বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[রাজ্য]

[রাজ্য]

পড়াশোনা করে কী হয়?

পড়াশোনা করে কী হয়?

স্বাতী ভট্টাচার্য

photo

শ্রমজীবী ভাষা, ১ মার্চ, ২০২২— প্রশ্নটা যে করল, তার এ বার ক্লাস নাইন, হাতে তখনও ধরা সরস্বতী পুজোর প্রসাদী শাঁকালু, কুল, আপেল-কলার টুকরো। পুজো সদ্য শেষ হয়েছে, আরতি তখনও হয়নি, কিন্তু জ্যান্ত সরস্বতীদের খিদে-কাতর মুখ আর নাড়ু-লোলুপ দৃষ্টি দেখে পুরুতমশাই বিধান দিয়েছেন, “ওদের অঞ্জলিটা হয়ে যাক।” তাই ঠাকুরঘরের ভিতরে যখন ধূপ-কর্পূরে আরতি চলছে, তখন বাইরে চলছে প্রসাদভক্ষণ। বেচারি ক্লাস নাইন সবে কদমায় কামড় দিয়েছে, অমনি তার কলেজ-পড়ুয়া দিদি ঠাট্টার সুরে বলেছে, “সরস্বতীর প্রসাদ তো খেলি, এ বার বইখাতা খুলবি তো? পড়ায় তো একটুও মন নেই।” শুনেই বোনের সপাট প্রশ্ন, পড়াশোনা করে কী হয়?
ওর বয়সে এ প্রশ্নের উত্তর ঠোঁটস্থ ছিল। মেয়েরা পড়াশোনা করলে নিজের পায়ে দাঁড়ায়, ছেলেদের সমান হয়। যদিও সেই ছেলেবেলায় — সে ছিল বছর পঁয়ত্রিশ আগে — মনের পিছনে একটা আবছা ধারণা কাজ করত যে, ছেলেদের সমান নম্বর পেলে, এমনকি বেশি নম্বর পেলেও ঠিক সমান হওয়া যায় না। কারণ, তেরো-চোদ্দো বছর থেকেই মেয়েদের সামনে সর্বদা একটা কোয়েশ্চেন পেপার ঝোলে, সেখানে অদ্ভুতুড়ে সব প্রশ্ন — ‘বিয়ে না পড়াশোনা?’ ‘চাকরি না সংসার?’ ‘প্রেম করে বিয়ে না পাত্র-দেখা বিয়ে?’ সমবয়সী ছেলেদের মনের জগতে এ সব টেনশন ঢুকতেই পেত না। তারা যেন ছিল ডানা-মেলা চিল, উড়তেই জন্মেছে। আর মেয়েরা যেন চড়াই, বাড়ি থেকে ফুড়ুৎ করে ইস্কুল, আর ইস্কুল থেকে ফুড়ুৎ করে বাড়ি। কাচের জানলায় ঠোক্কর দিয়ে কাটে, ওপারে যেতে গেলে আগে ভারী ভারী বই পড়তে হবে। আমাদের জন্য ইস্কুলের দিদিমণি, বাড়ির মা-মাসিরা একটা রুট তৈরি করে দিতেন — স্কুল-কলেজ-চাকরি-বিয়ে-ছেলেমেয়ে-সংসার-সসম্মানে সুপ্রতিষ্ঠা। মেয়েদের পড়াশোনার সঙ্গে লিঙ্গসাম্যের সংযোগকারী পথটা, জ্যামিতির সরল রেখার মতোই, দুই বিন্দুর মধ্যে সব চাইতে কম দূরত্বের রাস্তা বলে আমরা ধরে নিতাম। ভাবতাম, কত দিনই বা লাগবে দেশের মেয়েদের ওই পথটুকু হাঁটতে, আর বছর কুড়ি? তিরিশ? বড়জোর আর এক প্রজন্ম?
