বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[রাজ্য]
ঈদ উপলক্ষে রেড রোডের জমায়েতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকরা যেন ২০২৪ সালে রাজ্যে এসে ভোট দিয়ে যান, যাতে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ফিরে আসতে না পারে। তাতে বিরোধী নেতারা আপত্তি করেছেন। যেমন, মমতা কাজ দিতে পারেননি বলেই তো মানুষ বাধ্য হয়ে ভিন রাজ্যে গিয়েছে কাজের খোঁজে। এখন নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে তাদের ভোট দিতে আসতে বলছেন কেন? অথবা, ধর্মীয় মঞ্চকে মমতা রাজনীতির জন্য ব্যবহার করছেন কেন?
একটা প্রশ্ন কোনও তরফেই উঠল না। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে আসবে এ বছর গ্রীষ্মে পঞ্চায়েত নির্বাচন। যাঁরা ভিন রাজ্যে শ্রম বিক্রি করে সংসার প্রতিপালন করছেন, তাঁদের অধিকাংশেরই ঘরবাড়ি গ্রামে। পঞ্চায়েত ভোটের জন্য তাঁদের ঘরে ফেরা কি অতটাই জরুরি ছিল না? নাকি, নেতারা সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় পঞ্চায়েত নির্বাচনকে নেহাত এলেবেলে বলে মনে করছেন? আবার এ-ও হতে পারে যে, ভোটের লড়াইয়ে ‘মুসলিম ভোট’ (বা ‘হিন্দু ভোট’, ‘আদিবাসী ভোট’) নিয়ে মাথাব্যথা বেশি। ‘শ্রমিকের ভোট’ (বা ‘চাষির ভোট’ ‘তাঁতির ভোট’) বলে যে আদৌ কিছু আছে, তা তো কই শোনা যায় না। রাজনীতি নিজের সুবিধেমতো খোপ তৈরি করে মানুষের ইচ্ছে-দাবি-ভয়-ক্ষোভ, সব কিছুকে চেপেচুপে ঢুকিয়ে দেয়। ওই সব খোপই না কি ‘নির্বাচনী ইস্যু।’ আপাতত দু’ খানা খোপের মধ্যে আর সব কথা সিঁধিয়ে যাচ্ছে। এক, কে কত বড় অনুদান-বীর। আর দুই, কে কত বড় চোর।
এ দিকে গ্রামে গিয়ে দাঁড়ালে দেখা যায়, ‘নির্বাচনী ইস্যু’-রা চৌমাথায় দাঁড়িয়ে নির্মোক নৃত্য করছে, কেউ চেয়েও দেখছে না। এই যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে অবিশ্বাস্য হারে, প্রায় সব ধরনের কাজে দিন-প্রতি বা পিস-প্রতি মজুরি কমছে, খেতমজুর মেয়েরা, তাঁতি মেয়েরা ব্যাপক হারে কাজ হারাচ্ছে, গ্রামীণ মজুরি বৃদ্ধির হারকে বহুগুণ ছাড়িয়ে গিয়েছে খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার — এ সবই ঘটছে গ্রাম গ্রামে, ব্লকে ব্লকে, জেলায় জেলায়। অথচ এর কোনওটা নিয়ে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে একটা কথাও হচ্ছে না। শ্রমের সঙ্গে, শ্রমজীবীর সঙ্গে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সম্পর্ক কী, পঞ্চায়েত ভোট চাইতে আসা রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কী, সেগুলো যেন প্রশ্নই নয়। শ্রমের প্রসঙ্গে বড় জোর শোনা যায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পের কথা। সে প্রকল্প থমকে রয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের চাপান উতোরে, আপাতত যেটুকু কাজ মিলছে জব কার্ডে, তা দিচ্ছে নানা সরকারি দফতর, তা-ও ঠিকাদারের মাধ্যমে। তাই কর্মদিবস তৈরির দায় থেকে আপাতত মুক্তি পেয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত। গ্রামে কত লোক কত দিন কাজ পায়নি, বাইরে কারা কাজে গেল, কী শর্তে গেল, স্থানীয় সরকার তার কোনও খবরই রাখে না।
