বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[রাজ্য]
শ্রমজীবী ভাষা, ১৬ অগাস্ট, ২০২২— শিক্ষার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর অন্যতম। ভারতবর্ষের সংবিধান লিঙ্গ-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল ভারতীয় নাগরিককে এই অধিকার দিয়েছে। সকলের জন্য শিক্ষা— এই নীতিকে বাস্তবায়িত করতে তৈরি হয়েছে ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’ নামক প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সহায়তায় নিয়মিতভাবে প্রণয়ন করা হচ্ছে জাতীয় শিক্ষানীতি, কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষিত হচ্ছে শিক্ষাখাতে ব্যয়ের খতিয়ান, যেটি এই বিপুল দেশের বিশাল জনসংখ্যার তুলনায় অকিঞ্চিৎকর বা অপর্যাপ্ত হলেও একটি নিয়মিত বিনিয়োগ। একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকদের উন্নয়নের অন্যতম মাপকাঠি হল তাঁদের শতকরা কত অংশ শিক্ষিত, কতজন অর্ধ শিক্ষিত বা নিরক্ষর তার মূল্যায়ন। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য এই দুটি ব্যবস্থা যথোপযুক্ত গুরুত্ব সহকারে রাষ্ট্রের দ্বারা বিবেচিত হলে, প্রয়োজনানুসারে বাজেট বরাদ্দ ধার্য হলে এবং তা আপামর জনসাধারণের বিকাশের জন্য ব্যবহৃত হলেই কোনও দেশ বা জাতি উন্নত থেকে উন্নততর অর্থনৈতিক অবস্থায় উত্তরণ ঘটাতে পারে। অন্যথায় দেশ বা জাতি অর্থনৈতিক মন্দার পঙ্কিল আবর্তে শুধু ঘুরপাক খায়, ঋজু মেরুদণ্ড নিয়ে জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনের দাবিদার হতে পারে না। বর্তমান ভারতবর্ষ এমনই একটি অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য এবং সঙ্কট বর্তমান ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ গভীর সমস্যাগুলির অন্যতম। এবং এই সমস্যা বহুমাত্রিক। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলির মধ্যকার বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব যে এই বহুমাত্রিক সমস্যাবলীকে প্রকট করেছে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু পৃথক পৃথক রাজ্যগুলির অভ্যন্তরেও সমস্যার বহুমাত্রিকতা বর্তমান। আমাদের পশ্চিমবঙ্গ তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। আমরা বর্তমান নিবন্ধে একে একে এই বহুমাত্রিক সমস্যার স্বরূপ উদঘাটন করার চেষ্টা করব এবং তারপরে বিশ্লেষণ করব শিক্ষাক্ষেত্রের এই সংকট কীভাবে অন্যসকল জাতীয় ক্ষেত্রগুলিতে প্রধানত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিপর্যয় ঘনিয়ে এনেছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি: কেন্দ্র-রাজ্য মতানৈক্য
জাতীয় শিক্ষানীতি শিক্ষাব্যবস্থার একটি কার্যকরি পরিকল্পনা যেটি ভারতবর্ষের শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নতির দিকনির্দেশ করে। ‘শিক্ষা’ ভারতীয় সংবিধানের অনুষঙ্গী ধারার মধ্যে পড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্যসরকারগুলি এর প্রধান নিয়ামক। এতদসত্ত্বেও, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা দু’ বছর আগে প্রকাশিত ‘নতুন শিক্ষানীতি ২০২০’-কে অনুমোদন দিয়েছে সংসদের উভয় সভায় যথেষ্ট আলোচনা না করেই এবং রাজ্যসরকারগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় ব্যতিরেকে। শিক্ষা বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের বর্তমান দ্বন্দ্বের সূত্রপাত এখান থেকেই।
