সর্বোপরি আমাদের রাজ্যের সব মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্ন এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। আজ সরকারি হাসপাতালের মতো সুরক্ষিত জায়গায় যদি এমনটা ঘটে তাহলে আমাদের রাস্তাঘাট, বাস ট্রেন ট্রাম, মানুষ অন্যান্য যেখানে কাজ করেন তাঁদের কোথায় নিরাপত্তা? আর নিরাপত্তা শুধু না, এর সঙ্গে আইন শৃঙ্খলারও একটা বড় প্রশ্ন আছে। আমাদের রাজ্য কি ধর্ষক আর খুনিদের মুক্তাঞ্চল হয়ে যাচ্ছে! এই জায়গা থেকে আমাদের এই আন্দোলনকে তীব্র করার দরকার আছে।

শ্রমজীবী ভাষা: ওষুধ বা মৃতদেহ নিয়ে ব্যবসা শুধু কি আরজিকর হাসপাতালে? শুধু কি আমাদের রাজ্যেই?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: জাল ওষুধের ব্যবসা গোটা পৃথিবী জুড়েই একটা এজেন্ডা, এমনকি ব্র্যান্ডেড ওষুধও জাল হতে পারে। সেটা একটা দিক। কিন্তু আমরা যেটা লক্ষ্য করছি, সরকারি অর্থ ব্যয় করে অত্যন্ত নিম্নমানের মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। ওষুধগুলো কেনার পদ্ধতির মধ্যে অনেক ফাঁকফোকর থাকছে। ফলে ওষু্ধের মান নিম্ন এবং কার্যকারিতা কম হচ্ছে। আর মৃতদেহ বা বর্জ্যপদার্থ নিয়ে ব্যবসা যা কিনা কল্পনার বাইরে! হাসপাতালের বর্জ্য পদার্থ যা নষ্ট করার জন্য বেড পিছু টাকা ধার্য করা থাকে, এজেন্সিকে দিয়ে সেটা যথাযথ নিষ্ক্রমণ করানোর জন্য। সেটা না করে রিসাইক্লিং করা হচ্ছে, বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে আমাদের স্বাস্থ্য কতবড় প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে পারেন? সংক্রামক রোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মারণ রোগের সামনে। আমাদের রাজ্যে-দেশে এখন অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আইনানুসারে কোনও পোস্টমর্টেম হতে পারে না, হয় সরকারের তত্ত্বাবধানে। সরকারি কলেজে এনাটমি ডিপার্টমেন্টে অনেক বেওয়ারিস দেহ আসে। অনেকে দেহ দানও করেন সরকারি হাসপাতালে। যা নিয়ে সরকারি কলেজের ছাত্রছাত্রীরা শেখে। যদি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মৃতদেহের প্রয়োজন হয় সেটা তো সরকারি ব্যবস্থাপনাতেই করা যেতে পারে। তা না করে সেই মৃতদেহ বিক্রি বা পাচার করে কোনও ব্যক্তি ব্যবসা করবে? একি ভাবা যায়!

শ্রমজীবী ভাষা: তাহলে কেবল কিছু লোককে বরখাস্ত করে লাভ কি? এই আন্দোলন কি ডাক্তারদের এক লবি থেকে অন্য লবির হাতে ক্ষমতা ট্রান্সফার হওয়ার লড়াই?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: আমাদের রাজ্যের পুরো শিক্ষা দপ্তর জেলে, রেশন দপ্তরের মন্ত্রী জেলে, বড় বড় মাথারা জেলে। পৌরদপ্তরের চাকরি দেওয়া থেকে রাজ্যের গরু, কয়লা, বালি পাচারের জন্য মামলা চলছে। সব জায়গাতেই দুর্নীতির আখড়া তৈরি হয়েছে। আর ৯ আগস্টের ঘটনার পর স্বাস্থ্য দপ্তরের খোলসটা খুলে গেল বলা যায়। অতীতে কেউ হয়তো এনিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি লিখেছেন কিন্তু কিছু হয়নি। কিন্তু ৯ আগস্টের তদন্তে কিন্তু বহু কিছু উঠে আসছে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ বলছে শুধু আরজিকর নয়, বৃহত্তর তদন্ত করা দরকার এবং সিবিআইএর তা করা উচিত। তদন্ত চলছে। দেখা যাক দুর্নীতির শিকড় কতদূর অবধি গেছে।

শ্রমজীবী ভাষা: স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সরকারি বাজেট কি যথেষ্ঠ?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমাদের রাজ্যের স্বাস্থ্য বাজেটেও তার প্রতিফলন। স্বাস্থ্য সেন্ট্রাল ও স্টেট দুজনেরই দায়িত্বের মধ্যে পরে। কিছু রোগ, mostly preventive health, ন্যাশনাল প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত। কিছু সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট গভর্মেন্ট অফ ইন্ডিয়ার অধীনে। কিছু মেডিক্যাল কলেজ স্টেট গভর্মেন্টের ফান্ডিংয়ে চলে।
আর মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে হলে: একটা দিক হচ্ছে রোগ সারানো, আরেকটা দিক হচ্ছে স্বাস্থ্য। সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাস্থ্য হল শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা, ভাল থাকা। শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে ও সামাজিকভাবে ভাল থাকতে হবে। আমার সমাজের চারপাশে যে ঘটনা ঘটছে তার প্রতিফলন তো আমার স্বাস্থ্যের ওপরে পড়ছে। আমার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে পড়ছে, সেটা আমার শারীরিক স্বাস্থ্যকে আঘাত করছে। তাই স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সরকারের শুধু অর্থ না, সামগ্রিক ব্যবস্থা ও তার দৃষ্টিভঙ্গী খুব জরুরি। বাজেট তো অবশ্যই লাগবে, মানে প্রিভেন্টিভ হেলথ কেয়ার, পুষ্টিকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানীয় জল, বাসস্থানের কি ব্যবস্থা করছি। ভ্যাক্সিনেশনের কি ব্যবস্থা করছি। এখানে প্রতি বছর ডেঙ্গুতে কত মানুষ অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছেন, কিন্তু আমরা যদি মশা না মারি, তাহলে শুধু হাসপাতাল গড়ে চিকিৎসা করে ডেঙ্গু নিরাময় করা যাবে না। বাজেট তো নিশ্চয়ই অপ্রতুল তার সঙ্গে বাজেট খরচ করার অভিমুখ, লক্ষ্যটা সঠিক হওয়া খুব জরুরি, কোথায় কতটা খরচ করবো।

শ্রমজীবী ভাষা: কঠোরতর আইন এনে, মৃত্যুদন্ড দিয়ে অপরাধীর মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দুষ্কর্ম থেকে বিরত রাখা যায় কি? অভয়ার আন্দোলনেও এমন দাবি শোনা যাচ্ছে। এ সম্পর্কে অভয়া মঞ্চের মত কি?
ডা. তমোনাশ চৌধুরী: এই নিয়ে দ্বিমত আছে। কি শাস্তি হওয়া উচিত আমরা সেটা সরাসরি বলছি না। আমরা বলছি প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে ভারতীয় সংবিধান স্বীকৃত আইনানুসারে তাদের শাস্তি দেওয়া।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.