বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[রাজ্য]

[রাজ্য]

স্বাধীনতা প্রিয় স্বাধীনতা

স্বাধীনতা প্রিয় স্বাধীনতা

সুতপা সুন্দরম চক্রবর্তী

photo

শ্রমজীবী ভাষা, ১৬ অগাস্ট, ২০২২— স্বাধীনতা আমার ছোটবেলার প্রেমের নাম। সবাই হাসাহাসি করত... বলত, প্রেমের নাম আবার স্বাধীনতা হয় কি করে রে... প্রেম মানেই তো পরাধীনতা... প্রেম পরিণয় এর অর্থই হল মেয়েদের পরাধীনতা... এ ভাবনা জারিত ছিল বহুকাল... শুধু দেশজ সমাজে নয়... গোটা দুনিয়াতেই। কিন্তু স্বাধীনতা তো বাঁধ ভেঙে দেয়... বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও ...
দেশের মাটি ফিরে পাওয়ার লড়াই। সংগ্রাম, আন্দোলন আর নিজেদের স্বতন্ত্রতা বাঁচিয়ে রাখার অক্লান্ত চেষ্টা। ব্রিটিশ বন্দিদশা থেকে ভারতের মুক্তির স্বপ্ন, আকাঙ্খা আর চাহিদায় দিন গুনেছিলেন মানুষ। সহস্র প্রাণের বলিদানের শেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট।
সেই স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হল! স্বাধীন ভারতের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তরাষ্ট্র, প্রজাতন্ত্র অনন্য। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু বলেছিলেন, সারা বিশ্ব যখন ঘুমাবে ভারত জেগে উঠবে নিজের মহিমায়। সদ্য-স্বাধীন ভারতের সংগ্রাম এবং সুখকে ধারণ করেছিল তার প্রতিটা অক্ষর.. কারণ অবশেষে ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে নিজেকে স্বাধীন করেছিল ভারত।
ব্রিটিশ রাজের ২০০ বছরের নিপীড়ন অত্যাচার, হত্যা, নারী নির্যাতন অবসানে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ ভোলার নয়। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার পতনের পর থেকেই দেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজ শুরু হয় এবং ১৮৫৭ সালে জাতীয় মহা বিদ্রোহের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় ব্রিটিশ রাজের হাতে। ব্রিটিশ শাসনে দেশে ব্যাপক অসন্তোষ ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়। ভারতের বুকে তখন থেকে চলেছে নিজের অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করার পথ ছিল বেশ কঠিন এবং দুর্গম। কারাবাস, মৃত্যুদণ্ড এবং ভারতজুড়ে কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকদের নিরন্তর লড়াই।
স্বাধীনতার তাৎপর্য বলতে আদৌ যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা দেশের প্রতিটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের অধিকার— কথা বলা, প্রতিবাদ করা, সংগঠিত হওয়ার গণতন্ত্র। কবি হেলাল হাফিজ যে পতাকা ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন সেই স্বাধীন দেশের পতাকা, সেই স্বাধীনতা এসেছে। কিন্তু ব্যক্তি ও স্বাধীনতা: একটি সোনার শেকল...
‘কথা ছিল একটি পতাকা পেলে/ আমি আর লিখব না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা/ কথা ছিল একটি পতাকা পেলে/ ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস/ ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন, ‘পেয়েছি, পেয়েছি/ কথা ছিল একটি পতাকা পেলে/ পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে/ ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।’
দেশের স্বাধীনতা... কথা বলার স্বাধীনতা... ব্যক্তি স্বাধীনতা... অর্থনৈতিক স্বাধীনতা... ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি...
আমি বেড়ে উঠি, সঙ্গে আমার স্বাধীনতাও। প্রেমের স্বাধীনতা ততদিনে আমার অভিভাবক হয়ে ওঠে। আমাকে বলে এটা কোরো না... ওটা কোরো না...
পাশ দিয়ে দৌড়ে আসা পতাকা বিক্রেতা বাচ্চ্চাটিকে দেখে গাড়ির কালো কাঁচ তুলে দিয়ে স্বাধীনতা নিজেকে নিরাপদ করে তোলে। স্বাধীনতা আমাকে স্বপ্ন দেখার গল্প শোনায়। কিন্তু কালচে ছোপ ধরা শাড়ি পরা শুক্লা মাসিকে ফিরে দেখে না... ওর কাছে জানতে চায় না স্বাধীনতার মানে কী।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.