‘নতুন শিক্ষাক্রম ২০২০’তে যে মূল পরিবর্তনগুলোর কথা বলা হয়েছে এবং যে পরিবর্তন রাজ্যসরকারগুলোর পক্ষে এক কথায় মেনে নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না তা হল, ১) পুরোনো ১০+২ শিক্ষাক্রমকে পরিবর্তন করে ৫+৩+৩+৪ শিক্ষাবর্ষে নিয়ে আসা যার দ্বারা ‘অতি শৈশবের যত্ন বা শিক্ষা’ বা প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যাচর্চার ভাবনা এই নতুন শিক্ষানীতিতে যুক্ত করা হয়েছে। ২) স্কুল শিক্ষায় দ্বিতীয় যে পরিবর্তনটি করা হয়েছে তা হল, পাঠক্রম, অতিরিক্ত পাঠক্রম বা সহ-পাঠক্রমের কোনও সুনির্দিষ্ট সীমারেখা করা হয় নি, সীমানা টানা হয়নি কলা, বিজ্ঞান বা সহিত্যের বিভাগে অথবা বৃত্তিগত বা তত্ত্বমূলক পাঠক্রমে। এই ধরনের সুনির্দিষ্ট সীমারেখা না থাকার ফলে ছাত্রছাত্রীরা সত্যই সুশিক্ষিত হবে না কি ‘জ্যাক অব অল ট্রেড, মাস্টার অব নান’ হয়ে উঠবে তা সময়ই বলে দেবে। ৩) স্কুলশিক্ষায় এযাবৎকালের ত্রি-ভাষা নীতি বলবৎ থাকবে, জোর কোরে কোনও রাজ্যে হিন্দি বা অন্য কোনও ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। শিশুরা যে তিনটি ভাষা শিখবে তা রাজ্যের, অঞ্চলের অথবা ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের উপরেই নির্ভর করবে। শুধুমাত্র তিনটি ভাষার মধ্যে অন্তত দুটি দেশজ ভাষা হতে হবে। এইখানে এসে শিক্ষানীতি ভাষাগুলির একটি সারণি তৈরি করে এবং সেই সারণিতে ‘সংস্কৃত’ ভাষাকে একটি উচ্চ আসনে বসায়। এই পরিকল্পনাটি আরএসএস-বিজেপির একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ যা হিন্দুরাষ্ট্রের ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যদিও ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে কেবলমাত্র ২৪৮২১ জন ভারতবাসী জানিয়েছেন যে তাঁদের মাতৃভাষা সংস্কৃত, যা বিজেপি-র সংস্কৃত ভাষা নিয়ে অতি উৎসাহকে স্তিমিত করে দেয়।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ‘নতুন শিক্ষানীতি ২০২০’ যে নির্দেশগুলো দিয়েছে তা সর্বতোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে মোগল সাম্রাজ্যের অবদান এবং ভূমিকাকে খণ্ডিত এবং খর্বিত করে ইতিহাস রচনার যে প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা আরএসএস–বিজেপির মুসলমানবিদ্বেষ এবং হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের একটি পরিকল্পিত ছক ভাবলে অত্যুক্তি হয় না। নানা অলৌকিক ভাবনার পিছনে অবৈজ্ঞানিক কারণ দর্শানো এবং দেশের ঐতিহ্য ও পরম্পরার সঙ্গে তাকে জুড়ে দেওয়া মোটেই সুস্থ চিন্তার প্রতিফলন নয়। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার প্রদর্শিত শিক্ষাব্যবস্থায় এমন ইতিহাসচেতনা এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ছড়াছড়ি। শিক্ষাক্রমে স্নাতকস্তরে প্রত্যেকবছর শংসাপত্রসহ প্রস্থানের সুযোগ, এমফিল তুলে দেওয়া ইত্যাদি অবশ্যই বিতর্কের অবকাশ রাখে। ‘আন্তর্জাতিকতা’র নামে যেসব বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হচ্ছে তারা আদপেই সম্মানজনক ও উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং তারা বাজার এবং মুনাফার জন্য লালায়িত। এইসমস্ত উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনোর যে খরচ তা সাধারণ ভারতবাসীর নাগালের বাইরে। সর্বোপরি, জাতীয় শিক্ষানীতিতে বারে বারে বলা হয়েছে যে ‘কেন্দ্র এবং রাজ্য একসঙ্গে চেষ্টা করে শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপি-র ৬% সাধারণ বিনিয়োগের যথাশীঘ্র ব্যবস্থা করবে’— কিন্তু এই ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যথেষ্ট মতানৈক্য থাকায় বিনিয়োগে ঘাটতি আগেও দেখা গেছে এবং একই অব্যবস্থা আজও চলছে। শিক্ষানীতির সফল বাস্তবায়নে নীতিসমূহ যেমন বিবেচ্য তেমনি প্রয়োজন সঠিক বিনিয়োগ। বর্তমান শিক্ষানীতি প্রণয়নে এই দুই ক্ষেত্রেই যথেষ্ট অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। এককথায় বলা যায় যে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের টানাপোড়েন ভারতবর্ষের শিক্ষাব্যবস্থার সংকটকে ঘনীভূত করে রেখেছে।
