বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[রাজ্য]
সাতটারি গ্রামে এখনো ইন্দিরা আবাসের টাকা ঢোকেনি। ঝাল্লু সরকারের পাকা বাড়ির স্বপ্ন ছিল, মহাজনের কাছে ধার করে কংক্রিটের ছাদওয়ালা ইটের বাড়ি তৈরি খাড়া করেছিলেন। গতরে খেটে টাকা তুলে দেবেন এই আশায় ছেলে জয়ন্ত, নাতি সুমন, জামাই রঞ্জিতকে নিয়ে মিজোরাম রওনা দিয়েছিলেন তিওর তপসিলী জাতির ভূমিহীন কৃষক ঝাল্লু। ব্রীজ ভেঙ্গে বাপ-ছেলে-নাতি-জামাই সকলের মৃত্যু ঘটল, আলগা হয়ে গেল পলেস্তরাহীন সরকার বাড়ির ভিত। ঝাল্লু সরকারের পুত্রবধু সদ্য স্বামী হারানো নীতু মাঝির বিয়ে হয়েছিল চার বছর আগে। নীতু বলছিলেন বিয়ের পরপরই স্বামী জয়ন্ত সরকার বেরিয়ে পড়েছিল গ্রাম ছেড়ে বহু দূর দেশে, কাজের ধান্দায়। মাঝে ফিরেছে কখনো পনের দিন, কখনো এক সপ্তাহের জন্য। সোহাগের রেশ শুরু না হতে না হতেই ফুরিয়ে যেত, বছর কুড়ির নীতু আদতে একলাই থাকতেন। জয়ন্ত এইবার ফিরে এসেছিলেন প্লাইডডের কফিনে, কয়েক ঘন্টার জন্য – এভাবেই ক্ষনিকের জন্য আসতো তার স্বামী। দুর্ঘটনার দিনও সকালে ছটায় ফোন করেছিল জয়ন্ত – তারপর তাদের মৃত্যুর খবর পাওয়া, সাতটারি গ্রামের সরকার বাড়ির শোকের সাগরে ডুবে যাওয়া, নেতাদের দ্রুত আবির্ভাব, ক্যামেরার সামনে ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ ও প্রস্থান – এসবের আকস্মিকতায় বিহ্বল নীতুর কাছে গোটা ঘটনাটা দীর্ঘস্থায়ী দুঃস্বপ্নের মত। নীতুর মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্ন কেটে যাবে হঠাৎ, ভোরে ঘুম ভাঙবে স্বামীর নিত্যদিনের রিংটোনে।
আম বাগানের নিবিড় ছায়ায় ঘেরা মালদহের দুই গ্রাম চৌদুয়ার ও সাতটারি। ভৌগলিক দূরত্ব প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার হলেও আর্থ-সামাজিক স্থানাঙ্কে ও বিপন্নতায় খুব কাছাকাছি গ্রামদুটি, পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার গ্রামের মতই। মিজোরামের ব্রীজ ভেঙ্গে মৃত পরিযায়ী শ্রমিকদের সিংহভাগ এই দুই গ্রামের মানুষ। গ্রাম ঘিরে আছে পচা পাটের গন্ধ, জলাভূমিতে পাট তন্তু ছাড়ানোর কাজ করছিলেন মধ্যবয়স্ক নারী-পুরুষ। আম ও পাট বছরের কয়েক মাস কর্মসংস্থান যোগায় অল্প সংখ্যক বাসিন্দাদের। বাকি সময়ের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করতে পুরুষরা ছোটেন মুম্বাই, কেরলা, তামিলনাড়ু থেকে কাশ্মীর, মিজোরাম, অরুণাচল, লাদাখ। মৃত শাকিরুল শেখের বাবা আইনুল শেখ বলছিলেন কত ধরনের কাজ করতে যান তারা – সাটিনের কাজ, ড্রেন নির্মাণ ও সাফাই, টাওয়ার বানানো, প্ল্যান্টের কাজ, কনস্ট্রাকশন, রাস্তা তৈরি, ব্রীজের কাজ। আদতে ভারতবর্ষকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, ভারতবর্ষকে গড়ার কাজ – স্বীকৃতিহীন, সম্মানহীন, নিম্ন মজুরির জোয়ালভাঙ্গা শ্রমের কাজ। আইনুল নিজেও একজন পরিযায়ী শ্রমিক।
