বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[রাজ্য]

[রাজ্য]

সত্যের ভোর আসছে

সত্যের ভোর আসছে

উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়

photo

এই মুহূর্তে বিশ্ব, দেশ ও রাজ্যের রাজনৈতিক, অর্থনীতি, সমাজনীতিতে কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সংকেত ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।
আইএলও-র রিপোর্টে উল্লেখিত হয়েছে, বর্তমান বিশ্বে শ্রমজীবী মানুষের উপর শোষণ বহু মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয় ব্রিটেন, ইতালি, জাপানসহ উন্নত দেশগুলিতে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি কমেছে এবং বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের আয় শতকরা ১০.৭ ভাগ কমেছে। অর্থমূল্যে যা ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। মোট কথা শ্রমজীবী মানুষের জীবনে সংকট উল্কার গতিতে বাড়ছে। ২০০৮ সালে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হবার পর থেকে পরিকল্পিতভাবে বিশ্বজুড়ে দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব বৃদ্ধিতে অতি সক্রিয় থেকেছে। এমনকি যখন মানুষ কঠিন পরিস্থিতিতে অস্তিত্ব সংকটে সেই সময়ে কোভিড অতিমারির পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে একদিকে, কর্পোরেট শক্তি মুনাফা বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগীদের টেক্কা দিতে ফটকাবাজির আশ্রয় নিয়েছে, অন্যদিকে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দক্ষিণপন্থী শক্তির উত্থান ঘটেছে সর্বত্র। নয়া উদারনীতির এই সময় পর্বের মধ্যেই আমাদের দেশে ও রাজ্যে ক্ষমতায় শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস।
এটা মূল প্রবণতা হলেও দক্ষিণপন্থী ঝোঁকের মোকাবিলা করার মতো শক্তিরও উত্থান ঘটতে শুরু হয়েছে। একদিকে যখন ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালিতে, ফ্রান্স সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দক্ষিণপন্থীরা শক্তি অর্জন করেছিল, তখন বলিভিয়া, চিলি, ভেনেজুয়েলা, পেরু, নিকারাগুয়া, কলম্বিয়া সহ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে দক্ষিণপন্থার বিরোধী শক্তিরও উত্থান হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে চরম দক্ষিণপন্থী বোলসেনারোকে পরাজিত করেছে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী লুলা। এই সময়েই আমরা দেখছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়, ফ্রান্সে ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোর কাছে চরম দক্ষিণপন্থী লি পেন দ্বিতীয় দফার ভোটে পরাজিত হয়েছে।
দুনিয়ার দিকে তাকালেই বোঝা যায়, যেখানেই বিশ্বায়নের নয়া উদার অর্থনীতির বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষ, সাধারণ মানুষ বিশেষত মধ্যবিত্ত অংশ প্রতিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছে, নীতি পালটানোর লড়াই জোরদার করছে সেখানেই আন্দোলনের অভিমুখ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দিকে পরিচালিত হচ্ছে।
আমাদের দেশের আরএসএস-বিজেপি সরকার আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজি ও কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে নির্বিচারে লুঠ ও নির্মম শোষণ প্রক্রিয়া জারি রেখেছে। পরিণতিতে অর্থনৈতিক সংকট জনিত উৎপাদন হ্রাস, কর্মহীনতা বৃদ্ধি, সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো, মজুরি সংকোচন সহ ধনী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সুমুদ্রসম বৈষম্য দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে কোভিড অতিমারি ও লকডাউনে ব্যাপক কর্মচ্যুতি, সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়েছে। তার সঙ্গে আজকে সারা দেশ ও রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির রাজনৈতিক অর্থনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি নিচের স্তরে ছোটখাটো দুর্নীতির জন্ম দেয় এবং ছড়িয়ে দিতে ভরসা যোগায়। সাধারণ জনগণ প্রতিদিন দুর্নীতির মুখে পড়েন। তারা যা পাওয়ার অধিকারী তা পাওয়ার জন্য এত হেনস্তা হতে হয় যে মর্যাদা খুইয়ে তারা অনেকেই ঘুষ দেন। কিন্তু এর সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিকে এক জায়গায় দাঁড় করানো ভুল শুধু নয়, দুর্নীতির ব্যবস্থাকে আড়াল করা।
নয়া উদার অর্থনীতির পথে রাষ্ট্র ও একচেটিয়া কর্পোরেট পুঁজির মধ্যে যোগসাজসে অর্থনীতিতে খোলাখুলি আগ্রাসনমূলক দুর্নীতি মহীরুহ হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্র, সরকার, মন্ত্রী পুঁজির হাতের পুতুল।
এতদিন পর্যন্ত দীর্ঘ শ্রমিক আন্দোলনের থেকে অর্জিত শ্রম ও শিল্প আইনগুলোর মধ্যে যেটুকু তারা পেয়েছিলেন সেগুলো কেড়ে নিয়ে চারটি শ্রমকোড থেকে শুরু করে কৃষক বিরোধী তিনটি কৃষি বিল, জাতীয় নাগরিকপঞ্জী প্রণয়নের চেষ্টা, দলিত ও সংখ্যালঘুদের উপর অবিরাম আক্রমণ— দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের পরিবেশ তৈরি করেছে। দারিদ্রের ভয়াবহ বৃদ্ধি ঘটে চলেছে। জাতীয় অর্থনীতির গভীর মন্দা এবং কোভিড অতিমারি ও লকডাউন নতুন করে ভয়াবহ বেকারী তৈরি করেছে। যার পরিণতিতে ১৪ কোটি মানুষ এই সময়কালে কাজ হারিয়েছে। বেকারির হার ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর পাশাপাশি প্রশাসনিক ক্ষেত্র থেকে চলছে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উপর আক্রমণ। সংসদীয় প্রতিষ্ঠান ও গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ। সরকারের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণকারীদের ওপর পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে নজরদারি চলছে। গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকারের উপর আক্রমণ যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ইউএপিএ/ রাষ্ট্রদ্রোহীতা/ এনএসএ আইনকে ব্যবহার করে প্রতিবাদী মানুষের কন্ঠ রোধ করা হচ্ছে। ভীমা কোরেগাও মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৮৪ বছরের জেসুইট পাদ্রী স্টান স্বামীকে নূন্যতম চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে কার্যত খুন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবাদী ছাত্র, মহিলা, সাংবাদিক, চিকিৎসক সমাজকর্মীদের সাজানো মামলায় জড়িয়ে দেওয়া ও প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। সরকারের সঙ্গে মতের তফাৎ হলেই দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্বাধীনতা উত্তরকালের এই নতুন পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষ প্রথম দিকে বিভিন্ন কারণে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু বিভ্রান্তি চিরস্থায়ী নয়।
সার্বিকভাবে আক্রান্ত দেশের সাধারণ মানুষ জীবন জীবিকার বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যেও এই সময়কালে সর্বভারতীয় বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনগুলির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রায় ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রামে যাচ্ছে। একাধিক ধর্মঘট সাফল্যের সঙ্গে সংগঠিত হয়েছে। সব চেয়ে বড় কথা স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই প্রথম শ্রমিক কৃষক ঐক্যবদ্ধ যৌথভাবে আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং ধীরে ধীরে শক্তিশালী ও মজবুত হচ্ছে। যার অনেকটা দৃশ্য ধরা পড়েছে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের মধ্যে।