রাজ্যস্তরে সংকটের স্বরূপ
রাজ্যস্তরে শিক্ষায় সংকট এবং দুর্নীতি আমাদের পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ নৈরাশ্যের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থান প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির। যখন আমাদের দেশে সর্বশিক্ষা অভিযান পরিকল্পনা ঘোষিত হয়েছে, ‘সকলের জন্য শিক্ষা’-র বাতাবরণ গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, সেই সময়েই প্রাথমিক শিক্ষার অবহেলিত চেহারা প্রকট হয়ে উঠেছে। গ্রামে গ্রামে বিদ্যালয় নেই, কোথাও কোথাও বিদ্যালয় থাকলেও শিক্ষকের সংখ্যা আনুপাতিক হারে একেবারেই কম, কোথাও আবার একজনমাত্র শিক্ষক শতাধিক ছাত্রের সর্ববিষয়ের শিক্ষাদানের দায়িত্বে নিযুক্ত। অথচ শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাচ্ছেন না অসংখ্য যুবক-যুবতী। দুর্নীতির চোরাপথে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে শিক্ষকপদ। কেবলমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকপদই নয়, পঞ্চম থেকে অষ্টম, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ এমন কি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর শূন্যপদ পূরণেও চলছে টাকার খেলা। এই দুর্নীতি চক্রে জড়িত রাজ্যর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং তাঁর আস্থাভাজন দলীয় সদস্য ও বশংবদেরা। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সারা রাজ্য জুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। এসএসসি, টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থীরা লাগাতার ধর্ণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেধাতালিকার অনেক নীচে যাদের অবস্থান তারা কীভাবে পরীক্ষায় ভালভাবে কৃতকার্য হওয়া প্রার্থীকে ডিঙিয়ে চোরাপথে টাকার বিনিময়ে শিক্ষকের চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন সে বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন বহু কৃতী চাকরি প্রার্থী। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন থেকে রাজ্যসরকারের কাছে এই দুর্নীতির যথোপযুক্ত তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
দু’ বছর অতিমারির কারণে বন্ধ ছিল স্কুলগুলো, ছাত্রছাত্রীরা ভুলে গেছে পঠন-পাঠন, এমনকি অক্ষরপরিচয়, সংখ্যানির্ণয়। অন্যদিকে, রাজ্যের শিক্ষানীতিতে পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার ফলে অনেক সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর সমতুল জ্ঞান অর্জন করতেও অসমর্থ হচ্ছে। শিক্ষাদান এবং গ্রহণের ক্ষেত্রে যে বিরাট খামতি তৈরি হচ্ছে তার থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে খামতি তৈরি হওয়ার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে উচ্চ-প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা। এছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্যসরকার যে ভাষানীতির সমর্থক সেটিও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। রাজ্যে অধিক সংখ্যক ইংরেজি মাধ্যম স্কুল খুলে দেওয়ার নীতি মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানকে ব্যাহত করে। বুনিয়াদি স্তরে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানই নীতি হওয়া উচিত। বাংলামাধ্যম সরকারি স্কুলগুলিতে অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। এদিক ওদিক গজিয়ে ওঠা ইংরেজীমাধ্যম স্কুলগুলি বেশিরভাগই বেসরকারি পরিচালনাধীন, সেখানে পড়ার খরচও অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি, সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা বিভাজন দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে, একদল শিশু-কিশোরকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে প্রান্তিকতার সীমায়। সেই শিশু-কিশোররা বঞ্চিত হচ্ছে প্রাথমিক স্তরের সঠিক সহজ পাঠটি গ্রহণ করতে। যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের করাল ছায়া দেশের সুষম উন্নয়নের পথে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই অর্থনৈতিক বিভাজনই শিক্ষাক্ষেত্রেও ঘনিয়ে তুলছে তীব্র সংকট, সর্বজনীন শিক্ষার পথে খাড়া করছে বিভেদের প্রাচীর।
শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্থানের যোগ নিবিড়। শিক্ষান্তে চাকরি একজন সাধারণ মানুষের ন্যায্য দাবি। আমাদের কেন্দ্রীয় বা রাজ্যসরকার জনগণের এই দাবি পূরণে সামগ্রিকভাবে ব্যর্থ। দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই বললেই চলে, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। অর্থনীতিবিদদের ভাষায় দেশে ‘কর্মহীন উন্নয়ন’ (জবলেস গ্রোথ) হয়ে চলেছে, যে উন্নতি কোটি কোটি কর্মপ্রার্থী মানুষের ক্ষোভের আগুন নিভতে বিন্দুমাত্র সাহায্য করছে না। মেধাবী উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতীরা রাজ্যছেড়ে দেশছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। আর যারা দেশের মাটিতেই পড়ে থাকছেন উপযুক্ত অর্থ বা মেধার অভাবে, তারা নিরন্তর লড়াই করে চলেছেন সম্মানজনক একটি চাকরির জন্য। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীতে ‘অগ্নিপথ’ নামক একটি কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা এবং ‘অগ্নিবীর’ নামক নতুন পদের কথা ঘোষণা করলেন। কী সেই পরিকল্পনা? মাত্র চার বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদান, তারপর? না তারপরের কোনও নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা বা সুরক্ষার আশ্বাস প্রধানমন্ত্রী দিতে পারেন নি। লক্ষ-কোটি যুবক-যুবতীর ভবিষ্যৎ নিয়ে এইরকম ছিনিমিনি খেলার অধিকার কি রাষ্ট্রের থাকে? শিল্প নেই, বাণিজ্যে পরমুখাপেক্ষিতা এবং ভাটার টান, শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগে চরম দুর্নীতি— ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কর্মহীন গভীর শূন্যতার গহ্বরে নিক্ষেপ করে দেশকে কোন উন্নয়নের পথে নিয়ে চলেছে আমাদের বর্তমান সরকার? প্রধানমন্ত্রী বা আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কি পারবেন এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে? সর্বজনীন শিক্ষার দাবিতে, শিক্ষান্তে উপযুক্ত কাজের দাবিতে এবং শিক্ষাক্ষেত্রকে সকল প্রকার দুর্নীতিমুক্ত রাখার দাবিতে ছাত্র-যুব এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ দেশের বিভিন্ন অংশে, বিশেষত আমাদের রাজ্যে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলছেন। আমরাও এই আন্দোলনের অংশীদারত্ব স্বীকার করি। সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি দুর্নীতিমুক্ত ভারতবর্ষ গড়ে উঠুক।