বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[রাজ্য]
"বাংলা_নিজের_মেয়েকে_চায়" স্লোগানটা এবারের বিধানসভা নির্বাচনে জয় এনে দিয়েছে। এই স্লোগানের রাজনৈতিক কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করতে বামপন্থীরা ব্যর্থ হয়েছেন। রাসমণি ওঁরাও-আমিনা বেগমের দৈনন্দিন সংগ্রামের বাস্তব আলেখ্য মানুষের কাছে পৌঁছনোর বদলে ভোটের বাজারে এমফিল-পিএইচডি-এলিট ক্যাম্পাসের রঙিন ছবি তুলে ধরতে ব্যস্ত ছিলেন তাঁরা। প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন হয়ত, কিন্তু হতোদ্যম হননি। এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী লড়াইতে ঝাঁপিয়ে পড়ার একটা সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। শূন্য হওয়ার পরেও নিজেদের ভুলত্রুটি বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি বামপন্থী ছেলেমেয়েরা কোভিড থেকে শুরু করে লকডাউন, বেরোজগারি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় সহ যে কোনও সমস্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ছেন নির্দ্বিধায়। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন রেড ভল্যান্টিয়াররা যেভাবে অক্সিজেনের জোগাড় থেকে শুরু করে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা, সেফ হোম তৈরি করা, অসুস্থ মানুষের কাছে ওষুধ, খাবার ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছনো ইত্যাদি কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন, তা ইতিমধ্যেই সর্বস্তরে প্রশংসিত। ভোটের আগেও প্রায় এক বছর ধরে শ্রমজীবী ক্যান্টিন, শ্রমজীবী বাজার, যৌথ রান্নাঘর ইত্যাদি বিবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে নিবিড় সংযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন বিভিন্ন বামপন্থী গণ সংগঠনের কর্মীরা। আমফান ঝড়ের পরে দক্ষিণ ও উত্তর চব্বিশ পরগণার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা, ত্রাণ সামগ্রী ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে শাসকদলের চূড়ান্ত দুর্নীতির মধ্যে প্রায় সমান্তরাল হয়ে উঠেছিল নাগরিক উদ্যোগগুলি। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই যাবতীয় কাজের পরেও নির্বাচনে ভরাডুবি হল কেন বামেদের।
নির্বাচনে বামপন্থীদের "শূন্য" হয়ে যাওয়ার পিছনে অসংখ্য কারণ রয়েছে, সেগুলি নিয়ে আলোচনা এই প্রবন্ধের পরিসরে করা সম্ভব নয়। এখানে আমাদের আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে দুটি বিষয়:
১. মূলত ত্রাণভিত্তিক কাজের মাধ্যমে জনসংযোগের যে প্রচেষ্টা বামপন্থীরা করেছিলেন, সেটা ভোটের বাক্সে সুফল এনে দিতে পারল না কেন।
২. কি ধরণের রাজনৈতিক বিকল্প নির্মাণ পুনরায় পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারে।
প্রথম প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আমাদের বিশ্লেষণ- সামাজিক কাজগুলোকে কেন্দ্র করে "অধিকারের রাজনীতিকে" প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে বামপন্থীরা সফল হয়নি। কার্যত অনুপস্থিত রাষ্ট্রের ভূমিকাকে প্রশ্ন করার বদলে রাষ্ট্রের খামতিগুলো কিছুটা পূরণ করেছে তাঁদের কাজ। একইসঙ্গে, মানুষকে বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে তাঁরা রাজনৈতিক ফায়দা আশা করেছিলেন- "দরকারে পাই, তাই সরকারে চাই" স্লোগান তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সেক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিযোগিতা করা উচিত রামকৃষ্ণ মিশন বা ভারত সেবাশ্রম সংঘের সঙ্গে- নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে সেবামূলক কাজকে গুলিয়ে ফেলা রাজনৈতিক ভাবে আত্মঘাতী।
