বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[রাজ্য]

[রাজ্য]

অমৃতের মৃত্যু

অমৃতের মৃত্যু

স্বাতী ভট্টাচার্য

photo

খাওয়াদাওয়ার গল্প করে বাঙালি যত খুশি হয়, অত আর কিছুতে না। তাই ফেসবুকে ভারী জনপ্রিয় খাদ্যপ্রেমীদের নানা গ্রুপ। সেখানে প্রায়ই মেলে কলকাতার এ গলি-সে গলির পেরুভিয়ান কিংবা টিবেটান রেস্তোরাঁর রিভিউ, খাবারের ছবি, তার গুণাগুণের বিচার-বিবরণ। সাউথ ক্যালকাটার সেরা গুলাটি কাবাব কিংবা মালাই কুলফি কোথায় মেলে, কেউ সে প্রশ্ন করলে ১৩ মিনিটে ৩২৪টা কমেন্ট পোস্ট হয়ে যায়। সেই প্রাণচঞ্চল গ্রুপেও এখন অতিমারির করাল ছায়া। এক গৃহিনী লিখছেন- আমের মিষ্টি আচার বানালাম। বয়ামে ভরতে ভরতে হাসছি আর ভাবছি, শেষ করে যেতে পারব কি? আর এক মহিলা ছবি পোস্ট করেছেন- আটপৌরে স্টিলের বাটিতে পেঁপে, পটল, আলুর পাতলা ঝোলে এক টুকরো মাছ। কোভিডে তিনি বিছানায়, স্বামী অফিসে ছুটি পাননি, সারা সপ্তাহ ফোনের ওপার থেকে সাহস-ভরসা জুগিয়েছেন শ্বাসযন্ত্রণায় কাতর, ভয়াতুর গৃহিনীকে। রবিবার বানিয়েছেন গৃহিনীর প্রিয় মাছের ঝোল। আর এক তরুণী জানিয়েছেন, তাঁর আটষট্টি বছরের শ্বশুরমশাই কোভিড নিয়ে আইসিইউতে, তেষট্টি বছরের শাশুড়িমা কোনও কিছু মুখে তুলতে চাইছেন না। ভুলিয়ে-ভালিয়ে তাঁকে একটু ফল খাওয়াতে পাকা পেঁপের আইসক্রিম তৈরি করেছেন বধূ। ছবিও দিয়েছেন গাঢ় কমলা আইসক্রিমের।
অতিমারির কালের খাওয়াদাওয়ার এ সব ছবি যেন হৃদয় নিংড়ে শেষ বাষ্পটুকু বার করে আনে। অন্নই তো প্রাণ। অন্নের রন্ধন-পরিবেশনে, ঘ্রাণে-ভোজনেই তো জীবন নিজেকে জানান দেয়। সেখানেও যখন মৃত্যুচিন্তা এসে প্রবেশ করে, সে সত্যিই কালবেলা। প্রতি গ্রাসে সংশয়, হয়তো এ খাওয়াই শেষ খাওয়া। খুন্তি নাড়তে নাড়তে দুশ্চিন্তা, কাল যদি রাঁধতে না পারি? প্রতি বার আরও একটু বাজার এনে রেখে দেওয়ার তাগিদ — যদি এর পরে বন্ধ থাকে বাজার? কিংবা যদি বাজারে যাওয়ার লোকটাই আর না থাকে? ওই তো শ্মশানে গণচিতা জ্বলছে, কবরস্থানে মেশিন মাটি খুঁড়ছে, শেষকৃত্যের অপেক্ষায় সারি সারি শব, সাদা প্লাস্টিকে মোড়া। যাতে কোন দেহ কার গুলিয়ে না যায়, তার জন্য গায়ে নম্বর লেখা রয়েছে। যে আজ ঘরে বসে ভাতের পাতে একটু পাতিলেবু টিপে নিচ্ছে, তর্জনী আলতো ঠেকিয়ে তুলে নিচ্ছে পরিমাণ মতো নুন, কাল তার জন্য কোন নম্বর বরাদ্দ রয়েছে, কে জানে। তার পরেও প্রতীক্ষা — কারও নম্বর আসবে ১৬ ঘণ্টা পরে, কারও ১৮ ঘণ্টা কি ২৪ ঘণ্টা পার করে। এ বার অগ্নিস্নান, এ বার অগ্নিভক্ষণ। খুলে যাবে বৈদ্যুতিক চুল্লির দ্বার, লাগাতার ব্যবহারে যার ধাতব ফ্রেম বেঁকে যাচ্ছে। তার গহ্বরে ঢুকে যেতে যেতে নীরব প্রশ্ন রেখে যাবে সেই সব নম্বরচিহ্নিত দেহ — এই কি আমাদের প্রাপ্য ছিল?
