বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[রাজ্য]

[রাজ্য]

ভাইরাস সংক্রমণের বায়োলজি এবং বায়োলজিকে ছাড়িয়ে

ভাইরাস সংক্রমণের বায়োলজি এবং বায়োলজিকে ছাড়িয়ে

জয়ন্ত ভট্টাচার্য

photo

পশ্চিমবাংলা এই মুহূর্তে অ্যাডেনভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিপর্যস্ত। আইসিএমআর-নাইসেড-এর সম্প্রতি প্রকাশিত যৌথ সমীক্ষা জানাচ্ছে, ভারতের ৩৮% অ্যাডেনোভাইরাস রোগী পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। এমনকি সুপরিচিত ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান-এ একটি খবরের (১৫ মার্চ, ২০২৩) শিরোনাম হল – “ভাইরাস আউটব্রেক ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল লিভস ১৯ চিল্ড্রেন ডেড অ্যান্ড থাউজেন্ডস ইন হসপিটাল”। গ্রাম এবং দূরাগত অঞ্চল থেকে আগত বাবা-মা-আত্মীয়স্বজনদের ঠাঁই হয়েছে বিসি রায় শিশু হাসপাতালের ভেতরে। কোভিড-উত্তর বিশ্বে আজ অ্যাডেনোভাইরাসের সংক্রমণ এ বছরে যেমন, সামনের বছর হয়তো অন্য কোন ভাইরাসের, যেমন রেস্পিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাসের, সংক্রমণ ঘটবে। পরের বছর আবার অন্য কোন ভাইরাস। বাস্তবে এ ঘটনা ভারতে এই মুহূর্তেই ঘটছে। মহারাষ্ট্রে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। ১৬ মার্চ, ২০২৩ অব্দি পাওয়া খবর অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে ২৩ বছরে্র এক ডাক্তারি ছাত্র সহ মোট তিনজনের মৃত্যু হয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের এই সাবটাইপের সংক্রমণে। ১৯৬৮ সালে বিশ্বে শেষবারের মতো H3N2 সংক্রমণের অতিমারি হয়েছিল।
এখানে আমাদের ভাবতে হবে, মানুষের দেহে নিত্যনতুন ভাইরাসের যে সংক্রমণ ঘটছে, বিশেষ করে কোভিড অতিমারি-পরবর্তী পর্যায়ে, এ কি নিতান্ত অনিবার্য ছিল? কিংবা পশ্চাদপটে অন্য কোন কার্যকলাপ মানুষের বাস্তুতন্ত্রের ভাইরাসের প্যাণ্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছে। একটি সংক্রমণের গভীরে গিয়ে বিচার করলে সংক্রমণের সাথে জড়িয়ে থাকে একাধিক বিষয় – (১) সংক্রমণের বায়োলজি, (২) সংক্রমণ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত সহ বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য কাঠামো এবং চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মীর দল কতটা প্রস্তুত (কোভিডের সময় তাবড় দেশের স্বাস্থ্য কাঠামোর একেবারে ছিন্নভিন্ন অবস্থা আমরা সবাই দেখেছি), এবং (৩) সংক্রমণগুলোর “ড্রাইভার” কি?