সাতটারি ও চৌদুয়ার গ্রামের একটি ঘর নেই যেখান থেকে পুরুষ মানুষেরা অন্য প্রদেশে কাজে যান না। মিজোরামের ব্রীজ নির্মাণ দুর্ঘটনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই ভূমিহীন কৃষক পরিবারের, বাস্তু জমিটুকুর মালিক। দুই দশক আগেও অন্যের জমি লিজ নিয়ে কৃষিকাজ করতো পরিবারগুলি। দীর্ঘদিন ধরেই বীজের খরচ, সারের খরচ, ‘বিষের’ খরচ (কীটনাশককে বিষই বলেন গাঁয়ের মানুষ) ধরে, জমির মালিককে লভ্যাংশ দিয়ে উদ্বৃত্ত কিছু থাকে না, তিনমাসের খোরাকিও ওঠে না। অথচ আজকের সমাজের নিয়মে উপার্জন করতে হবে বারো মাস। দুই ফসল বা তিন ফসলের মাঝের সময়টা খানিক জিরিয়ে নেবার যে সুযোগ আগেকার দিনের গ্রামের কৃষক পেত তা অন্তর্হিত হয়েছে। কঠোর অর্থনৈতিক নিগড়ে গ্রামের মানুষকেও রোজগার করতে হয় প্রায় প্রতিদিন, শহরের মতই। আইনুল আরো বলছিলেন একশ দিনের কাজের টাকা গত দেড়-দুই বছর আসে না, তাতে অবস্থা আরো সঙ্গিন হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের গুঁতোগুঁতিতে উলুখাগড়াদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। ফলে রাজ্য থেকে বহির্গমন চলছেই, ভূমিহীন কৃষক সন্তান পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে বাইরে যাচ্ছেন, কখনো ফিরছেন লাশ হয়ে। এই চলাচল সহজে বন্ধ হবার নয়। মিজোরামের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর কি বাইরে কাজে যাওয়া কমবে? প্রশ্ন করতেই ঝাঁজিয়ে উঠলেন সাতটারির দীর্ঘদিনের পরিযায়ী শ্রমিক কুরবান শেখ – চালের টাকা কি আপনি দেবেন? আল্লাহের রোষে দুর্ঘটনা ঘটেছে, রোজ তো কত ঘটে – তাই বলে কি কাজে যাওয়া বন্ধ করা যায়? মিজোরামে মৃত উনিশ বছরের শামিরুল হকের শোকার্ত পিতা এসারউদ্দিন বলছিলেন, ওই অভিশপ্ত ব্রীজেই কয়েক মাস আগে দুর্ঘটনায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছিল, চৌদুয়ার গ্রামের পাশেই তাদের বাড়ি – একজনের পা কাটা গেছিল তাদের পাড়ায়। এসব জানা সত্ত্বেও কনিষ্ঠ পুত্রকে পাঠিয়েছিলেন তিনি, মালদার বাইরে প্রথম বার পা রেখেছিল ক্লাস নাইন পাস শামিরুল। এসারউদ্দিনের নিজের শরীর ‘নরম’ হয়ে গেছে, ভারী কাজ পারেন না। বললেন, ক্ষতিপূরণের টাকায় সারাজীবন খাওয়া যায় না, দরকার হলে অন্য ছেলেকেও বাইরে কাজে যেতে দেবেন ভবিষ্যতে। বরিস পলেভয়ের মানুষের মত মানুষ উপন্যাসে এক ডাক্তারের চরিত্র ছিল ভাসিলি ভাসিলিয়েভিচ। তার সন্তান মারা গেছে নাজিদের সাথে যুদ্ধে, বেদনাবিধুর পিতা অনন্ত শোকের মধ্যেও দ্বন্ধজর্জরিত – তার আরেক সন্তান থাকলে যুদ্ধ যোগদানে বাধা দিতে পারতেন কিনা চিন্তা করে! শামিরুলের পিতা নিঃসংশয়, অন্য সন্তানদের বাইরের কাজে পাঠাতে।
মিজোরামের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরেছেন চৌদুয়ারের বছর তিরিশের উজির আলি, তিনি অবশ্য ওই কাজে আর ফিরতে নারাজ। চোখের সামনে সহকর্মী, এক তাঁবুতে রাত কাটানো বন্ধুদের মরতে দেখে তার ‘ডর’ ঢুকেছে মনে, যাওয়ার শক্তি নেই। বয়সসন্ধির সময় থেকে তিনি রাজ্যে রাজ্যে ঘুরছেন – জানালেন এই ধরনের ব্রীজ তৈরির কাজে খানিক মজুরি বেশি পাওয়া যায় – একে সরকারি কাজ, তার উপর খানিক