বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[রাজ্য]
শ্রমজীবী ভাষা, ১৬ জানুয়ারি, ২০২২— প্রায় দু’বছর হতে চলল করোনা ভাইরাসের আক্রমণের। এর মধ্যে গঙ্গা দিয়ে বহু জল বয়ে গেছে। কখনো তবলিঘি জামাত, কখনো শাহিনবাগ, কখনো দিল্লির সিঙ্ঘু সীমান্তে অবস্থানকারী কৃষকদের দেশে কোভিড ছড়ানোর জন্য দায়ী করা হয়েছে। যারা তবলিঘির কয়েকশো মানুষের জমায়েতকে ‘কোরোনা জিহাদ’এর অভিধা দিয়েছিলেন তারা কেউই গত মার্চ-এপ্রিলে হরিদ্বারের কুম্ভ মেলায় লাখ লাখ পুন্যার্থীদের জমায়েত ও অবগাহনকে কোরোনা-(সন্যাসী) বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেনি। শোনা যাচ্ছে, ভারতে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ এসে পড়েছে। এপর্যন্ত সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে ৩ কোটির বেশি মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে যা সারা বিশ্বে আক্রান্তের ১১%এর মত। এদেশে কোভিডে মৃতের সরকারি সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ, সারা বিশ্বের প্রায় ৯%। যদিও এই পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসের কোনও কারণ আমাদের অভিজ্ঞতাপ্রসূত প্রজ্ঞা ধারণ করে না। আমার ইদানিং এবং অতীতেও বহু রুগীকে দেখেছি যারা কোভিডের পরীক্ষা করায়নি। তেমনি, দেশের মৃত্যু নিবন্ধীকরণের পরিমাণ দেখে বলা হচ্ছে যে, কোভিডে মৃতের সংখ্যা ঘোষিত সংখ্যার ১০ গুণের বেশি। বলা বাহুল্য যে, কোভিড আক্রান্ত বা কোভিডে নিবন্ধীকৃত না হওযা মৃতের সিংহভাগই দরিদ্র মানুষ।
অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি দেখলেই বোঝা যায় যে, কোভিড অতিমারির ফলে কীভাবে দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়ে পড়েছে। খেয়াল করুন বছর খানেক আগের কথা। মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ৫০ হাজার কোটি টাকা তহবিলের বন্দোবস্ত করেছিল। অপরিদিকে দেশের কর রাজস্ব বিভাগের ৫০ জন আমলা দেশের অর্থনীতিকে বাঁচানোর জন্য ধনীদের উপর কর বসানো বা আয়কর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। ‘গরিবের মা-বাপ’ সরকার সেই উপদেশ অগ্রাহ্য করেছে তাই নয়, অমন পরামর্শ দেওযার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এগিয়েছে। দেশের ৬৩ জন শত-কোটিপতিদের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩০ লক্ষ কোটি টাকা। ওই সম্পদের উপরে ১০% সম্পদ কর বসালেই ৩ লক্ষ ক্রেডিট স্যুইসের কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা যেতে পারে। ধনীদের সরকার ছুতে নারাজ। ক্রেডিট স্যুইসের সমীক্ষা অনুসারে ভারতের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় এক হাজার লক্ষ কোটি টাকা। অক্সফ্যামের সমীক্ষা অনুসারে দেশের ১০% মানুষ ওই সম্পদের ৭৭% দখল করে আছে। অর্থাৎ ওই ধনীদের সম্পদের পরিমাণ ৭৫০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। তার উপরে ৫% কর আদায় হলেই ৪লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি পরিমাণ রাজস্ব সরকারের হাতে আসতে পারে। কিন্তু সরকার ভুলেও ওই অতিধনীদের চটাতে রাজি নয়।
