বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[রাজ্য]
শ্রমজীবী ভাষা ১ জানুয়ারি, ২০২২— ঠিক যা যা আশঙ্কা করা হয়েছিল তেমনটাই ঘটছে।
ইতিমধ্যেই বীরভূমের মহম্মদবাজার এলাকায় দেউচা পাচামির প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনির ফলে উচ্ছেদের মুখে পড়তে চলা হাজার হাজার মানুষ রাত জাগছেন আশঙ্কায়।
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষজন ঘরে ঘরে শান দিচ্ছেন টাঙ্গিতে। রাজ্য সরকারের মামলায় জামিন পাওয়া সুনীল মুর্মুরা গর্জে উঠছেন, "কয়লা খনি চাই না, জমি আমরা দিব না" বলে।
ইতিমধ্যেই দেউচা পাচামির আদিবাসী জনগোষ্ঠী জমিরক্ষা কমিটির সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং চালিয়ে যাচ্ছেন এআইকেকেএস, সেভ ডেমোক্রেসি, কিম্বা এপিডিআরের মতো সংগঠনগুলো। বিভিন্ন বামপন্থী দল আন্দোলনকারীদের সমর্থন করছেন। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য দেউচার আদিবাসী মহিলাদের হাতের কাছে ডাণ্ডা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
যথারীতি বসে নেই রাজ্যের শাসক দলও। ইতিমধ্যেই দেউচায় বাইরের লোকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। শুরু হয়ে গেছে ‘বহিরাগত’ তকমা দেওয়ার কাজ। ‘মাওবাদী পোস্টার’ও পাওয়া গিয়েছে। ভূমিরক্ষা কমিটির মানুষদের গ্রপ্তার করে তাঁদের নামে মামলা করা হয়েছে। এমন কি খনির সমর্থনে তৃণমূলের মিছিল থেকেহামলা চালিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে পঁচিশ জন আদিবাসী মহিলাকে। আহত মহিলাদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সও আটকে দিয়েছে অনুব্রতর ‘তাজা ছেলেরা’!
তবুও ভয় দেখানো যায়নি আন্দোলনকারীদের। দ্বিগুণ উৎসাহে কাস্তে, তীর ধনুক, লাঠি, টাঙ্গি, ঝাঁটা নিয়ে আদিবাসী নারীদের নেতৃত্বে ২৫ ডিসেম্বরের পর ২৯ ডিসেম্বর ফের পাল্টা মিছিল হয়েছে হরিণশিঙায়।
অর্থাৎ ভয় পাচ্ছেন না আদিবাসী প্রতিবাদীরা।
রাতের গহীন অন্ধকারে জোনাকির জ্বলা নেভা আর ঝিঝির ডাকের মাঝেই বাজছে মাদল,
“ঝিমঝিম নেশা লাগে
মহুয়ার বনে গো
সাজ সাজ রণসাজ
যতেক হবে রণে গো
দ্রিদাম দ্রিদাম বাজিছে মাদল
দ্রিদাম দ্রিদাম বাজিছে মাদল
লড়াই হাঁকে গো লড়াই হাঁকে
এ সিধু টাঙ্গি উঠা
ই কানু সড়কি উঠা
লুটারে ই মাটিতে
খনি দালাল রাজ লুটা
লড়াই হাঁকে গো লড়াই হাঁকে”...
বেচা কেনা অবশ্য অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। পরমব্রত, তন্ময়, সামিরুলদের সরকারি কমিটিতে আনার সময় থেকেই। মাঝি হাড়েমের মতোন প্রতিবাদী আদিবাসী নেতা কিম্বা সুনীল সোরেনের মতো বিজেপি নেতারা শাসক দলে যোগ দিচ্ছেন। তাঁদের উপরেও ফুঁসছেন দেউচা পচামির আদিবাসীরা।
চিৎকার করে স্লোগান দিচ্ছেন,
“কয়লা খনি চাই না, জমি আমরা দিবু না।”
লড়াই শুরু হয়ে গেছে।