খেটে-খাওয়া পরিবারের মেয়েরা, যারা নিজেরা বেশিদিন স্কুলে যেতে পারেনি, তারাও এই পথকে আপন পথ মনে করেছে। প্রবল পরিশ্রমে দিনে দুটো-তিনটে বাড়ি করে কাজ করেছে, সকালে বাজারে সবজি বেচে বিকেলে তেলেভাজার দোকান দিয়ে, রাতে কুপির আলোয় শাড়িতে চুমকি বসিয়েছে, যাতে মেয়ের টিউশনের ফি উঠে আসে। স্কুলের পড়া শেষ করে মেয়ে যাতে করতে পারে এমন কাজ, যা প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট, ভদ্রগোছের টাকা হাতে এনে দেবে। যেখানে কথায় কথায় কাজ চলে যাবে না, কাজের শর্ত হিসেবে মেনে নিতে হবে না গালিগালাজ, কুপ্রস্তাব, মন্দ স্পর্শ। এমন কাজ, যা মেয়েদের সংসারে, পাড়ায়, একটা পরিচিতি দেবে।
ভাল পড়াশোনা থেকে ভাল জীবনের সেই ‘সিধে রাস্তা’ বলে যাকে মনে হয়েছিল, এখন মনে হয় তা যেন সেই ‘কলকেতা-ডায়মন্ডহারবার-রানাঘাট-তিব্বত’ রুট। মাঝেমাঝেই সে পথ যেন ঘুরে যাচ্ছে উলটো বাগে। এই যেমন, যত বেশি মেয়ে কলেজ পাশ করবে, তত চাকরি-করা মেয়ের সংখ্যা বাড়ার কথা, তাই না? দিদিমণিদের দেখানো রুট সে কথাই বলে। কিন্তু গত বছর দশেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, কাজের বাজারে চাকরি-করা মেয়ের সংখ্যা কমছে। ১৯৯৪-৯৫ থেকে ২০১১-১২ সালের মধ্যে শহরের পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেয়েদের নিয়োগের হার কমেছে আট শতাংশ বিন্দু। নিয়োগ এবং বেকারত্ব নিয়ে নিয়মিত সমীক্ষা থেকে যে সব তথ্য মিলছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের অক্ষরপরিচয়হীন মেয়ে, আর শহরের কলেজ-শিক্ষিত মেয়ে, এরা সব চাইতে বেশি সরে যাচ্ছে কাজের ক্ষেত্র থেকে। আরও শিক্ষা মেয়েদের কাজ পাওয়া আরও নিশ্চিত করছে না।
একেই তো ভারতে কোনও দিনই মেয়েদের কর্মজগতে যোগ দেওয়ার হার ভাল নয় — যাদের কাজ করার মতো বয়স, সেই সব মেয়েদের অর্ধেকও কখনও কাজের বিনিময়ে রোজগারের পথে আসেনি, এমনকি তিনজনে একজনও নয়। তার উপরে অতিমারিতে মেয়েরা কাজ হারিয়েছে সব চাইতে আগে, ফিরে পেয়েছে সব চাইতে পরে, তবে অধিকাংশই আর ফিরে পায়নি। অতিমারি তাদের আরও কোণঠাসা করেছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে জানিয়েছে, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের নথিভুক্তির জন্য তৈরি ‘ই-শ্রম’ পোর্টালে যাঁরা নাম লিখিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত দু’কোটি ব্যক্তির গ্র্যাজুয়েট বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি রয়েছে। ওই পোর্টালে যাঁরা নাম লিখিয়েছেন তাঁদের প্রায় ৫৩ শতাংশ মহিলা। কত গ্র্যাজুয়েট মেয়ে ই-শ্রমে নাম লিখিয়েছেন জানা নেই, কিন্তু অন্তত অতগুলি মেয়ের জীবনে উন্নত জীবনের দরজা খুলে দেয়নি উন্নত শিক্ষা।