অথচ ইস্যু যে ছিল না, এমনটা তো নয়। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। লকডাউনে মানুষ রোজগার হারিয়েছেন, বামপন্থীরা যৌথ রান্নাঘরের মাধ্যমে তাঁদের মুখে দু'বেলা অন্ন তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু নাগরিকদের কাজের অধিকার, খাদ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার দিতে রাষ্ট্র সাংবিধানিক ভাবে বাধ্য। অতিমারির মধ্যে সেই কাজে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার উভয় পক্ষই সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হয়েছেন। গতবছর দেশজুড়ে সার্বিক লকডাউন করে সরকার খেটে খাওয়া মানুষের কাজের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন টানা আড়াই মাস ধরে। তারপরেও বিভিন্ন সময় রাজ্যগুলিতে আংশিক বা সর্বাত্মক লকডাউন হয়েছে। এবছর কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আবারো লকডাউনের আওতায় দেশের মানুষ। সরকার কোনও রকমের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই লকডাউন ঘোষণা করে খেটে খাওয়া মানুষের উপার্জনের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। একদিকে যেমন শ্রমজীবী মানুষের হাতে কাজ নেই, অন্যদিকে ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও প্রায় বন্ধ। প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করাই এখন দেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অথচ অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, রঘুরাম রাজন সহ সমস্ত শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ যখন ক্ষতিপূরণ স্বরূপ তাঁদের একাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন, তা অগ্রাহ্য করেছেন মোদি সরকার। ফলে সংসার চালানোর জন্য প্রান্তিক পরিবারগুলিকে হাত পাততে হয়েছে মহাজনের কাছে, আধুনিক অর্থনীতির পরিভাষায় যার নাম ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান।
ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর জুলুম সাধারণ গরিব খেটে খাওয়া মানুষের বেঁচে থাকাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। একাধিক ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই মহিলাদের স্বনির্ভরতা প্রকল্পে ঋণ দেয় এবং কিস্তি বাবদ প্রতি সপ্তাহে একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা নিয়ে যায়। লকডাউনের আগে বেশিরভাগ ঋণগ্রহীতা নিয়মিতভাবে কিস্তির টাকা শোধ দিতেন। লকডাউন পরবর্তী পরিস্থিতিতে জীবিকা নির্বাহের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিস্তির টাকা ফেরত দিতে গরিব মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। একদিকে করোনা পরিস্থিতির ফলে সরকার বড় বড় ব্যবসায়ীদের ঋণ মুকুব করে দিচ্ছেন, অন্যদিকে গরিব মানুষ কিস্তির টাকা ফেরত দিতে না পারলে তাদের ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে চাপানো হচ্ছে সুদের বোঝা। লকডাউনের কারণে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ১ এপ্রিল থেকে ৩১ অগাস্ট, ২০২০ পর্যন্ত সমস্ত রকমের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু আমরা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে এই সময়ে বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের আদায়কারীরা অসহায় মহিলাদের ওপর কিস্তি ফেরত দেওয়ার জন্য জুলুম করেছে। বহু ক্ষেত্রে তাদের অপমানজনক কথা বলেছে, সম্মানহানি করেছে। কিস্তির টাকা শোধ করতে না পারলে সুদের ওপর সুদ জমা হবে বলে ঋণগ্রহীতাদের তারা দিনের পর দিন ভয় দেখিয়েছে, ভুল বুঝিয়েছে। আমরা দেখেছি ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গাইডলাইনগুলো