বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[রাজ্য]

[রাজ্য]

‘আধার’ না আঁধার

‘আধার’ না আঁধার

শোভন পাল

photo

বহু মানুষের খাদ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা

শ্রমজীবী ভাষা, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১— সকাল সকাল রেশন দোকানে লাইন দিয়ে, ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করার পর রেশন না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে অনেককে। শহরে তবু রেশন দোকানগুলি দূরে নয়, কিন্তু গ্রামাঞ্চলে রেশন দোকানগুলি দূরে দূরে— আর সেই গ্রাম এলাকা যদি ঝাড়গ্রাম জেলার মতো জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকা হয় তাহলে তো কথাই নেই।

গোপীবল্লভপুর ১ নম্বর ব্লকে ছোট-বড় ৩০টি রেশন দোকান আছে। রেশন তোলার জন্য বহু গ্রামের রেশন গ্রাহকদের দীর্ঘ পথ পারি দিতে হয়। রাঙ্গিয়াম, কয়াশোল, গাড়রাশোল গ্রামের মানুষদের রেশন তোলার জন্য প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে বেলদুয়ারে যেতে হয়। পাটবাঁধ, ভালুকখুলিয়া গ্রামের রেশন দোকান চার কিলোমিটার বেশি দূরে বাঁধগোড়া গুড়িপুকুরে। ভাউরীশোল, গুহালবুড়া গ্রামের রেশন দোকান চার কিলোমিটার দূরে আমর্দা গ্রামে। হাতিমাড়া গ্রামের রেশন দোকান প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে বৈতালপাড়া গ্রামে। এই রকম দূরত্বের পথ পেরিয়ে রেশন দোকানে এসে রেশন না পেয়ে ফিরে যেতে হলে কি পরিমাণ ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে অনুমান করা যায়।

রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার (Aadhar) লিংকের নির্দেশ জারি হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে এই দুর্ভোগ। বহু মানুষের রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্তি এখনও হয়নি। রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্তি করতে গেলে অনেক সময় ‘ডেটা নট ফাউন্ড’ দেখাচ্ছে। কারও আঙুলের ছাপ মিলছে না। রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্তি হওয়ার পরও সমস্যা থেকে যাচ্ছে। প্রতিবার রেশন নিতে এলে যে মোবাইলের মাধ্যমে লিংক করা হয়েছে সেটি সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে। তারপর আছে লিংক না থাকার সমস্যা বা সার্ভার ডাউনের গল্প। প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় এমনিতেই ইন্টারনেট সংযোগ খুব দুর্বল। অনেক জায়গাতেই রেশন ডিলারদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার লিঙ্ক না করালে মিলবে না রেশন। যদিও মানুষের ধারণা, তাদের জন্য বরাদ্দ খাদ্যসামগ্রী ডিলারদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। রেশন ডিলারদের সঙ্গে রেশন না পাওয়া গ্রাহকদের বিবাদ হচ্ছে বহু জায়গাতে। সরকারের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ অবশ্য জানিয়েছেন, আধার কার্ডের সঙ্গে রেশন কার্ডের লিংক না হলেও রেশন বন্ধ করার কোনও প্রশ্ন নেই। মানুষকে রেশন দিতে বাধ্য সব ডিলার। বাস্তবে রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার লিংক না হওয়ার কারণে অনেক মানুষে খাদ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিপদের মুখে।

রাজ্য সরকার এত দিন কেন্দ্রীয় সরকারের ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ চালু করতে রাজি ছিল না। রাজ্য সরকারের দাবি ছিল, রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পগুলিতে অনেক বেশি মানুষকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রেশন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এতদিন এই প্রকল্প চালু করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা খাদ্য সুরক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেন, সারা দেশে সমস্ত রাজ্যে ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ চালু করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে চালু হয় ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’।

৩১ আগস্ট রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার লিংকের সময়সীমা ঠিক করেছিল রাজ্যের খাদ্য দপ্তর। কিন্তু এখনও ৪ কোটির বেশি রাজ্যবাসীর রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার লিংক ও আঙুলের ছাপ দিয়ে ‘বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন’ সম্পন্ন করা যায়নি।

পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প ও রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটি ৩০ লক্ষ রেশন কার্ড আছে। তার মধ্যে ৬ কোটি রেশন কার্ড জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের। খাদ্য দপ্তর সূত্রের খবর, প্রায় ৪০ শতাংশ রেশন গ্রাহকের ‘বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন’ বাকি আছে। এই কাজ সময় মতো শেষ না হলে বহু সংখ্যক মানুষের রেশন পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ার বিপদ দেখা যাচ্ছে।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.