অতিমারির প্রকোপে মৃত্যু হবে বেশি, অকালে চলে যেতে হবে অনেককে, এ এক কঠিন সত্য। বিশ্বের উন্নত দেশগুলিও গত বছর বিহ্বল হয়েছে অতিমারির প্রকোপে। কিন্তু একটা মানুষ এতগুলো বছর তার জীবনের যে অর্থ নির্মাণ করল, প্রাণ চলে যাওয়ার পরে কি সেই অর্থ তার দেহকে আশ্রয় করে থাকে না? না হলে কেন বহু মানুষ হাঁটেন তাঁদের প্রিয় নেতা, অভিনেতা, কবি কিংবা বিজ্ঞানীর দেহের সঙ্গে, কেন প্রিয়জন এনে দেন ফুল, কেন দেহ ছুঁয়ে বসে থাকা, নীরব সঙ্গদান? অতিমারি কেবল অনেক মৃত্যু একসঙ্গে ঘটায় বলেই যে অসহ্য, তা নয়। মৃতকে কেবল মাত্র একটা দেহ করে ফেলা হচ্ছে, প্রিয় মানুষটিকে ‘বিপজ্জনক বর্জ্য’ বলে গণ্য করা হচ্ছে, অন্তিমযাত্রাকে আতঙ্কযাত্রা করে তোলা হচ্ছে — এ তো মৃত্যুর চাইতেও ভয়ঙ্কর। এ কি কোনও মানুষের প্রাপ্য হতে পারে? নিশ্চয়ই নয়। তা হলে একটা দেশ কেন তার নাগরিকের মৃত্যুকে সম্মান করতে পারে না? সুপ্রিম কোর্ট একাধিক রায়ে স্পষ্ট করেছে, মৌলিক অধিকারের মধ্যে প্রথমটি, অর্থাৎ ‘বাঁচার অধিকার’ আসলে হল ‘সম্মানের সঙ্গে বাঁচার অধিকার,’ এবং তার মধ্যেই নিহিত আছে ‘সম্মানের সঙ্গে মৃত্যুর অধিকার।’ অর্থাৎ নাগরিকের দেহটির মর্যাদা সুরক্ষিত রাখাও রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। যাকে রাষ্ট্র প্রাণে বাঁচাতে পারেনি, তার দেহের সম্মানটুকু কি বাঁচাতে পারে না?