মেনে চলছে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গাইডলাইন অনুযায়ী যে কোনও ঋণের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার একটা আইনি চুক্তিপত্র প্রাপ্য। সেখানে ঋণের পরিমাণ, সুদের শতকরা হার, কত দিনে ঋণ পরিশোধ করতে হবে, সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান গ্রহীতার বিরুদ্ধে কি কি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে— এই সমস্ত বিষয় স্পষ্ট করে ঋণগ্রহীতার মাতৃভাষায় (এক্ষেত্রে বাংলায়) লেখা থাকতে হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি যে চুক্তিপত্র বিষয়ে এই নিয়ম কোনও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানই মানছে না। একজন ঋণগ্রহীতার কাছেও চুক্তিপত্র নেই। এমনকি ঋণ নেওয়ার সময় যে কাগজ তাদের দেখানো হচ্ছে, সেটা পর্যন্ত ইংরেজি ভাষায় লেখা। ফলে ঋণগ্রহীতাদের বেশিরভাগের কাছেই চুক্তির শর্তগুলো আদৌ স্পষ্ট নয়। এছাড়াও আমরা দেখেছি যে লকডাউনের কারণে একজন ঋণগ্রহীতা যখন কিস্তির টাকা ফেরত দিতে পারছেন না, তখন জোর করে, ভুল বুঝিয়ে তাদের আরেকটি ঋণ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এভাবেই একটু একটু করে ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে অসহায় এই মহিলাদের।
ফলে ঋণগ্রহীতারা তাদের ঋণ সম্পর্কে একদিকে যেমন সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছেন, তেমনই উল্টোদিকে প্রতিদিন ঋণের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ছেন তাঁরা। এই ঋণ তাঁদের দেওয়া হয়েছে যাতে এই ঋণের টাকায় তাঁরা স্বনির্ভর হতে পারেন। কোনও ভাবেই এই ঋণ কোনও ব্যাঙ্ক বা সংস্থার মুনাফার জন্যে নয়। বরং এই ঋণ গরীব মানুষকে দারিদ্র থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যে দেওয়া হয়। ফলে দেশব্যাপী এই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ঋণ ফেরত দেওয়া থেকে গরীব মানুষকে মুক্তি দেওয়ার দাবি সম্পূর্ণ নৈতিক এবং আইনত বৈধ। এই দাবি নিয়ে বামপন্থীরা লড়াই সংগ্রামের পথে নামতে পারলে রাজনীতির পাটিগণিতের বহু অঙ্ক ওলটপালট হয়ে যাবে।
তবে এক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়েছে। ঋণ না পেলে গরিব খেটে খাওয়া মানুষের পুঁজির সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে? এক্ষেত্রে একাধিক সরকারি প্রকল্প আছে যা পাওয়া প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের ইন্দিরা আবাস যোজনার আওতায় কাঁচা বাড়িতে বসবাসকারী প্রত্যেক পরিবারের ঘর পাকা করার জন্য এক লক্ষ পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা ভর্তুকি প্রাপ্য। এছাড়াও স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের দরুণ শৌচালয় তৈরি করার জন্য বারো হাজার টাকা ভর্তুকি প্রাপ্য। সেগুলো না পাওয়ার দরুণ মানুষ বাধ্য হচ্ছেন স্বনিযুক্তির জন্য নেওয়া চড়া সুদে নেওয়া ঋণের টাকায় কাঁচা বাড়ি পাকা করতে। একইভাবে, আমফান ঝড়ে যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁরা পঞ্চায়েতের দুর্নীতির কারণে ক্ষতিপূরণ না পেয়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছেন।
এছাড়াও মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের মাধ্যমে একশো দিনের কাজ পাওয়া গ্রামীণ শ্রমিকদের সাংবিধানিক অধিকার। অর্থনীতির এই বিপন্ন অবস্থায় যখন রোজগারের সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, তখন একশো দিনের কাজের মজুরি তাঁদের জীবনযাপনকে কিছুটা হলেও সহনীয় করে তুলতে সক্ষম।
