বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[রাজ্য]
রেলকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট লোকাল ট্রেনে সবাইকে উঠতে দিতে হবে— এই দাবিতে পশ্চিমবঙ্গের নানা এলাকায় সম্প্রতি একের পর এক বিক্ষোভ হয়েছে। নানা জায়গায় রেল অবরোধ হয়েছে। এই ঘটনাগুলিকে বিক্ষোভ, অবরোধের প্রচলিত ছকে ফেললে ভুল হবে। খেটে-খাওয়া মানুষের জীবন-সঙ্কট যেখানে পৌঁছেছে তাকে আজ আর কোনও ছকে ফেলা যায় না। পেটের দায়ে কাজে বেরোতে হবে, অনেককেই অনেক দূর যেতে হবে, অথচ বাস নেই, ট্রেন নেই— আক্ষরিক অর্থেই এ এক অ-সম্ভব পরিস্থিতি। এই অবস্থায় যানবাহন চালানোর দাবি উঠবে, সেই দাবিতে এক জায়গায় বিক্ষোভ হলে অন্য জায়গাতেও সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে, এমনটা অবধারিত ছিল না কি? তার ওপরে যদি নির্ধারিত কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেন চলে, অন্যদের যে ট্রেনে চড়ার অধিকার নেই, তা হলে হাজার হাজার ‘যাত্রিসাধারণ’ দিনের পর দিন সেটা মেনে নেবেন? তাঁদের চোখের সামনে দিয়ে বিশেষ যাত্রীদের নিয়ে বিশেষ ট্রেন চলে যাবে, তাঁরা নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন?
যাঁরা বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন তাঁদের কারও কারও কণ্ঠস্বর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। কথাগুলো সোজা এবং সহজ। তিন জনের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য শোনা যাক। দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলের এক কর্মী বলেছেন, ‘‘কাজে না গেলে ছাড়িয়ে দেবে বলেছে। ট্রেন ছাড়া যাওয়ার উপায় নেই। মরিয়া হয়েই প্রতিবাদ করতে হচ্ছে।’’ আর এক জন একটি বাড়িতে শিশুর দেখাশোনা করেন, তাঁর বক্তব্য, ‘‘কাজে না গিয়ে উপায় নেই। ট্রেন ছাড়া যাব কী ভাবে?’’ তৃতীয় জন: ‘‘রান্নার কাজ করে পেট চলে। এখন সব খুলে গিয়েছে, তাই কাজে না গেলে ছাড়িয়ে দেবে বলেছে।’’ তাঁর ছোট্ট জিজ্ঞাসা: ‘‘কাজ না করলে খাব কী?’’ তিন জনের কথা, কিন্তু আসলে একটাই কথা। সেই কথায় কোনও জটিল নীতি বা তত্ত্বের চিহ্নমাত্র নেই, সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙার জন্য শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজন নিয়ে অনন্ত তর্কের উপক্রমণিকাও সেখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না, তাঁরা একেবারে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্কটের কথাটুকুই জানিয়েছেন, কী উপায়ে সমস্যার সুরাহা হবে সেই আকুল প্রশ্ন তুলেছেন। নীতি, তত্ত্ব ও তর্কের অরণ্যে সেই প্রশ্নের সদুত্তর মিলবে না। অসহায় এবং নিরুপায় মানুষের প্রশ্নের সদুত্তর খুঁজতে চাইলে তার সহায় হতে হয়, তার জন্য উপায় করে দিতে হয়। অন্য পন্থা নেই।
অথচ, নিছক কাণ্ডজ্ঞানই বলে দেবে যে, গণ-পরিবহণ বন্ধ করে দিলে গরিব মানুষ বিপাকে পড়েন, কারণ নিজস্ব যানবাহনের ব্যবস্থা করার সামর্থ্য তাঁদের নেই, এমনকি কয়েক জন মিলে যৌথভাবেও নয়। গণ-পরিবহণ বন্ধ থাকার ফলে গত দু’মাস অগণিত মানুষের দৈনন্দিন রুজি রোজগারের প্রচণ্ড সমস্যা হয়েছে, অনেকের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ, অনেকে কাজ হারিয়েছেন। গত বছরের প্রথম পর্বের তুলনায় এ-বারের অচলাবস্থা গরিবের পক্ষে আরও দুর্বহ, কারণ এই এক বছরে যার যেটুকু সঞ্চয় ছিল সেটাও চলে গেছে। এবং, দেশের নানা অঞ্চলে বেশ কিছু সমীক্ষায় যে সব তথ্য-পরিসংখ্যান উঠে এসেছে তা থেকে একটা ব্যাপার নিঃসন্দেহে বলা যায়— অতিমারির ফলে সর্বত্র অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষের আয় অনেকটা কমে গেছে এবং অদূর ভবিষ্যতে সেই উপার্জন আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশাও ক্ষীণ। পশ্চিমবঙ্গে এই ভাটার টান বেশি বই কম নয়, কারণ এ রাজ্যে অর্থনীতি দুর্বল, শ্রমিক সংগঠন আরও দুর্বল, ফলে শ্রমের বাজার এমনিতেই কমজোরি। এই অবস্থায়, অগণিত মানুষ নিরন্তর ভেবেছেন, লকডাউনের পালা কবে সাঙ্গ হবে, তাঁরা কাজে যোগ দিতে অথবা কাজের খোঁজে বেরোতে পারবেন। তাই, জুন মাসের মাঝামাঝি যখন দোকানপাট, শপিং মল, এমনকি নাগরিকের প্রাতর্ভ্রমণের জন্য পার্ক অবধি খুলে দেওয়ার বেশ কিছুটা বন্দোবস্ত হল, তখন সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই আশা করেছিলেন, এবার গণ-পরিবহণও চালু করা হবে।
সংক্রমণ কম রাখার জন্যও তার দরকার ছিল। কাণ্ডজ্ঞানই বলে যে, মানুষকে যদি কাজে যেতে হয় এবং একই সঙ্গে ভিড় কম রাখতে হয়, তা হলে সমস্ত যানবাহন চালু রাখা দরকার, প্রয়োজনে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি পরিমাণে চালু রাখা দরকার। সে জন্য হয়তো বাড়তি খরচ হবে, কম যাত্রী নিয়ে যানবাহন চালাতে গেলে সরকারি পরিবহণের লোকসান বাড়বে, বেসরকারি পরিবহণকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, কিন্তু সাময়িকভাবে সে-দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। অথচ করা হল ঠিক উল্টো। রাজ্য সরকার গণ-পরিবহণ বন্ধই রাখলেন। এবং বহু দিক থেকে বহু সমালোচনা সত্ত্বেও অন্তত জুনের শেষ অবধি হুকুম নড়েনি। ক্রমাগত বিক্ষোভের মুখে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে রাজ্য সরকার অনুমোদন করলে তাঁরা লোকাল ট্রেন চালাবেন, অনুমোদন মেলেনি। আপাতত তেমন অনুমোদন না-মেলার সঙ্কেতই প্রবল।
রাজ্য সরকার বলছেন, সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় সেই জন্যই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। ভয়টা এই যে, যানবাহন চালু করে দিলে অনেক বেশি মানুষ বেরিয়ে পড়বেন, বিপদ বাড়বে। এই ভয়কে অহেতুক বলা যাবে না। এটাও ঠিক যে নবাগত ‘ডেল্টা স্ট্রেন’-এর কল্যাণে সে-ভয় বাড়ছে, কিংবা বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন শুধু ভয়ের যুক্তিতে চলবে কেন? সরকার যথেষ্ট তৎপর হলে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সাহায্য নিলে মানুষকে অবশ্যই অনেক দূর অবধি দায়িত্বপরায়ণ করে তোলা সম্ভব, যাতে তাঁরা প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ মেনে চলেন। বস্তুত,এই কাজটাকেই একটা সত্যিকারের সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ ছিল, গণতান্ত্রিক প্রশাসন ও রাজনীতির চালকরা সমস্যাকে সুযোগে পরিণত করার চ্যালেঞ্জ নিতে পারতেন। গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তাঁরা সেটা করেননি, সম্ভবত আদৌ ভাবেননি। কোনও দিনই ভাবেননি। অতিমারির গোড়া থেকেই যদি এমন সামাজিক উদ্যোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হতো, তা হলে আজ প্রশাসনকে এমন ভয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হতো না।
যানবাহন চালু করার দাবির জবাবে প্রশাসনের উপরমহল থেকে একটি যুক্তি দেওয়া হচ্ছে— যে কর্মীরা কাজে বেরোচ্ছেন, তাঁদের যাতায়াতের ব্যবস্থা তো কোম্পানিই করছে। এই যুক্তির দৌড় ক’ইঞ্চি? ক’জন কর্মী এই সুযোগ পান? কাজে না যেতে পারলে কাজ চলে যাবে বলে যাঁরা প্রাণ হাতে করে দৌড়চ্ছেন তাঁরা কর্মী নন? তাঁদের কথা সরকার ভাববেন না? তাঁদের কথাই তো সরকারের আগে ভাবা দরকার! অথচ তাঁদের জন্য দৃশ্যত ‘নিজের ভাবনা নিজে ভাবো’ নীতিই সাব্যস্ত হল?