মাঝে মাঝে একটা রব ওঠে, গ্রাম থেকে যারা চলে যাচ্ছে অন্যত্র, তাদের নথি রাখুক পঞ্চায়েত। এই দাবিটা প্রথম উঠেছিল মেয়ে পাচার প্রতিরোধের জন্য, এনজিও-দের তরফ থেকে। ২০০৮ সালে মহিলা কমিশনও সুপারিশ করে, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোতে নথি রাখা হোক। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের ‘সেফ মাইগ্রেশন’ কার্যসূচি নানা গ্রামে পাইলট প্রকল্প করেছিল। সবার সঙ্গে বৈঠকে পরিযায়ী পুরুষ কর্মীদেরও নথি রাখার দাবি উঠেছিল গ্রামবাসীদের থেকে। বছর চারেক চলেছিল সেই কাজ। ২০১০-১১ সাল নাগাদ দেখা যায়, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে তাদের ছবি-সহ ‘মাইগ্রেশন কার্ড’ দিয়েছে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি। ক্রমে সেই প্রকল্পের ধারা শুকিয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের মানুষরা যখন রাজস্থান, কাশ্মীর, কর্ণাটক, কেরলে প্রবল হয়রানি, হেনস্থা, নির্যাতন, প্রতারণার শিকার হয়, নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, যখন এক দিন কেবল দেহটা ফিরে আসে গ্রামে, কিংবা বাংলার গ্রামের এক মানুষকে ভিনরাজ্যে চরম অত্যাচার করে খুন করার ছবি ভাইরাল হয় সমাজ মাধ্যমে, তখন রব ওঠে — কেন কেউ খবর রাখেনি, লোকটা কোথায় গিয়েছিল, কার সঙ্গে গিয়েছিল? শ্রম দফতর কিংবা জেলা শাসকের দফতর থেকে তখন এক প্রস্থ তালিকা বানানোর হুড়োহুড়ি পড়ে। করোনা অতিমারির সময়ে পরিযায়ীরা ফিরে আসার পরে একটা জেলাস্তরের টাস্ক ফোর্স তৈরি করে, কোথা থেকে কত জন ফিরেছে, তার একটা তালিকা তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। একটা, বড় জোর দুটো মিটিং-এর পর সে টাস্ক ফোর্স মিলিয়ে গিয়েছে। অথচ, প্রশাসনিক ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকের তথ্য রাখা সম্ভব ছিল কেবল গ্রাম পঞ্চায়েতেই। তথ্য না থাকায় কেবল যে পরিযায়ী শ্রমিকের ঝুঁকি বাড়ছে, তা-ই নয়। গ্রাম বাংলায় কত শ্রম উদ্বৃত্ত, তার হিসাবও থাকছে না। গ্রামীণ উৎপাদন ব্যবস্থা এবং গ্রামের মানুষের উপার্জন, যে তথ্যের কাঠামোয় তৈরি হওয়ার কথা গ্রাম উন্নয়নের প্রতিমা, সেখানটাই ফোঁপরা রয়ে গিয়েছে। ফলে প্রায় সাড়ে আটাত্তর হাজার জনপ্রতিনিধি এবং ছাব্বিশ হাজার কোটি টাকার বাজেট নিয়েও ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নিজের শক্তিতে উঠে দাঁড়াতে পারছে না, সতত সে অবনত রাজ্য আর কেন্দ্রের কাছে। সেই জন্যই পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটকে সাধারণ নির্বাচনের ‘সেমিফাইনাল’-এর বেশি মর্যাদা দিচ্ছে না কেউ, না শাসক, না বিরোধী।