কোভিডের ফলে গরিবগুর্বো দারিদ্রসীমার নিচে মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে চলেছে। যদি ২৫% আয়ও কমে তাহলেও আরো ৩৫ কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে চলে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। উপরের ১%, মানুষ যে পরিমাণ সম্পত্তির মালিক নিচের ৭০% মানুষের সম্পত্তি তার ৪ ভাগের একভাগও নয়। কোভিড সঙ্কটের সুযোগে দেশের মানুষকে যে ভয় দেখানো হয়েছে তাতে সমস্ত ওষুধ কোম্পানির মালিকদের সম্পদ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশের মধ্যবিত্তকে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়াতে, ট্রেন বন্ধ রাখাতে শ্রমজীবী মানুষের রোজগার কমলেও টেলিকম কোম্পানির মালিক মিত্তলের সম্পদ বেড়েছে, যেমন বেড়েছে গৌতম আদানির সম্পত্তি। কোভিডের দৌলতে সিরাম ইন্স্টিটুট অফ টেকনোলোজির মালিক সাইরাস পুনাওয়ালার সম্পদ বেড়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকার। মুকেশ আম্বানি নিজের সম্পদ ১ লক্ষ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬ লক্ষ ৬৫ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে গিয়েছেন
কোভিড থেকে বাঁচার জন্য অভিজাত ধনী ‘ভদ্রলোক’এরা নিজেদেরতো ঘরবন্দী করেছেনই, উপরন্তু পরিবহণ, যানবাহনকে বিপর্যস্ত করে নিম্নবিত্তদেরও জোর করে বন্দী করে রেখেছে, সরকারের সঙ্গে সঙ্গত করে। সঙ্গে তাল দিয়েছে প্রচারমাধ্যম, প্রকারান্তরে ওই শ্রমজীবী মানুষদের ভাইরাস ছড়ানোর জন্য দায়ী করে। যে কোনও বাজারের খুচরো বিক্রেতা, ফেরিওয়ালা, গ্রাম থেকে প্রবল কষ্ট করে শহরে কাজে খোঁজে আসা দিনমজুরদের মুখোশহীন মুখকে কোরোনা ভাইরাসের ব্যাপ্তির উৎসমুখ হিসেসবে দেখানো চলেছে সেই শুরু থেকেই। যদি প্রচারমাধ্যমের ছবি ও খবরকে লক্ষ্য করা যায় তাহলে দেখা যাবে ভীড়ের ছবি, মুখোশহীন মুখের ছবির সিংহভাগই নিম্নবিত্ত অঞ্চলের ও শ্রমজীবী জনসাধারণের। ফলে যারা কোভিডের ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরই দায়ী করা হয়েছে কোভিড ছড়ানোর জন্য।
গত দু’বছর ধরে সরকারগুলি কোভিড রাজনীতিতে নিজেদের পারঙ্গম করে তুলেছে। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এ্যাক্টের বাহানায় সমস্ত ধরনের গণতান্ত্রিক প্রতিবাদকে বেআইনী বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কেবল কৃষকদের সামলাতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন, গঙ্গাসাগর মেলা, বারবার হতে থাকলেও কোনও ধরনের মিছিল করতে গেলেই পুলিশের সঙ্গে সঙ্ঘাতে বা বাদানুবাদে জড়াতে হয়েছে। থেমে থাকছে না দেউচা পাচামিতে কয়লা প্রকল্প বা থুর্গায় পরিবেশ ধ্বংসকারী জলবিদ্যুত প্রকল্পের কাজ, কিন্তু ওইসব জনবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে মিছিল করতে গেলেই ওই আইনের কথা বলে তাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলি তাই করোনা ভাইরাসকে আটকানোর বদলে তাকে ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আটকাতেই বেশি উৎসাহী।
ধার্মিক হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত প্রবাদ আছে, “সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার”। অধার্মিকরা এসবের মাহাত্ম্য বুঝতে পারবে না তাই এবছরের গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করার জন্য তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিল মেলা এবছর বন্ধ করার জন্য। সেখানে কাজ হবে না বুঝতে পেরে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। কিন্তু মহামান্য বিচারপতিরা তাঁদের দাবিকে মান্যতা না দিয়ে মেলা চালু রাখার কথা বলেছেন ও নিয়মবিধি মেনে, ভ্যাকসিন নেওয়ার শংসাপত্র দেখিয়ে, আরটিপিসিআর টেস্টে কোভিড নেগেটিভ হয়ে তবে মেলায় যাবার অনুমতির নিয়ম ঘোষণা করেছেন। সেগুলি দেখভালের জন্য দুই সদস্যের একটি কমিটিও তৈরি করে দিয়েছেন। সেই কমিটি নিয়েও কাজিয়া লেগেছে।প্রথমে তিন সদস্যের কমিটিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে রাখা হয়েছিল, পরে তার নাম কাটা গেছে। অন্যদিকে এমাসেই, গঙ্গাসাগর মেলার মোটামুটি সপ্তাহখানেক বাদে, ২২ তারিখে রাজ্যের ৪টি পুরসভার নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। সেটিকে স্থগিত রাখার জন্যেও বিরোধীরা আদালতের দরজায় গেছেন। তা নিয়ে চাপান উতোর চলছে। মামলাটি চলছে এখনো।