এটা কেবল পরিবহণ নীতির প্রশ্ন নয়, বৃহত্তর এবং গভীরতর একটি মানসিকতার প্রশ্ন, যা শ্রমজীবী মানুষের বাস্তব সমস্যা এবং প্রয়োজনকে তার প্রাপ্য গুরুত্ব দেয় না। আজ গণ-পরিবহণের ক্ষেত্রে সেটা বিশেষভাবে প্রকট হয়েছে, কিন্তু তার লীলা সামগ্রিক এবং সর্বব্যাপী। কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন, পানীয় জল, পরিবেশ— বিভিন্ন বিষয়েই সরকারি নীতির পরতে পরতে তার প্রতিফলন ঘটে চলে। এই মানসিকতা আকাশ থেকে পড়ে না, এর গভীরে থাকে নীচের তলার শ্রমিক-কর্মীদের প্রতি সমাজের উচ্চকোটিতে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি। নীতি যাঁরা তৈরি করেন তাঁরা ওই উচ্চকোটির বাসিন্দা। তাঁরা সকলেই স্বভাবত নিষ্ঠুর বা হৃদয়হীন, এমন নয়। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতি তাঁদের দায়বোধ বড়জোর এক ধরনের সীমিত এবং শিথিল মানবিকতার সীমাতেই সীমিত থাকে। গরিব মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছেন না, এইটুকু নিশ্চিত করতে পারলেই সেই মানবিকতা সন্তুষ্ট হয়। গরিব মানুষ ঠিকঠাক কাজ পাচ্ছেন কি না, সেই কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং পরিবেশ তাঁর নাগালে আছে কি না, তাঁর স্বাস্থ্যের ন্যূনতম নিরাপত্তা আছে কি না, তাঁদের সন্তানদের লেখাপড়া সম্পূর্ণ শিকেয় উঠেছে কি না, সব মিলিয়ে এবং সবার উপরে তিনি আত্মমর্যাদার সঙ্গে জীবন যাপন করতে পারছেন কি না, সেই চিন্তায় চিন্তিত হওয়ার অভ্যাস আমাদের সমাজের উপরতলায় প্রচলিত নয়, বস্তুত ‘স্বাভাবিক’ নয়। ফলে সরকারি নীতিতে শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং কাজ তার প্রাপ্য মর্যাদা পায় না, স্বীকৃতিও পায় না। অতিমারির কালেও সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। গণ-পরিবহণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত তারই একটি দৃষ্টান্ত।
আর একটি দৃষ্টান্ত মেলে শিক্ষাজগতের হাল দেখলে। ‘অনলাইন’ পড়াশোনার খুদকুঁড়ো নিয়ে অথবা সেটুকুও না পেয়ে যে বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থী এক সম্পূর্ণ অন্ধকারের সম্মুখীন, পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার ফলে যাদের একেবারে সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে, তাদের জন্য সরকারি কর্তাদের কোনও সত্যিকারের দুশ্চিন্তার লক্ষণ চোখে পড়েনি, একটা গোটা বছর সময় হাতে পেয়েও তাদের শিক্ষা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাগিদে কোনও আপৎকালীন বন্দোবস্ত করা হয়নি, শুধুমাত্র পরীক্ষা-হীন মূল্যায়নের খুঁটিনাটি পদ্ধতি স্থির করা ছাড়া পড়াশোনা বিষয়ে আর কিছু নিয়েই সরকারের কোনও ভাবনা আছে বলে টের পাওয়া যায়নি। দৃশ্যত, সরকারি নীতির মূল মন্ত্র: এক দিন সব ঠিক হয়ে যাবে। গণ-পরিবহণ নিয়েও বোধ করি এই একই মন্ত্রের সাধন চলছে। এক দিন হয়তো সত্যিই সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু কাদের জন্য ঠিক হবে, আর কারা ভুলের চোরাবালিতে তলিয়ে যাবে, প্রতিনিয়ত তলিয়ে যাচ্ছে, তার হিসেব শাসকরা রাখেন কি? আদৌ রাখতে চান কি?