যদি বায়োলজির চোখ দিয়ে দেখি, তাহলে অ্যাডেনোভাইরাস হল ৯০-১০০ ন্যানোমিটার দৈর্ঘের একটি ডিএনএ ভাইরাস যার কোন ‘এনভেলপ’ নেই এবং আকৃতিতে যার ২০টি মুখ রয়েছে। ৫০ রকমের বেশি অ্যাডেনোভাইরাস পাওয়া যায়, যার মধ্যে টাইপ ৩, ৪ এবং ৭ সবচেয়ে সংক্রামক। আবার ৮, ১৯, ৩৭, ৫৩ এবং ৫৪ টাইপের ভাইরাস চোখের সংক্রমণ বেশি ঘটায় (‘কেরাটোকনজাংটিভাইটিস’)। এই সংক্রমণে যেমন সাধারণ সর্দি-কাশি-গলার অসুবিধে-জ্বর হতে পারে, অন্যদিকে তেমনি নিউমোনিয়া থেকে বমি-পায়খানাও হয়। হয় দীর্ঘকালীণ কাশি। বেশিরভাগ শিশু এবং বয়স্কদের মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ, দুর্বল ইমিউনিটির জন্য উপযুক্ত প্রতিরোধ শরীর গড়ে তুলতে পারেনি এবং, ফলশ্রুতিতে, নিউমোনিয়ায় মৃত্যু ঘটেছে। রোগীর সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ (বাবা-মা-র ক্ষেত্রে যেটা ঘটবেই), বাতাস-বাহিত হয়ে হাঁচি-কাশি থেকে খরে পড়া ভাইরাসের দূরে ছড়িয়ে পড়া, এমনকি আক্রান্তের মল-বাহিত হয়েও (যেমন ডায়াপার পাল্টানোর সময়) সংক্রমণ ছড়ায়। H3N2 ভাইরাস থাকে শূকরের শরীরে। আমেরিকার বিশ্বখ্যাত মান্য সংস্থা ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেবশন (সিডিসি)’ একে ‘ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাস’ বলেছে, অর্থাৎ মূল ভাইরাসের বদল হয়ে নতুন চরিত্র লাভ করেছে, ভাইরাসের এই সাবটাইপটি তৈরি হয়েছে।
নেচার, সায়ান্স, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন, নিউ ইয়র্ক টাইমস সহ বিশ্বের প্রথম সারির বন্দিত জার্নাল এবং সংবাদপত্র বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের নিজেদের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র থেকে মানুষের সমাজে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে – সর্বগ্রাসী কর্পোরেট লোভ, প্রকৃতির ওপরে প্রভুত্ব করার উদগ্র বাসনা, এবং কৃষি জমির চরিত্রের রূপান্তর। সমস্ত ভাইরাসই নিজেদের বাস্তুতন্ত্রে হাজার হাজার ধরে বেজায় সুখে ছিল।
আজকের বিভিন্ন ভাইরাস মানুষের শরীরে এলো কি করে? এর কোন সরল, একরৈখিক, একমাত্রিক উত্তর নেই। এখানেই আমাদের ভাবতে হবে নিওলিবারাল অর্থনীতি, পুঁজির সর্বময় অস্তিত্ব এবং কর্পোরেট পুঁজির প্রয়োজনে কিভাবে বছরের পর বছর ধরে প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলো মুনাফার লীলাক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এবং তার ফলে বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক ভারসাম্য ভেঙ্গেচুড়ে গেছে, প্রকৃতির নিজস্ব বাসিন্দারা মানুষের দেহে এদের নতুন বাসস্থান খুঁজে নিয়েছে।
আমরা আমাদের নিজেদের দেহের অভ্যন্তর থেকে শুরু করে প্রকৃতি এবং আমাদের চারপাশের জীবজগৎ সবার ওপরে শুধু প্রভুত্ব করে যাবার দুর্দম আকাঙ্খা পোষণ করি। সবার সাথে আমাদের যুদ্ধ। আমরা জিনকে শিকার করি। শিল্পবিপ্লব-উত্তর পৃথিবীতে প্রকৃতিকে পুঁজির দাস এবং ক্রয়যোগ্য পণ্য হিসেবে দেখার যে মানসিকতা ৩০০ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী মানসিকতায় সঞ্চারিত হয়েছে তার গোড়া ধরে টান না মারলে আমাদের মুক্তি ও পরিত্রাণের কোন সম্ভাবনা নেই। এ লড়াই ভাইরাসের সাথে লড়াইয়ের চেয়েও শক্ত, দীর্ঘস্থায়ী।