সংগঠিত শিল্পেও ছবিটা আলাদা কিছু নয়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি দেশে বড় বড় কর্পোরেট কর্তারা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে বাজেট নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে মনে করিয়েছেন, লকডাউনের পরেও ভারতের চাকরির বাজারে মহিলা কর্মীর অনুপাত বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মতো দেশের তুলনাতেও কম। মহিলা কর্মী নিয়োগের ন্যূনতম হার বেঁধে দেওয়া যায় কি না, বা মহিলা কর্মী নিয়োগে উৎসাহভাতার বন্দোবস্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেই সভায়। লকডাউন এবং তারপর ছাঁটাই, এই দুইয়ের জন্য মেয়ে কর্মী কমেছে, মনে করছেন কর্পোরেট কর্তারা।
তবে এ সমস্যা অতিমারির তৈরি নয়। যে সব কাজ পাওয়ার আশায় মেয়েরা দিনের পর দিন নোট মুখস্থ করে, সে সব কাজ দ্রুত কমে যাচ্ছে। নিয়মিত, বাঁধা মাইনে, পেনশন-প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুরক্ষা সমন্বিত চাকরি কমছে, বাড়ছে চুক্তির কাজ। যে মায়েরা স্কুলে পড়িয়েছেন, আশা করেছেন আরও বেশি ডিগ্রি নিয়ে মেয়ে কলেজে পড়াবে, সে মেয়েরা অধিকাংশই সারা জীবন ‘গেস্ট লেকচারার’ হয়ে থেকে যাবে। যে মেয়েটি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে আরও দু’বছর ট্রেনিং নিয়ে প্যারামেডিক্যাল কাজের উপযুক্ত হল, তাকে সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতাল নিয়োগ করছে ঠিকাদারের মাধ্যমে, তার কাজের শর্তের সঙ্গে সাফাইকর্মীর কাজের শর্তে তফাত নেই। যে আশাকর্মী কুড়ি-পঁচিশ রকম তথ্য-পরিসংখ্যান সংগ্রহ করছেন, ট্যাবে ‘ডেটা এন্ট্রি’ করছেন, সেই শিক্ষিত-প্রশিক্ষিত-দায়বদ্ধ কর্মীর কাজের মূল্যায়নও বিড়ি-বাঁধা মেয়েটির কাজের মতো করেই হয়ে থাকে, এবং তা করছে কোনও মুনাফা-লোলুপ কর্পোরেট নয়, মহামান্য ভারত সরকার। তা হলে শিক্ষা মেয়েদের কোথায় দিল সাম্য, সম্মান?
এটা ঠিকই যে সংগঠিত ক্ষেত্র থেকে কাজ অসংগঠিত ক্ষেত্রে সরে যাওয়ায় শ্রেণী-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে (কতিপয় কোটিপতি বাদে) সকলেই বিপন্ন। কিন্তু মেয়েদের বিপন্নতা অধিক। তার একটা কারণ, পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মেয়েদের অবমূল্যায়নের একটি প্রধান উপায়, তাদের কাজের অবমূল্যায়ন। যে সব কাজে যথেষ্ট দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, দায়িত্ববোধ, ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতা প্রয়োজন হয়, সেই কাজেও অতি সামান্য পারিশ্রমিক মিলবে যদি তা ‘মেয়েদের কাজ’ বলে চিহ্নিত হয়ে যায়। ‘সমান কাজে সমান মজুরি’ — এই ধারণার