বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[রাজ্য]

[রাজ্য]

শুধু তারুণ্য দিয়ে পৃথিবী বদলানো যাবে না

শুধু তারুণ্য দিয়ে পৃথিবী বদলানো যাবে না

উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়

photo

দেশ ও রাজ্যের যা হাল তাতে নতুন দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসতে হবে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীকে। এ রাজ্যে এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী আন্দোলনের ময়দানে এগিয়ে এসেছেন, আসছেন। কিন্তু শুধু তারুণ্য দিয়ে দেশ গড়ার মহান ব্রতে অগ্রগতি সম্ভব নয়।
কথায় আছে, দুনিয়াকে বদলানোর সংগ্রাম চালাতে হলে নিজেদেরও বদলানোর সংগ্রাম চালাতে হয়। যারা দেশকে দেখে শুধুই ক্ষমতা ও লুঠের ক্ষেত্র হিসেবে তাদের কাছে কিছুই আশা করে লাভ নেই। একমাত্র বামপন্থী ও সাম্যবাদী তরুণ প্রজন্মের কাছেই এই সম্ভবনার স্বপ্ন দেখা যায়। নতুন ভারত গড়ার। কিন্তু তার ভিত্তি কি শুধুই তরুণ বা যুবক! তা কখনোই না। তরুণ সাম্যবাদীদের মধ্যে থাকা চাই মার্কসবাদ-লেনিনবাদের গভীর চর্চা, বিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতি ও পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্পর্কে গভীর পর্যবেক্ষণ এবং শ্রমজীবী ও খেটে-খাওয়া প্রান্তিক জনগণের প্রতি গভীর মমতা তথা শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির প্রশ্নে গভীর আস্থা ও প্রতিজ্ঞা।
আজকের কঠিন পরিস্থিতিতে ওইসব দলের নেতৃত্বে কাউকে তুলে আনার সময় বয়স এবং নেতৃত্ব দানের ক্ষমতার সঙ্গে তাই গুরুত্ব দিতে হবে ওই কর্মীরা মতাদর্শগত ভাবে উচ্চ অবস্থানে আছেন কিনা, দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে শিক্ষা অর্জন করছেন কিনা এবং দৈনন্দিন জীবন চর্চায় মতাদর্শের প্রভাব কতখানি, এই বিষয়গুলোর উপর। শ্রমিকশ্রেণীর দৃষ্টিকোণ থেকেই বিচার করতে হবে। মার্কসীয় ক্যাডার পলিসিতে যত্নবান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশীয় ঐতিহ্যের পরম্পরায় যোগ্য হতে হবে।
অনেক বাম ছাত্র-যুব চে, ফিদেল কাস্ত্রো কিংবা লেনিনের ছবি আঁকা টি-শার্ট, ছাতা, টুপি ব্যবহার করেন। তা ভাল লক্ষণ। কিন্তু দেখতে হবে তাদের কি সেইভাবে আগ্রহ আছে মার্কসবাদী বুনিয়াদি শিক্ষা চর্চায়। তারা কি রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, লালন, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ভগৎ সিং এদের নিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহী। মনে রাখতে হবে, যারা মার্কস-এঙ্গেলস কিংবা লেনিন, চে, ফিদেলকে টিশার্ট টুপিতে ছাতাতে যৌবনকে আটকে রাখতে চান তারা বিশ্বায়নের নয়া উদারনীতির হাওয়া গায়ে মেখে নব্য প্রজন্মের ছাত্র-যুবদের একটি বড় অংশকে ধীরে ধীরে তাদের কবলে নিয়ে যাচ্ছে। তাই হয়তো দেখা যাবে, এদেরই কেউ কোনও বিলাসী বাহন সৎপথে ক্রয় করেন। যা নিয়ে বলার কিছু নেই। কিনতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন আসে তিনি কি পারবেন দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যার বুঝতে! ঠিক একইভাবে প্রশ্ন উঠে, যখন উচ্চ শিক্ষার বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন কোনও তরুণদের কেউ কেউ যখন মানুষের দাবির আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে পুলিশের আক্রমণে দাঁড়িয়ে বলেন, আর বেশি দিন নয়, ক’দিন পরে সেলুট করতে হবে। তখনই আসলে বিপদের ইঙ্গিত দেয়। কারণ স্পষ্ট হয় তাদের মনের ভেতরে আছে ভোটের অঙ্ক। এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। তাদের শেখাতে হবে এটা কুড়ি ওভারের ক্রিকেট খেলা নয়। এই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে! চাই না নতুন নতুন ডিজাইনের ছাতা, টি-শার্ট। চাই মার্কসীয় বীক্ষার ভিত্তিতে সমাজনীতি, রাজনীতি ও অর্থনীতির চর্চা এবং সমাজে বয়ে চলা শ্রেণী আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সময়োপযোগী চেতনা নির্মাণ।
সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ইদানিং আবার মার্কসবাদের চর্চা শুরু হয়েছে। এটি ইতিবাচক। কমিউনিস্ট ইস্তাহার প্রকাশের ১৭৫ বছর উদযাপনেরও উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
আজকের দুনিয়ায় মানুষের জীবনকে সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে পুঁজি, ধান্দা পুঁজি। তাই এই সময়কালে ছাত্র-যুব, শ্রমিক কৃষক আন্দোলনের থেকে আসা কর্মীদের কেবল রাজ্যে শিল্পায়নের স্বপ্ন দেখলে চলবে না, তাদের চেতনায় নির্মাণ করতে হবে পুঁজির লুঠের নোংরা ও রক্তাক্ত ইতিহাস ও চরিত্র সম্পর্কে জ্ঞান ও উপলব্ধী এবং সঙ্গে সঙ্গে সামন্ততান্ত্রিক অবশেষের বিষাক্ত প্রভাব থেকে মুক্ত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির। পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত দুনিয়ায় রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি থেকে শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প, পারিবারিক সম্পর্ক, যৌনতা সমস্ত কিছুতেই রয়েছে পুঁজির ক্লেদাক্ত প্রভাব। ১৮৪৮ সালে কার্ল মার্কস এবং ফ্রেডরিক এঙ্গেলস “কমিউনিস্ট ইস্তাহার”এ পুঁজির কেন্দ্রীভবনের কথা আলোচনা করেছিলেন। আর আজকে ইতিমধ্যে মাত্র এক শতাংশের মানুষের হাতে চলে গেছে চলে গেছে বিশ্বের সিংহভাগ সম্পদ। এখন আর মার্কসের লেখার মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ নেই, অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, “পুঁজি” ক্রমবর্ধমান বাজার ছাড়া টিকে থাকতে পারছে না। জন্মের পর থেকে বারে বারে পুঁজিবাদ সংকটে পড়ছে। গত শতকের সত্তর দশকের শেষে সঙ্কটের কারণে তারা নতুন করে বিশ্বায়ন ও উদারবাদকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে।
শ্রমনীবিড় শিল্প নয়, পুঁজি নিবিড় শিল্প। সাম্রাজ্যবাদ, কর্পোরেট পুঁজি এবং একচেটিয়া পুঁজি বাজারের জন্য এক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বিশ্বায়নের মাধ্যমে। কমিউনিস্ট ইস্তাহারে মার্কস-এঙ্গেলস উল্লেখ করেছিলেন যে, উৎপাদিকা শক্তির ক্রমাগত এবং দ্রুত পরিবর্তন না ঘটিয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা টিকতে পারে না।
অর্থনীতির ইতিহাসে দেখা যায়, হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর বুকে গতরে খাটা শ্রমজীবীরা একই বৈষম্যের পদ্ধতিতে কাজ করে গেছে। তাদের মধ্যে সর্বদা ভয় ছিল উন্নত যন্ত্র, প্রযুক্তি এলে তারা জীবিকাচ্যুত হবে। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পদ্ধতিই অন্য রকম! এখানে পুঁজিপতিরা প্রতি মূহুর্তে মুনাফা বৃদ্ধির জন্য, অন্য পুঁজিপতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জড়াতে বাধ্য। তারা উন্নত যন্ত্র ও প্রযুক্তির সাহায্যে বাজার দখল করে টিকে থাকতে চেষ্টা করে। অধিক মুনাফার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে, ন্যূনতম শ্রমশক্তি কাজে লাগিয়ে অধিক উৎপাদন ব্যবস্থা চালায়। প্রতিদিন দ্রুত উৎপাদন যন্ত্র ও প্রযুক্তি পালটে যাচ্ছে।
অর্থাৎ কমিউনিস্ট ইস্তাহারের বর্ণনা ও বিশ্লেষণের অনুযায়ী পুঁজি উৎপাদিকা শক্তিগুলির দ্রুত বিরামহীন বিকাশ ঘটাচ্ছে। আধুনিক উন্নত যন্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ছে বিপুল পরিমাণে। বাজারে ওই উৎপাদিত পণ্যের ক্রেতা দরকার। যাদের হাতে পয়সা থাকবে। না হলে পুঁজির মালিকরা মুনাফা করবে কোথা থেকে। অতএব বেকার যুবকদের তাদের শ্রম বিক্রির সুযোগ দিতে হবে এবং বাজারের আর্থিক মান অনুযায়ী শ্রমের মজুরিও দিতে হবে। তাহলেই বাজারে ক্রেতার হাতে টাকা আসবে, বাজার গতি পাবে। কিন্তু পুঁজিবাদীদের চরিত্র এর ঠিক বিপরীত, তাই এ ব্যবস্থার চক্রে এটি কখনও এমনভাবে ঘটে না।