উপরোক্ত ঘটনাক্রম দেখিয়ে দেয় যে, রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় থাকা বা মূল বিরোধী পরিসরে থাকা কোনও রাজনৈতিক দলেরই রাজ্য তথা দেশের মানুষের স্বাস্থ্য বা জীবন জীবিকা নিয়ে মাথাব্যথা নেই, রয়েছে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বসে থাকার অদম্য কুৎসিত ইচ্ছা। গত দু’সপ্তাহ ধরে সারা দেশে কোভিড আক্রান্তদের সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। ২৮ ডিসেম্বর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯ হাজার, ১২ ডিসেম্বর তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ গুণ, ২৪০ হাজার। ফলে দেশে কোভিডের ঢল নেমেছে বলাই যায়। পশ্চিমবঙ্গ মোটামুটি সারা দেশের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে, আরেকটু দ্রুত লয়ে; ওই সময়ে দৈনিক কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা সাড়েসাতশ থেকে বেড়ে বাইশ হাজার টপকে গেছে, অর্থাৎ প্রায় ৩০ গুণ হয়েছে। এমতাবস্থায় ঠিক কাদের কথা চিন্তা করে রাজ্য সরকার গঙ্গাসাগর মেলা বা পুর নির্বাচনের কথা ভাবছে? অবশ্যই খেটে খাওযা সাধারণ শ্রমজীবী জনসাধারণের কথা ভেবে নয়। কেননা, নতুন বছরের গোড়াতেই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনুপ্রেরণা’য় তৎকালিন কোভিড বিধির থেকে অনেক কড়া কোভিড বিধি চালু করা হয়। বিদ্যালয় কলেজগুলি যেটুকু খুলেছিল ও খুলছিল তা পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হল। অফিস কাছারিতেও, বিশেষত সরকারি অফিসগুলিতে কর্মীদের উপস্থিতিকে অর্ধেক করে দেওয়া হল, বাকি অর্ধেকের জন্য পুনরায় ঘর থেকে অফিস চালু করা হল।। মনে রাখা দরকার, ওইসব স্কুল কলেজ অফিস চালু থাকলে রাজ্যের শ্রমজীবী মানুষের কাজ জোটে। যেমন, অটো চালক, রিক্সচালক, স্কুলভ্যানের চালক-হেল্পার প্রভৃতির। কাজ জোটে বিভিন্ন ছোট খাবারের দোকান, চায়ের দোকানির, সেখানে কাজ করা মানুষজনের। বারম্বার এগুলিকে বন্ধ করে দিয়ে ওই মানুষদের অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দেওযা হচ্ছে। রাজ্যের সাধারণ মানুষদের এভাবে ‘অনুপ্রাণিত’ না করলেই মুখ্যমন্ত্রীর চলছিল না।
যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে, গঙ্গাসাগর মেলা হলে বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ পাবেন, অন্তত মেলার কয়েকদিন। এযুক্তি ধোপে টেকে না, কেননা, দিনের পর দিন, দুবছর ধরে স্কুল কলেজ বন্ধ রেখে গরিব ছাত্রীছাত্রদের শিক্ষার অঙ্গন থেকে বের করে দিয়ে, ওই শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত লাখো শ্রমজীবী মানুষের রুজিকে ধ্বংস করে বা মাসের পর মাস ট্রেন চালাতে না দিয়ে ওই সাধারণ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক কর্মচারীকে অপরিসীম দুর্দশার মুখে ঠেলে দেওযার বন্দোবস্ত করে পুজো আর মেলার হুল্লোড়ে পয়সা উপার্জনের রাস্তা রাখা আদতেই জীবন জীবিকা নিয়ে রসিকতা। গঙ্গাসাগর মেলাকে এই অতিসংক্রমণের সময়ে বজায় রাখা আসলে হিন্দুদের তুষ্টিকরণ। মুসলমানদের ইদের জমায়েত বা উৎসব বন্ধ করা যায় কারণ তাঁরা বর্তমান প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকে আটকাতে শাসক তৃণমূলকে ভোট দেবে। ফলে হিন্দু ভোটের বড় অংশকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসতে এই হিন্দু তুষ্টিকরণ।