বিপরীত সাক্ষ্য দেয় মেয়েদের মজুরি, যা নির্ধারিত হয় শ্রমের পরিমাণ বা উৎপাদনের পরিমাপ দিয়ে নয়, কর্মীর লিঙ্গ দিয়ে। সরকারও এমন একটি স্বল্পমূল্যের শ্রমের বাজার চালু রেখেছে — মিড ডে মিল কর্মী, আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। গরিব মেয়েরা ছেড়ে দিলে এ সব কাজ করার জন্য একটিও পুরুষ মিলবে না, কারণ অত সামান্য টাকায় অত বেশি কাজ, অত দায়িত্ব পালনে দরিদ্রতম পুরুষও করতে রাজি হবে না। এখন ঠিকাদার সেই ব্যবস্থাকে সর্বত্র পাকাপোক্ত করছে — ইএসআই-এর মতো সরকারি হাসপাতালে নার্সের পদেও নিয়োগ হচ্ছে ঠিকার মাধ্যমে।
এর ফলে যা দাঁড়াচ্ছে, তা হল কাজের জায়গায় অতিরিক্ত চাপ, সময়-সীমাহীন কাজ, অথচ উন্নতির আশা নেই, আনন্দ নেই, সার্থকতার বোধ নেই। সেই সঙ্গে রয়েছে বাড়ির কাজের চাপ। ভারতে মেয়েরা দিনে গড়ে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা মজুরিহীন গৃহশ্রম করে, পুরুষরা এক ঘণ্টাও নয় — এতটা বৈষম্য বিশ্বের কম দেশেই আছে। চীন এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে দেখা যায়, অল্পবয়সী মেয়েরা বাবা-মায়ের কাছে শিশুসন্তানকে রেখে কোনও বড় শহরে এসে রোজগার করে, কখনও একা, কখনও যুগলে। ভারতে মাতৃত্বের সামাজিক মূল্য চড়া, সন্তানকে দেখাশোনার কাজটা মেয়েরা কাজের পাশাপাশি করে, কিছুটা অন্তরের আবেগে, কিছুটা সমাজের প্রত্যাশার চাপে। এরপর রয়েছে পরিবারের প্রত্যাশা যে, মেয়েটির রোজগারের টাকা তার সংসারেই ব্যয় হবে (প্রায়ই স্বামীর ধার শোধ করতে)। ফলে রোজগারের টাকায় দু’চারটে শখের জিনিস কেনা ছাড়া, কেবল নিজের ইচ্ছায় নিজের রোজগারের টাকা সঞ্চয়, বিনিয়োগ, ব্যবহারের উপায় অধিকাংশ মেয়েরই নেই।
কাজ যে শুধু রোজগারের উপায়, তা তো নয়। কর্মক্ষেত্র মানে বহু মানুষের মিলনক্ষেত্র, কাজের জগতে মানুষের মন প্রসারিত হয়, সমৃদ্ধ, আনন্দিত হয়। আক্ষেপ, সেই আনন্দও এ দেশের মেয়েরা পায় না। কাজের সময়ের পরে পুরুষ-মহিলা সহকর্মীদের নিয়ে ঘোরাফেরা, আনন্দ-বিনোদন, এ সবের উপযুক্ত মানসিকতা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি এ দেশের অধিকাংশ জায়গায় এখনও তৈরিই হয়নি। তাই কর্মজীবন মেয়েদের কাছে মুক্তি হয়ে আসে না, তার ঘাড়ে জোয়ালের মতো চেপে বসে।
ঘরে–বাইরে মাকে প্রাণপাত করতে দেখে যে কিশোরী মেয়ে, যে লক্ষ করে মায়ের সতত ক্লান্ত, ক্ষুব্ধ, বিরক্ত দিনযাপন, সে কীসের আশায় কর্মজীবনে প্রবেশ করতে চাইবে? কর্মরতা মায়েদের মেয়েরাও প্রায়ই গৃহবধূ হওয়ার স্বপ্ন দেখে, আরও বড় চাকরির স্বপ্নের চাইতে আরও নিশ্চিন্ত, আরও আরামের সংসার তার কাছে বেশি প্রার্থনীয় বলে মনে হয়। লেখাপড়া যদি সক্ষমতা আনতে পারত, তা হলে ‘চাকরি