বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন
[রাজ্য]
সম্প্রতি নিউ জলপাইগুড়ি জেলার বানরহাট ব্লকের চা বাগানের সামনে ৩১ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ অ্যান্ড্রু উইল অ্যান্ড কোম্পানির শ্রমিকরা। এতে প্রায় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারা আট সপ্তাহের বেতন পাননি। তাই উপায় না দেখে বৃষ্টির মধ্যে ছ’ঘণ্টা অবরোধ চালায়। এর জেরে ভুটানে সাম্স্তে যাওয়ার রাস্তায় ট্রাক চলাচল আটকে যায়। যদিও ঘণ্টা দুয়েক পর অবরোধকারিরা ভুটানের দিকে প্রয়োজনীয় জিনিসের ট্রাক চলাচল করতে দেয়। ধূপগুড়ির সাব ডিভিশনাল অফিসার ও পুলিশ শ্রমিকদের অবরোধ তুলতে আর্জি জানায়। চা বাগান কর্তৃপক্ষ জানায় তারা এক সপ্তাহের বেতন দিতে পারেন। তার বেশি কিছু আশ্বাস দিতে পারছে না।
শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন কী হবে, সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা বহু দিন বকেয়া পঞ্জাবে। ২০১২ সাল থেকে পঞ্জাব শ্রম দফতর এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। ১৯৩৬ এর পেমেন্ট অব ওয়েজ অ্যাক্ট অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর এটি পুনর্বিবেচনা করতে হয়। অথচ তা নিয়ে গড়িমসি চলছে। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হরি সিং জানাচ্ছেন এতে কয়েক লাখ শ্রমিক বিশেষ করে ইটভাটার শ্রমিকরা আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছেন। যে ভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, সরকারের গড়িমসিতে শ্রমিকদের অবস্থা বিশ বাঁও জলে। পঞ্জাবে এখন অদক্ষ শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০,৭৩৬। শ্রমিক অধিকারের অ্যাক্টিভিস্ট বিজয় বালিয়ার মতে এটি একের পর এক সরকারের ফৌজদারি অপরাধ। ন্যূনতম মজুরি পুনর্বিবেচনা করে ওয়েজ অ্যাডভাইসরি বোর্ড। এদের শেষ মিটিং হয় ২০২৩ এর নভেম্বরে। এর কিছু সদস্যের মতে ন্যূনতম মাসিক বেতন হওয়া উচিত ২৬,০০০। শ্রম দফতরের মুখ্য সম্পাদক মানভিশ সিং জানাচ্ছেন পুরোটাই আলোচনার মধ্যে রয়েছে। পরবর্তী মিটিংএ নির্দ্ধারিত হবে। ততদিন অপেক্ষা করতে হবে।
বাঁকুড়ার চাষিরা সাইকেলে করে গ্রামে ঘুরে সবজির হকারি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ বার বর্ষা দেরীতে এসেছে। জলের অভাবে মাঠেই চারাগাছ শুকিয়েছে। বাঁকুড়া পুরুলিয়ার প্রধান শস্য আমন ধান ও গরমের সবজি। বড় ব্যবসায়ীরা এদের থেকে কেনে। এবার চাষিরাই দূরের পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে ফিরি করছেন। জঙ্গলমহলের এই দুই জেলায় অনেক গ্রামই খরার সন্মুখীন হয়। পুরুলিয়ায় বিকল্প ব্যবস্থার জন্য তেমন কোনও সেচ ব্যবস্থা নেই। জলাধার, স্থানীয় পুকুর, কুয়ো সব শুকিয়েছে। বাম আমলে তৈরি মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীন কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইনে তৈরি সেচের জলাধারগুলো সংস্কার হয় না। তৃণমূল সরকার কংসাবতীর জল বোরো বা রবি শস্য চাষের জন্য দেয় না। অক্টোবরে এই জল নদীতে ফেরত পাঠায়, পুরোটাই অপচয়। আর আমন চাষের সময় কংসাবতীর জলাধার থাকে শুকনো। সরকার ও পঞ্চায়েত এ ব্যাপারে নীরব। তবে বাঁকুড়া জেলার কৃষি দফতর জানাচ্ছে চাষের অবস্থা সম্বন্ধে তারা অবগত। কম জলে চাষ হয় এরকম সবজি চাষে কৃষকদের সাহায্য করবে। কিন্তু চাষিদের কাছে এ খবর পৌঁছয়নি।