চাইলে, অবিলম্বে তাঁদের একটা নতুন অভ্যাস অর্জন করতে হবে। মানুষের কথা শোনার অভ্যাস। বিশেষ করে, যারা সরকারি নীতির সমালোচনা এবং বিরোধিতা করে, ক্ষমতাবানের অনাচারের প্রতিবাদ করে, শাসককে নীতি ও আচরণ সংশোধনের পরামর্শ দেয়, তাদের কথা শোনার অভ্যাস। এবং, এই সব কিছু মিলিয়ে, শ্রমজীবী মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও দাবিগুলোকে মন দিয়ে শুনে এবং খোলা মনে বিচার করে সেই অনুসারে প্রশাসন ও উন্নয়ন পরিচালনার অভ্যাস। এটা আর কিছুই নয়, যথার্থ গণতান্ত্রিক প্রশাসনের প্রাথমিক শর্ত। কিন্তু আমাদের দেশে এই শর্ত পালনের ধারা জোরদার নয়, লঙ্ঘনের রীতিই প্রবল। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার তার অ-তুলনীয় দৃষ্টান্ত, সে-কথা নতুন করে বলার আর কিছু নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শাসকদের স্বভাবে এবং আচরণেও গণতান্ত্রিকতার ঘোর অনটন। ভোটে জিতে এক বার ক্ষমতার আসনে বসার পরে বিরোধী মত শোনার আর কোনও দায়িত্ব নেই— এই ধারণা এ-রাজ্যের শাসকমহলে দীর্ঘদিন প্রচলিত, বস্তুত দৃঢ়মূল। ক্রমে সেই ধারণা সর্বময় কর্তৃত্বের রূপ নিয়েছে, যে কর্তৃত্ব সমস্ত বিষয়ে প্রশ্নহীন আনুগত্য দাবি করে এবং সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধী মত শুনলেই বলে: আমাদের এত লোক ভোট দিয়েছে, ওদের দেয়নি, আমরাই তো সব কিছু ঠিক করব। যে-বাণী শুনলেই দূর থেকে প্রতিধ্বনির মতো ভেসে আসে সেই পুরনো আখরগুলি: আমরা ২৩৫, ওরা ৩০!
এই সাংখ্যবাদী দম্ভের সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হয়েছে আর একটি সুর: মানুষের কিসে ভাল সেটা সরকার জানে, এবং নিশ্চিত জানে, কোনও কিছু তার অজানা নয়, তাই সে যা করে তাতেই মানুষের ভাল হবে, বিরোধীরা আসলে কেবল শাসকদের প্রতি অসূয়ার কারণেই বিরোধিতা করে, সরকারের সদিচ্ছাকে স্বীকার করতে পারে না। এই আহত এবং অভিমানী ‘সদিচ্ছা’র আস্তরণ সরালেই ধরা পড়ে এক নিরেট অহঙ্কার। সেই বস্তুটি বিসর্জন দিতে না পারলে অন্যের কথা, বিশেষত বিপরীত কথা শোনার অভ্যাস তৈরি করা অসম্ভব। স্কুলকলেজ কবে খোলা যাবে, কী পদ্ধতিতে খোলা যাবে, গণ-পরিবহণ কবে চালু হবে, কতটা চালু হবে, কী ভাবে রাজ্যের ভেঙে পড়া অর্থনীতির হাল ফেরাতে হবে, এই সব নিয়ে নানা মত থাকতে পারে। কিন্তু সেই নানা-মতের আলোচনার মধ্যে দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াই গণতন্ত্রের ধর্ম। বস্তুত, অতিমারির মোকাবিলার সমগ্র আয়োজনটি নিয়েই সামাজিক পরিসরে আলোচনার বিরাট অবকাশ ছিল এবং আছে, নানা ভাবে সেই আলোচনা চলছে। শাসকরা সেই আলোচনাকে মর্যাদা দিলে, আলোচনায় যোগ দিলে প্রশাসন সমৃদ্ধ হয়, গণতন্ত্র সত্যকারের ‘আলোচনা-ভিত্তিক শাসন’ (গভর্নমেন্ট বাই ডিসকাশন) হয়ে উঠতে পারে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আলোচনা-হীন শাসনের ধারাটিই উত্তরোত্তর প্রবল হয়েছে, আমরা তাতেই অভ্যস্ত হয়েছি। স্কুল খোলা থেকে বাস-ট্রেন চালু হওয়া, যে কোনও ব্যাপারে আমরা এখন দৈববাণীর অপেক্ষায় থাকি এবং পরস্পরকে বলি: কোনও প্রশ্ন নয়, নো কোয়েশ্চেন।