অপরদিকে বিজেপি নামক আদ্যন্ত অসত্যবাদী ও ভোট জেতার জন্য সবধরনের কুৎসিত খেলায় পারদর্শী দলটি গঙ্গাসাগর মেলার প্রশ্নে জোরালো বিরোধিতা না করলেও মিনমিন করে মেলা বন্ধের পক্ষে সওয়াল করছে কারণ গত নির্বাচনে অতিরিক্ত ধর্মের রাজনীতি করে এরাজ্যে পাকা গুটিকে কাঁচিয়ে দিয়ে তার থেকে ভড়ং দেখানোর শিক্ষা নিয়েছে। কিন্তু ওরাই যে গত বছরে হরিদ্বারে বিশালাকার কুম্ভমেলা করে দেশ জুড়ে কোভিড ছড়িয়েছিল তা তো সবারই জানা। ওদের নেতা নরেন মোদিই এরাজ্যে নির্বাচনী প্রচারের সময়ে বাসে করে লোক এনে জনসমাগম ঘটিয়ে কোরোনা ছড়িয়েছিল। পুর নির্বাচন সংগঠনের প্রশ্নে এক অদ্ভুত অবস্থান দেখা যাচ্ছে। কলকাতা পুর নির্বাচনের সময়ে সব কটি পুরসভাকে একত্রে নির্বাচনের আওতায় আনার জন্য বিরোধীরা জোরালো দাবি তুলেছিল। শাসক তৃণমূল সেই দাবিতে কান দেয়নি। এবারে চারটি পুরসভার নির্বাচনের সময়ে অবস্থান পাল্টে ফেলেছে দু’তরফই; তৃণমূল নির্বাচনে আগ্রহী, বিরোধীরা সেই নির্বাচন আটকাতে আদালতের দরজায়। কেবল তাই নয়, বিজেপি নামক শাসক দলটির কাজ আরো ভয়ানক। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট আটকানোর জন্য তাদের কোনও দাবি নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন স্থগিত করার দাবিতে তাঁরা মুখর। যদিও কোভিড পরিস্থিতিতে জনসাধারণের কথা ভেবেই নাকি তাঁদের এই দাবি। একই দল একই সময়ে একই ঘটনার প্রেক্ষিতে দু’রাজ্যে দু’রকম কথা বলছে। ওই বিজেপিই উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বড় বড় সভা করছিল, সেখানে যোগি শতাংশের হিসেবে রাজ্যের ভাগ-বাটোয়ার করেছেন। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন বন্ধ করার জন্য সেই সর্বভারতীয় পার্টির কোনও উচ্চারণ নেই কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে পুরসভা নির্বাচন করোনার জন্য বাতিল করার দাবিতে তারা গলা তুলছেন।
কোভিড নিয়ে রাজনৈতিক চাপান উতোরের মধ্য দিয়ে গরিব নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষদের দুর্দশার কথা তৃণমূল-বিজেপি কেউই ভাবছে না। অসংগঠিত ক্ষেত্রের রুজির তাগিদে আসা শ্রমজীবী মানুষেরা কাজের জায়গায় পৌঁছতে যে অমানুষিক কষ্ট স্বীকার করেছে মাসের পর মাস ট্রেন নিয়মিত চালু না থাকার কারণে তার প্রত্যক্ষদর্শী সকলেই। কোভিডকালে শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রতিদিন, কারণ সরকার বাজারকে চাঙা করার জন্য কর্পোরেটদের বিবিধ মানিটারি পলিসি জনিত সুবিধে দিয়েছে। সেই সব সুবিধে নিয়ে সময়ে সময়ে আলোচনা হয়েছে এই পত্রিকাতেই। সুবিধেজনক শর্তে ঋণ দেওয়ার ফলে শেয়ার বাজারে নগদের জোগানকে বাড়িয়ে রাখা হয়েছে, শেয়ারের দাম বেড়েছে। আপাতভাবে ভারতীয় অর্থনীতিকে সুখী দেখানো হয়েছে। কিন্তু গরিবদের জন্য কেবল চালগমের ব্যবস্থা ছাড়া কিছুই প্রায় দেওয়া হয়নি, লকডাউনের একদম গোড়ায় তিনমাস মহিলাদের হাতে ৫০০ টাকা মাসিক ও তিনটি গ্যাসের সিলিন্ডার ছাড়া। ফলে, স্বাস্থ্য-শিক্ষার মত আবশ্যিক প্রয়োজনগুলিও মেটানো সম্ভব হয়নি। নিম্নবিত্ত জনসাধারণ যখন কাজ হারিয়ে বা রুজি হারিয়ে ধুঁকছে সেই সময়েই কর্পোরেট মালিকদের মুনাফা ও সম্পদ ক্রমাগত বেড়েছে। ওষুধের কোম্পানিগুলি, আম্বানি-আদানি-মিত্তল, তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলি মুনাফা বাড়িয়েছে। ফলে গরিবদের বিপদে ফেলেই ভারতীয় অর্থনীতি এগিয়েছে, অতিধনীদের মুনাফা ও সম্পদের ক্রমবর্ধমান গতিকে ভর করে। কোভিড অর্থনীতি শেষ বিচারে ধনী বনাম গরিব, শোষক বনাম শোষিতেই রূপান্তরিত হয়েছে।