পাঁচশোর বেশি কৃষক সংগঠন সন্মিলিত হয়ে গড়ে তুলেছিল সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। তাদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বনাশা তিনটি কৃষি আইন বাতিল ও ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনী অধিকারের দাবিতে এক ঐতিহাসিক অবস্থান সংগ্রাম আন্দোলনে সামিল হয়েছিল জাতি, ধর্ম, ভাষা নির্বিশেষে অন্নদাতা কৃষকরা। কৃষকরা দেশের রাজধানী সংলগ্ন বিভিন্ন রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় সিংঘু, টিকরি, গাজীপুর, শাহজানপুর সহ আরো একাধিক জায়গায় গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড দাবদাহে ও শীতকালে শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে সারা দিন রাত্রি অবস্থান বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছেন। এই লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারী ৭২৬ জন কৃষক শহীদের মৃত্যু বরণ করেছেন। কৃষকরা তাদের নিজস্ব দাবিগুলির সঙ্গে যুক্ত করেছিল, বিদ্যুৎ বিল (সংশোধনী) ২০২০ বাতিলেরও দাবি। কৃষকদের এই নাছোড়বান্দা সংগ্রামের সমর্থনে শ্রমজীবী মানুষ দেশজুড়ে একাধিক ধর্মঘট, চাক্কা জ্যাম, জাঠা, মিছিল ও লালকেল্লা অভিযানের মতো আন্দোলন সংগঠিত করেছে। দেশের স্বার্থে এই আন্দোলন আরএসএস-বিজেপি সরকারের মিথ্যা, বিকৃত অপপ্রচার, প্ররোচনা, সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ফেক প্রচারকেও রুখে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্য হয়ে জনবিরোধী কৃষি আইন বাতিল করতে হয়। এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের জয় একদিকে যেমন শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে তেমনি এই লড়াই গণসংগ্রাম অনেক শিক্ষাও দিয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা লড়াকু মানুষেরা এই সংগ্রাম থেকে ভরসা পেয়েছে এবং শত্রু মিত্র চিনতে শিখেছে ।
নয়া উদারবাদ সৃষ্ট পরিমন্ডলে বাম পরিচালিত সরকারগুলি জনকল্যাণকামী ভূমিকাকে গুরুত্বে রেখে বিকল্প পথে চলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু একথাও মানতে হবে বিভিন্ন কারণে বাম পরিচালিত রাজ্য সরকারগুলো প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের অর্থনীতি, সাংস্কৃতির বিরোধী দৃঢ় অবস্থান নিতে পারে নি। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গের চিত্র সে কথাই বলে। এই সুযোগে পশ্চিমবাংলায় ২০১১ সালে রাজ্য সরকারের পরিবর্তন ঘটেছিল। এই পরিবর্তন শুধুমাত্র বামপন্থী শক্তির পরিবর্তে দক্ষিণপন্থী শক্তির সরকার গঠনের মতন কোনও স্বাভাবিক বিষয় ছিল না।
বাম কর্মীদের ঘর জ্বলছিল তখন। বাতাসে তখন জোর প্রচার ‘বেশ হয়েছে। একটু শিক্ষা হওয়া দরকার।’ শহীদ হচ্ছিলেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। তাঁদের সন্তানরা আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছিল। তাঁদের বাবা, মা, স্ত্রীদের চোখের জল মোছানোর বদলে তৃণমূলের ‘সামাজিক বয়কট’ মান্যতা পাচ্ছিল। নিমন্ত্রণ বাড়িতে গিয়ে তাদের পাশে না বসার ফরমান, সিপিএমকে সাপের মত খুঁচিয়ে মারার নির্দেশ দিচ্ছিলেন খোদ মন্ত্রী।
রাজ্যের ক্ষমতায় এসে তৃণমূল বামপন্থী আন্দোলনের ধারায় গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক অধিকারকে ধ্বংস করার কাজ করেছে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিকভাবে। তাই প্রথমে বামপন্থী কর্মীদের ওপরে আক্রমণ নেমে আসলেও তারপরে আক্রমণ নেমে এসেছে নাগরিক পরিসরে। একচেটিয়া ও কর্পোরেট পুঁজির মেইন স্টিম মিডিয়া ঝাঁপিয়ে পড়েছে পশ্চিমবাংলায় বাম বনাম দক্ষিণপন্থী রাজনীতির চিরায়ত মেরুকরণকে ভেঙে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির সামনে স্পেস নির্মাণ করতে। নতুন মেরুকরণ। এককথায় পশ্চিমবাংলার চেনা ছবি অনেকটাই অন্তর্হিত হয়েছিল। বাম আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র