গণচিতার ধোঁওয়ায় এই প্রশ্নটা যেন অতিকায় হয়ে উঠছে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ বিশাল আকার নিয়ে আছড়ে পড়ার সময় থেকেই প্রশ্ন উঠেছে রাষ্ট্র আর রাজনীতির ভূমিকা নিয়ে। প্রশ্ন প্রধানত তিনটি। এক, সংক্রমণের এই বিস্তার কি আটকানো যেত না? উত্তর, হ্যাঁ, করা সম্ভব ছিল। কিন্তু করা হয়নি। গত বছর শীতের পর থেকে করোনা সংক্রমণের হার কমে এলেও দ্বিতীয় ঢেউ যে অবধারিত, বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তার সম্ভাবনা কার্যত উপেক্ষা করেছে সরকার। কুম্ভমেলার অনুমতি দিয়েছে, পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচনী জনসভা, গণমিছিলের আয়োজন করেছে, স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখেও খুলে দিয়েছে বিনোদন-বিপনন, গণপরিবহনে সতর্কতা অবলম্বনের কোনও চেষ্টাই হয়নি। ফলে যা অবধারিত ছিল, তা-ই হয়েছে। নিজের নিয়মে ভয়ানক গতিতে ছড়িয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ।
দুই, সংক্রমিতের মৃত্যুহার কি কমানো যেত না? আগাম সতর্কতা নিলে কী হতে পারত, তা দেখালেন মহারাষ্ট্রের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলা নন্দুরবারের জেলাশাসক রাজেন্দ্র ভারুদ। তিনি চিকিৎসক, দ্বিতীয় ঢেউয়ের অনিবার্যতা বুঝে একটুও গা ঢিলে ভাব দেখাননি প্রথম ঢেউয়ের পরে। নিজের জেলায় তিনটি অক্সিজেন উৎপাদক কারখানা তৈরি করেছেন, তার দুটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। হাসপাতালগুলিতে পাইপের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করছেন, সাত হাজার শয্যার আইসোলেশন সেন্টার বানিয়েছেন, যেখানে ১৩০০ শয্যায় আইসিইউ সুবিধে রয়েছে। মজুত করেছেন যথেষ্ট ওষুধ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার টিকা দেওয়ার জন্য টিম করেছেন। রোগী বহনের জন্য পর্যাপ্ত অ্যাম্বুল্যান্স রেখেছেন, দুটি রেখেছেন কেবল মৃতদেহ বহনের জন্য। তাঁর জেলার প্রয়োজনের তুলনায় তাঁর ব্যবস্থা অনেক বেশি, ফলে অন্য জেলা থেকে লোকে এই প্রত্যন্ত জেলায় চিকিৎসা খুঁজতে আসছেন। গোটা মহারাষ্ট্র যখন কোভিড মোকাবিলায় হিমসিম, তখন এই প্রত্যন্ত জেলা কোভিড সংক্রমণ দ্রুত নামিয়ে এনেছে। যার অর্থ, প্রশাসন যদি আগাম সতর্ক হয়, তা হলে কোভিডে অসুস্থ হলেও তা প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায় না।
নন্দুরবার জেলা প্রশাসনের পক্ষে যা সম্ভব, কেরলের মতো একটা রাজ্য যা করে দেখিয়ে দিয়েছে, তা গোটা দেশ কেন করতে পারে না, তার কোনও উত্তর নেই। কিংবা আছে। কোভিড নিয়ন্ত্রণের চাইতে জরুরি কাজ ছিল অন্য নেতাদের। মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চাইতেও জরুরি কাজ। যেমন, ভোট বাঁচানো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্ভবত নিজের দৃষ্টান্ত দিয়ে এ বিষয়ে সব চাইতে এগিয়ে। কোনও