বিপজ্জনক। উজির আলি ছিলেন ‘অ্যাড মাস্টার’, তিনি ‘রিগার’দের প্রধান সহায়ক। স্থানীয় জবানে ‘রিগার’ শব্দটি প্রচলিত, ‘রিগার’রা ব্রীজের উপরে (হাইটে) কাজ করেন, লোহালক্কর জোড়া দিয়ে, নাট-বল্টু লাগিয়ে কাঠামো নির্মাণ করেন। ‘রিগার’দের মজুরি মাসিক প্রায় চব্বিশ হাজার টাকা, ‘অ্যাড মাস্টার’দের বাইশ, আর ব্রীজের নীচে কাজ করা হেল্পার, খালাসির মজুরি আঠারো-উনিশ হাজার। উজির আলি জানলেন তিনি এই কাজ শিখেছেন ‘দেখে দেখে’, ‘রিগার’রাও ‘দেখে দেখে’ই শেখে। আন্দাজ করা যায় যে ‘রিগার’ বা ‘অ্যাড মাস্টার’রা প্রযুক্তি জানা দক্ষ শ্রমিকের কাজই করেন, কিন্তু তাদের প্রশিক্ষণের কোনও সুযোগ নাই। ক্লাস এইট, নাইন, মাধ্যমিকের স্কুলছুটরা পরিযায়ী শ্রমিকরা অপ্রচলিত পদ্ধতিতে, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় শিক্ষালাভ করে বৃহৎ জটিল নির্মাণ কার্যগুলি সম্পন্ন করছেন – ভারতবর্ষ তার উপরেই টিকে আছে। এই ধরনের কাজে ট্রেনিংপ্রাপ্ত, ডিগ্রীধারী শ্রমিক হওয়াটা ধনতান্ত্রিক দেশগুলিতে বাধ্যতামূলক হতে পারে, ঠিকাদারের অধীনে চলা ভারতের পরিযায়ী শ্রমিকের বারো ক্লাসের বেশি না এগানোই বাঞ্ছনীয়। প্রযুক্তির ট্রেনিং-ডিগ্রী থাকলে মজুরি শোষণে খুবই সমস্যা হয়ে যায়, প্রায় দুই তিনগুণ বেশি মজুরি দিতে হয়।
উজির আলি বলছিলেন মজুরি বাইশ হাজার হলেও খাওয়ার খরচ নিজের। প্রত্যন্ত মিজোরামে খাওয়া দাওয়ায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগতো, রাঁধুনি রান্না করতো তিনবেলা। এছাড়া দৈনন্দিন পান, খৈনি, বিড়ি সিগারেট, কোল্ডড্রিংক্সের খরচ ওখানে প্রায় দ্বিগুণ। সবমিলে সাত হাজার টাকার খরচ, বাকি টাকা ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করে পাঠিয়ে দিতেন তারা। জুন মাসের আট তারিখ পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিয়ে পরের দিন মিজোরামের উদ্দ্যেশে রওনা দিয়েছিলেন জনা তিরিশের মালদহের এই দলটি। এই বহির্গমনকালে স্থানীয় পঞ্চায়েত, থানা বা বিডিও অফিসে কোনও রেকর্ড রাখা হয় কিনা প্রশ্ন করায় একশ শতাংশ ক্ষেত্রে উত্তর এলো নেতিবাচক। রাষ্ট্র ও প্রশাসনের দায় নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ভোট করানোর দিকে, রাজনৈতিক দলগুলির দায় যে কোনও ভাবে ক্ষমতা দখলের - দুই নির্বাচনের ব্যবধানে ভোটারমানুষ জীবন ও জীবিকার ঘূর্ণাবর্তে কোথায় ছিটকে তলিয়ে যাচ্ছে তার খোঁজ কেউ রাখে না। অথচ লকডাউনের সময় পরিযায়ীদের শোচনীয় পরিস্থিতিতে রাজ্য ও কেন্দ্র দুই সরকারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকের তথ্য ভান্ডার গড়ে তুলবে। মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কাস ওয়েলফেয়ার বোর্ড গড়ে তোলা হয়েছে, মাইগ্র্যান্ট লেবার রেজিস্ট্রেশন করার পোর্টালও আছে যেটি সফল ভাবে চালানোর দায়িত্ব পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন ডিপার্টমেন্টের – প্রশ্ন জাগে পরিযায়ী শ্রমিককে এই সব উদ্যোগে সামিল করা হবে আদৌ?