মনে হতে পারে, শ্রমের হিসাব দিয়ে পঞ্চায়েতের কী এসে যায়? তার কাজ রাস্তা, জল, বিদ্যুৎ, জঞ্জাল, রাস্তার আলো। সরকারি স্কিমের তদারকি করতেই গ্রাম পঞ্চায়েতের নাভিশ্বাস উঠছে, তার ওপর কে বেকার, কে পরিযায়ী, জানতে গেলে আর দেখতে হবে না। আজ সরকারি স্কিম (এবং তা নিয়ে দুর্নীতির) প্রাবল্য এতটাই জায়গা জুড়ে বসেছে, যে ভাবতে অবাক লাগে, এক সময়ে সরকারি স্কিম-এর পরেও নিজেদের স্কিম তৈরির কথা বলা হয়েছিল গ্রামবাসীকে। ২০০২ সালের অক্টোবরে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর ‘গ্রামবাসীদের তৈরি গ্রাম পরিকল্পনা’ নামে একটি পুস্তিকা বিতরণ করে। সেখানে বলা হয়, দু’ধরনের পরিকল্পনার কথা ভাবতে হবে। এক, যা প্রচলিত পরিকল্পনা, অর্থাৎ উপর থেকে দেওয়া স্কিম-এর রূপায়ণ। আর দ্বিতীয়, বা ‘বিকল্প’ পরিকল্পনাটি হল “গ্রামের মানুষেরা নিজেরা সবাই মিলে সমন্বিত ভাবে নিজেদের গ্রামের অবস্থা বিশ্লেষণ করে নিজেরা নিজেদের উপযোগী স্কিম তৈরি করবেন।” একে কেন সরকারি পরিকল্পনার পরিপূরক না বলে বিকল্প বলা হচ্ছে কেন? কারণ, এই দুই পদ্ধতির মনোভাব আসলে উলটো। সরকারি পরিকল্পনায় উন্নয়ন করার মূল হাতিয়ার হচ্ছে অর্থ — সরকারের, বা ব্যাঙ্কের থেকে পাওয়া টাকা। আর বিকল্প পরিকল্পনার মূল সম্পদ কী? “গ্রামের মানুষের আনন্দের সঙ্গে করা শ্রম” (পৃষ্ঠা ২)। শ্রমজীবীর শ্রমকে এমন ভাবে ব্যবহার করতে হবে, যাতে তা জমি মালিক বা কারখানা মালিকের মুনাফা বাড়ানোর পরিবর্তে, শ্রমিকের হাতে উৎপাদনী উপায়ের মালিকানা তুলে দেয়।১
এই বিকল্প পরিকল্পনার মূল রূপকার ছিলেন অজিত নারায়ণ বসু, যিনি পশ্চিমবঙ্গে বিকেন্দ্রিত পরিকল্পনার প্রাণপুরুষ। ভূমি সংস্কার যে ভাবে বহু খেতমজুরকে পরিণত করেছিল জমির মালিকে, সে ভাবে শ্রমিককে উৎপাদনী উপায়ের মালিক দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতাই যে ভারতকে নিজের মতো করে পরিকল্পনার ক্ষমতা দিয়েছে, সে কথা বারবার টেনেছেন গ্রাম সংসদের নিজস্ব পরিকল্পনার গুরুত্ব বোঝাতে। গ্রামের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা যে কেবল একটা রোমান্টিক ধারণা নয়, বরং তা দাঁড়াতে পারে অপচয়প্রবণ, অদক্ষ, বৈষম্যমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রতিস্পর্ধী হয়ে, সে কথা বারবার হিসাব কষে দেখিয়েছিলেন। যেমন, বর্ধমানের বিঘড়া-বামুনিয়ার পরিকল্পনার রিপোর্টে (২০০২) দেখা গিয়েছে, আমন ধানের থেকে মোট আয়ের ২৯ শতাংশ পেয়েছিলেন শ্রমিকরা, মালিকরা ৩৮ শতাংশ এবং ব্যবসাদার ৩৩ শতাংশ। গ্রামে কৃষি মজুরদের বার্ষিক আয় বছরে বড় জোর তিনশো টাকা, যেখানে তখন পশ্চিমবঙ্গে দারিদ্রসীমা ছিল ৩৫০ টাকা। অবশ্য গ্রাম উন্নয়নের পরিকল্পনা করতে বসে বিঘড়া-বামুনিয়ার লোকেরা নিজেদের