রাজ্যের বিধানসভা ভোটে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এত জনসভা করতে সম্ভবত ইতিহাসে কখনও দেখা যায়নি, মোদি যা করলেন পশ্চিমবঙ্গে। এক দিকে তাঁর নির্বাচনী আস্ফালন, টিকা রফতানি করে ‘বিশ্বের পরিত্রাতা’ হওয়ার বারফট্টাই, অন্য দিকে অক্সিজেনের অভাবে কোভিড রোগীদের মর্মান্তিক মৃত্যু, শয্যার অভাবে হাহাকার — চোখের সামনে এ দুটো একই সঙ্গে ঘটতে দেখে দেশের মানুষের মনে যে অবিশ্বাসের বোধ জন্মায়, যে তীব্র বিবমিষা উঠে আসে দেহ-মনের অভ্যন্তর থেকে, তার জুড়ি মেলে না। তবে কি নাগরিক আর নেতা দুই ভিন্ন জগতের মানুষ? অটলবিহারী বাজপেয়ীর দ্বিতীয় দফা সরকারের শেষে বিজেপি যে ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’ স্লোগান তুলেছিল, তা-ও এমনই বাস্তব-বিচ্ছিন্নতার বোধ তৈরি করেছিল। ভয়ানক বিপর্যয়ের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে দেশের সরকারের ক্রমাগত কোভিডের বিপদকে নগণ্য করে দেখানোর চেষ্টা করে গিয়েছে, কিছুমাত্র সতর্কতা অবলম্বন করেনি, দেখনদারি-সর্বস্ব রাজনীতি করে বাহবা কুড়নোর পুরনো খেলা চালিয়ে গিয়েছে — দেশের মানুষের অসহায়তার বোধকে তা আরও তীব্র করেছে। তাঁরা বুঝেছেন, তাঁদের মৃত্যু আটকানোর চাইতে মৃত্যুকে ‘ম্যানেজ’ করার দিকে ঝোঁকটা বেশি নির্বাচিত সরকারের। গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশে সরকার দৈনন্দিন বুলেটিনে যত কোভিড মৃত্যুর সংখ্যা দিচ্ছে, রাজ্যের এক একটা শ্মশানে তার চাইতে বেশি কোভিড-দেহ দাহ হচ্ছে। সংখ্যার বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন করলে মধ্যপ্রদেশের এক মন্ত্রী বলেছেন, “কোভিড মৃতের সংখ্যা কমিয়ে আমরা কি পুরস্কার পাব?” কোনও রাজ্যে নেতারা নিরুত্তর থেকেছেন, কোনও রাজ্যে ‘কোভিড নয়, কোমর্বিডিটি’ — এই পুরনো গল্প নতুন করে ফেঁদেছেন, গত বছর যা পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চালানোর চেষ্টা করে পিছু হটেছিল। মিথ্যের ধোঁয়ায় সত্যকে অস্বচ্ছ করে, বিরোধীকে দোষারোপ করে, চীন কিংবা পাকিস্তানের উপর দায় চাপিয়ে যদি নির্বাচনে পার পাওয়া যায়, অতিমারিতেই বা যাবে না কেন? গত বছর মার্চ মাসে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ভারতের রাস্তায় কোনও পরিযায়ী শ্রমিক হাঁটছে না। আজ হয়তো দাঁড়িয়ে বলবেন, দেশের কোনও শ্মশানে কোভিড-রোগীর চিতা জ্বলছে না। রাষ্ট্রের বয়ানের সঙ্গে সত্যের সম্পর্ক ক্রমশই অস্পষ্ট হয়ে আসছে। সরকারের সঙ্গে সংলাপ অর্থহীন, তার চেষ্টাও আর নাগরিকরা করেন না। টিভির অ্যাঙ্কররা নির্দিষ্ট চিত্রনাট্য অনুসারে নেতাদের সঙ্গে সংলাপের অভিনয় করেন।