পশ্চিমবাংলায় ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন ও ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের শক্তি শূন্যে নেমে আসে। পাশাপাশি রাজ্যের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও নিদারুণ সংকটজনক হয়েছে। বাম সরকারের অন্তিম মুহূর্তে বাজার মূল্যের দিকে দেখুন, ওই সময় যে চালের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা কেজি, এখন তার দাম ৫৫ টাকা। ২০০৪-২০১১ সাত বছরে বিদ্যুতের ইউনিট পিছু দাম বেড়েছিল ৪১ পয়সা আর ২০১১-২০ এই ন’বছরে ইউনিট পিছু দাম বেড়েছে ২ টাকা ৭৫ পয়সা। তাছাড়া নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য যে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ছাড় মিলতো (এমনকি CESC অঞ্চলেও) তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। শুধু যে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হয়নি তাই নয়, কোনও শূন্য পদে নিয়োগ করা হচ্ছে না। গত এক দশকে খেতমজুরের মজুরি বেড়েছে বছরে গড়ে চার টাকা। অথচ একই সময়ে বাজ্যবাসীর মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে চার হাজার টাকা। এই সময়কালে মন্ত্রীসভা একাধিকবার নিজেদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি সুযোগসুবিধা ইচ্ছেমত বাড়িয়েছে। সরকারি কর্মী, শিক্ষকদের ডিএ একরকম জোর করেই বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে ত্রাণ সামগ্রী থেকে বাংলার সম্পদ (কয়লা, বালি, মাটি, গরু, সরকারি ক্ষেত্রে স্থায়ী অস্থায়ী পদ) সবই লুট হচ্ছে। দুর্নীতির রাজনৈতিক অর্থনীতির চেহারা সুস্পষ্ট ধরা পড়েছে। শুরু হয়েছিল সারদা-রোজভ্যালি চিটফান্ড এবং নারদা ঘটনা দিয়ে। বর্তমানে রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। সরকারের সঙ্গে রাজ্যবাসীর বিরোধ বাড়ছে। রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিভিন্ন অংশের মধ্যে এই বিরোধ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। গতরে খাটা মানুষের আন্দোলন যখন নিজের দাবি তুলেছে তখন সেই দাবির সঙ্গে রাজনৈতিক বার্তাও সুপষ্ট হয়ে উঠছে। বামপন্থী দলগুলো এবং তাদের পরিচালিত গণসংগঠনগুলোও নিজ নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী চেষ্টা করছে পরিস্থিতি পালটানোর। কিছু দিন আগে তাহেরপুর পৌরসভার ভোটে বামফ্রন্টের জয় এসেছিল, পরে ঝালদা পৌরসভার ভোটে কংগ্রেস দল ক্ষমতায় এসেছে।
যদিও বামপন্থী দলগুলো ছাড়া অন্য যেসমস্ত দল রাজ্য সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে সংঘাতে নেমেছে তাদের অনেকেরই নৈতিক দৃঢ়তা নড়বড়ে। অবশ্য পরিস্থিতি এবার পাল্টাচ্ছে। সাগরদিঘির নির্বাচনে একতরফাভাবে কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করে। পরে বামপন্থীরা সমর্থন করায় সেই প্রার্থী হন বাম সমর্থিত প্রার্থী। শেষে লড়াইটা হয়ে দাঁড়ায় জনগণের প্রার্থী বনাম তৃণমূলের প্রার্থীর লড়াই। উপনির্বাচনে জেতা আসনে শাসক দলের পরাজয় যথেষ্ট ইঙ্গিত বহন করছে। এই নির্বাচন স্পষ্ট বার্তা দিল মানুষের জরুরি বিষয় লড়াই জারি রেখে নামতে হবে নির্বাচনী সংগ্রামে। তাহলে কর্পোরেট ও একচেটিয়া পুঁজির সব হিসাব নিকাশ তছনছ করা যাবে। এই রাজ্যে দক্ষিণপন্থী দুই শক্তির মেরুকরণ গড়ার প্রয়াস ভেঙে পড়েছে।
বামপন্থী আন্দোলনকে স্পষ্টভাবে পুঁজির স্বার্থবাহী ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বামপন্থীরা শুধুমাত্র ভোটের দিকে মনোনিবেশ করে তাহলে জণগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ফিরতে পেতে সমস্যা বাড়বে। গণআন্দোলনের ভিত্তিতেই বামপন্থীদের পুনরুত্থান সম্ভব— নির্বাচনেও বামপন্থীদের পক্ষে জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই মুহূর্তটা এক সন্ধিক্ষণ।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.