বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[রাজ্য]
ফরাসি দার্শনিক মাইকেল ফুকো দেখিয়েছিলেন, অষ্টাদশ শতকেও ফ্রান্স বা ইংল্যান্ডে গুরুতর অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের শাস্তি দেওয়া হত সর্বসমক্ষে, সেই শাস্তি ছিল নিষ্ঠুর নির্যাতনের প্রদর্শনী। অপরাধীর পেট কেটে তার নাড়িভুঁড়ি বার করে তার চোখের সামনেই পুড়িয়ে দেওয়া, হাত পা কেটে নেওয়া, ঘোড়ার সঙ্গে হাত-পা বেঁধে দু’দিকে ঘোড়া ছুটিয়ে দেহটা ছিঁড়ে ফেলা, এমন নানা বীভৎস প্রক্রিয়ায় মানুষকে মারা হত, কারণ অপরাধীর শরীরকে চরম নিপীড়ন করে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতাই ছিল রাষ্ট্রের ক্ষমতার প্রদর্শন। কিন্তু উনিশ শতকের গোড়া থেকেই এমন প্রকাশ্য শাস্তির প্রথা উঠে যেতে থাকে, শতকের মাঝামাঝি এসে তা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ফুকো তার কারণ ব্যাখ্যা করে বলছেন, শাস্তির নিষ্ঠুরতার প্রদর্শনী মানুষের মনে আতঙ্কের সঙ্গে সঙ্গে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করে, যার জন্য অপরাধীকে শাস্তি সহ্য করতে দেখে তার প্রতি ঘৃণার বদলে, তার প্রতি করুণা, এমনকি তার গৌরবের অনুভূতি তৈরি করে, এবং বৈধ শাস্তিদাতাই জনতার চোখে ঘৃণ্য হয়ে ওঠে।
শাস্তির এই আতিশয্যের জন্যই কি সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচীর গ্রেফতারির পর তাঁর প্রতি রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন, নাগরিক সংগঠন, সাংবাদিকদের নানা সংগঠনের এমন স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেখা গেল? সাম্প্রতিক কালে নাগরিক সমাজকে এমন সমস্বরে কথা বলতে শোনা যায়নি। নানা সময়ে নানা সাংবাদিকের উপর ক্ষমতাশালী নেতাদের রোষ নেমে এসেছে। মানহানি থেকে শুরু করে চুরি, ডাকাতি, পুলিশের কাজে বাধাদান, অশান্তি উস্কানি, এমন নানা ধারা আরোপ হয়েই চলেছে। তার বাইরেও মারধর তো রয়েইছে — গত বছর দশেক এমন কোনও নির্বাচন হয়নি যেখানে সাংবাদিক প্রহৃত হননি, ক্যামেরা আছড়ে ভাঙা হয়নি। আক্ষেপ, এক সময়ে এমন ঘটনা যে কোনও সাংবাদিকের সঙ্গে ঘটলে সব সাংবাদিক প্রতিবাদে রাস্তায় নামতেন। কিন্তু রাজনীতির মেরুকরণের ছায়া গত কয়েক বছরে পড়েছে সাংবাদিকতার জগতেও। নেতার ঘনিষ্ঠ মহলে থাকতে না পারলে খবর না পাওয়ার ভয়, নানা উপহার ও সুযোগের হাতছানি, সর্বোপরি বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার রাজনৈতিক অবস্থান সাংবাদিকদের ঐক্যকে বেসামাল করেছে।
কিন্তু এই সবই পিছনে চলে গেল ৬ সেপ্টেম্বর সকালে। সে দিন ভোর রাতে খড়্গপুরে দেবমাল্যের বাড়িতে হানা দিল পুলিশ। যদিও তিনি রোজই কাজে বেরোন, এবং ছোট-বড় সব প্রশাসনিক পদাধিকারীদের সঙ্গেই নিয়মিত দেখা করেন, তবু যে ভাবে তাঁর বাড়িতে পুলিশ ‘অভিযান’ চালাল, সেটা দেখার মতো। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ক্লিপে বাড়ির জানলা দিয়ে পুলিশের টর্চের আলো, আর হাঁকাহাঁকি শুনে মনে হতে পারে, ঘরের ভিতরে সাংবাদিক নয়, রয়েছে কোনও দুর্ধর্ষ অপরাধী, যাকে বহু দিন ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। বন্ধু-সহকর্মীরা ফোনে যা পরামর্শ দেয়, সেই অনুসরণে সাংবাদিক দরজা খোলেননি।
সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচী থানায় যান, সঙ্গে তাঁর বন্ধু সাংবাদিকরা। তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করা হয় দেবমাল্যকে। অভিযোগ, তিনি নাকি অনেকের সামনে এক আদিবাসী মহিলার প্রতি দুর্ব্যবহার করেছেন, শ্লীলতাহানি করেছেন। পুলিশ তফসিলি জাতি-জনজাতির উপর নির্যাতনের কঠোর ধারা প্রয়োগ করেছে দেবমাল্যের উপর, যা জামিন-অযোগ্য। বুধবার বেলা চারটেয় শোনা গেল, সাত দিনের জেল হেফাজত হয়েছে দেবমাল্যের। এ কথা পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিকদের কানে পৌঁছলে তাদের শিরদাঁড়া দিয়ে নেমে যায় ঠান্ডা স্রোত। আরও এক সাংবাদিক জেলে। আরও এক সাংবাদিক এক দুরূহ, দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সামনে। আরও এক সাংবাদিকের জীবন বদলে গেল এক মুহূর্তে। যদিও ১৪ সেপ্টেম্বর জামিনে ছাড়া পেয়েছেন দেবমাল্য, কিন্তু বাড়িতে ফেরার অনুমতি পাননি। খড়্গপুর টাউন থানা এলাকাতেই তিনি আপাতত ঢুকতে পারবেন না।
দেবমাল্যের উপর আরোপিত ধারার কঠোরতার পাশাপাশি, কতগুলো এমন সংযোগ সামনে এসেছে, যা পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, এবং ক্ষুব্ধ করেছে অনেক সাংবাদিককে। এফআইআর দায়ের হওয়ার ঠিক আগে খড়্গপুর মিউনিসিপ্যালিটি এলাকার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে গৃহস্থ পাড়ার মধ্যে চোলাই ব্যবসা বন্ধ করার দাবি তুলে খড়্গপুর টাউন থানায় অভিযোগ করেন ওই এলাকার কয়েকজন মহিলা। তাঁদের একজন বাসন্তী দাস। তাঁদের সেই দাবি, এবং স্থানীয় কাউন্সিলর তপন প্রধান, ও পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষের বক্তব্য নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি রিপোর্ট করেন দেবমাল্য, যার শিরোনাম ছিল, ‘রমরমিয়ে চোলাই ব্যবসা, নির্বিকার প্রশাসন’ (২৬ অগস্ট)। পর দিন রাতে ওই এলাকায় পুলিশ হানা দেয়, এবং কয়েকজন মদ্যপকে গ্রেফতার করে। মদের দোকান যারা চালান, তারা আগেই সতর্ক হয়ে যাওয়ায় তাদের ধরা যায়নি বলে পরে জানিয়েছে পুলিশ। সেই ঘটনার পর রবিবার (২৭ অগস্ট) অবৈধ কারবারিরা অভিযোগকারিণী বাসন্তী দাস, বন্দনা পাত্রের বাড়িতে চড়াও হয়, এবং দরজায় লাথি মেরে, হুমকি দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি করে। ওই মহিলারা জানান, বারবার ফোন করলেও পুলিশ আসেনি। এ বিষয়েও দেবমাল্য একটি রিপোর্ট লেখেন, যা প্রকাশিত হয় এই শিরোনামে, ‘অভিযোগকারীদের বাড়ি ঘেরাও চোলাই কারবারিদের, হুমকিও’ (২৯ অগস্ট)।
দেবমাল্যের রিপোর্টে যদিও চোলাই কারবারিদের নামের উল্লেখ নেই, কিন্তু স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, অভিযোগকারিণী মহিলার পরিবার ওই কারবারিদের মধ্যে ছিলেন। দেবমাল্য এবং বাসন্তী দাস, দু’জনের বিরুদ্ধেই ওই আদিবাসী মহিলা কদর্য গালাগাল, এবং কাপড় ধরে টানার অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশের কাছে। তাঁর এফআইআর-এর শেষ বাক্য, “ওরা মিথ্যা অভিযোগ করে আমাদের ওপর যে আমরা বাড়িতে মদ তৈরি করি।” দেবমাল্যের মতো, বাসন্তী দাসকেও আদিবাসী মহিলার উপর নির্যাতনের ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনিও জেল হেফাজতে।
কিছু তথ্য এখনই চোখে পড়ছে, যেগুলো ঠিক খাপ খায় না। আদিবাসী মহিলার অভিযোগ, তাঁর উপরে অত্যাচার হয় রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। দেবমাল্যের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাসন্তী দাসের বাড়িতে অবৈধ কারবারিরা হামলা করেন রবিবার সন্ধ্যাতেই। তাঁকে উদ্ধৃত করে দেবমাল্যের সংবাদের রিপোর্টে লেখা হয়েছে, “রবিবার সন্ধ্যা থেকে যে ভাবে এই চোলাই কারবারিরা বাড়িতে হামলা করেছে, তাতে আমরা শঙ্কিত। ... প্রায় এক ঘণ্টা পরে যখন পুলিশ এসেছে তখন হামলাকারীরা অভিযোগ প্রত্যাহারের হুমকি দিয়ে চলে গিয়েছে। ওরা বলেছে এই কারবার বন্ধ করবে না।”