তৃতীয় প্রশ্ন, মৃতকে কি সম্মানের সঙ্গে বিদায় দেওয়া যেত না? এর একটা উত্তর- যে রাষ্ট্র নাগরিকের মৃত্যুকে স্বীকারই করতে চায় না, সে তার মৃত্যুকে সম্মান করবে কী করে? কিন্তু এ-ও সম্পূর্ণ উত্তর নয়। মৃত্যুতে পরিজনের পাশের জায়গাটা চিরকালই ছিল পাড়া-পড়শির। কিন্তু মুস্তফার উটের মতো, রাষ্ট্র নাক গলিয়েছে নাগরিক সমাজের শিবিরে, তারপর একটু একটু করে জমি দখল করে প্রায় সব জায়গাটা জুড়ে বসেছে। পশ্চিমবঙ্গে পাড়ার ক্লাব যে দিন থেকে রাজ্য সরকারের মদতপুষ্ট হয়েছে, সে দিন থেকে সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে তার দূরত্ব বেড়েছে। অন্য দিকে, কেন্দ্রের সরকার আইনের প্যাঁচে স্বদেশি-বিদেশি অনুদান রুদ্ধ করে নাগরিক সংগঠনগুলোকে শীর্ণ করেছে। বিরোধী দল বা মিডিয়াকে ছকে আনা গেলেও নাগরিক সংগঠনের স্বতন্ত্র কণ্ঠ বিজেপি সরকারকে বেআব্রু করতে পারে, এই ভয় থেকে তাদের দমন করেছে। এর ফলে আজ মৃতের পরিজন থানা আর পুরসভাকে ফোন করে বসে থাকছেন দেহ আগলে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দেহ নিয়ে যাওয়ার লোক নেই, দাহ করার জন্য সহায়তা মেলে না, অক্সিজেন-ওষুধের ব্যবস্থা করার জন্য পাশে কেউ নেই। সমাজ মাধ্যমে বারবার আকুতি ভেসে আসে- বাবাকে এখনই ভর্তি করতে হবে, প্লিজ জানান কোথায় নিয়ে যাব। মায়ের এখনই অক্সিজেন চাই, একটা নম্বর দিন। অদেখা, অচেনা মানুষের কাজে আবেদন। কেউ না কেউ ‘মানুষের কাজ’ করতে এগিয়ে আসবেন নিশ্চয়ই?
কারা আসবেন? গত বছর স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বেশ কিছু নাগরিক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন এগিয়ে এসেছিল কোভিড পরিস্থিতিতে মানুষকে খাদ্য-ওষুধের জোগান দিতে, পাশে থাকতে। অনেকে আজও সক্রিয়, কিন্তু এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে তার মাত্রা যেন কিছু কম। কোথায় সেই তরুণরা? আন্দাজ হয়, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের কোভিড, আমপানের ত্রাণকার্য যে বৃহত্তর রাজনীতির ছকে কিছুমাত্র ছাপ ফেলতে পারল না, সব দল যে নির্লজ্জ ভাবে ভোট আদায়ের ছকে ফিরে গেল, তাতে ওই তরুণরা হয়তো নিজেদের কাজের অর্থ নতুন করে খুঁজছেন। ব্যাঙের আধুলি দিয়ে গরিবের ত্রাণ হবে, আর কোটি কোটি টাকা ছড়ানো হবে ভোট ভাঙাতে, বিরোধী ঠ্যাঙাতে — এর কদর্যতা অন্তরের সমস্ত সদিচ্ছার, কর্তব্যবোধের গলা টিপে হতাশার পাঁকে ডুবিয়ে মারতে চায়। দ্বিতীয় ঢেউয়ে তাই হাসপাতাল, অক্সিজেনের সরকারি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক যত পোস্ট হচ্ছে সমাজ মাধ্যমে, ‘এই আমাদের নম্বর, এখানে ফোন করলেই সব পৌঁছে দেব’ গোছের মেসেজ অত হচ্ছে না। অর্থসংগ্রহের চেষ্টা তো নেই বললেই চলে। পরিযায়ীরা আবার ফিরছেন, গৃহশ্রমিকরা আবার কাজ হারাচ্ছেন, তার উপর এক এক করে বন্ধ হচ্ছে চটকল — এদের কারও সহায়তার প্রয়োজন নিয়েও উচ্চবাচ্য নেই।
নাগরিকের অসহায় মৃত্যু অসহনীয়, কিন্তু নাগরিক সমাজের মৃত্যু? তার চাইতে বেশি শোকাবহ আর কী হতে পারে?

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.