মতো করে দারিদ্রসীমা স্থির করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, যে পরিবারের প্রত্যেক দিন পেট ভরে খাবার নিশ্চয়তা আছে, এবং স্নান করে উঠে পরবার মতো অন্তত আর এক প্রস্থ শুকনো কাপড় রয়েছে, সেই পরিবারকে দারিদ্রসীমার উপরে বলা যেতে পারে। এই শর্ত পূরণ করতে পারে, এমন চারটি অ-দরিদ্র পরিবার পাওয়া গিয়েছিল সেই গ্রামে। তাদের একটিও কৃষিমজুর পরিবার নয়, দুটি বর্ণহিন্দু এবং দুটি ওবিসি পরিবার।২ এ ভাবে বারবার জাত-সম্প্রদায়ের বিভাজন আর বস্তুগত মালিকানার সম্পর্ক উঠে এসেছে গ্রাম পরিকল্পনায়।
শোনা যায়, এমন ভাবে কোনও একটি গ্রামে বেশ কিছু দিন কাজের পর বামফ্রন্টের এক শীর্ষ নেতা, (যাঁর সঙ্গে অজিতবাবুর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, দু’জনে এক সঙ্গে জেলও খেটেছিলেন) তাঁকে ডেকে বলেছিলেন, “অজিত, ওই গ্রামটা ছেড়ে দাও।” অজিতবাবু সরে গিয়েছিলেন অন্য একটি গ্রামে, শেষ অবধি এই কাজ থেকেই অনেকটা সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। ২০০৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে গ্রামবাসীদের দ্বারা গ্রাম পরিকল্পনার ধারণা একটি ‘বিকল্পের সন্ধান’ থেকে নিষ্প্রাণ নিয়মরক্ষায় নেমে আসে খুব দ্রুত। ২০০৫ সালে ‘এনআরইজিএ’ বা একশো দিনের কাজের প্রকল্প চালু হওয়ার পরে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার ধারক-বাহক ছাড়া আর কিছু হওয়ার তেমন ভাবে কথা ভাবতে পারেনি।
দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যাঁদের কিছুমাত্র পরিচয় রয়েছে, তাঁরা বলবেন, এ হওয়ারই ছিল। উদ্বৃত্ত শ্রম কাজে লাগায় পুঁজিমালিকরা, তাঁদের ধুতির খুঁটে বাঁধা সবক’টি রাজনৈতিক দলের টিকি। শ্রমকে সস্তা, সহজলভ্য রাখার চাপ রাজনৈতিক দলগুলো উপেক্ষা করতে পারে না, তাই একশো দিনের কাজকে ‘অধিকার’ স্বীকৃতি দিয়েও শ্রমিকের লাভ হয়নি। তৃণমূলের আমলে আমরা দেখলাম, পশ্চিমবঙ্গ একশো দিনের কাজে সেরার শিরোপা পেল দেশে, এবং একই সঙ্গে সর্বাধিক পরিযায়ী শ্রমিক সরবরাহকারী রাজ্যগুলির অন্যতম হয়ে বিহার, উত্তরপ্রদেশের পাশে জায়গা করে নিল। কেন ভিন রাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন এত নারীপুরুষ? প্রশ্নটা তুললেই নেতারা এ ওর বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনেন। সকলে এড়িয়ে যান একটি হিসাব, যা অজিত বসু কষে দেখিয়েছিলেন — নব্বইয়ের দশক জুড়ে গ্রামীণ দারিদ্র দূরীকরণের খাতে সরকার যা ব্যয় করেছে, তার সব টাকাটাও যদি দরিদ্রের কাছে পৌঁছত (অতি সামান্য অংশই বাস্তবে পৌঁছেছিল) তা হলেও ওই সময়কালে ন্যূনতম মজুরি না পাওয়ার জন্য খেতমজুরদের যা ক্ষতি হয়েছিল, তার মাত্র ২৬ শতাংশ পূরণ হতো।৩ আজ যদি কোনও অর্থনীতিবিদ বিবিধ স্কিমের অনুদান এবং মজুরিতে ঘাটতির হিসাব কষেন, তা হলে চিত্রটা খুব আলাদা হবে কি?