আজকের দুনিয়ার যে যত কম শ্রমশক্তি ব্যবহার করে, কম খরচে পণ্য উৎপাদন করতে পারছে, সেইই নিজের মুনাফা ধরে রাখে বা প্রকৃত মুনাফা বৃদ্ধি করে কম দামে পণ্য বিক্রি করে বাজারে আধিপত্য নিচ্ছে। এখানে মনে রাখতে হবে, সিঙ্গুরের টাটা ভালো আর জালিয়াত আদানি খারাপের ব্যাপার নেই। সকল পুঁজিপতিদেরই শ্রেণী চরিত্র মূলগতভাবে এক। বেড়ালের রঙ কালো বা সাদা যাইহোক সে বেড়াল। প্রত্যেক পুঁজিপতিকেই বাজারে প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। যেখানে শ্রমজীবীরা তার পুঁজির শ্রমদাস। পুঁজিপতি মালিকরা তাদের নিয়ন্ত্রিত বাজারের নিয়মেই চলে । কোনও মালিকের মধ্যে ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য যদি থাকেও তবু তার করার ক্ষমতা ব্যবস্থা দ্বারা নেহাতই সীমাবদ্ধ।
কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের বাজার না থাকলে সেখানে শ্রমিক ছাঁটাই হয়। আর তখন আয় না থাকায় কর্মহারা শ্রমিকরা বাজার থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে না। ওই প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যগুলি কোনও না কোনও কারখানায় উৎপাদিত। ফলে সেই সকল কল-কারখানাও বাধ্য হয় উৎপাদন কমাতে। সেখানে নেমে লে-অফ, ছাঁটাই ইত্যাদি। এক কথায়, কাজের সুযোগ কমে। এই ভাবেই পুঁজিবাদী বাজারে সংকট ঘনিয়ে আসে। এদিকে আবার মালিকের মুনাফা কমে যাওয়ায়, তা পূরণ করতে মালিক নতুন প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তার মুনাফা বাড়াতে চেষ্টা করে, উৎপাদন বৃদ্ধি করে। পুঁজিবাদী বাজার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যই হল এক দিকে অতি উৎপাদন, অন্য দিকে বাজারের সংকোচনের ফলে সংকট ঘনিয়ে আসে। এই সঙ্কট কাটাতে পুঁজিপতি ও তাদের পোষিত বিভিন্ন দেশের সরকার নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা এবং সমাজ বিজ্ঞানের বাস্তবতা হল যে, এত কিছু করেও পুঁজি তার সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারে না। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব হল এক দিকে অতি উৎপাদন অন্য দিকে বাজারের সংকোচন। মালিক যত কম লোক দিয়ে উৎপাদন করবে তত তার উৎপাদন খরচ কমবে, মুনাফা বাড়বে। যার ফলে অধিকাংশ মানুষের হাতে কাজ থাকে না। তখন পুঁজিপতিদের স্বার্থবাহী রাষ্ট্র নায়করা বাধ্য হয় নাগরিকদের ক্ষোভ উপশমের জন্য দান-অনুদান দিতে। এখানেও তাই চলছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার দান বিলাচ্ছে জনরোষে মলম লাগতে।
দুনিয়া জুড়ে বারবার অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘুরেফিরে আসছে— এই সঙ্কট দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। পুঁজির এই সঙ্কটের তীব্রতা হ্রাসের জন্য যে ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা হচ্ছে, সেগুলিতে আপাতত কিছুটা সঙ্কট হ্রাস হলেও অদূর ভবিষ্যতে পুঁজির এই সঙ্কট আরও বৃদ্ধি পেতে বাধ্য।
রাশিয়ায় নভেম্বর বিপ্লবের পর সারা বিশ্বে শ্রমিকরা যখন ক্ষেপে উঠল তখন সেই রোষানল থেকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে বাঁচাতে আনা হয়েছিল কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণা। বেপরোয়া পুঁজির পায়ে বেড়ি পড়েছিল। কিন্তু তারপর যখন আশির দশকে সমাজতান্ত্রিক শিবির ধ্বসে পড়ে, তখন থেকেই শুরু হয় সর্বনাশের এই পর্ব। এই পর্বের লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য হল উন্নত দেশগুলিতে পুঁজির আর বাজার নেই। ২০০৭ সালে ফিরে এল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালের মতো বিশ্বের বাজারে অর্থনৈতিক মন্দা। অথচ ওই সময়কালের মত অন্য দেশ দখল করা আর সম্ভব নয়। তখন যেমন