সংক্রমণের ড্রাইভারসমূহ


১৮২০-৩০-এর দশক থেকেই বিশেষত ইংল্যান্ডে এবং আমেরিকায় অতি ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরাশক্তির জরাজীর্ণ অবস্থা জমিতে সার প্রয়োগের চাহিদা বিপুলভাবে বাড়িয়ে তুললো। ১৮২৩ সালে ইংল্যান্ডে হাড়ের আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪,৪০০ পাউন্ডের, ১৮৩৭ সালে বেড়ে হল ২৪,৬০০ পাউন্ড। একইসঙ্গে বিভিন্ন পাখির নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ মলের (guano) চাহিদা বৃদ্ধি পেতে শুরু করল। ১৮৪১ সালে লিভারপুল বন্দরে ১,৭০০ টন গুয়ানো আমদানি করা হয়েছিল, ১৮৪৭-এ ২২০,০০০ টন। শুধু গুয়ানোর সরবরাহ অবাধ রাখার জন্য আমেরিকা ১৮৫৬ সালে আমেরিকার কংগ্রেসে শিল্পপতিদের চাপে ‘গুয়ানো আইল্যান্ড অ্যাক্ট’ পাশ করিয়ে ফেললো। ১৮৫৬ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে ৯৪টি দ্বীপখণ্ড এবং পাহাড় দখল করে নিল। যদিও সরকারিভাবে ৬৬টির কথা স্বীকার করা হল। ২০২২ সালেও আমেরিকার দখলে থাকা এরকম দ্বীপের সংখ্যা ৯টি। একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে – “জমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে সে পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে রোগের dynamics-কে প্রত্যক্ষত বা অপ্রত্যক্ষত বদলে দেবার (‘মনোকালচার’)। জমির প্রসারণের ফলে বাশি করে অণুজীবেরা মানুষের বসবাসের অঞ্চলে প্রবেশ করবে। জমি ব্যবহারের পরিবর্তনের ফলে জনসমষ্টির বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটছে, চরিত্রে র্পরিবর্তন হচ্ছে, ইমিউনিটির প্রতিক্রিয়া এবং পারস্পরিক সংযোগের অর্থাৎ রোগের বাহক ভেক্টর এবং মানুষের এবং রোগের ধারকদের ধরন বদলে যাচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, ১৮৭০ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে অকল্পনীয় গতিতে পাম তেল উৎপাদনের বৃদ্ধি ঘটেছে। ২০১৪ সালে কয়েকজন গবেষক EcoHealth জার্নালে (২৩.০৫.২০১৪) এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন “Anthropogenic Land Use Change and Infectious Diseases: A Review of the Evidence” শিরোনামে। এ গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে – “জমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে সে পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে রোগের dynamics-কে প্রত্যক্ষত বা অপ্রত্যক্ষত বদলে দেবার। জমির প্রসারণের ফলে বাশি করে অণুজীবেরা মানুষের বসবাসের অঞ্চলে প্রবেশ করবে। জমি ব্যবহারের পরিবর্তনের ফলে জনসমষ্টির বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটছে, চরিত্রের্পরিবর্তন হচ্ছে, ইমিউনিটির প্রতিক্রিয়া এবং পারস্পরিক সংযোগের অর্থাৎ রোগের বাহক ভেক্টর এবং মানুষের এবং রোগের ধারকদের ধরন বদলে যাচ্ছে।”
মনে রাখতে হবে, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জমিতে চক্রবৃদ্ধি হারে ডিডিটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের ইনসেক্টিসাইড এবং পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে অণুজীবেরা বেঁচে থাকার জন্য পরিবর্তিত ইকোলজির সাথে নতুন করে খাপ খাইয়ে নেয়। ফলে এদের জিনের মধ্যে মিউটেশন ঘটে। আবার নতুন কীটনাশক, আবার নতুন মিউটেশন এবং নতুন রোগ। ভাইরাসের বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে আবির্ভাব ছাড়াও ম্যালেরিয়ার নতুন প্রজাতি জন্ম নিচ্ছে আমাদেরকে আক্রমণের জন্য। এমনকি পশু-পাখিরাও এ আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা।
২০০২-৩-এ সার্স-কোভ-১-এর অতিমারির পরে ২০০৯ সালে Predict Project বলে একটি প্রোজেক্ট তৈরি করা হয় প্রাণী জগৎ থেকে কি পরিমাণ নতুন ভাইরাস মানুষের দেহে এবং বসবাসের অঞ্চলে প্রবেশ করছে সেটা দেখার জন্য। মানুষ-প্রকৃতি-জীব জগৎ এই স্বাভাবিক ভারসাম্য অপূরণীয়ভাবে ভেঙ্গে যাবার ফলাফল হচ্ছে এই ভাইরাসদের মনুষ্য জগতে প্রবেশ। কিন্তু লস এঞ্জেলস টাইমস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী (২.০৪.২০২০) এই প্রোজেক্ট ট্রাম্প প্রশাসন বন্ধ করে দেয়। বন্ধ করে দেবার আগে USAID-এর সাহায্যপুষ্ট এই প্রোগ্রাম ১,২০০ বিভিন্ন ভাইরাসকে চিহ্নিত করে যার মধ্যে ১৬০টি নোভেল করোনাভাইরাস ছিল। য়ুহান সহ পৃথিবীর ৬০টি ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানী এবং টেকনিশিয়ানদের ট্রেইনিং দেওয়াও শুরু করেছিল। কিন্তু কলমের এক আঁচড়ে এরকম একটি মূল্যবান প্রোজেক্ট বন্ধ করে দিল। বিজ্ঞানের ক্ষতি হল, গবেষণা স্তব্ধ হল। পরিণতিতে কোন প্রতিরোধ ছাড়া বারংবার আক্রান্ত হবে মানুষ।

ভারতের স্বাস্থ্যকাঠামোর বর্তমান চেহারা


নেচার-এ প্রকাশিত প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে – ভারতে লকডাউন ঘোষণা হবার পরে প্রতিমাসে টিবি রোগী সনাক্তকরণ উদ্বেগজনকভাবে ৭০% হ্রাস পেয়েছে। ২০২১-এর মার্চ অব্দি, হু-র হিসেব অনুযায়ী, চিকিৎসা না-হওয়া এবং সনাক্ত না-হওয়া বিশ্বব্যাপী টিবি রোগীর সংখ্যা অন্তত ১০,০০,০০০। ফলে অনেক বেশি করে টিবি সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ছে। ২০২০-তে সম্ভবত ৫০০,০০০ টিবি রোগী মারা গেছে।
পোলিয়ো রোগীর সংখ্যা ৫৫৪ (২০১৮) বেড়ে ১,২১৬ (২০২০) হয়েছে। শিশুদের রুটিন ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রাম মাসের পর মাস বন্ধ হয়ে গেছে। ভারতের ক্ষেত্রে, ২০১৬ সালে সংসদীয় কমিটির প্যানেল রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি ১০,১৮৯ জন মানুষের জন্য ১ জন সরকারি ডাক্তার, প্রতি ২,০৪৬ জনের জন্য সরকারি হাসপাতালে একটি বেড বরাদ্দ এবং প্রতি ৯০,৩৪৩ জনের জন্য একটি সরকারি হাসপাতাল – এই হচ্ছে সেসময় পর্যন্ত স্বাস্থ্যের চিত্র। ২০২০ সালের মার্চ মাসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৩৭ কোটি মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে বেড রয়েছে ৭,১৩,৯৮৬টি। এর অর্থ দাঁড়ায়, প্রতি ১০০০ ভারবাসীর জন্য ০.৫টি করে বেড। বিহারে আবার এই সংখ্যা ১০০০-এ ০.১১, দিল্লিতে ১.০৫ – বৈষম্য সহজেই চোখে পড়ে। এরসাথে যুক্ত করতে হবে, হু-র দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, এইমস থেকে পাস করে বেরনো ৫৪% ডাক্তার বিদেশে পাড়ি দেয়।
এখানে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বুঝে নেওয়া ভালো। “গোরু নিয়ে রচনা”-র মতো স্বাস্থ্যে-সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যার মূলে আছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা অবহেলিত থাকা, ব্যাপারটা সবক্ষেত্রে এরকম নয় নিশ্চয়ই। কিন্তু প্রাথমিক স্বাস্থ্যের ওপরে প্রাথমিক গুরুত্ব আরোপ না করলে আমরা জনস্বাস্থ্যের অধিকাংশ সমস্যারই সমাধান করতে পারবো না। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার ওয়েব সাইটে “প্রাইমারি হেলথ কেয়ার” শীর্ষক ঘোষণার শুরুতেই বলা হয়েছে – “নিজের পকেট থেকে স্বাস্থ্যের জন্য বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ১০% বা তার বেশি টাকা খরচের দরুন বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যে তলিয়ে যায়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যের ‘কেয়ার’-এর হস্তক্ষেপ বাড়াতে পারলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশের ৬ কোটি মানুষের জীবন বেঁচে যাবে এবং গড় আয়ুষ্কাল ২০৩০ সালের মধ্যে ৩.৭ বছর বাড়বে।”
ফলাফল? একটি দেশের আভ্যন্তরীন সম্পদ উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। মানুষ বেশি কর্মক্ষম হবে। এর চেয়ে বেশি প্রাপ্তি আর কি হতে পারে? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে “হেলথ সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভঃ রিফর্মস অ্যান্ড অ্যাচিভমেন্ট ২০০৫-২০০৯” নামে একটি ২০ পৃষ্ঠার পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল – “সমস্ত ‘বেসিক’ মেডিসিন সবকটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মজুত রয়েছে যাতে আরও বেশি বহির্বিভাগের রোগীরা ওষুধ পায়।” এছাড়াও প্রসূতি মায়েদের যত্ন ইত্যাদি নিয়ে নান তথ্য রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে?

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.