সহভাগী পরিকল্পনা বাম আমলেই অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়েছিল, সরকারি মূল্যায়নে একে ব্যর্থই বলা চলে। এই ব্যর্থতা ছিল অবধারিত, কারণ সহমত তৈরি না হলে সহভাগী পরিকল্পনা সম্ভব নয়, আর গ্রামবাসীর মধ্যে সহমত তৈরি হলে পা কাদায় আটকে যায় দলীয় রাজনীতির — তাকে টিকে থাকতে গেলে ‘ওরা-আমরা’ বিভাজন চালিয়ে যেতেই হবে। গ্রাম সংসদ স্তরে পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার রূপায়ণের যে সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সূর্যকান্ত মিশ্রের সময়ে, আনিসুর রহমান পঞ্চায়েত মন্ত্রী হয়ে তার প্রায় প্রতিটিকেই খারিজ করে দেন, গ্রাম সংসদের স্বাতন্ত্র্য খর্ব করেন। আর তৃণমূল আমলে তো পঞ্চায়েত কর্তারা জেলা প্রশাসনের ‘জো হুজুরি’ করে কাটালেন।
বিরোধী দলের সঙ্গে নিয়ত, নিরন্তর, অর্থহীন সংঘাতই আজ ‘রাজনীতি’ পদবাচ্য হয়ে উঠেছে। ফলে গ্রামবাসীদের দিয়ে গ্রামের বস্তুগত সম্পদ আর শ্রমসম্পদের সমীক্ষা করিয়ে, সকলের প্রয়োজন বুঝে পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপারটাই সেঁধিয়েছে জনা দুই-তিন ইতিহাস-মনস্ক ব্যক্তির রং-চটা ঝুলিতে। সেখানে বিঘড়া-বামুনিয়া গ্রাম সংসদের খসড়ার শেষে ‘যে প্রকল্পগুলি এখনই করা যায়,’ বিভাগ আছে। তার প্রথম দুটি হল সুস্থায়ী সেচ, এবং তিন নম্বরটি ‘খেত মজুরদের আইনে নির্দিষ্ট মজুরি পাওয়ার ব্যবস্থা করা।’ সে ঝুলি নড়ে ওঠে শুধু যখন কোনও নির্বোধ প্রশ্ন করে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে শ্রমিকের ভোট তা হলে কোন দিকে যাবে?
তথ্যসূত্র:
(১) গ্রামবাসীদের দ্বারা গ্রাম পরিকল্পনা, বিঘড়া-বামুনিয়া গ্রাম সংসদের বর্তমান খসড়া পরিকল্পনা, পৃষ্ঠা ৩২, ডিসেম্বর ২০০২, জেলা পরিকল্পনা কমিটি, বর্ধমান
(২) গ্রামবাসীদের দ্বারা গ্রাম পরিকল্পনা কী ও কেন, পৃষ্ঠা ১০। অজিত নারায়ণ বসু, নতুন চিঠি প্রকাশনা
(৩) পশ্চিমবাংলার অর্থনীতি ও রাজনীতি, পৃষ্ঠা ৬৩। অজিত নারায়ণ বসু, নাগরিক মঞ্চ, দ্বিতীয় প্রকাশ ২০০৩