মিজোরামে দুর্ঘটনার অভিঘাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিযায়ী শ্রমিকদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসে ব্যবসা বাণিজ্য করার আহ্বান জানিয়েছেন ও সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সরকার যেখানে পনের শতাংশ ঋণের গ্যারেন্টার। মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাবনা সাতটারি গ্রামে উপস্থিত কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিকদের উত্থাপন করায় তারা প্রায় মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে উড়িয়ে দিলেন – পনের শতাংশর গ্যারেন্টার সরকার হলেও বাকি পঁচাশির জন্য ব্যাঙ্ক ও স্থানীয় নেতাদের মাঝে ঠোক্কর খেতে হবে। একশ দিনের কাজের টাকাতেও কাটমানি নেয় পঞ্চায়েতের যে ক্ষমতাশালীরা, ব্যবসার টাকায় অনিবার্য হক থাকবে তাদের– সরকারই তো তাদের। প্রত্যন্ত গ্রামে ওই সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করাও সহজ নয়, যেখানে আগে থেকেই অন্যান্য ব্যবসা আছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য জমি দরকার যা এই ভূমিহীন অংশের নেই। সাতটারি গ্রামে কার্পেট বুনুনের কাজে বহু মানুষ যুক্ত, উত্তরপ্রদেশও যান অনেকে, সেই কাজে সর্বোচ্চ মজুরি চারশ-সাড়ে চারশো টাকা। এছাড়া সাতটারিতে শুঁটকি মাছ পরিষ্কার করা ও ঝাড়াই বাছাই করার কাজ হয়, পুরুষদের দৈনিক মজুরি তিনশ টাকা, মহিলাদের দু’শ। কার্পেট বা শুঁটকি মাছের ব্যবসা শুরু ও সরবারহের জন্য পাঁচলক্ষ টাকা হাতের ময়লা মাত্র, সন্তানের মুখে ভাত তুলে দিতে বাইরে কাজে যাওয়াই ভবিতব্য। চৌদুয়ার গ্রামে সুযোগ আরো কম, পুরুষরা পরিযায়ী আর মহিলার বিড়ি বেঁধে সংসারে সাহায্য করেন। আইনুল শেখের কাছে জানা গেল তাদের জব কার্ড চৌদুয়ারের পঞ্চায়েত মেম্বারের কাছে বাতিল দস্তাবেজ হয়ে পড়ে আছে। আইনুলরা প্লাস্টিকের ড্রামে জল কিনে খান, কলকাতা শহরের মতই, খালি দাম কম - সতের লিটারের ড্রাম দশ টাকা। তাদের গ্রামে প্রাকৃতিক পানীয় জল আর নেই।
এক সময়ে বিহার উত্তরপ্রদেশের পরিযায়ী শ্রমিকে উপচে পড়ত ভারতের শিল্পাঞ্চলগুলিতে। এখন সেই স্থান নিয়েছে বাংলা। ২০২০ সালে আরবিআইএর রিপোর্ট অনুযায়ী এ রাজ্যে কৃষিশ্রমিকের গড় মজুরি দৈনিক দুইশত একানব্বই টাকা, কেরলে যা ছয়শত ষাট টাকা; নির্মাণ শ্রমিকের ক্ষেত্রে এরাজ্যে মজুরি তিনশত তেত্রিশ টাকা যেখানে কেরলে আটশত আটতিরিশ টাকা। অসম বিকাশের দেশে উচ্চ মজুরির দিকে চলাচলের টান থাকবেই। গরীব পশ্চিমবঙ্গের ঠিকাদাররা তাই গ্রামেগঞ্জে আধা-কৃষকদের উচ্চ মজুরির টোপ দিয়ে নিয়ে যাবে দেশের কোনও দূর প্রান্তে, সস্তার শ্রমিক বানিয়ে। কখনো ‘দাদন’এর লোভ দেখাবে, সাতটারিতেও একাধিক মানুষ ‘দাদন’ প্রথার উল্লেখ করলেন। আগেই থোক টাকা ঠেকিয়ে (ঋণশোধ বা চিকিৎসা বা বিবাহ অনুষ্ঠানে একলপ্তে অনেক টাকার প্রয়োজন পড়ে) ঠিকাদাররা দূর-দূরান্তরে শ্রমিক নিয়ে যায় কাজে, খেটে শোধ করার ব্যবস্থাটাই ‘দাদন’। কোনও শ্রম আইন, নিরাপত্তার আওতায় থাকেন না পরিযায়ী শ্রমিকরা। সাতটারি গ্রামে ঘোরার সময়ই খবর এলো গাজিয়াবাদে কাজের সময় বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে মুর্শিদাবাদের তিন শ্রমিকের। তিন সংখ্যাটা নেতা মন্ত্রীদের হৃদকমলে ধুম লাগানোর জন্য যথেষ্ট নয়, তাই ক্ষতিপূরণ দেবার প্রতিযোগিতাও দেখা গেল না। পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুমিছিল চলছেই – এসারুদ্দিন শোক করছিলেন সেই মিছিলে থাকা ছেলের মুখ তিনি দেখতে পেলেন না, প্লাইউডের কফিনে শামিরুলদের মৃতদেহ পচন আটকানোর ব্যবস্থা ছিল না।