কিন্তু পঞ্চায়েত স্তরের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা নতুন জব কার্ডের আবেদনপত্র পর্যন্ত জমা নিচ্ছে না বা যাঁদের জব কার্ড রয়েছে, তাঁদের কাজ দেওয়ার জন্য কাটমানি চেয়ে প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে। এছাড়াও বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার মত সাংবিধানিক অধিকারগুলো থেকেও পঞ্চায়েতের দুর্নীতির কারণে মানুষকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এই সমস্ত কারণেই তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন বেঁচে থাকার জন্যে একের পর এক ঋণ নিতে। তাই লড়াইটা শুধু ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার বিরুদ্ধে নয়, পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পগুলির সুযোগ সুবিধা অর্জনের জন্য বামপন্থীদের লড়াই করতে হবে, শ্রমজীবী মানুষকে সংগঠিত করতে হবে। সবার হাতে কাজ, সবার পেটে ভাত এবং আত্মমর্যাদার সঙ্গে বাঁচার যে মৌলিক অধিকার দেশের সংবিধান আমাদের দিয়েছে, তা সুপ্রতিষ্ঠিত করাই আগামীদিনে বামপন্থীদের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
এই প্রসঙ্গে একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলা যাক। ইয়াস ঝড়ের পরে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাত পেতে, নিজেদের খুঁদকুঁড়ো এক করে প্রান্তজনের পক্ষ থেকে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি সাগরদ্বীপবাসীর লড়াইয়ে সামিল হতে। ইয়াস পরবর্তী তীব্র জলোচ্ছ্বাসের ফলে নোনা জল ঢুকে মিঠে জলের পুকুর, ধান ও অন্যান্য ফসলের ক্ষেত, পানের বরজ- সমস্ত কিছুকে সংক্রমিত করেছে। খাবার জল পর্যন্ত অমিল, টিউবওয়েলগুলো থেকে নোনা জল উঠছে। অজস্র মাছ, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগীর মৃতদেহ পচে গোটা এলাকা দূষিত হয়ে রয়েছে। আগামী বছর পাঁচেক ওখানে ধান চাষ করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র যে স্থানীয় মানুষ ঘরছাড়া হয়ে রয়েছেন বা সাময়িক ভাবে খাদ্যাভাব রয়েছে তাই নয়, ব্যাপক কর্মহীনতা সৃষ্টি হয়েছে এর ফলে।
সেখানকার মানুষের উদ্যোগে তৈরি যৌথ রান্নাঘর সামলানোর জন্য স্থানীয় নারী-পুরুষদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। সেকাজ যেমন চলছে, একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য প্রশাসনের ওপর চাপ রাখার কাজটাও কমিটি চালিয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে পুকুর, টিউবওয়েল সংস্কারের উদ্যোগ, রেশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ঋণমুক্তির দাবিতে মহিলাদের সংগঠিত করার কাজ অক্লান্ত ভাবে করে চলেছেন আমাদের কমরেডরা। এছাড়াও গড়ে উঠেছে "নদী বাঁধ বাঁচাও" কমিটি।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে, স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা ও সিদ্ধান্তের ওপর ভরসা করে এবং তাদের নিজেদের দায়িত্বে প্রাকৃতিক উপায়ে শক্তপোক্ত বাঁধ নির্মাণের দাবি তোলাটা এখন সবচেয়ে জরুরি। জব কার্ড থাকা সত্ত্বেও মানুষ "একশো দিনের কাজ" পাচ্ছেন না। প্রান্তজনের পক্ষ থেকে আমরা দাবি তুলেছি, অবিলম্বে একশো দিনের কাজের অংশ হিসেবে বাঁধ নির্মাণের কাজে স্থানীয় মানুষকে কর্মসংস্থান দিতে হবে। পাশাপাশি চাষের জমি, পুকুর, মাছের ভেড়ি ইত্যাদি সংস্কার করে মানুষের জীবিকা পুনঃরুদ্ধার করাটা এইমুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। "ত্রাণের_সঙ্গেসঙ্গে_হোক_প্রতিরোধ" এটাই বাংলার মানুষের কাছে আমাদের বার্তা।
বামপন্থার এই দুর্দিনে আমাদের আস্থা রাখতেই হবে যৌথতার স্বপ্নে। পশ্চিমে ঢলে পড়া সূর্য্যের মধ্যেই আগামীতে রাঙা হওয়া পুবের আকাশের অঙ্গীকার লুকিয়ে থাকে। এই বিশ্বাস বুকে আঁকড়ে শুরু হোক লড়ে নেওয়ার পাল্টা যুদ্ধ।