যে সময়ে বাসন্তী দাসের বাড়িতে আক্রমণ হচ্ছে, তিনি (এবং অন্যান্য অভিযোগকারিণী মেয়েরা) শঙ্কিত হয়ে পুলিশকে ফোন করছেন, সেই সময়ে — বা তার খুব কাছাকাছি সময়ে — তিনি হামলা করছেন এক আদিবাসী মেয়ের উপর — এমনই দুটি বয়ান পাশাপাশি উঠে আসছে।
দেবমাল্যের গ্রেফতারের খবর জানার পর থেকে তাঁর সমর্থনে অনেকে সমাজমাধ্যমে পোস্ট লিখছেন। নিপাট ভদ্র, পেশার প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত দেবমাল্য তাঁর স্বভাবের জন্য সকলের প্রিয় ছিলেন। নিউজ় ১৮-এর ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিক লিখেছেন, “পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বালি মাফিয়া, চোলাই চক্র, খড়্গপুরের রেল মাফিয়া সহ একাধিক বিষয়ে, মেরুদণ্ড সোজা রেখে জনস্বার্থে, বুক চিতিয়ে, ধারাবাহিক খবর করেছে দেবমাল্য।” বহু সাংবাদিকের মনের কথার প্রতিফলন করে এই পোস্টে তিনি দেবমাল্যের উপরোক্ত দুটি খবরের ক্লিপিং তুলে দিয়ে বলেছেন, খবর দু’টির সঙ্গে গ্রেফতারির সম্পর্ক রয়েছে কিনা, আশা করা যায় তারও বিচার হবে আদালতে। এনকেটিভি-র সাংবাদিক ইন্দ্রজিৎ সাহু লিখেছেন, “শেষ পর্যন্ত দেবমাল্যদাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ।” তাঁর প্রশ্ন, বিগত দশ বছর ধরে তাঁর এলাকায় প্রতিদিন মদ, গাঁজা, জুয়ার আসর বসে। প্রতিবাদ করা, খবর করার জন্য রোষের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। প্রশাসনের তরফে কিছু ধমক-চমক করা হয়, অভিযুক্তদের ধরা হয় না।
৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কলকাতার প্রেস ক্লাব একটি বিবৃতি দেয়, যেখানে বলা হয় যে, সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহ করার অধিকার যেন সুরক্ষিত থাকে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিবাদের পাশাপাশি ট্রেড ইউনিয়ন এআইটিইউসি-র পক্ষে অশোক ঘোষ, নাগরিক মঞ্চের পক্ষে নব দত্ত চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে, মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর, দুর্গাপুরে সিডিপিআরএস-এর তরফে পথসভা করা হয়। কলকাতা প্রেস ক্লাব, ইন্ডিয়ান জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, পাঁশকুড়ায় ইউনাইটেড জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, কোচবিহার সদর মহকুমা প্রেস ক্লাব-সহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন প্রতিবাদ করে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তফসিলি জাতি ও জনজাতির উপরে অত্যাচার প্রতিরোধের আইনে দেবমাল্যকে গ্রেফতারের নিন্দা করেছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। রাজ্য সংগঠনের কার্যনির্বাহী সভাপতি তেজকুমার টোপ্পো একটি দৈনিক সংবাদপত্রকে বলেন, ‘‘এই ধারা আমাদের উপরে অত্যাচার কমানোর লক্ষ্যে তৈরি হলেও আমরা যখন এই ধারা প্রয়োগের দাবি তুলি, তখন তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় না। অথচ পুলিশ নিজের ইচ্ছায় এই ধারার অপপ্রয়োগ করে।’’ এ ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই হয়েছে বলে দাবি তেজকুমারের। পুলিশ যদিও সে কথা স্বীকার করেনি।
কোনও অপরাধকেই লঘু করে দেখা উচিত নয়, বিশেষত মেয়েরা যখন নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, অমর্যাদার অভিযোগ আনেন, তখন পূর্ণ গুরুত্ব দিয়ে তা তদন্ত হওয়া দরকার। অভিযুক্ত যে-ই হোন, তার বিরুদ্ধে অবশ্যই তদন্ত করতে হবে। পুলিশ যদি মনে করে, তদন্তের স্বার্থে আটক করা প্রয়োজন আছে, অবশ্যই তা করা দরকার। সে বিষয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু যে প্রশ্নটা রয়ে যায় তা হল, যে কারওকে আটক করলেই তা কি ন্যায়ের স্বার্থে করা হয়?