না বিয়ে’ এই প্রশ্নটাই মেয়েদের কাছে অবান্তর হয়ে যেত। দুঃখের কথা, সেই চয়েস আজও মেয়েরা বেশ আগ্রহের সঙ্গে করে, এবং বহু কিশোরী কন্যা বিয়েকেই বেছে নেয়। এটা একটা কটু সত্য যে, আজ যত নাবালিকা বিবাহ হচ্ছে, তাতে মেয়েদের স্বেচ্ছায় বিয়ের সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাবা-মায়ের বাধ্য-করা বিয়ের চাইতে। বারুইপুরের এক নারী সংগঠনের নেত্রী জানিয়েছিলেন, পালিয়ে বিয়ে-করা মেয়েদের মায়েরা তাঁদের কাছে এসে কান্নাকাটি করেন। ওই নেত্রী ব্যাকুল ভাবে প্রশ্ন করেছিলেন, “ক্লাস এইট-নাইনের মেয়েদের কী বলে বোঝাব, বলতে পারেন?” নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করাটাই ওই মেয়েদের কাছে স্বাধিকার প্রয়োগের প্রধান উপায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে, বাবা-মাকে পাত্র বাছার সুযোগ দিতে তারা নারাজ।
কাজের জগত ওই মেয়েদের কাছে আকর্ষণীয়, আশাপ্রদ কিছু নয়, তাই তার জন্য আরও কয়েক বছর নিষ্প্রাণ, নিরানন্দ পড়াশোনা করতে তারা রাজি নয়। ‘জয়ফুল লার্নিং’ এ দেশের স্কুলগুলিতে একটা হাওয়ায়-ভাসা ধারণামাত্র, স্যর-দিদিমণিরা ইস্কুলে ফুর্তি করাকে ভীষণ অপরাধ বলে মনে করেন। ইস্কলের পড়াশোনা যদি তাদের মনের খোরাক জোটাতে পারত, পড়াশোনা-খেলাধুলোর মধ্যে মেয়েটি যদি নিজের পরিচয় খুঁজে পেত, তা হলে হয়তো সে স্কুলে থাকার জন্য বাড়ি থেকে পালাত (কেউ কেউ পালায়ও)। কিন্তু একটা বড় অংশ ছাত্রীর মনে স্কুল কেবল হীনমন্যতার জন্ম দেয়। তাকে সব রকম ভাবে বোঝানো হয়, সে উপযুক্ত নয়, তার যথেষ্ট বুদ্ধি নেই, বিদ্যে নেই, সে ‘ভাল মেয়ে’ নয়। লজ্জিত, ক্ষুব্ধ, বিরক্ত কিশোরীরা কোণঠাসা হতে হতে একদিন পড়াশোনার উপযোগিতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে। কী হবে পড়াশোনা করে? সেই তো ঘর-সংসারই করতে হবে। তা হলে এখনই বিয়ে নয় কেন? যাকে ভাল লাগে, তাকে নয় কেন?
শিক্ষার উপযোগিতা নিয়ে কথা উঠলেই মহাপুরুষদের বাণী ঝেড়ে দেওয়ার অভ্যাসে তাই এ বার একটু ব্রেক কষতে হবে সকলকে। মেয়েদের স্কুলশিক্ষা, উচ্চশিক্ষা সমাজের জন্য কত প্রয়োজন, সে কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু আরও মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় আনতে গেলে কেবল আরও স্কুল-কলেজ তৈরি করলে হবে না, উপযুক্ত কাজের বাজার তৈরি করতে হবে। সম্মানজনক শর্তে সুরক্ষিত কাজ মেয়েদের জন্য যথেষ্ট তৈরি করতে না পারলে ‘শিক্ষার মাধ্যমে নারী সক্ষমতা’ কেবল সেমিনারের বিষয় হয়ে রয়ে যাবে। পড়াশোনা করে কী হয়, সে কথা যেন স্কুলবালিকা তার চারপাশে চেয়ে দেখে নিজেই বুঝতে পারে।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.