বাংলায় খাদ্য শস্য, চিনির প্যাকেজিংয়ে চটের ব্যাগের চাহিদা ক্রমশ কমছে। ২০২১-২২ এ এর চাহিদা ছিল ৩৮-৩৯ লাখ বেল (১ বেল-১৮০ কিলোগ্রাম)। ২০২৩-২৪ এ তা হয় ৩৫ লাখ বেল। ২০২৪-২৫ এ এই চাহিদা ৩০% কমবে বলে আশঙ্কা। তুলনায় কাঁচা পাট গত তিন বছরে ৯০ লাখ বেল হয়েছে। নতুন পাট আসতে শুরু করেছে। যেখানে প্রতি মাসে ২.৫ লাখ বেল অর্ডার আসার কথা, সেখানে জুনে অর্ডার এসেছে মাত্র ২৭,০০০। মনে করা হচ্ছে যে উৎপাদিত চিনির মাত্র ৭% চটের ব্যাগে প্যাকিং হচ্ছে। চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যে এর প্রভাব পড়ছে। অনেক চটকল উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। শিফ্টের সংখ্যা কমছে। চটকলগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৫ লাখ বেল প্রতি মাসে। তার মাত্র ৪০-৪৫% এখন ব্যবহার হচ্ছে। চটকল ইউনিয়নগুলো ইতিমধ্যে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে দেখা করে বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। যথারীতি পাটের দামও পড়ছে।
ভূপ্রকৃতিগত অবস্থানের জন্য কলকাতায় জলের অভাব নেই। দিনে সরবরাহ হয় প্রায় ২২ লক্ষ লিটার জল। শহরের পঞ্চাশ লক্ষ লোকের (সরকার নির্ধারিত জন প্রতি ১৫০ লিটার) ও বাইরে থেকে আসা মানুষের প্রয়োজন মিটিয়েও তা উদবৃত্ত থাকার কথা। তা-ও পৌরসভার ১২০ টি ট্যাঙ্কারে করে উত্তর-দক্ষিণের বিবিধ বস্তি ও কিছু বহুতলে জল সরবরাহ করতে হয়। দিনে গড়ে ৫৫ লক্ষ লিটার জল। পৌরসভার মতে এর কারণ জলের অপচয় (দিনে ৩৫%) ও সরবরাহের অসামঞ্জস্যতা। কোথাও গুণমানের জন্য জল পানের অযোগ্য। বহুতলের জন্য জল অনেক নীচে নেমে গেছে। পৌরসভা জানাচ্ছে, বস্তির গরিব মানুষ কম জল খরচ করেন। বেশির ভাগ জল ব্যবহার করেন উচ্চ ও মধ্যবিত্ত, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সমীক্ষা বলছে, বস্তিবাসীরা ভাল গুণমানের যথেষ্ট জল পেলে ন্যূনতম জল কর দিতে রাজি। গররাজি আলিপুরের উচ্চবিত্তরা! অপচয় কমাতে দরকার কর ধার্য। সরকার তা করে না। যেখানে জলের সমস্যা প্রবল, সেখানে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলকেই অনৈতিক সরবরাহকারিদের থেকে চড়া দামে জল কিনতে হয়। ভুক্তভোগী গরিবরাই।
সম্প্রতি চিকিৎসক দিবসে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য আইন প্রণয়নের দাবি জানায় বহু চিকিৎসক ও মেডিক্যাল সংগঠন। মেডসক্যাপইন্ডিয়ার একটি রেড ফ্ল্যাগ ক্যামপেনে এই দাবি জানানো হয়। গত বছর দিল্লিতে বিজ্ঞান ভবনে ‘প্রিভেনশন অব অ্যাসাল্ট অন ডক্টরস বিল, ২০২৩’ নামে একটি বিল আনার প্রস্তাব হয়েছিল। ক্রমে ৩০ লাখ চিকিৎসক ও ৪২টি মেডিকেল সংগঠন এতে যুক্ত হন। মেডসক্যাপইন্ডিয়ার চেয়ারপার্সন ডা. সুনীতা দুবে এই ক্যামপেনের উদ্বোধন করে চিকিৎসা পরিষেবায় যুক্ত কর্মীদের ওপর হিংস্রতা ও তাদের নিরপত্তার দাবিতে সোচ্চার হন। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার জানাচ্ছে ৮-৩৮% স্বাস্থ্যকর্মী তাদের কর্মজীবনে শারীরিক নিগ্রহের স্বীকার হন। সম্প্রতি রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত ও আহত হন। বিভিন্ন রাজ্যে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। তাতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর আঘাত জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। সঙ্গে জরিমানা ও জেল। এই আইনও সুরক্ষা দিতে পারছে না। তাই এই বিল। অনেক সংসদ বিলটিকে সমর্থন করেছেন। ডা. দুবে আশাবাদী সংসদ অধিবেশনে এই বিল আইনে রূপান্তরিত হবে।