সে প্রশ্নটা সম্প্রতি তুলেছে স্বয়ং সুপ্রিম কোর্ট। কেবল সন্দেহের বশে এক ব্যক্তিকে বারো মাস বন্দি রাখার জন্য তেলেঙ্গানা পুলিশকে ভর্ৎসনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এবং ‘প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন’, অর্থাৎ অপরাধ ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কায় আগাম গ্রেফতারির ক্ষেত্রে হাইকোর্টগুলির জন্য একটি গাইডলাইন দিয়েছে ৪ সেপ্টেম্বর। আগাম গ্রেফতারির নির্দেশ দেওয়ার সময়ে যে কথাগুলি মনে রাখতে হবে, তেমন দশটি শর্ত ওই গাইডলাইনে উল্লেখ করেছে। তার মধ্যে একটি, পুলিশ বা আটক-কারী কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ মনোযোগ প্রয়োগ করে পরিস্থিতিকে দেখেছে, এবং আইনের পরিধি-বহির্ভূত কোনও কারণের জন্য আটক করেনি, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর একটি, পুলিশ স্বাধীন ভাবে কাজ করছে, অপর কোনও কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
ন্যায়ের সামনে সকলেই সমান, কিন্তু গত কয়েক বছরে ভারতে আইনের নানা ধারা আরোপ করে যে ভাবে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে, তাতে প্রশাসনের ভীতিপ্রদর্শনের ইচ্ছা এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতা বড়ই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অপরাধীকে নিয়ন্ত্রণের চাইতেও, অপরাধের সংবাদকে নিয়ন্ত্রণ করায় যেন কেন্দ্র, এবং নানা রাজ্যের সরকার বেশি আগ্রহী। হুমকি থেকে হত্যা, সবই ‘রুটিন’ হয়ে উঠছে। মানহানি থেকে চুরি-ডাকাতি, কোনও না কোনও মামলা দেওয়া হচ্ছে। প্রেস স্বাধীনতার সূচকে ভারতের দ্রুত পতন হচ্ছে।
কোনও মহিলার নির্যাতন, বিশেষত প্রান্তিক শ্রেণীর মহিলার উপরে অপরাধের বিচার অবশ্যই হওয়া দরকার। কিন্তু বাস্তব এই যে, সন্ত্রাস, রাষ্ট্রদ্রোহ, মাদক আইন কিংবা আদিবাসীদের বিরুদ্ধে অপরাধের কঠোর ধারা আরোপ করা মাত্রই সাংবাদিকের শাস্তি শুরু হয়। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার প্রক্রিয়া এমন দীর্ঘ, জটিল এবং খরচসাপেক্ষ হয়ে ওঠে, যে অভিযোগ সত্য কি অসত্য, সে প্রশ্নটা চলে যায় পিছনে। কোনও মতে জামিন পাওয়াই একমাত্র প্রার্থনা হয়ে ওঠে। তার জন্য দরবার করতে হয় পুলিশ-প্রশাসনের কাছেই। আর সাংবাদিককে প্রার্থীর ভূমিকায় নামিয়ে আনাই তো প্রশাসনের লক্ষ্য। এই বিপন্নতার সামনে দাঁড়িয়ে সংবাদের স্বাধীনতা, সাংবাদিকের অধিকারের সব কথাই অসার বলে মনে হয়। বহু সাংবাদিক যে সত্য প্রকাশের ঝুঁকি নিতে রাজি নন, তা আর আশ্চর্য নয়। এর পরেও যে বহু সাংবাদিক কাজ করে চলেছেন, সত্যি কথা না বলে ছাড়ছেন না, এটাই হয়তো আশ্চর্য।