ব্রিটিশ, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি পৃথিবীকে ভাগ করে নিয়েছিল এবং তারা দখলকৃত দেশে নিজেদের দেশে তৈরি পণ্য বিক্রি করতো। এবার এল মুক্ত বাজার অর্থনীতি। বিশ্বায়ন। পুঁজির কোনও দেশ থাকবে না। সীমানা থাকবে না। মার্কিন পুঁজি, চীনা পুঁজি বিনিয়োগ হবে ভারতে, বাংলাদেশে, পাকিস্তানে, শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কা ডুবেছে। পাকিস্তান ডুবতে চলেছে। এখন এই মুক্ত বাজার অর্থনীতি পুঁজির সঙ্কট মোচনকে আরও কঠিন করে তুলেছে। পুঁজি আরও কেন্দ্রীভূত হয়ে কর্মহীন বিকাশের পথ নিয়েছে। মানুষের কর্মহীনতা বাড়ছে। যার পরিণতিতে আবার বাজারে টান পড়ছে। উপরন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার মত বিষয়গুলি সমগ্র মানব জাতি ধ্বংসের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
প্রশ্ন উঠে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরলে বামফ্রন্ট সরকার কি শিল্পপতিদের ডাকবে? নিশ্চয় আদানি, আম্বানিকে ডাকবে না। কিন্তু যারা এ রাজ্যে গাড়ি কারখানা, লৌহ ইস্পাত শিল্প, আইটি শিল্প গড়তে আসবেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে কি প্রচুর বেকার চাকরি পাবে। সরকারি সমস্ত শূন্যপদ পূরণ করা হবে?
প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আজ যে অফিসে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী বা কেরানী পদে লোকের দরকার পড়ে না, সেটা মাথায় রাখা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। ঠিকা প্রথা বাতিল করে সব বেকাররা চাকরি পাবে কি? তখন কি, বিশেষজ্ঞ ছাড়া আর কাউকে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে পেটের দায়ে বাইরে যেতে হবে না? সকল অসংগঠিত শ্রমিক ন্যূনতম ২১০০০ টাকা মাসে বেতন পাবে! এই পথের রুট ম্যাপ তৈরি কি!
সমানেই আসছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই পঞ্চায়েত আগে ছিল জনগণের অংশগ্রহণমূলক। এখন পালটে হয়েছে অফিসার আমলা নির্ভর। সত্যি সত্যি কি জণগণের পঞ্চায়েত গড়তে উদ্যোগী হওয়া যাবে কি! কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম থেকে শুরু করে এখনও যেটুকু গ্রামীণ সম্পদ আছে তা পরিকল্পিত ভাবে ব্যবহার করে গরিব শ্রমজীবীদের আয় বাড়াতে গণ-উদ্যোগ গড়তে গণ আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে। শুধু প্রসাশনিক পদ হিসেবে পঞ্চায়েতকে দেখার দিন আজ আর নেই।
একথা ঠিক সরকারের পরিবর্তন অবশ্যই দরকার, মানুষ তৃণমূলের এই অরাজকতা থেকে রেহাই চায়। বর্তমান পরিস্থিতি পালটালে একটা দুর্নীতি মুক্ত মোটামুটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার পাওয়া যাবে। এইটুকুই। এর বাইরে মৌলিক সমস্যা গুলির কি হবে? এখানেই ওই আলোর পথের যাত্রীদের কাছে আমার আন্তরিকভাবে আশাকরি তারা অবশ্যই বিবেচনায় রাখবে, এই সরকার পরিবর্তন হলেও রাজ্যটি তখনও বিশ্ব লগ্নিপুঁজির অধীনস্থই থাকবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে তরুণ প্রজন্ম যেন সরকার আর রাষ্ট্র গুলিয়ে না ফেলেন। তাঁরা যেন শ্রেণীশত্রু আর নিচুতলার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের এক না করে ফেলেন। তাঁদের মধ্যে সঠিক শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে উদ্যোগী হতেই হবে। যাতে পুঁজির চরিত্র সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে। বিপ্লবী হতে হবে, যাদের চোখে থাকবে সরকার নয়, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তনের স্বপ্ন। চাই সমবন্টনের রাষ্ট্র।
আর যদি আমরা আচার আচরণে, জীবন চর্চায় বিশ্বায়নের দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি, বাম ও সাম্যবাদী দলের মঞ্চ ব্যবহার করি তবে পুনরায় বিপদে পড়বে শ্রমজীবীরা।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.